বাস্তবতা ফেরী করে বেড়াচ্ছে আমার সহজ শর্তের সময়গুলোকে
মোট শরণার্থী জনসংখ্যার প্রায় শতকরা ৫০ ভাগই নারী এবং কন্যা শিশু। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয় নারী শরণার্থীর সংখ্যা পৃথিবীতে অনেক বেশি। সমাজনীতি, পারিবারিক গঠন, অর্থনৈতিক কাঠামোসহ নানা কারণে নারীরা বিশেষভাবে অরক্ষিত। দীর্ঘ জীবনে তাদের নানা ধরনের সংগ্রাম করে বেচে থাকতে হয়। নারী শরণার্থীদের জীবনযাপনের মান খুবই নিম্ন।
প্রতিনিয়তই নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হতে হয় তাদের। যৌন নিপীড়নের শিকার তাদের প্রায়ই হতে হয়। এতোসব প্রতিকূলতা আর সমস্যার পরও শরণার্থী নারীরা সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখে। নিরাপদ আবাস খুজে পেতে চায় তারা। পাশাপাশি পেতে চায় জাতি-পরিচয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী যখনই কোনো অঞ্চল থেকে লোকজন শরণার্থী হয়ে যায় অর্থাৎ আবাসস্থল হারিয়ে ফেলে (যুদ্ধ-বিগ্রহ বা অন্য কোনো কারণে) তখন সেখানকার মোট জনসংখ্যার শতকরা ৭৫ ভাগই থাকে নারী এবং শিশু। গত কয়েক বছর ধরে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশন নারী শরণার্থীদের সমঅধিকার নিশ্চিত করতে বেশ কিছু বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে অরক্ষিত নারী শরণার্থীর বড় একটি অংশের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। বিশ্ব শরণার্থী দিবস পালনের দ্বিতীয় বছরই প্রতিপাদ্য বিষয় নির্বাচন করা হয় শরণার্থী নারী। এর মাধ্যমে শরণার্থীদের ক্ষেত্রে নারীর অধিকারকে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
২০০২ সালে বিশ্ব শরণার্থী দিবসে নারী শরণার্থীদের সমস্যা, প্রতিকূলতা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা হয়। কারণ এ শ্রেণীর লোকই বেশি প্রতিকূলতার সম্মুখীন।
আজ থেকে ৫৬ বছর আগে অর্থাৎ ১৯৫১ সালে কূটনীতিক নেতৃবৃন্দ সুইস সিটি জেনিভাতে একত্রিত হয়েছিলেন। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রিফিউজি কনভেনশন তৈরি করা। সে সময় তারা শরণার্থীর সংজ্ঞা টেনেছিল।
১৯৫১ সালের রিফিউজি কনভেনশনটি ম্যাগনাকার্টা ইন্টারন্যাশনাল রিফিউজি ল নামে পরিচিত। সে সময় শরণার্থীর সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে কূটনীতিক নেতৃবৃন্দ একবারও জেন্ডার সংবেদনশীলতার কথা ভাবেননি। নারী শরণার্থীদের দিকে আলাদাভাবে নজর দেয়া উচিত, এ বিষয়টি তখনকার আলোচনায় আসেনি। এরপর অনেক সময় বয়ে গেছে। সময়ের পরিক্রমায় নারীদের ইসুর দিকে মনোযোগের ধারা পরিবর্তিত হয়েছে।
এখন আগের চেয়ে নারী শরণার্থীদের প্রতি বেশি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। তাদের বিভিন্ন প্রতিকূলতা যাচাই করে দেখছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।
১৯৮৪ সালে ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্ট সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে প্রথমবারের মতো নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণীর নারীদের রিফিউজি স্ট্যাটাসের গুণাবলি নির্ধারণ করতে সুযোগ দেয়। এ জন্য পার্লামেন্ট যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করে। উন্নত দেশগুলোতে কড়াকড়ি নিয়মের কারণে শরণার্থীরা নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়।
ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন পার্লামেন্টের এই পদক্ষেপ সে ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও স্বস্তি নিয়ে এসেছে। তবে তার মানে এই নয়, শরণার্থী নারীদের সে অঞ্চলে সব অধিকার বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। এখনো অনেক ক্ষেত্রে শরণার্থী নারীরা অবহেলিত।
বেশ কিছু দেশ নিজস্বভাবে অনেক ধরনের নারী সমস্যার ক্ষেত্রে নিজস্ব গাইড লাইন অনুযায়ী মামলা পরিচালনা করে। এসব দেশ শরণার্থী নারীদের নানা ধরনের অধিকার বাস্তবায়নে কাজ করে।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশন নারী শরণার্থীদের বিভিন্ন ইসুতে কাজ করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনও এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ধর্ষণকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে প্রথম দ- দেয়া হয় ২০০১ সালে ইউএন ওয়ার ক্রাইমস ট্রাইবুনালে। যুদ্ধ চলাকালে নারীরা ধর্ষণের শিকার হচ্ছেন।
শরণার্থী হিসেবে কোথাও আশ্রয় নেয়ার সময়েও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন। এটি রুখতে জোর ভূমিকা রাখতে পারে ২০০১ সালে দেয়া সেই দন্ডাদেশ। শরণার্থী নারীদের পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার বিষয়টি গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে এর জন্য কঠিন শাস্তি বিধানের জন্য কাজ করে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট কিছু কিছু ক্ষেত্রে রায় প্রদান করেছে।
যুদ্ধের সময়টি নারী শরণার্থীদের জন্য খুবই কষ্টকর সময়।
যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণে পৃথিবীতে প্রতিনিয়তই শরণার্থী নারীর সংখ্যা বেড়ে চলছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বিপুল সংখ্যক নারী শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল পার্শ্ববর্তী দেশ ইনডিয়ায়। তবে আশার কথা ছিল এর বেশির ভাগই পরে নিরাপদে ফিরতে পেরেছিলেন নিজ বাসভূমে। এভাবে প্রতিনিয়তই যুদ্ধের কারণে নারী আবাসস্থল হারাচ্ছেন। অনেকেই আবার কখনোই ফিরতে পারেন না নিজ দেশে।
জীবনের অনেকটা বছর কাটিয়ে দিতে হয় জাতিসত্তার পরিচয় ছাড়া। নারী শরণার্থীদের জন্য স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, শিক্ষার হার বৃদ্ধি এবং যৌন নিপীড়ন থেকে রক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনেতিক ক্ষেত্রে তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ করে দিতে হবে। তবেই আসবে শরণার্থী দিবসের প্রকৃত সফলতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।