[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ।
জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
ইনশাআল্লাহ।
১২তম পর্ব
উপনিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আমাদের বিদায় অনুষ্ঠানে বলেছিলো, ‘আমরা অবিশ্বাসীদের (এখানে মুসলমানদের বলা হচ্ছে) নিকট থেকে স্পেনকে দখল করেছি শরাব এবং ব্যভিচারের মাধ্যমে। চলো এ দু’টো শক্তির মাধ্যমে আমরা এবার আমাদের হারানো ভূখ- ফেরত আনি। ’ এখন বুঝতে পারছি তার বক্তব্য কত সত্য। একদিন আমি নজদের মুহম্মদের সাথে রোজা নিয়ে কথা শুরু করলাম।
বললাম, কুরআন শরীফে বলা আছে, ‘রোজা রাখা অনেক গৌরবের। ’ (সূরা বাক্বারা-১৮৪)
কিন্তু তাতে বলা হয়নি রোজা ফরজ। তার মানে ইসলাম ধর্মে রোজা সুন্নত, ফরয নয়। সে প্রতিবাদ করলো এবং বললো, তুমি কি আমাকে আমার বিশ্বাস থেকে সরিয়ে নিতে চাইছো? উত্তরে বললাম, ‘কারো বিশ্বাস হচ্ছে তার হৃদয়ের পবিত্রতা এবং গুনাহ্ থেকে পবিত্র থাকা কিন্তু অন্যের হক নষ্ট করে গুনাহ্ করা নয়। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেননি যে, বিশ্বাস হচ্ছে ভালবাসা?’ আল্লাহ পাক কি কুরআন শরীফে বলেননি, ‘ইয়াক্বীন না আসা পর্যন্ত তোমার রবের ইবাদত করো?’
[এটা মূলত: বাতিলপন্থী ফকিরদের আক্বীদা যা কুফরী।
প্রকৃতপক্ষে এখানে ইয়াক্বীন অর্থ হচ্ছে মৃত্যু। ]
কাজেই যখন কেউ আল্লাহ পাক-এর প্রতি এবং ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি ইয়াক্বীন কায়িম রাখতে সক্ষম হবে এবং সৎ কাজের মাধ্যমে নিজের হৃদয়কে সুন্দর ও পবিত্র করবে তখনই সে হবে মানবজাতির মধ্যে সবচেয়ে পূণ্যবান। ’ সে আমার কথায় মাথা নেড়ে সম্মতি প্রকাশ করলো। একবার তাকে বললাম, ‘নামায ফরয নয়। ’ সে বললো কি করে নামায ফরয নয়?’ আমি বললাম, আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেছেন, ‘তোমরা নামাযের মাধ্যমে আমাকে স্মরণ করো।
’ (সূরা ত্ব-হা- ১৪)
সুতরাং নামাযের উদ্দেশ্য আল্লাহ পাককে স্মরণ করা। সুতরাং নামায না পড়েও আল্লাহ পাককে স্মরণ করতে পারো। [এ বক্তব্যও কুফরী। এখানে সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে যে, নামাযের মাধ্যমে আল্লাহ পাক-এর দায়িমী হুযূরী হাছিল হয়। যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “নামায হচ্ছে মু’মিনদের মি’রাজ।
”
নজদের মুহম্মদ বললো, হ্যাঁ আমি শুনেছি কিন্তু মানুষ নামাযের পরিবর্তে আল্লাহ পাক-এর যিকির করে। (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘নামায ইসলামের স্তম্ভ। যে নামায পড়লো সে ইসলামকে ক্বায়িম রাখলো। আর যে নামায পড়লোনা সে ইসলামকে ধ্বংস করলো। ” অন্য হাদীছ শরীফে আছে, ‘আমি যেভাবে পড়ি সেভাবে নামায পড়ো।
নামায না পড়া কবীরাহ গুনাহ। আর নামায সঠিকভাবে আদায় করলে হৃদয়ের পবিত্রতা থাকে। )
নজদের মুহম্মদের কাধ থেকে আমি ধীরে ধীরে বিশ্বাসের চাদর সরিয়ে ফেলতে থাকি। এবং হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কেও নজদের মুহম্মদের সাথে বিতর্কে লিপ্ত হলাম। নজদের মুহম্মদ বললো, ‘এখন থেকে তুমি যদি এ বিষয়ে আমার সাথে আলাপ করো তাহলে আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবে।
