পথেরও ঘর আছে
আমি কেবলি ভুল পথে হাঁটি
জানি, পথের কোনো দোষ নেই। কেননা
পথেরও ঘর আছে। আছে পাতার সংসার।
তুমি কোনদিকে যাবে?
সব পথই ঘরমুখো বেড়ালের
সতর্ক দৃষ্টি দিয়ে তোমাকে পাহারা দিচ্ছে। আর
ধরে রাখছে স্মৃতিচিহ্ন!
কতদূর যেতে পারো তুমি? জানো তো,
সভ্যতা তলিয়ে গেলেও জেগে ওঠে শতাব্দীর পর।
কেন মিছিমিছি আলো-অন্ধকারের খেলা?
প্রাচীন নগরগুলো আজ আবার জেগে উঠছে।
লুকাতে চাও লুকাও।
আমি পথকে কোন দোষারোপ করবো না। কেননা
লক্ষীন্দরের বাড়ি ফেরার ইতিহাস সবার জানা!
১৫.০২.১২
আগারগাঁও, ঢাকা
আনন্দগান
আলোর উপর চোখ পড়লে
মনে পড়ে আদি পিতার প্রার্থনার গান
মনে পড়ে রাত্রির নিঃসঙ্গতায়
একদিন আমিও সঙ্গী ছিলাম।
কতদিন এইভাবে করাল অন্ধকারকে নিয়ে বেঁচে আছি
তুমি তখন নিজের সঙ্গে আলাপনে ব্যস্ত।
অথচ,
খুব বেশি দূরে নয় প্রাচীন গ্রাম চম্পকনগর।
তারপরও যাওয়া হয়নি।
জানি পথের বাঁকে পড়ে আছে
আমার জন্য পূর্বপুরুষের আনন্দগান।
তারা তালপাতার পুঁথিতে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন
আমার নাম।
আর আমি?
লেমনচোষ মুখে দিয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে আছি
পশ্চিমের জানালা দিয়ে পূর্ণিমা রাতে
আমাদের জন্য ফের আসবে ভালোবাসার ভিউকার্ড!
তোমার বাড়ির আঙিনার ডাকবাক্স খোলা রাখবে তো?
১৬.০২.১২
আগারগাঁও, ঢাকা
রাত্রির গান
০১.
অনাকাঙ্খিত শর্ত মেনে তোমার পাশে দাঁড়িয়েছি
বাইরে ভীষণ কুয়াশা।
তুমি তখন ওমের মুরগীর মতো
শরীরে জড়িয়ে রেখেছো সবুজ রঙের খাম
কিংবা ধুলোমাখা হৃদয়।
কি পেয়েছো, কি পাওনি
মূর্খের মতো এসব খুঁজতে যাওয়া
কেবল বামনের কাজ
তারপরও অন্ধগলিতে রাতকানা মানুষ হাঁটে
দীর্ঘ হয় ছায়ার শরীর।
তুমি কি দেখতে পাও?
০২.
আলোর নাচনে নিজের সঙ্গে কেবল ভণিতা করা যায়
সব জানে রাত্রির দীঘল অন্ধকার।
কেন শুধু শুধু নিজের সঙ্গে যৌন যৌন খেলা?
জান তো আলোর শরীরে জড়িয়ে আছে যে গান
তা কেবলি উজ্জ্বল মুখের আহার! আর
অন্ধকার পথ মাড়িয়ে নতজানু হয় যে মুখ
সে গান করে বেলা অবেলার!
০৩.
কালো গাভীর পানানো ওলানের মতো
রাত ভারি হলে শুরু হয় জোনাকির কান্না!
বাবার চোখে তখন জিউল মাছের উজ্জ্বলতা
আর মা কেদে ওঠেন ডুকরে ডুকরে
উজ্জ্বলতা তার দুচোখের বিষ!
তুমি ঠিক তার বিপরীত
হংসযুগলের মৈথুন পরবর্তী সজিবতা নিয়ে
চুল বেণি করো
মুখের ওপর আলো-ছায়া
আর চোখের নীচে রাতের দীর্ঘশ্বাস।
তবুও আলো আসে আমাদের জীবনে
আসে অন্ধকার
কেবল মায়ের কান্না থামে না।
ও রাত তুমি কি এনে দিতে পার না
মায়ের জন্য আরেকটু অন্ধকার
কিংবা আনন্দগান।
২০.০২.১২
আগারগাঁও, ঢাকা
আয়ু রেখা মুছে গেলে
আয়ু রেখা মুছে গেলে খুলে যায় অক্ষমতার দরোজা।
তেঁড়ে আসে অযাচিত উৎপাত। অচেনা মুখ,
কিংবা দৈনিক খবরের রাশিফল।
আমি তখন পাঠ করি নিজের
অভিজ্ঞতা
আস্থা রাখি মানুষের উপর
রাখি পায়ের উপর পা।
আমার মনে পড়ে পিতৃপুরুষের মুখ
তিনি অসীম আকাশের দিকে তাকিয়ে
মাটির উর্বরতার কথা বলতেন।
তিনি বলতেনÑ
কাঠের সিন্দুকে রক্ষিত ভূজ্যপত্রে লেখা
ইতিহাসের পরম্পরার কথা।
কি করে ভুলে যাই?
