আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শরণার্থী শিবিরে জড়ো হচ্ছে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা!!

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার কয়েকটি শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা জড়ো হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, মিয়ানমারে সাম্প্রতিক ঘটনার পর রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশসহ শরণার্থীদের উসকানি দিচ্ছে এসব রোহিঙ্গা জঙ্গি। পুলিশ প্রশাসন বলছে, লোকবল সংকটের কারণে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হচ্ছে না। উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের 'ই' ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা যুবক নুর মোহাম্মদ (২৪)। তার মা-বাবা যখন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিল তখন তার বয়স ছিল মাত্র ২ বছর।

ক্যাম্পে এনজিও পরিচালিত একটি স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে নুর মোহাম্মদ। সোমবার শরণার্থী শিবিরে গিয়ে দেখা গেল এই রোহিঙ্গা যুবক ল্যাপটপে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। জানা গেছে, নুর মোহাম্মদের মতো আরও ২০০ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরের ভেতরে ইন্টারনেট ব্যবহার করে। তাদের অধিকাংশই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর সঙ্গে জড়িত। কেউ হুন্ডি ব্যবসা, আদম পাচার, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সদস্য।

ক্যাম্পে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তারা দেশে-বিদেশে নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। একাধিক সূত্র জানায়, কুতুপালং ক্যাম্পে যারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত তাদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে এনাম, হেলাল উদ্দিন, আবদুল হামিদ, ডা. মিজান, নুর হোসেন, ইমাম হোসেন, মিয়া হোসেন, মুজাহেদ কুতুবী, এমদাদ হোসেন, জামাল উদ্দিন, বেলাল উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, জাহাঙ্গীর আলম, আবদুর রহমান, সেলিম ও হাসান শরিফ। সহযোগী হিসেবে কাজ করছে অনেকে। সূত্র জানায়, কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে তালিকাভুক্ত শরণার্থীর সংখ্যা ১০ হাজার ৪০০। অথচ নিবন্ধন ছাড়া আরও প্রায় ৮০ হাজার রোহিঙ্গা অবৈধভাবে বসবাস করছে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এই শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য গঠিত হয়েছে একটি ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটি। রোহিঙ্গা জঙ্গি নেতা মৌলভী শফিক ও নুরুল হক শতাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নিয়ে এই কমিটি পরিচালনা করছেন। তারাই শরণার্থী শিবির নিয়ন্ত্রণ করে। একইভাবে টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মোঃ ইসলাম ও জুবাইয়ের নেতৃত্বে গঠিত হয়েছে ৭০ সদস্যের ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটি। তারাই নিয়ন্ত্রণ করে শরণার্থী শিবির।

এখানে বসবাসরত প্রায় ১৫ হাজার রোহিঙ্গা তাদের কাছে জিম্মি। নয়াপাড়া শিবিরের কাছে লেদায় রয়েছে আরও একটি ক্যাম্প। এখানে অবৈধভাবে বসবাস করছে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা। একাধিক রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ এই ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করছে। সূত্র জানায়, টেকনাফের এ দুটি ক্যাম্প থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা সম্প্রতি অভিযান চালিয়ে কয়েকটি ল্যাপটপ জব্দ করেছে।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে বিদেশি কয়েকটি এনজিও কর্মকর্তাদের সম্পর্ক রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব সংস্থা সাহায্যের নামে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী জঙ্গিদের অর্থ জোগান দিচ্ছে। সম্প্রতি স্থানীয় প্রশাসন শরণার্থী শিবিরে মুসলিম এইডের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। আরটিএস, এসিএফ, এমএসএফসহ আরও কয়েকটি সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। সূত্র জানায়, ১৯৯৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি উখিয়ার পাহাড়ে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প থেকে গ্রেফতার হয়েছিল ৪১ জঙ্গি।