’ এরপর থেকে ভয়ে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কোন আলাপ-আলাচেনা করা বাদ দিলাম যাতে আমার সব চেষ্টা বিফলে না যায়। আমি নজদের মুহম্মদকে সুন্নী ও শিয়া মতের বাইরে নতুন একটি মতে চলতে উপদেশ দেই। সে আমার এই নতুন ধারণাটাকে পছন্দ করলো, বস্তুত: সে ছিল একজন অহঙ্কারী ব্যক্তি। সাফিয়াকে ধন্যবাদ, তার সাহায্যেই আমি নজদের মুহম্মদের জীবনকে থামিয়ে দিতে পেরেছি।
কোন এক উপলক্ষে আমি তাকে বললাম, ‘আমি শুনেছি যে, আমাদের নবী হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণদের পরস্পর ভাই বলে তৈরী করেছিলেন।
বিষয়টি কি সত্যি? সে সম্মতি প্রকাশ করলো। আমি জানতে চাইলাম, এই ইসলামিক নীতি কি স্থায়ী ছিলো, না অস্থায়ী। সে ব্যাখ্যা করে বললো, এটা ছিল একটা স্থায়ী ব্যবস্থা। কেননা, ক্বিয়ামত দিবস পর্যন্ত আমাদের নবী হযরত মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যা হালাল করেছেন তা হালাল থাকবে আর যা হারাম করেছেন তা হারাম থাকবে। তখন আমি তাকে আমার ভাই হবার আহ্বান করলাম এবং আমরা পরস্পর ভাই হয়ে রইলাম।
সেদিন থেকে আমি তাকে কখনও ত্যাগ করিনি।
আমরা একে অপরের সঙ্গী হয়ে রইলাম। এমনকি সফরেও। সে ছিলো আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমার জীবনের অনেক মূল্যবান দিনগুলো ব্যয় করে যে চারা বপন করেছিলাম এখন সে ফল দিতে শুরু করেছে।
নজদের মুহম্মদের সঙ্গে আমার (হেমপার) যখন খুব ঘনিষ্ঠতা ছিলো, সেই সময়ে একদিন লন্ডন থেকে একটি বার্তা পেলাম যে, আমাকে কারবালা এবং নাজফের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। কারবালা এবং নাজফ হচ্ছে শিয়াদের ধর্মীয় জ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতার জন্য দু’টি গুরুত্বপূর্ণ শহর। সুতরাং নজদের মুহম্মদের সাহচর্য ত্যাগ করে আমাকে বসরা ছাড়তে হলো। তথাপি আমি খুব খুশী এবং নিশ্চিত ছিলাম এই কারণে যে, নৈতিকভাবে অধঃপতিত এবং মূর্খ এই লোকটি (নজদের মুহম্মদ) একটা নতুন ফিরক্বা তৈরী করতে যাচ্ছে, যা ইসলামকে ভেতর থেকে ধ্বংস করে দেবে, এবং আমি হচ্ছি সেই নতুন ফিরক্বার উত্তরাধিকার সৃষ্টির রূপকার। সুন্নিদের মতে চতুর্থ খলীফা এবং শিয়াদের মতে প্রথম খলীফা হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু নাজফে শুয়ে আছেন।
নাজফ থেকে এক ঘন্টার হাঁটার পথ বা এক ফেরসা হচ্ছে কুফা। কুফা ছিলো হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর খিলাফতের সময় রাজধানী। যখন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু শহীদ হন তখন তার দুই ছাহেবজাদা হযরত ইমাম হাসান রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে নাজফে সমাহিত করেন। সময়ে নাজফে উন্নতির ছোঁয়া লেগে যায় এবং কুফা শহর ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকে। শিয়া ধর্মানুসারীরা নাজফে এসে জামায়েত হয় এবং এভাবে সেখানে বসতবাড়ী, মাদ্রাসা এবং বাজার গড়ে উঠে।
নিম্নলিখিত কারণে ইস্তাম্বুলের খলীফা ছিলেন নাজফবাসীদের উপর সহানুভূতিশীল।
১. ইরানের শিয়া প্রশাসন এখানকার শিয়াদের সমর্থক। খলীফার হস্তক্ষেপ এখানে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এবং এক পর্যায়ে যুদ্ধ-বিগ্রহের কারণ হতে পারে।
