[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ।
জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
ইনশাআল্লাহ।
৬ষ্ঠ পর্ব
(বর্তমানে সব ইসলামী দেশগুলোতে মূর্খ এবং মুনাফিক ব্যক্তিরা ধার্মিক ব্যক্তি সেজে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আলিমদের আক্রমণ করে যাচ্ছে। তারা ওহাবী মতবাদ প্রচার করছে এবং বিনিময়ে সৌদি আরব থেকে প্রচুর অর্থ পাচ্ছে। তারা ওহাব নজদীর এ সব বক্তব্যকে ব্যবহার করে। মূলতঃ কোন ছাহাবী এবং ইমামের উক্তি কুরআন-সুন্নাহ খিলাফ নয়।
তাঁরা নতুন কিছু যোগ করেননি বরং সঠিক বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করেছেন। ওহাবীরা তাদের বৃটিশ প্রভূদের মত মিথ্যার জাল বুনছে এবং মুসলমানদের ধোঁকা দিচ্ছে। )
আব্দুর রিদার বাসায় এক নৈশ ভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন কোন এলাকার এক শিয়া পন্ডিত। নাম ছিল জাওয়াদ। সে সময় নজদের মুহম্মদ এবং শিয়া পন্ডিতের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলো।
শেখ জাওয়াদঃ আপনি যখন স্বীকার করেন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একজন মুজতাহিদ ছিলেন তবে তাঁকে অনুসরণ করতে আপনার আপত্তি কিসের? নজদের মুহম্মদঃ হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সুতরাং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইজতিহাদকেই কেন দলীল হিসেবে গণ্য করতে হবে। শুধু কুরআন এবং সুন্নাহ্কেই নির্ভরযোগ্য দলীল বলে মানতে হবে।
(মূল বিষয় হচ্ছে হযরত ছাহাবা আজমাঈনগণের ক্বওল হচ্ছে দলীল। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ অনুসরণীয়।
)
শেখ জাওয়াদঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার দরজা। ” এতে কি এটাই বোঝায় না তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের চেয়ে আলাদা? নজদের মুহম্মদঃ হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কথাই যদি দলীল হবার যোগ্যতা রাখবে তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে যেতেন, আমি তোমাদের জন্য কুরআন-সুন্নাহ্ এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে রেখে গেলাম। শেখ জাওয়াদঃ হ্যাঁ, আমরা তাই ধরে নিতে পারি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটিই বলেছেন। কেননা তিনি বলেছেন, আমি রেখে গেলাম আল্লাহ পাক-এর কিতাব এবং আহলে বাইত। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হচ্ছে আহলে বাইতের একজন সদস্য।
নজদের মুহম্মদ অস্বীকার করলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা বলেছেন। যাই হোক, শেখ জাওয়াদ যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে তার ভুলগুলো দূর করার চেষ্টা করলো। নজদের মুহম্মদ বললো, আপনি যদি বলেন যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি রেখে গেলাম আল্লাহ পাক-এর কিতাব ও আহলে বাইত” তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত মুবারক কোথায় গেল? শেখ জাওয়াদঃ সুন্নত হচ্ছে কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা। “আমি তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক-এর কিতাব আর আহলে বাইত রেখে গেলাম” বাক্যে আহলে বাইতের মধ্যে সুন্নত অন্তর্ভুক্ত।
নজদের মুহম্মদঃ আহলে বাইত বলতে যদি কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা বোঝাবে তাহলে হাদীছ শরীফ দিয়ে আর কুরআন শরীফের ব্যাখ্যার কি প্রয়োজন? শেখ জাওয়াদঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিদায় নিলেন তখন উম্মতগণ ভাবলেন কুরআন শরীফের একটা ব্যাখ্যা থাকা উচিত যা বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন মিটাবে।
এ কারণেই আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন, উম্মতরা মূল কুরআন শরীফের অনুসরণ করবে আর আহলে বাইত কুরআন শরীফের এমন ব্যাখ্যা করবেন যা কিনা বিভিন্ন সময়ের প্রয়োজন মিটাবে।
