জীবনের জন্যই এই সব কথামালা
ইহা একটি খসড়া সংরক্ষন পোস্ট। গত কয়েকমাস যাবত না পোস্টানোর মত পোস্টগুলোর সংরক্ষন বলা যায়। সমভাবনার আধিক্য তাই অত্যধিক।
অ.
ঘনঘনে অন্ধকার নামলে বিষন্নতা বলো
প্রবল শোকে পৃথিবী যখন শব্দ হারায় -
আর জেগে থাকে নিঃসঙ্গ মানুষের সারথী
আহত পাতাদের বুক থেকে রক্ত ঝড়ে -
আকাশ-মাটি জুড়ে নামে বেদনার ঘ্রান,
শরীরে লেপ্টে নিয়ে বলি এ রাত আমার।
শৈশবে আকাঙ্ক্ষা ছিলো এখনো আছে
স্বপ্নের বিপরীতে মৃতপ্রায় উচ্ছিষ্ঠ ঘাসে
অবিমিশ্র দ্বন্দ্বে আমাকে পোড়াও মহাকাল
জাগ্রত সময়ের মানে বুঝে কোন সকাল?
নির্বাসন বিরহে জড়াইনি ভুল তৃষ্ণায়...
বহুব্রীহি সময়ের রাত্রি কেবল সঙ্গী আমার।
রাত্রিকে চিরস্থায়ী করো হে সময়াধিপতি
গভীর দীক্ষায় তাকে করো অবিরল ধারা
টানাপোড়েনে দীর্ঘ হোক হাহাকার লিপি,
অনাত্মীয় আলো দেখুক অন্ধকারের মহিমা।
(রাত্রি)
আ.
বিষন্নতার নীল জলে টিপটিপ বৃষ্টি নামে
একাকী প্লাবনে রক্ত কণায় দুঃখের বাস
ঘোরলাগা সময়ের হাত জ্বলে ছাইভস্মে
বিনিদ্র রাত্রি করে কবিতাশ্রমের সুখগ্রাস।
তুমুল জ্বলে ছাই পোড়া স্মৃতির দীর্ঘ শহর
আদিগন্ত বিচ্ছেদ জাগিয়ে তুলে গায়েন -
নিশ্চিহ্ন প্রায় বাঁশির ঠোঁটে ঘরে ফেরা গান
কেউ জানেনা কোথায় হয় সুখ নবায়ন।
আহ ব্যাকুলতা নিঃশব্দে করেছ সর্বনাশ
ঝড়-ঝঞ্ঝাটে হেলায় নিয়েছ স্বচ্ছ-দর্শন,
সৌন্দর্্যেতর মিথ্যে রুপ-লোভে করেছ দাস
নতজানু আমায় মৃত্তিকা-জলে করো নাশ।
(বিষন্নতা)
ই.
মৌন রাত কেটে যাবে জল স্পর্শে
মেঘ ধরেছে ভীষন, বৃষ্টি আসন্ন -
ও পাড়ে ঘুমায় বনসাই-বট-পাহাড়
আমার চোখে ঘুম কই?
সুশীতল অন্ধকারের অন্য নাম মৃত্যু
প্রেমিকার নাম জপে যে হয়রান -
সুখ তার অদৃশ্য, তবুও ভীষণ সুখ
আমি এসবের কিচ্ছু না।
ঠিকানা ছিলো না কোনকালেও তাই
চিঠি আসে না সুদূরের -
বুকের বা পাশে পায়চারি করে শূন্যতা
দুঃখবোধের কাছে বেঁচে থাকার ঋণ।
অচেনা মুখের মত বিস্ময় নিয়ে ভোরে
আমি খুব করে হারিয়ে যাব -
রাত্রির কাছে যে মিনতি ছিলো আপ্রাণ
নির্ঘুম চোখ ভুলে গেছে হায়।
ঘুম কই এই মধ্য রাত্তিরে,
কত প্রার্থনা মরে যায় চোখ বুজার অপেক্ষায়।
(ঘুম প্রত্যাশায় নির্ঘুম)
ঈ.
নিশীথ নির্ঘুম যে যুবক,
তারে তুমি ঘুম দিও,
ঘুমে ভরা ওম দিও,
দিও চোখ ভরা স্বপ্নের খোঁজ।
জীবনে যার অতৃপ্তি ছেয়েছে
ওষ্ঠে তুমি চুম্বন দিও,
নক্ষত্রের লাজুক স্পর্শ দিও,
দিও মনিহারি আনন্দের খোঁজ।
নৈঃশব্দকে যে আপন ভাবে,
তারে তুমি সঙ্গী করো,
চোখে চোখে গল্প লিখে,
আকাশ সমান আনন্দ দিও।
ভবঘুরে সেই যুবককে,
বুক ভরা আশ্বাস দিও,
জীবন নামের অবিরল নদীতে
সাঁতার কাটতে শিখিয়ে দিও।
(তোমার কাছে চাইছি যা)
উ.
