আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা (৭)

[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ।

জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।

ইনশাআল্লাহ। ৭ম পর্ব (বস্তুতঃ চার মাযহাবের ইমামগণ একই দলভুক্ত এবং একই আক্বীদার অনুসারী। তাঁদের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে কোন পার্থক্য নেই। যতটুকু পার্থক্য আছে তা আমলের ক্ষেত্রে। এতে মুসলমানদের মধ্যে সুবিধাই হয়েছে।

অপরদিকে, শিয়ারা বারোটি গোত্রে বিভক্ত এবং এতে তারা নির্জিব হয়ে পড়েছে। ‘মিনাল ওয়ান্ নিহলে’ গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। - গ্রন্থকার) এই উদ্ধত যুবক অর্থাৎ নজদের মুহম্মদ কুরআন-সুন্নাহ্ বুঝার ক্ষেত্রে সে সব সময় নিজের অনুসরণ করতো। সমকালীন সকল আলিমদের মতামতকে যে অগাহ্য করতো। শুধু তাই নয়, চার মাযহাবের ইমামগণ এমনকি বিখ্যাত ছাহাবী হযরত উমর ফারুক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে মানতে চাইতো না।

যখন কোন কুরআন শরীফের আয়াত শরীফের অর্থ, ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ এবং ইমামগণের মতের সাথে মেলাতে ব্যর্থ হতো তখনই বলতো, আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের জন্য কুরআন এবং সুন্নাহ্ রেখে গেলাম। তিনি তো বলেননি যে, আমি তোমাদের জন্য কুরআন, সুন্নাহ্, ছাহাবা এবং মাযহাবের ইমামদের রেখে গেলাম। ” (এই উক্তিটি হাদীছ শরীফের খেলাফ। কারণ হাদীছ শরীফে আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ছাহাবা আজমাঈন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণের অনুসরণ করতে বলেছেন। ) কাজেই আলিম, ছাহাবা কিংবা মাযহাবের ইমামদের মতামতের সঙ্গে মিল থাকুক বা না থাকুক কুরআন-সুন্নাহ্র অনুসারী হতে হবে।

(বর্তমানে সব ইসলামী দেশগুলোতে মূর্খ এবং মুনাফিক ব্যক্তিরা ধার্মিক ব্যক্তি সেজে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আলিমদের আক্রমন করে যাচ্ছে। তারা ওহাবী মতবাদ প্রচার করছে আর এর বিনিময়ে সৌদি আরব থেকে প্রচুর অর্থ পাচ্ছে। তারা ওহাবী নজদীর এ সব বক্তব্যকে ব্যবহার করে। মূলতঃ কোন ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং ইমাম-মুজতাহিগণের উক্ত বক্তব্য কুরআন-সুন্নাহ্র খিলাফ নয়। তাঁরা নতুন কিছু যোগ করেননি বরং শুধুমাত্র বর্ণনা করেছেন।

ওহাবীরা তাদের বৃটিশ প্রভুদের মত মিথ্যার জাল বুনছে এবং মুসলমানদের ধোকা দিচ্ছে। ) আব্দুর রিদার বাসায় এক নৈশ ভোজে আমন্ত্রিত ছিলেন কোন এলাকার এক শিয়া পন্ডিত। নাম ছিল শেখ জাওয়াদ। সে সময় নজদের মুহম্মদ এবং শিয়া পন্ডিতের মধ্যে মতানৈক্য দেখা দিলো। শেখ জাওয়াদঃ আপনি যখন স্বীকার করেন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু একজন মুজতাহিদ ছিলেন তবে তাঁকে অনুসরণ করতে আপনার আপত্তি কিসের? নজদের মুহম্মদঃ হযরত উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

সুতরাং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর ইজতিহাদকেই কেন দলীল হিসেবে গণ্য করতে হবে। শুধু কুরআন এবং সুন্নাহ্কেই নির্ভরযোগ্য দলীল বলে মানতে হবে। (মূল বিষয় হচ্ছে হযরত ছাহাবা আজমাঈনদের ক্বওল হচ্ছে দলীল। আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি এবং আমার ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুমগণ অনুসরণীয়। শেখ জাওয়াদঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি হলাম জ্ঞানের শহর আর হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তার দরজা।

