আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বৃটিশ গুপ্তচরের স্বীকারোক্তি এবং ওহাবী মতবাদের নেপথ্যে বৃটিশ ভূমিকা

[শয়তান যে মানুষকে নেক সুরতে ধোকা দেয়, এ বিষয়টি ভালভাবে অনুধাবন করেছিল শয়তানের অনুচর ইহুদী এবং খ্রীষ্টানরা। মুসলমানদের সোনালী যুগ এসেছিল শুধু ইসলামের পরিপূর্ণ অনুসরণের ফলে। শয়তানের চর ইহুদী খ্রীষ্টানরা বুঝতে পেরেছিল মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ, অনৈক্য, সংঘাত সৃষ্টি করতে পারলেই ইসলামের জাগরণ এবং বিশ্বশক্তি হিসেবে মুসলমানদের উত্থান ঠেকানো যাবে। আর তা করতে হবে ইসলামের মধ্যে ইসলামের নামে নতুন মতবাদ প্রবেশ করিয়ে। শুরু হয় দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা যার মূলে থাকে খ্রষ্টীয় বৃটিশ সম্রাজ্যবাদ।

জন্ম হয় ওহাবী মতবাদের। ওহাবী মতবাদ সৃষ্টির মূলে থাকে একজন বৃটিশ গুপ্তচর হেমপার। মিসর, ইরাক, ইরান, হেজাজ ও তুরস্কে তার গোয়েন্দা তৎপরতা চালায় মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার জন্য। "Confession of British Spy and British enmity against Islam" গ্রন্থ হচ্ছে হেমপারের স্বীকারোক্তি মূলক রচনা। যা মূল গ্রন্থ থেকে ধারাবাহিকভাবে তার অনুবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে।

ইনশাআল্লাহ। পর্ব - এক হেমপার বলে, আমাদের বৃটিশ রাজ্য অনেক বড়। সূর্য, বৃটেনের সমুদ্রের উপর দিয়ে উদিত হয়, আবার এরই সমুদ্রের নীচে অস্ত যায়। তথাপি ইন্ডিয়া, চীন এবং মধ্যপ্রাচ্যের মত উপনিবেশিক দেশগুলোতে আমাদের রাষ্ট্র তুলনামূলকভাবে দুর্বল। এ সকল দেশসমূহে সামগ্রিকভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই।

যাই হোক, এ সকল জায়গার জন্য আমরা জোরদার এবং সফল কার্যক্রম আনতে যাচ্ছি। আমরা শীঘ্রই তাদের সবার উপর পরিপূর্ণ অধিপত্য বিস্তার করতে যাচ্ছি। দু’টো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ১। যে সকল জায়গা নিয়ন্ত্রণে আছে সেগুলো ধরে রাখা। ২।

যে সকল জায়গা নিয়ন্ত্রণে নেই সে সকল জায়গা অধিকারে আনা। এ দু’টো কর্তব্য সম্পাদনের জন্য, উপনিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রনালয় থেকে প্রত্যেক উপনিবেশের জন্যে একটি করে মিশন নিয়োগ করা হয়। আমি উপনিবেশ সংক্রান্ত মন্ত্রনালয়ে যোগদান করা মাত্রই মন্ত্রী মহোদয় আমার উপর তার আস্থা প্রকাশ করেন এবং আমাকে আমাদের পূর্ব ভারতের কোম্পানীর প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দান করেন। বাহ্যিকভাবে সেটা ছিল ব্যবসায়িক কোম্পানী। কিন্তু তার মূল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের বিস্তৃত অংশ নিয়ন্ত্রণে আনার বিভিন্ন উপায় বের করা।

আমাদের সরকার ভারতবর্ষের ব্যাপারে মোটেও বিচলিত ছিল না। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে বিভিন্ন জাতির, বিভিন্ন ভাষাভাষির এবং পরস্পর বিপরীত স্বার্থ সংশ্লিষ্ট মানুষ একত্রে বসবাস করে। চীনের ব্যাপারেও আমরা ভীত ছিলাম না। চীনে প্রধান্য বিস্তারকারী ধর্ম ছিল বৌদ্ধধর্ম এবং কনফিউসিয়ানিজম যার কোনটাই আমাদের জন্য কোন রকম আশংকার ছিল না। দু’টোই ছিল মৃত ধর্ম যা জীবনের জন্য কোন সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারেনি এবং বড় জোর এ দু’টি আহবান জানানোর নমূনামাত্র, তার বেশী নয়।

এসব কারণে এ দু’টো দেশে বসবাসরত মানুষগুলোর নাম মাত্র দেশ প্রেমের অনুভূতি ছিল। এ দু’টি দেশ আমাদের অর্থাৎ বৃটিশ সরকারকে ভীত করেনি তথাপি যে সকল ঘটনা পরবর্তীতে ঘটতে পারে তা আমাদের ভাবতে হয়েছে। কাজেই এসব দেশে বিরাজমান মতভিন্নতা, অজ্ঞতা, দারিদ্র্য এমনকি রোগবালাই নিয়ে দ্বন্দ্ব বিরোধ অব্যাহত থাকুক সে লক্ষ্যে এক দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতে থাকি। আমরা অনুকরণ করেছিলাম এদেশের প্রথা ও ঐতিহ্যকে এবং এভাবে আমাদের অভিসন্ধিগুলো গোপন রাখছিলাম। তবে ইসলামিক দেশগুলোর জন্য আমরা মানসিকভাবে দূর্বলতা অনুভব করছিলাম।

