[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ।
জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
ইনশাআল্লাহ।
দ্বিতীয় পর্ব
ইস্তাম্বুলের পথেঃ হিজরী ১১২২ সালে (১৭১০ খ্রীষ্টাব্দে) উপনিবেশ মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে মিশর, ইরাক, হিজাজ এবং ইস্তাম্বুলে পাঠানো হয়েছিল, গুপ্তচর বৃত্তি এবং প্রয়োজনীয় ও পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য সংগ্রহের জন্যে, যাতে মুসলমানদের মধ্যে ভাঙ্গন সৃষ্টি করা যায়। একই সময়ে এবং একই উদ্দেশ্যে মন্ত্রণালয় আরো ৯ জন উদ্যমী এবং সাহসী লোককে নিয়োগ করে। অর্থ, তথ্য এবং মানচিত্র যা আমাদের প্রয়োজন ছিল তা ছাড়াও অতিরিক্ত হিসেবে আমাদের দেয়া হয়েছিল, সরকারী আমলা, আলিম-উলামা, এবং গোত্র প্রধানদের নামের তালিকা। আমার স্মৃতি থেকে কখনই মুছে যাবে না যে, যখন আমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে বিদায় নিতে যাই, তিনি বলেছিলেন- আমাদের রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তোমার সাফল্যের উপর।
সুতরাং তোমার সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করা উচিত। আমি সমুদ্র পথে ইসলামী খিলাফতের প্রাণকেন্দ্র ইস্তাম্বুলের পথে যাত্রা শুরু করি। আমার প্রাথমিক দায়িত্ব ছাড়াও আমাকে ভালভাবে সেখানকার মুসলমানদের স্থানীয় তুর্কী ভাষা খুব ভালভাবে শিখতে হয়েছিল। ইতিমধ্যে আমি লন্ডনে বেশ পরিমাণ তুর্কী ভাষা, কুরআনের ভাষা আরবী এবং ইরানিয়ানদের ভাষা ফার্সী শিখে ফেলেছিলাম। যদিও কোন ভাষা শেখা আর স্থানীয় লোকজনদের মত করে কথা বলা, এদু’য়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
কয়েক বছরে ভাষাটা শিখতে পারলেও, বলাটা শিখতে হয়েছিল খুব সূক্ষ্মভাবে, যাতে লোকজন আমাকে সন্দেহ করতে না পারে। আমি অবশ্য ভীত ছিলাম না যে তারা আমাকে সন্দেহ করবে। কারণ মুসলমানরা খুব সহনশীল, উদারমনের, পরোপকারী যা তারা তাদের নবী হযরত মুহম্মদ ছল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে শিখেছে। তারা আমাদের মত সন্দেহ প্রবণ নয়। সর্বোপরি, সে সময় গুপ্তচরকে গ্রেফতার করার মত তুরস্ক সরকারের কোন সংস্থা ছিলনা।
দীর্ঘ ক্লান্তি কর সমুদ্র যাত্রা শেষে আমি ইস্তাম্বুল গিয়ে পৌছি। আমি আমার নাম বললাম ‘মুহম্মদ’ এবং মুসলমানদের ইবাদত গৃহ মসজিদে আসা যাওয়া শুরু করলাম। মুসলামানদের শৃঙ্খলাবোধ, পরিচ্ছন্নতা এবং আনুগত্য দেখে আমি মুগ্ধ। মুহুর্তের জন্য নিজেকে প্রশ্ন করি, কেন এই নিরীহ লোকদের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করছি? তাই করতে কি আমাদের প্রভু মাসিহ আমাদের উপদেশ দিয়েছিলেন? পর মুহুর্তেই ভাবি, একি শয়তানী চিন্তায় মগ্ন হলাম? এবং আরো ভালভাবে নিজের কর্তব্য পালন করার জন্য সিন্ধান্ত নিলাম। ইস্তাম্বুলে ‘আহমদ আফেন্দি’ নামক একজন বুযূর্গ লোকের সাথে আমার পরিচয় হয়।
রুচিশীল আচরণ, খোলামনের ব্যবহার, আধ্যাত্মিক নির্মলতা আর পরোপকারী মনোভাব ইত্যাদির বিচারে আমাদের ধর্মের (খ্রীষ্টান ধর্মের) কোন ধার্মিক ব্যক্তিকেই তাঁর সমকক্ষ দেখিনি। হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আদর্শে নিজেকে গড়ে তোলার জন্যে তিনি দিন রাত পরিশ্রম করতেন।
