আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তৌফিক ইলাহি নিজেই দেশদ্রোহী: তার জ্বালানি অপরাধের তালিকা

দেশদ্রোহ বলতে বোঝায় দেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ। সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করলে সেটাকে দেশদ্রোহ বা রাষ্টদ্রোহ বলার কোন সুযোগ নাই, সেইটা বড়জোর "সরকার দ্রোহ"। দেশদ্রোহ বলতে যদি দেশের জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করা হয়, তা হলে এই মুহূর্তে যেই ব্যাক্তিটি সবচেয়ে বড় দেশ দ্রোহী হিসেবে সাব্যস্ত হবেন তিনি হলেন প্রধান মন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহি চৌধুরি। অথচ কুইক রেন্টাল বিরোধীতা কারীদেরকে তিনি দেশ দ্রোহী হিসেবে সাব্যস্ত করে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন। আমি এখানে তৌফিক ইলাহি চৌধুরিকে জ্বালানি অপরাধী ও দেশদ্রোহী আখ্যায়িত করার পক্ষে যুক্তি ও প্রমাণ হাজির করছি এবং গণ আদালত গঠন করে এই ঘৃণ্য জ্বালানি অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি যেন ভবিষ্যতে আর এরকম জ্বালানি অপরাধ করার সাহস না পায়।

অপরাধ ১: মাগুর ছড়া বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ থেকে বহুজাতিক অক্সিডেন্টালকে দায়মুক্তি তৌফিক ইলাহি তখন জ্বালানি সচিব। ১৯৯৭ সালের ১৪ই জুন বহুজাতিক অক্সিডেন্টালের অদক্ষতা ও অবহেলার কারণে মাগুড়ছড়া গ্যাস ফিল্ডে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে এবং হাজার হাজার কোটি টাকার গ্যাস নষ্ট হয়। সরকারের পক্ষ থেকে মাগুরছড়ার ক্ষতিপূরণ আদায় করা দূরে থাক, এই ক্ষতির রিপোর্ট তৌফিক ইলাহি জনসমক্ষে প্রকাশ হতে দেননি। তদুপরি তিনি সংসদীয় কমিটির নিকট তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বহুজাতিক কোম্পানিকে উপস্থিত করার দায় থেকে মুক্তি দেবার ব্যবস্থা নেন। মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড বিস্ফোরণ ঘটনায় জড়িত বহুজাতিক কোম্পানি অক্সিডেন্টালকে বিচারের উর্ধ্বে রাখেন এবং দেশত্যাগে সহায়তা করেন।

তাছাড়া অক্সিডেন্টালের সাথে সম্পাদিত সম্পূরক চুক্তি ১৯৯৮ সম্পাদনকালে মাত্র ৫% অতিরিক্ত গ্যাস শেয়ারকে বিস্ফোরণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেখানোর প্রস্তাব কৌশলে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের নিকট থেকে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ব্যক্তিগতভাবে আদায় করেন এবং উক্ত প্রস্তাব অনুযায়ী চুক্তি সম্পাদিত হয়। ফলে মাগুরছড়া গ্যাসফিল্ড বিস্ফোরণে বিরাট ক্ষতিপূরণ আদায়ে আইনীপথ বন্ধ হয়ে যায়। অপরাধ ২: বহুজাতিক নাইকোর সাথে দেশের স্বার্থ বিরোধী চুক্তি সম্পাদনে তদবির শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে নাইকো দুর্নীতি মামলা দায়ের কার হয়েছিলো তার ৪ নং আসামি হলো তৌফিক ইলাহি চৌধুরি। অভিযোগ হলো: ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী নাইকোর সকল অবৈধ প্রস্তাব পাশ করার ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা রাখেন। নাইকো পিএসসি'র বিডিং-এ অযোগ্য ঘোষিত হলেও তাদেরকে একতরফাভাবে কাজ দেবার জন্য সম্পূর্ণ বেআইনীভাবে টেংরাটিলাসহ ৩টি গ্যাসফিল্ড নাইকোর আবদার মত তার হাতে তুলে দেয়ার প্রক্রিয়া ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী শুরু করেন এবং দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে তিনি নাইকোকে আর্থিকভাবে লাভবান হতে সাহায্য করেন।

