[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ।
জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।
ইনশাআল্লাহ।
১৩তম পর্ব
আমি লন্ডনে ফিরে গিয়ে উপনিবেশ মন্ত্রণালয়কে প্রস্তাব করলাম, এই নদী দু’টোর পানি প্রবাহের গতি পরিবর্তন করার মাধ্যমে আমরা ইরাককে আমাদের প্রস্তাবে রাজী করাতে পারি এবং এ ব্যাপারে একটা প্রকল্প হাতে নেয়া যেতে পারে। যখন ইরাকের পানি বন্ধ করা হবে তখন ইরাক বাধ্য হবে আমাদের দাবী মেনে নিতে।
একজন আজারবাইজানী ব্যবসায়ী হিসেবে ছদ্মবেশ ধারণ করে আমি হুল্লা থেকে নাজফে ভ্রমন করি। শিয়া ধর্মের লোকদের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে আমি তাদের বিভ্রান্ত করতে শুরু করলাম।
আমি তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে যোগ দিতে শুরু করলাম। একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম, সুন্নীদের মত শিয়ারা বিজ্ঞান মনস্ক নয় এবং সুন্নীদের মত সুন্দর নৈতিক গুণাবলীও তাদের নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে-
১. তারা ছিলো তুর্কী শাসক শ্রেণীর ঘোর বিরোধী। কেননা, তারা ছিল শিয়া আর তুর্কীরা সুন্নী। শিয়াদের মত অনুযায়ী সুন্নীরা কাফির।
২. শিয়া পন্ডিতরা ছিল সম্পূর্ণভাবে তাদের ধর্মীয় শিক্ষাদানে মশগুল, পার্থিব বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞান ছিলো না যেমনটা ছিলো আমাদের অতীতের স্থবির ইতিহাসের কারণ সেই ধর্মযাজকদের মত।
ইসলামের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্য এবং চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে শিয়াদের কোন ধারণা ছিলো না। এমনকি সমকালীন বৈজ্ঞানিক ও কারিগরি উন্নতি সম্পর্কে নূন্যতম ধারণাও তাদের ছিলো না।
একদিন আমি নিজেকে বললাম, শিয়ারা কেমন বিধ্বস্ত একটি জাতি। এরা এখনও ঘুমিয়ে আছে যেখানে সমস্ত পৃথিবী জাগ্রত।
একদিন বন্যা এসে সবাইকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। অনেকবার আমি তাদের বুঝিয়েছি খলীফার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার জন্য। দুর্ভাগ্যবশত কেউ আমার কথায় সাড়া দেয়নি। শিয়াদের কেউ কেউ আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো যখন আমি তাদের তুর্কী সভ্যতা ধ্বংস করে দিতে বললাম। তাদের ধারণা, খলীফা হচ্ছে দূর্গের মত যাকে কখনই ধরা যাবে না।
তাদের ধারণা অনুযায়ী, যখন হযরত ইমাম মেহেদী আলাইহিস্ সালাম আসবেন তখনই তারা খলীফার নাগপাশ থেকে মুক্তি পাবে।
তাদের মত, হযরত ইমাম মেহেদী আলাইহিস্ সালাম হচ্ছেন দ্বাদশ ইমাম। যিনি আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উত্তমপুরুষ এবং যিনি ২২৫ হিজরীতে অদৃশ্য হয়ে যান। তাদের বিশ্বাস তিনি এখনও জীবিত এবং একদিন তাঁর পুনঃআগমন ঘটবে এবং তখন পৃথিবীর সমস্ত অন্যায় অত্যাচার দূর করে দিয়ে পৃথিবীতে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠিত করবেন। এটা এক অবাস্তব কল্পনা।
কি করে শিয়ারা এত কুসংস্কারে বিশ্বাস করে! এটা যেন খ্রিষ্টানদের ধারণার মত যে একদিন যিশুখ্রিষ্ট ফিরে আসবে এবং দুনিয়াতে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবে।
আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মাযার শরীফ অত্যন্ত কারুকার্যময়। মাযার শরীফ সংলগ্ন রয়েছে বড় খোলা প্রাঙ্গন, স্বর্ণযুক্ত গম্বুজ এবং দুটো লম্বা মিনার। প্রতিদিন অনেক শিয়া দর্শনার্থী মাযার শরীফে আসে। তারা এখানে এসে জামা’য়াতে নামায আদায় করে।
প্রত্যেক প্রবেশ পথের চৌকাঠে এসে মাথা অবনত করে সেখানে চুম্বন করে এবং পরে মাযার শরীফের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে। তারা অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। মাযার শরীফ সংলগ্ন রয়েছে বিশাল প্রাঙ্গন সেখানে ধর্মানুযায়ী এবং দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে অসংখ্য কক্ষের ব্যবস্থা। কারবালায় আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়লা আনহুর মযার শরীফ সংলগ্ন রয়েছে আরো দুটো মাযার শরীফ। একটি ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালার আনহুর এবং অপরটি তাঁর ভাই আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর যিনি ইমাম হুসাইন রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা অনহুম সঙ্গে কারবালায শহীদ হন।
নাজাফের মত কারবালাও শিয়ারা একইু রকম আচার অনুষ্ঠান করে থাকে। কিন্তু কারবালাতেও আবহাওয়া নজফের চেয়ে ভাল। কারবালার চারিধার অনেক ফলের বাগান এবং ছোট ছোট নদী দ্বারা বেষ্টিত। ইরাকে আমার মিশন চলাকালীন সময়ে আমি একটি দৃশ্য দেখতে পেয়েছিলাম যা আমার হৃদয়ে অনেক প্রশান্তি এনে দেয়। কিছু কিছু ঘটনা অটোম্যান সম্প্রদায়ের পতন ত্বরান্তিত করে।
ইস্তাম্বুলের কর্তৃপক্ষ, যে গভর্ণরকে ইরাকে নিয়োগ দিয়েছিলেন সে ছিল অশিক্ষিত এবং নিষ্ঠুর প্রকৃতির। সে যা খুশী তাই করতো। জনগণ তাকে পছন্দ করতো না। সুন্নী সম্প্রদায় একটা অস্বস্তিকর অবস্থায় ছিল কেন না গভর্ণর তদের কোন মূল্যায়ন করতো না বরং তাদের স্বাধীনতা হরণ করেছিল আর শিয়া সম্প্রদায়ও তুর্কী শাসকগণ দ্বারা শাসিত হয়ে নিজেদের হেয় মনে করতো। তাদের মধ্যে ছিল অনেক সৈয়দ এবং শরীফ’ বংশীয় লোক যারা নবীর বংশধর এবং গভর্ণরের দায়িত্বপালনের জন্য আরও উপযুক্ত ছিল।
শিয়ারা ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক পরিস্থিতিতে তারা অনেক দুঃস্থ এবং জীর্ণশীর্ণ পরিবেশে বাস করতো। রাস্তায় চলাচলও নিরাপদ ছিল না। চলার পথে ডাকাতদল আক্রমণের জন্য ওৎ পেতে বসে থাকতো, যখন তারা দেখতো কোন কোন সৈন্য সামন্ত তাদের পাহারায় নেই। সে কারণে সরকারীভাবে কোন পাহারার ব্যবস্থা না থাকলে কোন কাফেলা যাত্রা শুরু করতো না।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
এথান থেকে পরুন পর্ব- এক
এথান থেকে পরুন পর্ব- দুই
এথান থেকে পরুন পর্ব- তিন
এথান থেকে পরুন পর্ব- চার
এথান থেকে পরুন পর্ব- পাঁচ
এথান থেকে পরুন পর্ব- ছয়
এথান থেকে পরুন পর্ব- সাত
এথান থেকে পরুন পর্ব- আট
এথান থেকে পরুন পর্ব- নয়
এথান থেকে পরুন পর্ব- দশ
এথান থেকে পরুন পর্ব- এগার
এথান থেকে পরুন পর্ব- বারো ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।