সে বুযূর্গ ব্যক্তির মতে হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বদিক থেকে উচ্চতম ও আদর্শ ব্যক্তিত্ব। যখনই তিনি হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নাম মুবারক উচ্চারণ করতেন তাঁর চোখ অশ্রুসজল হয়ে পড়তো। নিজেকে খুব সৌভাগ্যবান মনে করছিলাম এ কারণে যে, তিনি আমাকে প্রশ্ন করেননি আমি কে এবং কোথা থেকে এসেছি।
তিনি আমাকে ‘মুহম্মদ আফেন্দি’ বলে সম্বোধন করতেন। তিনি আমার প্রশ্নের উত্তর দিতেন এবং স্নেহ মমতায় সমাদর করতেন। আমি একজন মেহমান, ইত্তাম্বুলে এসেছি কাজ করতে এবং খলিফার ছায়াতলে বসবাস করতে, এমনি বিবেচনায় আহমদ আফেন্দী আমাকে দেখতেন। বলতে কি, এ ছল চাতুরির মধ্যেই আমি ইস্তাম্বুলে অবস্থান করতে লাগলাম। একদিন আমি আহমদ আফেন্দিকে বললাম ‘আমার বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই, আমার কোন ভাই-বোনও নেই এবং পৈত্রিক সূত্রে কোন জমি জমাও পাইনি।
আমি এসেছি ইসলামের এ প্রাণকেন্দ্রে কাজ করে বেঁচে থাকার জন্য এবং কুরআন-সুন্নাহ শেখার জন্যে অর্থাৎ ইহকাল এবং পরকালের পাথেয় সঞ্চয়ের জন্য। আমার এ কথায় তিনি অত্যন্ত প্রফুল্ল হলেন এবং বললেন, “তিনটি কারণে তুমি শ্রদ্ধা পাওয়ার যোগ্য। ” (তিনি যা বলেছিলেন তা হুবহু বর্ণনা করছি। )
এক. তুমি একজন মুসলমান এবং সব মুসলমান ভাই ভাই।
দুই. তুমি একজন মেহমান।
হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মেহমানদের প্রতি আতিথেয়তা প্রদর্শণ কর। ”
তিন. তুমি কাজ করতে চাও; হাদীছ শরীফে আছে, যে কাজ করে, সে আল্লাহ পাক-এর নিকট প্রিয়। তাঁর কথাগুলো আমাকে খুব মুগ্ধ করলো। আমি মনে মনে বললাম, খ্রীষ্টান ধর্মেও কি এমন উজ্জ্বল সত্যের সন্ধান আছে? লজ্জার বিষয় সেখানে তা নেই। ” যা আমাকে অবাক করে তা হচ্ছে, ইসলামের মত একটি মহান ধর্ম, এমন কিছু আত্ম অহংকারী লোকের হাতে পরে অবহেলিত এবং অধঃপতিত হচ্ছে, যারা জীবন সম্পর্কে অসচেতন।
আহমদ আফেন্দীকে বললাম যে, আমি কুরআনুল কারীম শিখতে চাই। তিনিও আমাকে খুশী মনে শিখাবেন বলে জানালেন এবং সে অনুযায়ী সূরা ফাতিহা শিখাতে শুরু করলেন। আমরা যা পড়তাম, তিনি তার ব্যাখ্যা ভাল করে বুঝিয়ে দিতেন। কিছু শব্দ উচ্চারণে আমার যথেষ্ট সমস্যা হলেও দু’ বছর সময়ের মধ্যে আমি সম্পূর্ণ কুরআন পড়ে ফেললাম। প্রতিটি ছবকের পূর্বে তিনি অজু করতেন এবং আমাকেও অজু করতে বলতেন এবং ক্বিবলামুখী হয়ে বসে শিখাতে শুরু করতেন।
অজু বলতে মুসলমানরা যা বোঝায় তা হচ্ছে নীচে বর্ণিত একের পর এক ধোয়ার তালিকা-
(১) সমস্ত মুখ ধোয়া, (২) ডান হাত আঙ্গুল থেকে কনুই সহ ধোয়া, (৩) বাম হাত আঙ্গুল থেকে কনুই সহ ধোয়া, (৪) মাথা, কানের পেছন, ঘাড়ের পেছন উভয় হাত দিয়ে মাসেহ করা, (৫) উভয় পা ধোয়া। মিসওয়াক ব্যবহার করাটা ছিল আমার জন্য এক বিড়ম্বনা। ‘মিসওয়াক’ হচ্ছে একটি ছোট্ট গাছের ডালা যা দিয়ে মুসলমানরা তাদের মুখ এবং দাঁত পরিস্কার করে।
আমি ভেবেছিলাম এ গাছের ডালটি দাঁত ও মুখের জন্য ক্ষতিকর। মাঝে মাঝে ডালটি দিয়ে মুখে ব্যথা লাগতো এবং রক্ত ঝরতো, তথাপি তা আমাকে ব্যবহার করতে হত।
মুসলমানদের মতে মিসওয়াক ব্যবহার হচ্ছে নবী হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত এবং এর ব্যবহার খুবই উপকারী। বাস্তবেই আমার দাঁতের রক্তপড়া বন্ধ হয়ে গেল এবং আমার মুখে যে দুর্গন্ধ ছিল তাও দূর হয়ে গেল। যদিও অধিকাংশ বৃটিশদের মুখেই এ দূর্গন্ধ থাকে। ইস্তাম্বুলে থাকা কালে মসজিদের সেবায় নিয়োজিত এক খাদিমের কাছ থেকে আমি একটি রুম ভাড়া নিয়েছিলাম। সে খাদিমের নাম ছিল ‘মারওয়ান আফেন্দি’।