অপরাধ ৩: বহুজাতিক এশিয়া এনার্জির হাতে ফুলবাড়ির কয়লা তুলে দেয়ার চুক্তি উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ফুলবাড়ির কয়লা উত্তোলণে এশিয়া এনার্জির দালালি করেছেন তৌফিক ইলাহি চৌধুরি। ইউকিলিকস এ মার্কিন রাষ্ট্রদূতের শিকারোক্তি থেকে দেখা যায় এশিয়া এনার্জি কোম্পানিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদ্বারিত্ব ৬০%। তৌফিক ইলাহি চৌধুরি সংসদীয় পদ্ধতি ব্যাবহার করে ফুলবাড়ি কয়লা খনির পক্ষে জনমত গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত কে: The Adviser remarked that the proposed coal mine in Phulbari was politically sensitive, in light of the impoverished,historically oppressed tribal community residing on the land.....He said the government would seek to ensure the rights of the local community and build support for the project through the parliamentary process. Click This Link অপরাধ ৪: মার্কিন বহুজাতিক কনোকোফিলিপস এর হাতে সাগরের গ্যাস ব্লক তুলে দেয়া উইকিলিকস এ মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস মরিয়ার্টির শিকারোক্তি থেকে দেখা যায়, প্রধান মন্ত্রীর জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহি চৌধুরি সাগরের গ্যাস ব্লক কনোকোফিলিপস এর হাতে তুলে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন এবং রাতারাতি তাই বাস্তবায়িত হয়েছে: The Adviser told the Ambassador during a meeting on July 23 that Conoco Phillips would likely be awarded the two uncontested offshore blocks for natural gas exploration. Click This Link অপরাধ ৫: মার্কিন বহুজাতিক শেভরণের দালালি মার্কিন বহুজাতিক শেভরণকে বিবিয়ান গ্যাস ফিল্ড পাইয়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও তৌফিক ইলাহির অবদান আছে। উইকিলকসে পুরো গ্যাসফিল্ডের ব্যাপারে কথা না থাকলেও দেখা যায়, বিনা টেন্ডারে শেভরণকে কম্প্রেসার স্থাপনের কাজ দেয়ার খবর দিচ্ছেন জ্বালানী উপদেষ্টা তৌফিক ইলাহি চৌধুরি: Chowdhury replied that the GOB was on the verge of giving Chevron permission to go ahead with one of the three compressors necessary. (Note: Tenders are being invited for the other two compressors, though Chevron states that it is not interested in bidding on the remaining two compresssors. End note.) Click This Link অপরাধ ৬: ভারতীয় কোম্পানির এনটিপিসি’র স্বার্থে সুন্দরবনের পাশে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন খোদ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে বনাঞ্চল, কৃষিজমি এবং আবাসিক এলাকার পাশে ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসি’র বিভিন্ন প্রকল্প বাতিল হয়েছে, সেখানে বাংলাদেশের পরিবেশ আইন ভঙ্গ করে সুন্দর বনের ৯ কিমি এর মধ্যে, ১৮৩৪ একর কৃষি জমি জবর দখল করে ১৩২০ মেগাওয়াগের কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র বসানোর ব্যাবস্থা করেছেন তৌফিক ইলাহি চৌধুরি যে বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনার দ্বায়িত্বও ভারতীয় কোম্পানি এনটিপিসির হাতে তুলে দেয়া হবে। অপরাধ ৭: কুইক রেন্টালের মাধ্যমে কুইক লুটপাট বিদ্যুৎ সংকট নিরসনের নামে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে তৌফিক ইলাহি চৌধুরি নজির বিহীন লুটপাটের ব্যাবস্থা করেছেন: ১) রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টের মালিকদেরকে ভর্তুকি মূল্যে জ্বালানি তেল সরবরাহ করে জনগণের অর্থ অপচয় ও লুটপাট ২) রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ৭ টাকা এবং ১৪ টাকা দামে বিদ্যুৎ কিনে জনগণের অর্থের অপচয়।

৩) বেশী দামে বিদ্যুত কেনার কথা বলে বিদ্যুৎ দাম বাড়িয়ে আইএমএফ এর কথা বাস্তবায়ন করা। ৪) কুইক রেন্টাল থেকে বিদ্যুৎ কেনার কথা বলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলেও, জ্বালানি তেলের কথা বলে আবার কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট না চালানো। ৫) কুইক রেন্টাল প্ল্যান্ট না চালিয়েও মালিকদেরকে বিদ্যুতের দাম পরিশোধের মাধ্যমে জনগণের অর্থ লুটপাট। ৬) কুইক রেন্টালের নামে বাড়তি তেল আমদানি করে ডলারের মজুদে টান পড়া, ডলারের দাম বেড়ে আমদানী খরচ বেড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়া। ৭) জ্বালানি তেলের ভর্তুকী বেড়ে যাওয়ার কথা বলে জ্বালানির দাম বাড়ানো যার ফলে আবার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূলস্ফীতিতে জনগণের নাভিশ্বাস।

এই সব লুটপাট তৌফিক ইলাহি একা করেন নি, তিনি সরকার প্রধান থেকে শুরু করে শাসক গোষ্ঠীর সকল অংশকে নিয়েই লুটপাট করেছেন। সে কারণে এসব থেকে দায়মুক্তি পাওয়ার জন্য সংসদে দায়মুক্তি আইন(বিশেষ জ্বালানি আইন) ও পাশ করা হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা হিসেবে এসকল কাজে তৌফিক ইলাহি চৌধুরির ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তিনি মূল ভূমিকা পালন করেছেন। আর মহাজোট সরকারের এই মহালুটপাটের প্রধান কারিগর হিসেবে তৌফিক ইলাহি চৌধুরির দায় সবচেয়ে বেশি এবং তিনি সেটা জানেন বলেই আগ বাড়িয়ে দায়মুক্তি আইনের ব্যাবস্থা করেছেন। আর তিনি এটাও জানেন এইসব দায়মুক্তি আইন টাইন দিয়ে কিছু হবে না যদি জনগণ রুখে দাড়ায়, তাই তিনি আগ বাড়িয়ে নানান সাফাই গাইতে শুরু করেছেন এবং তার সমালোচনা কারীদের ভিত্তি দুর্বল করার জন্য ফ্যাসিষ্ট কায়দায় রাষ্ট্রদোহী আখ্যায়িত করতে শুরু করেছেন।

কাজেই এখনই উপযুক্ত সময় তৌফিক ইলাহির কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কুইক রেন্টাল সহ দেশী বিদেশী লুটেরা গোষ্ঠীর মুনাফার ব্যাবস্থাপক হিসেবে তৌফিক ইলাহি যেসব জ্বালানি অপরাধ করেছে সেগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে জ্বালানি অপরাধী হিসেবে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যাবস্থা করা। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.