চলে যেতে যেতে বলে যাওয়া কিছু কথা রহিমা খালার মৃত্যু সংবাদ এল দেশের বাড়ী থেকে। মরার আগে খালার অনুরোধ ছিল ভাগ্নের কাছে সে যেন নিজে এসে তার গায়ে কাফনের কাপড় চড়ায়।
সেলিম সাহেব আর দ্বিধা না করে দীর্ঘ ১৫ বছর পর গায়ের পথ ধরলেন। সস্ত্রীক।
ঢাকা থেকে বেরিয়ে আসার ঠিক আগে গাড়ী থামল বিদায় ষ্টোরে।
কাফনের কাপড় ছাড়া দাফনের জন্য অন্য সব কিছু কেনা হল।
গাড়ি চালিয়ে গায়ে যখন পৌছলেন সেলিম সাহেব তখন তার জন্য বড় একটা বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। লাঠিতে ভর করে রহিমা খালা বেরিয়ে এলেন উঠোনে তাদেরকে বরন করে নিতে।
মত্যুর আগে শেষ বারের মত ভাগ্নেকে কাছে পাওয়ার জন্য এই ফন্দি আটা। বুড়ির এই এই দূর সম্পর্কের ভাগ্নেটা ছাড়া নিকট আত্মীয়দের আর কেউ জীবিত নেই।
রহিমা খালার আতিথ্যে যা একটু ক্ষোভ ছিল ঢাকার এই দম্পত্তির তা নিমেষেই দূর হয়ে গেল। সেলিম সাহেব একটু একটু করে নিজেকে আবিস্কার করতে লাগলেন অনেক বছর আগে হারিয়ে যাওয়া গায়ের জীবনটিকে। পুকুরে সাতরাতে গিয়ে বাচ্চা ছেলেদের মত হাতপা ছুড়লেন। নদীতে নামলেন হাতিয়ে মাছ ধরতে। এমনকি ফুটবলে লাথি মারতেও মাঠে নেমে গেলেন।
দ্বিতীয়বারের মত নাড়ী ছেড়ার কষ্ট অনুভব করলেন দুদিন পর আবার যখন সেলিম সাহেবকে গ্রাম ছেড়ে আসতে হল। বিদায় নেওয়ার সময় রহিমা খালাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেংগে পড়লেন।
ভগ্ন শরীর আর মনে গা ছাড়তে হল তাকে। কেননা খাওয়া দাওয়া ছাড়াও দুদিনের অন্যসব অনিয়মে শরীরটাও কিছুটা কাহিল হয়ে পড়ছিল। স্ত্রী জাহানারা গায়ে হাত দিয়ে উদ্গীগ্ন হয়ে পড়লেন।
সামান্য একটু জ্বর আছে মনে হল। এর আগে দুবার মৃদু হার্ট এ্যাটাক হয়েছিল সেলিম সাহেবের।
গাড়ী ঢাকার দোড়গোড়ায় পৌছলে স্বস্তীর নি:স্বাস ফেললেন জাহানারা।
হঠাৎ করেই চেচিয়ে গাড়ী থামাতে বললেন সেলিম সাহেবকে।
গাড়ীর গতি মন্হর হল।
কেন? জানতে চাইলেন সেলিম সাহেব।
কাফনের কাপড়টা ফেরতে দেব।
সামনেই বিদায় ষ্টোর।
ওটা আমার জন্য রেখে দাও, স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন তিনি।
বাক্যটি শুনে আচমকা ধাক্কা খেলেন জাহানারা বেগম।
বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেন।
গাড়ীর গতি আবার বেড়ে গেল।
অভিমান আর দু:খের মিশেল এক অনুভূতিতে চোখ দুটি ভিজে এল তার। বাইরের দিকে মুখ ফেরালেন।
ঢাকার উপকন্ঠের রাস্তাগুলোতেও মানুষজন গিজগিজ করছে।
দালানকোঠার ঘনত্ব ক্রমশ: বেড়েই চলেছে।
এতসবকিছুর মাঝেও সবকিছু ফাকা মনে হল তার।
দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে এল তার।
দুহাত দিয়ে তিনি কাফনের কাপড়টিকে খামচে ধরে থাকলেন। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।