এক বিন্দু জল ফিরে যাবে তার উৎসমুখ
নাড়ীর টান তাকে ফেরায় দীর্ঘতম নদ
হে স্পর্শ, নিবিড় বাঁধন, রক্তে রক্তে টান
জন্ম ঘাটে নৌকা রাখায় কোন সে ক্ষতি?
অলৌকিক বাঁচায়, ঐশ্বরিক রকমফেরে
একবিন্দু জলের জন্য প্রাণ খেলে নদীর;
ফিরে আসছি স্পর্শে, প্রৌঢ় মুখের মায়ায়
মৃত্যুর মত নিখাদ সত্যের মেঠো ছায়ায়
অনন্ত সময়ের সংকীর্ণ খাদ কি অপরূপ
পৃথিবী বাঁচে কেবলই ফিরবে বলে গোঁড়ায়।
(উৎস)
ঊ.
চলা থেমে গেছে সন্ধ্যার স্থবিরতায়
পথ, তুমি চলেছ কোথায়!
কোন বারান্দায় তুমি আলোর গান
দৈবিক সময় টানো খাতায়।
দীর্ঘতম পথ জুড়ে মানুষের মিছিল
কেউ জানে না প্রকৃত উদ্দেশ
সন্ধ্যার গন্ধমাখা শ্মশান উৎসব যেন
উদাসী জন্মের বিক্ষিপ্তরেখার রেশ।
দুরন্ত শব্দের মুখে স্তব্ধতার মিছিল
বুকের তিতাস জুড়ে অস্থির ঢেউ
আর্তনাদের হদিস জানে নির্ঘুম রাত্রি
পূনর্জন্মের উপায় জানে না কেউ।
পথ, তুমি চলেছ কোথায়!
ছাইপাশ আমাকে টানো অসীম রেখায়।
(পথ চলেছ কোথায়)
ঋ.
বরং কবিতায় মোহগ্রস্থ হোক বালক
বিষন্নতার ঝুপড়ি আস্তাকুড়ে ফেলে নিঃশ্বাস নিক শব্দে
বলুক, আমাদের গভীরতম জীবনবোধের অন্য নাম কবিতা।
জীবনবোধের কথা হোক এক আস্ত বিকেল,
কথা হোক হাসি খেলায়, সহজ-কঠিন পথচলায়
কবিতার শয়নপিঠে আয়েশী ঘুমের ভানে উচ্চারিত হোক
জীবনের দূর্বোধ্যতার সহজ বর্ণনার নাম কবিতা।
উচ্চারিত হোক, জ্যোৎস্না আর জোনাকির লুকায়িত শব্দের
বুকের মাঝে আগুন জল রেখে নেচে উঠুক লৌকিক দেহ
প্রবল উত্তাপ আর ছাই-সন্ধ্যার সুগভীর সম্মুখ দেখে অনঢ়
বালক দীপ্ত ঠোঁটে জানিয়ে দিক, দিনান্তেও দিনের ভ্রুণ ঘুমোয়।
কবিতার কথা হোক, কথা হোক মানুষের বিচিত্র জীবনের
সুর খুঁজে হয়রান সিরাজ ঘোষিত হয় এক মাথাখারাপ পাগল,
বালক লিখুক তার কথা, যে থাকে ঘুমায়ে শ্মশানের শ্বাস শুঁকে
তার দীপ্ত চোখ খুঁজে নিক লক্ষ-কোটি মানুষের সাধারন কিন্তু বিচিত্র
জীবন।
(বরং কবিতা হোক)
উৎসর্গঃ কবিদের কবিতা উৎসর্গ করা উচিত। কিন্তু আমি কবিতা কিভাবে লিখি! তাই খসড়া সব অ-কবিতা উৎসর্গ করছি কবিতা অন্তঃপ্রান সোনালী ডানার চিল ভাইকে। উনি শুধুই মুগ্ধ করা সব কবিতার কবি নন, চমৎকার এক মানুষও। এই খসড়াগুলোয় এক আধটু ভাল লাগলে ভালো।
আর না হয়, কবিকে উৎসর্গ করার মত কিছু লিখতে পারার স্বপ্নরা তো থাকেই।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।