তারা আমাকে খুব বিশ্বাস করতো। আমি বুঝতে পেরেছিলাম, যেহেতু আমি তুর্কী ভাষায় কথা বলতাম তারা আমাকে আজারবাইজানি মনে করতো। মাঝে মাঝে আমাদের কাঠমিস্ত্রির দোকানে এক যুবক আসা-যাওয়া করতো। তার পোষাকে-আশাকে মনে হতো সে, বিজ্ঞান গবেষণায় রত একজন ছাত্র, কিন্তু আরবী, ফার্সী এবং তুর্কী ভাষা বুঝতো।
তার নাম ছিল মুহম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব নজদী। এই যুবক ছিলো অত্যাধিক রুঢ় এবং খুব নার্ভাস প্রকৃতির। অটোম্যান সরকারের বিরুদ্ধে গালমন্দ করলেও সে ইরানীয়ান সরকারের বিরুদ্ধে কখনই কিছু বলতো না। আমার দোকানের মালিক আব্দুর রিদা এবং ওহাবী নজদীর মধ্যে সখ্যতা গড়ে ওঠার পিছনে মূল যে মিল- তারা দু’জনেই ছিল ইস্তাম্বুলের খলীফার বিরোধি। ফার্সি জানা একজন সুন্নী লোকের সাথে আব্দুর রিদা নামক একজন শিয়ার এতটা সখ্যতা সত্যিই অবাক হবার মত।
এ শহরে সুন্নীরা শিয়াদের সাথে বন্ধুত্বের এবং ভাতৃত্বের ভান করে চলে এবং শহরের অধিকাংশ অধিবাসী আরবী এবং ফার্সি ভাষার পাশাপাশি তুর্কি ভাষাও বোঝে। নজদের মুহম্মদ ছিল বাইরের দিক থেকে একজন সুন্নী লোক। যদিও বেশীর ভাগ সুন্নীরা শিয়াদের সাথে সহজে মেশেনা। কেননা, সুন্নীদের মতে শিয়ারা অবিশ্বাসী বা কাফির। নজদের মুহম্মদের মতে, চার মাযহাবের যে কোন একটি অনুসরণ করতেই হবে এমন কোন যুক্তি নেই।
সে ইচ্ছাকৃতভাবে কুরআন শরীফের অনেক আয়াত শরীফের বর্ণনা দিতনা এবং অনেক হাদীছ শরীফ পাশ কাটিয়ে যেত। চার মাযহাব হচ্ছে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ওফাত মুবারকের পর শতবর্ষ পরে সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে চারজন ধর্মীয় জ্ঞানী ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে। তাঁরা হলেন হযরত আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত আহমদ বিন হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি, হযরত মালিক রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং হযরত মুহম্মদ বিন ইদ্রিস শাফিয়ী রহমতুল্লাহি আলাইহি।
কোন কোন খলীফা সুন্নী সম্প্রদায়ের এই চারজন ইমামের যে কোন একজনকে অনুসরণ করার জন্য বাধ্য করেন। তাদের মতে এই চারজন ব্যতীত অন্য কেউ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফেরর ইজতিহাদ করতে পারবে না।
এ ধরনের সিদ্ধান্তের ফলে মুসলমানদের জ্ঞান লাভ ও তার উপলব্ধির বিষয়টি বন্ধ হয়ে পড়ে। ইজতিহাদ বন্ধের বিষয়টিকে বর্তমানে ইসলামের স্থবিরতার কারণ হিসেবে মনে করা হয়। শিয়ারা এই ভুল বক্তব্যকে কাজে লাগিয়ে তাদের সম্প্রদায়কে সংযত করার চেষ্টা করেছে। শিয়ারা ছিল সংখ্যায় সুন্নীদের দশভাগের একভাগেরও কম। কিন্তু বর্তমানে তারা বেড়ে সংখ্যায় প্রায় সুন্নীদের সমান হয়ে গিয়েছে।
এরকম ফলাফল খুবই স্বাভাবিক। ইজতিহাদ হচ্ছে অস্ত্রের মত। এটা ইসলামের ফিক্বাহকে সমৃদ্ধ করবে। এবং কুরআন-সুন্নাহ্কে গভীর উপলদ্ধির সাথে বুঝতে সহায়তা করবে। ইজতিহাদ করার নিষেধাজ্ঞা হলো অকার্যকর অস্ত্রের মত।
যা মাযহাবকে একটা গন্ডীর মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলে। এবং পরবর্তীতে উপলব্ধীর দরজাকে বন্ধ করে দেয় এবং সময়ের চাহিদাকে উপক্ষো করে।
যদি তোমার হাতিয়ার হয় অকেজো, আর শত্রু থাকে সক্রিয় তবে আগে অথবা পরে তোমার শত্রুর কাছে ধরাশয়ী হতে হবে। আমার মনে হয়, সুন্নীদের মধ্যে যারা জ্ঞানী তারা ভবিষ্যতে পুনরায় ইজতিহাদের দরজা খুলে দেবে। আর যদি না করতে পারে, তারা পুনরায় সংখ্যালঘিষ্ট হয়ে যাবে এবং কয়েক শতাব্দীতে শিয়ারা সংখ্যায় যাবে বেড়ে।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
এথান থেকে পরুন পর্ব- এক
এথান থেকে পরুন পর্ব- দুই
এথান থেকে পরুন পর্ব- তিন
এথান থেকে পরুন পর্ব- চার
এথান থেকে পরুন পর্ব- পাঁচ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।