মারওয়ান ছিল হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর একজন ছাহাবার নাম। মসজিদের খাদিম ভদ্রলোক ছিল নার্ভাস প্রকৃতির। তিনি তার নিজের নামের জন্য গর্ববোধ করতেন এবং বলতেন “ভবিষ্যতে আমার ছেলে হলে তার নাম রাখবো মারওয়ান, কেননা মারওয়ান ইসলামের একজন বীর যোদ্ধা। ” মারওয়ান রাতের খাবার তৈরী করতো। শুক্রবার মুসলমানদের ছুটির দিন বলে আমি কাজে যেতাম না।
সাপ্তাহিক বেতন ভিত্তিতে, অন্যান্য দিনগুলো আমি খালিদ নামের একজন কাঠ মিস্ত্রীর জন্য কাজ করতাম। যেহেতু আমি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত খ-কালীন কাজ করতাম, সে অন্যান্য কর্মচারীদের বেতনের অর্ধেক বেতন আমাকে দিতো। কাঠ মিস্ত্রী খালিদ তার অবসর সময় ব্যয় করতো খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর গুণাবলী বর্ণনা করে। খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু ছিলেন হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ছাহাবী এবং একজন শ্রেষ্ঠ মুজাহিদ। তিনি অনেক যুদ্ধে জয়লাভ করেছেন।
তারপরেও ওমর-বিন খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু কর্তৃক তাঁর পদচ্যুতির ঘটনা এই কাঠ মিস্ত্রীর মনে দারুন আঘাত করেছে। (খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর স্থলে নিয়োগ দেয়া হয় আবূ উবায়দা বিন র্জারাহ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে এবং তিনিও অব্যহত বিজয় লাভ করেন। তার মানে বিজয় অর্জিত হয়েছিল আল্লাহ পাক-এর ইচ্ছায়, খালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর জন্যে নয়। খালিদ বিন ওয়ালিদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে সেনাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে খালিফা উমর বিন খাত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এটাই বোঝাতে চেয়েছিলেন। ) এ (খালিদ) লোকটি, যার জন্যে আমি কাজ করতাম, সে ছিল চরিত্রহীন এবং নেশাগ্রস্থ।
কেন জানি সে আমাকে বিশ্বাস করতো। কারণ সম্ভবত এটা যে আমি তাকে সবসময় মেনে চলতাম। সে গোপনে শরীয়ত অমান্য করতো কিন্তু বন্ধুদের সামনে শরীয়ত অনুসরণের ভান করতো। সে শুক্রবারে নামাযে যেতো, ঠিকই কিন্তু অন্যান্য নামাযের ক্ষেত্রে কি করতো এ ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলাম না।
সকালের নাস্তা আমি দোকানে গিয়ে সেরে নিতাম।
কাজের পর, যোহরের নামাযের জন্যে আমি মসজিদে যেতাম এবং আছরের নামায পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করতাম। আছরের নামাযের পর, আমি যেতাম আহমেদ আফেন্দীর কাছে, সেখানে তিনি আমাকে ঘন্টা দুয়েক কুরআনুল কারীম পাঠ করা এবং আরবী ও তুর্কী ভাষা শিক্ষা দিতেন। শুক্রবার এলেই আমার সমস্ত সপ্তাহের আয় তার হাতে তুলে দিতাম এবং তিনি আমাকে খুব ভালভাবে শিখাতেন। কিভাবে কুরআনুল কারীম তিলওয়াত করতে হয়, ইসলাম পালনের প্রয়োজনীয়তা কি এবং আরবী ও তুর্কী ভাষার জটিল বিষয়গুলো সবই তিনি যত করে আমাকে শিখাতেন। যখন আহমেদ আফেন্দী জানলেন আমি একা, তিনি তার একজন মেয়েকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে চাইলেন।