আমার চোখ পড়ে আয়নার উপর
নিজেকে দেখি পায়ের মাপে।
প্রতিবিম্বিত হয় আয়না ও পা।
ভুলে যাই আয়ু রেখা
জন্ম মৃত্যু কিংবা নিজের নাম।
কেননা
আমার জন্য কলঙ্ক মাথায় নিয়ে
দাঁড়িয়ে আছে যে মেয়েটি
তারচেয়ে বড় কোনো সত্য নেই!
১৫.০৩.১২
মগবাজার , ঢাকা
এত অসহ্য যন্ত্রণা কার ভালো লাগে?
লোডশেডিংয়ের ভারে নগর ক্লান্ত হয়ে পড়লে
তুমি নিশ্চিত হাসফাস করো।
কানের কাছে ফিরে আসে তাড়িত মশার গান।
কোথায় যাবো?
ঘুমাতে গেলে স্বপ্নের ভেতর
জেগে থাকতে হয় আধমরার মতো
মাঝ রাত্তিরে ফণা তুলে বিষধর সাপ
তখন পলাতক আসামির মতো
উঠতে হয় মগডালে।
এত অসহ্য যন্ত্রণা কার ভালো লাগে বলো?
তাড়া করে নিরীহ মশা
তাড়া করে বেওয়ারিশ লাশের দীর্ঘ নীরবতা
তাড়া করে জলপাই রং!
এত কিছুর ভীড়ে তোমার চোখের পাতাজোড়া
কি এক হয়? কিংবা
এখনো কি নিয়ম করে রেওয়াজ করো?
১৮.০৩.১২
কারওয়ান বাজার. ঢাকা
ভালোবাসা ধর্ষিতা কোনো নদীর নাম
মুখোমুখি বসলে অস্বাভাবিক দূরত্বও
কমে আসে।
নামে বৃষ্টি! ফলবতী হয় বৃক্ষ।
আর তুমি? ভুলে ভরা পাঠ্য বইয়ের মতো
প্রতিদিন দুর্বোধ্য হয়ে উঠছো
যেন ন‘টা পাঁচটার বাধ্যতামূলক অফিস।
অথচ একটা শিশুর কথা ভাবোÑ
সেও রোজনামচা ফেলে
আঁকে গাঁয়ের ছবি ।
মায়ের লাল চোখ দেখেও
নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে
অচেনা পথের স্বপ্নে।
আমি তখন আয়নায় নিজের চেহারা দেখি
তেড়ে আসে জল্লাদ সময়
খসে পড়ে লাল ফিতেয় মোড়ানো
জরুরি আলাপের গোপনীয়তা!
এমন আগুন কালে মানুষের গন্তব্য কতদূর বলো?
যেখানে শিশুর কোমলতাকেও তাড়া করে জননীর স্বপ্ন
আর ভালোবাসা?
সে তো শুকিয়ে যাওয়া ধর্ষিতা কোনো দূরের নদী।
২৭.০৩.১২
মগবাজার, ঢাকা
আমায় কি কেউ খুঁজবে না
কেচো খুড়তে সাপ নয়
পেয়েছে তোমার মুখাবয়
স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছো তুমি
পরনে নাগরিক পোশাক
পাশে পড়ে আছে রৌপ্য মুদ্রা,
মৃতপত্রে তোমাকে লেখা আমার শেষ চিঠি
সেও হাজার বছর আগের কথা।
তোমার হাতের সুনাম তখন সারা ইউরোপ জুড়ে।
তারপর... একদিন
আঙুলের উপর রেখেছি আঙুল
নোঙর করা জাহাজের তলদেশে
ডুব সাতারে লুকিয়েছি বহুবার।
তখনো অসমরাজার গড়ে আলো জ্বলেনি। অথচ
আজ এই সন্ধ্যায়
তোমাকে লেখা চিঠি পড়ছে
তোমারই উত্তরপুরুষ। আর আমি?
এখনো অদৃশ্য!
আমায় কি কেউ খুঁজবে না।
কিংবা
তোমারও যে সঙ্গী ছিলো একথা কেউ ভাববে না?
০৮.০৪.১২
মগবাজার, ঢাকা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।