২. নজফের অধিবাসীরা একদল সশস্ত্র উপজাতীকে তাদের দলে ভিড়িয়েছিল, যারা শিয়াদের সমর্থন করতো। যদিও অস্ত্র এবং দলগত দিক থেকে তাদের অবস্থান তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ছিল না, সে কারণে খলীফা কোন অহেতুক ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়াটাকে বুদ্ধিমানের কাজ মনে করতেন না।
৩. সমগ্র বিশ্বের সকল শিয়ার ওপর বিশেষত আফ্রিকা ও ইন্ডিয়ার শিয়াদের নজফের শিয়াদের ছিল কর্তৃত্ব। খলীফা কর্তৃক তাদের বিরক্তির কিছু কারণ ঘটালে সমগ্র শিয়ারা খলীফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে পারতো।
৪. হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দৌহিত্র এবং হযরত ফাতিমরা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা-এর পুত্র হযরত ইমাম হুসাইন বিন আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমা শহীদ হন কারবালাতে। ইরাকের অধিবাসীগণ মদীনায় গিয়ে হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে আমন্ত্রণ করেন যেন তিনি ইরাকে এসে খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। কিন্তু হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর পরিবারবর্গ যখন কারবালায় এসে পৌছেন ইরাকবাসীরা তখন তাদের সংকল্প পরিত্যাগ করে এবং দামেস্কে বসবাসরত উমাইয়া খলীফা ইয়াজিদ বিন মুয়াবিয়ার নির্দেশে হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে গ্রেফতার করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর পরিবারবর্গ শহীদ হওয়ার আগ পর্যন্ত বীরত্বের সাথে ইরাকী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ করেন। হযরত ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং তাঁর পরিবারবর্গের শহীদ হওয়ার মাধ্যমে যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। যদিও এতে আপাত বিজয়ী হয় ইরাকী বাহিনী। সেদিন থেকে শিয়ারা কারবালাকে তাদের ধর্মীয় আধ্যাত্মিক কেন্দ্র হিসেবে মেনে নিয়েছে। সারা পৃথিবী থেকে শিয়ারা এখানে এসে জামায়েত হয় এবং এত বড় সমাবেশের মত কোন সমাবেশ আমাদের খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে দেখা যায় না।
কারবালা হচ্ছে শিয়াদের শহর এবং রয়েছে অনেক শিয়া মাদ্রাসা। নাজাফ এবং কারবালা শহর একে অপরকে সহযোগিতা করে। এই দু’টো শহরে যাবার জন্যে আমি বসরা ত্যাগ করে বাগদাদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পরে সেখান থেকে চলে যাই ‘হুল্লা’ নামের একটি শহরে যা ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। টাইগ্রীস (দজলা) এবং ইউফ্রেটিস (ফোরাত) নদী দু’টো তুরস্ক থেকে আরম্ভ হয়ে ইরাকের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পারস্য উপসাগরে গিয়ে পড়েছে।
ইরাকের কৃষি এবং সাফল্যে এই দুই নদীর অবদান রয়েছে।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
এথান থেকে পরুন পর্ব- এক
এথান থেকে পরুন পর্ব- দুই
এথান থেকে পরুন পর্ব- তিন
এথান থেকে পরুন পর্ব- চার
এথান থেকে পরুন পর্ব- পাঁচ
এথান থেকে পরুন পর্ব- ছয়
এথান থেকে পরুন পর্ব- সাত
এথান থেকে পরুন পর্ব- আট
এথান থেকে পরুন পর্ব- নয়
এথান থেকে পরুন পর্ব- দশ
এথান থেকে পরুন পর্ব- এগার ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।