” এতে কি এটাই বোঝায় না তিনি অন্যান্য ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুগনের চেয়ে আলাদা? নজদের মুহম্মদঃ হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-এর কথাই যদি দলীল হবার যোগ্যতা রাখবে তাহলে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে যেতেন, আমি তোমাদের জন্য কুরআন-সুন্নাহ্ এবং হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকে রেখে গেলাম। শেখ জাওয়াদঃ হ্যাঁ, আমরা তাই ধরে নিতে পারি, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটিই বলেছেন। কেননা তিনি বলেছেন, আমি রেখে গেলাম আল্লাহ পাক-এর কিতাব এবং আহলে বাইত। হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হচ্ছে আহলে বাইতের একজন সদস্য। নজদের মুহম্মদ অস্বীকার করলো যে, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনটা বলেছেন।

যাই হোক, শেষ জাওয়াদ যুক্তি-প্রমাণ দিয়ে তার ভুলগুলো দূর করার চেষ্টা করলো। নজদের মুহম্মদ বললো, আপনি যদি বলেন, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি রেখে গেলাম আল্লাহ পাক-এর কিতাব ও আহলে বাইত” তবে হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সুন্নত মুবারক কোথায় গেল? শেখ জাওয়াদঃ সুন্নত হচ্ছে কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা। “আমি তোমাদের জন্য আল্লাহ পাক-এর কিতাব আর আহলে বাইত রেখে গেলাম” বাক্যে আহলে বাইতের মধ্যে সুন্নত অন্তর্ভুক্ত। নজদের মুহম্মদঃ আহলে বাইত বলতে যদি কুরআন শরীফের ব্যাখ্যা বোঝাবে তাহলে হাদীছ শরীফ দিয়ে আর কুরআন শরীফের ব্যাখ্যার কি প্রয়োজন? শেখ জাওয়াদঃ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বিদায় নিলেন তখন উম্মতগণ ভাবলেন কুরআন শরীফের একটা ব্যাখ্যা থাকা উচিত যা বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজন মিটাবে। এ কারণেই হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন, উম্মতরা মূল কুরআন শরীফের অনুসরণ করবে আর আহলে বাইত কুরআন শরীফের এমন ব্যাখ্যা করবেন যা কিনা বিভিন্ন সময়ের প্রয়োজন মিটাবে।

তাদের এই বিতর্ক আমি খুব উপভোগ করছিলাম। শিকারীর হাতে চড়ূই পাখি যেমন থাকে তেমনি শেখ জাওয়াদের কাছে নজদের মুহম্মদ নির্বাক হয়ে পড়েছিল। নজদের মুহম্মদের মতই আমি একজনকে খুঁজছিলাম। সমকালীন আলিমগণকে অবজ্ঞা করে, খুলাফায়ে রাশিদীনকে এড়িয়ে গিয়ে, কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ বুঝার ক্ষেত্রে নজদের মুহম্মদের স্বাধীন চিন্তাধারাকে কাবু করা সহজ কথা নয়। আমার শিক্ষক ইস্তাম্বুলের আহমেদ আফেন্দির সাথে এই আত্মঅহংকারী লোকটার যথেষ্ট পার্থক্য।

পূর্ববর্তী আলিমগণের মত আহমেদ আফেন্দীর ইল্ম ছিল গভীর এবং পাহাড় সমান। কোন শক্তিই সেই পর্বতকে নাড়াতে সক্ষম নয়। যখনই তিনি ইমামে আ’যম, হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর নাম মুবারক উচ্চারণ করতেন, তিনি দাঁড়িয়ে যেতেন এবং ওযূ করে আসতেন। একইভাবে যখন তিনি হাদীছ শরীফের কিতাব বুখারী শরীফ পড়তেন তার পূর্বে ওযূ করে নিতেন। হাদীছ শরীফের এই কিতাবের প্রতি সুন্নী মুসলমানদের রয়েছে অগাধ বিশ্বাস।

অন্যদিকে নজদের মুহম্মদ হযরত ইমাম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর উপর বিরূপভাব পোষণ করতো। সে বলতো, “আবু হানীফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর চেয়ে আমি বেশী জানি। ” (কিছু অজ্ঞ, মূর্খ ব্যক্তি যাদের কোন নির্দিষ্ট মাযহাব নেই, তারাও এরকম বলে থাকে। উপরুন্তু তার মতে বুখারী শরীফের অর্ধেকে ভুলে ভরা (তার এই উক্তিতে বোঝা যায় হাদীছ শরীফের জ্ঞানের ব্যাপারে সে ছিল অজ্ঞ। ) (ইনশাআল্লাহ চলবে) এথান থেকে পরুন পর্ব- এক এথান থেকে পরুন পর্ব- দুই এথান থেকে পরুন পর্ব- তিন এথান থেকে পরুন পর্ব- চার এথান থেকে পরুন পর্ব- পাঁচ এথান থেকে পরুন পর্ব- ছয়  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.