নাম ধরে ডাকি
স্বপ্নের ভেতর ভোরের আযানের মতো বাক দেয় লাল মোরগ
আমি তখন আহত পাখির মতো ছটফট করে নাম ধরে ডাকি!
এত অনাহুত দুঃখ কোথায় রাখি? তেড়ে আসে শকুনের চোখ
ট্রাকভর্তি রাশি রাশি বেওয়ারিশ স্বজনের দ্রুতগামী কান্না।
কোথায় লুকাই?
কেবল নাম ধরে ডাকি। যদি একবার মুখ তুলে তাকাও
বেঁচে যায় হাজার বছর দূরত্বের রাস্তা পারের কষ্ট
মুছে যাই রক্তের ক্ষত। যা কিনা গতকাল
রাজপথে ঝরিয়েছিল আমাদেরই বখে যাওয়া প্রিয় স্বজন।
একবার।
শুধু একবার।
প্রাচীন বৃক্ষের মতো মানুষের ছায়াতলে দাঁড়াও
কৈশোরে প্রেমিকা হারানোর বেদনায় যে জজমিয়া
গভীরজলে মাছের মৈথুন দেখে
সে নিশ্চিত সংসারি হবার আশায় কন্যা দেখবে!
একবার। শুধু একবার। মুখ তুলে তাকাও
আমি প্রভুভক্তির মতো চিরদিন তোমার নাম ধরে ডাকবো
হিজলগাছের তলে সিন্নি দেবো প্রতি মঙ্গলবার!
১১.০৬.১২
আগারগাঁও, ঢাকা
লজ্জাবতীগাছ হতে ইচ্ছে করে
আয়নার সামনে দাঁড়ালে
লজ্জাবতীগাছ হতে ইচ্ছে করে। কেননা,
প্রতিবিম্ব হয়ে আয়নায় ভেসে আসে যে মুখÑ
সে নিশ্চিত আমি নই।
আমার ছেলেবেলায় হারিয়ে যাওয়া
বানরের মুখোশ। কিংবা সুন্দর আলীর দোকানে
ঝুলে থাকা প্রেমিকার তেল চটচটে লালফিতে!
তারপরও নিজেকে মুখস্থ করি
পড়ি কি সুন্দর মিথ্যার নামতা। আর
অহঙ্কারের গোপন চিঠি!
তুমি তখন আনতমুখে
আবিষ্কার করো আদিম গন্ধ! কিংবা
হাতকে বিশ্বাস করে
মুখের দিকে সড়াও সন্দেহের দৃষ্টি!
আমার মনে পড়ে আয়নায় ভেসে আসা
নিজের মুখ অথবা
প্রিয় সন্তানের গুম হওয়া শৈশব।
কোথায় মুখ ঢাকি বলো?
চারদিকে বাড়ন্ত চালের মতো বাড়ছে আগুন!
খুব ভয় হই।
হাতকে বিশ্বাস করা দায়!
চোখকে বিশ্বাস করা দায়!
এমন কি সবচেয়ে গোপনীয় অঙ্গকেও
বিশ্বাস করা দায়!
তুমি কী আমায় বিশ্বাস করো?
১০.০৬.১২
আগারগাঁও, ঢাকা
বৃষ্টি বৃষ্টি আহা! কেবলি বৃষ্টি!
যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল, তারা মানুষের পরম আত্মীয়
যারা বৃষ্টির আশায় ধ্যানমগ্ন, তারাও পরম আত্মীয়;
একদিন এইখানে পা রেখেছিলাম
বৃষ্টিতে ভিজবো বলে
যারা ভিজেছিল তারাও এসেছিল
আমাকে স্বাগত জানাতে।
যারা ভিজেনি তাদেরও আফসোস ছিল
আমার সঙ্গী হবার।
তুমি তখন পানপাতায় সেঁকে নিচ্ছো
আধুনিক গানের গলা।
কাল সন্ধ্যা ছ’টায় টাউন হলে
নিলামে উঠবে তোমার বেদনা।
কিংবা আমার পূর্বপুরুষের কিংবদন্তির কথা।
অথচ বৃষ্টিতে ভিজবো বলে
তোমার পাশে দাঁড়িয়েছিলাম।
বৃষ্টিতে ভিজবো বলে
পিতার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে
প্রার্থনায় মগ্ন ছিলাম।
বৃষ্টিতে ভিজবো বলে
অবহেলিত বাউলের মজমায় বিচ্ছেদি গান বেঁধেছি।
ভুলে গেছ কি তুমি?
ভুলে গেছ কি সেই সাহসী উচ্চারণÑ
‘বৃষ্টি পড়ছে পড়–ক
কৃদৃষ্টি সরুক’
‘বৃষ্টি আসলে ভিজবো দুজন
বৃষ্টিতে ভিজে কেবল সুজন’
বৃষ্টি বৃষ্টি আহা! কেবলি বৃষ্টি!
০২.০৬.১২
আগারগাঁও, ঢাকা
ভালোবাসা ধর্ষিতা কোনো নদীর নাম
মুখোমুখি বসলে অস্বাভাবিক দূরত্বও
কমে আসে।
নামে বৃষ্টি! ফলবতী হয় বৃক্ষ।
আর তুমি? ভুলে ভরা পাঠ্য বইয়ের মতো
প্রতিদিন দুর্বোধ্য হয়ে উঠছো
যেন ন‘টা পাঁচটার বাধ্যতামূলক অফিস।
অথচ একটা শিশুর কথা ভাবোÑ
সেও রোজনামচা ফেলে
আঁকে গাঁয়ের ছবি ।
মায়ের লাল চোখ দেখেও
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে
অচেনা পথের স্বপ্নে।
আমি তখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখি
তেড়ে আসে জল্লাদ সময়
খসে পড়ে লাল ফিতেয় মোড়ানো
জরুরি আলাপের গোপনীয়তা!
এমন আগুন কালে মানুষের গন্তব্য কতদূর বলো?
যেখানে শিশুর কোমলতাকেও তাড়া করে জননীর স্বপ্ন
আর ভালোবাসা?
সে তো শুকিয়ে যাওয়া ধর্ষিতা কোনো দূরের নদী।
২৭.০৩.১২
মগবাজার, ঢাকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।