কিন্তু আমি তার প্রস্তাবে রাজি হইনি। তিনি তবু পিড়াপিড়ী করতে লাগলেন এবং বুঝালেন যে বিয়ে করা হচ্ছে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে আমার সুন্নত থেকে সরে যায় সে আমার উম্মত নয়’। ” আমি উপলদ্ধি করলাম যে এ ঘটনাটি আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ককে নষ্ট করে দিতে পারে ফলে তাকে মিথ্য বলতে হল যে, আমার বিয়ে করার শারীরিক ক্ষমতা নেই। এভাবে আমাদের উভয়ের ঘনিষ্ঠতা ও বন্ধুত্ব অব্যহত রাখতে সক্ষম হই।
ইস্তাম্বুলে আমার দু’বছরের অবস্থান যখন শেষ হয়ে এলো, আমি আহমেদ আফেন্দিকে বললাম, “আমি এবার দেশে ফিরে যেতে চাই।
” তিনি বললেন, না যেওনা। কেন যাবে? ইস্তাম্বুলে তুমি যা চাবে তাই খুঁজে পাবে। আল্লাহ পাক একই সাথে দ্বীন ও দুনিয়া দিয়ে ভরে দিয়েছেন এই শহরকে। তুমি বলেছো যে তোমার বাবা মা কেউ বেঁচে নেই। আর কোন ভাই বোনও নেই তবে কেন তুমি এই ইস্তাম্বুল শহরেই স্থায়ীভাবে থেকে যাচ্ছোনা?” আমার ব্যাপারে আহমেদ আফেন্দীর মনে একটা নির্ভরশীলতা তৈরী হয়েছিল।
সে কারণেই তিনি আমাকে ছেড়ে দিতে রাজী হননি বরং চাপ প্রয়োগ করেছিলেন যাতে ইস্তম্বুলে আমি আমার আবাস গড়ি। কিন্তু আমার দেশপ্রেমজনিত কর্তব্য জ্ঞান আমাকে তাড়া দিচ্ছিলো আমি যেন লণ্ডন ফিরে যাই, ফিরে গিয়ে খিলাফতের কেন্দ্রভূমি সম্পর্কে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রদান করি এবং নতুন নির্দেশনা লাভ করি।
ইস্তাম্বুলে অবস্থানকালীন সময়গুলোতে আমি প্রতিমাসে উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ে আমার পর্যবেক্ষণ বিষয়ক রিপোর্ট পাঠাতাম। আমার মনে পড়ে, একটি প্রশ্নে আমি জানতে চেয়েছিলাম যে আমি যে কাঠমিস্ত্রীর নিকট কাজ করছি, সে আমার সাথে সমকামিতায় লিপ্ত হতে চায়, এ অবস্থায় আমার কি করণীয়? উত্তর ছিল, তোমার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য তুমি তাও করতে পার। এ রকম উত্তরে আমি সাঙ্ঘাতিক অপমান বোধ করেছিলাম।
আমার মনে হয়েছিল, আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। আমি জানি যে এ ধরনের পাপাচার ইংল্যান্ডে খুবই সাধারণ তবু আমার ক্ষেত্রে এরকম কখনো ঘটেনি যে আমার উপরওয়ালারা আমাকে এরকম কাজ করতে আদেশ করবে। আমি তাহলে কি করবো! আমার নেশার বাটি তলা পর্যন্ত সাবাড় করা ব্যতীত আর কিছুই করার ছিলনা। সুতরাং আমি চুপ হয়ে গেলাম এবং নিরবে কাজ করতে লাগলাম।
আমি যখন আহমেদ আফেন্দীর কাছ থেকে বিদায় নিতে গেলাম তার চোখ অশ্রুতে ভরে উঠলো এবং তিনি বললেন হে বৎস! আল্লাহ পাক তোমার সহায় হোন।
তুমি আবার ইস্তাম্বুলে এসে যদি দেখ আমি আর নেই তবে আমাকে স্মরণ করে আমার আত্মার জন্যে সূরা ফাতিহা পাঠ করো। শেষ বিচারের দিনে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সামনে আবার আমাদের দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আমার মন এতটাই বেদনাক্লিষ্ট হয়ে পড়ে যে আমার দু’চোখ বেয়েও অশ্রু গড়িয়ে পরে। তারপরেও আমার কতর্ব্য বোধ স্বাভাবিকভাবেই ছিল অধিকতর শক্তিশালী।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
এথান থেকে পরুন পর্ব- এক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।