এই সময়ে ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র। ক্যাম্পে জঙ্গিদের সামরিক প্রশিক্ষক ছিলেন আরাকানের বুচিদংয়ের রোহিঙ্গা জঙ্গি নুরুল ইসলাম। এই জঙ্গি ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়ে অন্যদের সঙ্গে জামিনে বেরিয়ে আসে। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, জঙ্গি নুরুল ইসলাম এখন টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে রয়েছে। এখানে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে মিশে রয়েছে আবদুর রহিম, হাফেজ মুহাম্মদ আয়ুব, হাফেজ রফিকুল ইসলাম, জামাল হোসেন, মোঃ জাবের, মৌলভী আইয়ুব নদভীসহ আরও রোহিঙ্গা জঙ্গি।

টেকনাফের নয়াপাড়া ক্যাম্পে রয়েছে জঙ্গি গ্রুপের আমির মৌলানা জুবাইর আহমদ, কমান্ডার মৌলানা ছাবি্বর আহমদ ও মৌলানা ফরিদ উদ্দিনসহ আরও কয়েকজন। আরএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক জঙ্গি জানিয়েছে, রোহিঙ্গা জঙ্গিগোষ্ঠীলোর শীর্ষ নেতাদের তৎপরতায় মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপ থেকে বিশাল অঙ্কে তহবিল বাংলাদেশে আসে। স্থানীয়ভাবেও তহবিল সংগ্রহ করা হয়। এই টাকায় জঙ্গি গ্রুপগুলোকে সংগঠিত করার তৎপরতা চালাচ্ছে নেতারা। এই উদ্দেশ্যে আরএসও'র সামরিক শাখার দায়িত্বে নিয়োজিত জঙ্গি মৌলভী সেলিম, হাফেজ আইয়ুব কিছু দিন ধরে উখিয়া টেকনাফে অবস্থান করছে।

রোহিঙ্গা জঙ্গিদের অন্যতম শীর্ষ ব্যক্তি মৌলভী সেলিম, হাফেজ আইয়ুব, শাকিল জেহাদী, হাফেজ রশিদসহ অনেকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হলেও জামিনে বেরিয়ে ফের তৎপর হয়েছে। এর আগে কক্সবাজার সদর উপজেলার ভারুয়াখালীর একটি মাদ্রাসা থেকে মোহাম্মদ ইয়াহিয়া নামে এক রোহিঙ্গা জঙ্গিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ছাড়া কুতুপালং শরণার্থী শিবির সংলগ্ন বস্তি থেকে আবদুস শুক্কুর ও শামশুল আলম নামে দুই রোহিঙ্গা জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করে বাংলাদেশি পাসপোর্টসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাগজ। সূত্র: এছাড়া বিভক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলো নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে।

অস্ত্র কেনার জন্য তারা ৫০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহ করছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও), আরাকান মুভমেন্ট, আরাকান পিপলস ফ্রিডম পার্টি, আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এআরএনও), হরকাতুল জিহাদসহ কয়েকটি সংগঠন এখন একটি গ্রুপে কাজ করার জন্য একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে। আরএসও প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ ইউনুছ, রোহিঙ্গা নেতা ড. ওয়াকার উদ্দিন, আবুল ফয়েজ জিলানী, নুরুল ইসলাম, সালামত উল্লাহ, মোহাম্মদ শফি উল্লাহ, নাজমুল আলমসহ শীর্ষ কয়েক নেতা সম্প্রতি সৌদি আরবের রিয়াদে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে বিভক্ত রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে 'আরাকান রোহিঙ্গা ইউনিয়ন' (এআরইউ) নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে তৎপরতা চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নতুন সংগঠনটির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ড. মোহাম্মদ ইউনুছ, আবুল ফয়েজ জিলানী ও নুরুল ইসলামকে।

বৈঠকের পরপরই শীর্ষ নেতারা ৫০ কোটি টাকার তহবিল সংগ্রহে নেমেছেন। এ টাকায় অস্ত্র কেনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। রোহিঙ্গা জঙ্গিদের নতুন করে সংগঠিত করার জন্য শীর্ষ পর্যায়ের নেতা সালামত উল্লাহ গত মাসে সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। সূত্র:  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.