ইতিমধ্যে রুগ্ন মানুষ (অটোম্যান সম্রাজ্য) এর সঙ্গে কিছু চুক্তি সম্পাদন করেছিলাম, যার সব কিছুতেই আমাদের সুবিধাজনক অবস্থান ছিল। উপনিবেশ মন্ত্রনালয়ের অভিজ্ঞ সদস্যরা ভবিষ্যৎবানী করেছিল যে, এই রুগ্ন মানুষ (অটোম্যান সম্রাজ্য) এক শতাব্দীর কম সময়েই শেষ হয়ে যাবে। উপরন্তু আমরা কিছু গোপন চুক্তি করেছিলাম ইরানী সরকারের সাথে এবং এই দু’টো দেশে প্রতিনিধি নিয়োগ করেছিলাম যাদের আমরা মেসন (গঅঝঙঘ) হিসেবে তৈরী করেছিলাম। ঘুষ, অদক্ষ প্রশাসন, অসম্পূর্ণ শিক্ষা, দূর্ণীতি, সুন্দরী মহিলায় আসক্তি এবং পরিশেষে কর্তব্যে অবহেলা এ দু’টো দেশের মেরুদ- ভেঙ্গে ফেলেছিল। এসব সত্ত্বেও আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম যে আমাদের কর্মকা- আশানুরূপ ফল দিচ্ছেনা।

আমরা যে রকম আশা করছিলাম নীচে তার কারণগুলো উল্লেখ করা হলোঃ ১। মুসলিমরা ইসলামের প্রতি অত্যন্ত আত্মনিবেদিত। ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক মুসলমানই খৃষ্টধর্মে আসক্ত পুরোহিত বা সন্নাসীর চেয়ে বেশী না হোক সমান অনুরাগী। জানা মতে, ধর্মযাজক এবং সন্ন্যাসীরা মারা যাবে তবু খ্রীষ্টধর্ম ত্যাগ করবে না। এরকম লোকের মধ্যে বিপদজনক হচ্ছে ইরানের শিয়ারা।

যারা শিয়া নয় তাদেরকে শিয়ারা অবিশ্বাসী (কাফের) এবং মন্দ লোক হিসেবে গণ্য করে। শিয়াদের কাছে খ্রীষ্টানরা হচ্ছে ক্ষতিকর ময়লার মত। স্বাভাবিকভাবেই, একজন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে কি করে এ ময়লা থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যায়। একবার এক শিয়াকে প্রশ্ন করেছিলাম, কেন তোমরা খ্রীষ্টানদের এ রকম নজরে দেখ? আমাকে উত্তর যা দেয়া হয়েছিল তা ছিল এই- “ইসলামের নবী ছিলেন (হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অত্যন্ত জ্ঞানী। তিনি খ্রীষ্টানদের একটা আধ্যাত্মিক নির্যাতনের মধ্যে রাখেন যাতে তারা আল্লাহ পাক-এর ধর্ম ইসলামে যোগ দিতে একটি সঠিক রাস্তা খুঁজে পায়।

প্রকৃত প্রস্তাবে রাষ্ট্রেরও নীতি হচ্ছে একজন বিপদজনক ব্যক্তিকে আধ্যাত্মিক অনুশাসনে রাখা যাতে সে আনুগত্য স্বীকার করে। আমি যে নোংরামীর কথা বলছি তা বস্তুগত কিছু নয়, এটা হচ্ছে আধ্যাত্মিক নিপীড়ন যা শুধু খ্রীষ্টানদের কাছে অদ্ভূত তা নয়, এতে সুন্নী এবং সব অবিশ্বাসীরা জড়িত। এমনকি আমাদের প্রাচীনকালের ইরানী মেগিয়ান পূর্বপুরুষেরাও শিয়াদের চোখে মন্দলোক। ” তাকে বললাম, দেখুন সুন্নী এবং খ্রীষ্টানরা তো আল্লাহ, নবী, এবং শেষ বিচার দিবসের উপরও বিশ্বাস করে; তাহলে তারা মন্দ হতে যাবে কেন? সে জবাবে বললো “তারা দু’ কারণে মন্দ। তারা আমাদের নবী মুহম্মদ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর বাধ্যবাধকতা আরোপ করে।

(আসলে শিয়া এবং খ্রীষ্টানরাই নবী করিম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি মিথ্যা দোষারোপ করে। শিয়াদের বিশ্বাস, কথা, গলদ কাজকর্ম কুরআন ও সুন্নাহ মোয়াফেক নয় এবং আহলে সুন্নাতুল জামায়াতের নীচের কিতাবগুলোর প্রত্যেকটিতে এর যথাযথ খ-ন করা হয়েছে। প্রসঙ্গতঃ আহমদ ইবনে হাজার মক্কী লিখিত “আশ শাওয়াইক উল মুহরিকা’ শাহ আব্দুল আজিজ দেহলভী বিরচিত “তোহফা-ই-ইছনা আশারিয়া’ ইমাম-ই-রাব্বানি আহমদ ফারুকীর “তাঈদ-ই আহলে সুন্নাত। ” আব্দুল আজিজ ফেরাহরেভী রচিত ‘নাহীয়া’ আব্দুল্লাহ সুয়েদির ‘হোজাজ-ই-কাতিয়ে’ এবং মোহাম্মদ শিরিস্তানী লিখিত ‘মিলাল ওয়ান নিহাল’ গ্রন্থসমূহ পঠিতব্য। ) হে আল্লাহ পাক আমাদের এমন কাজ থেকে রক্ষা করুন এবং এ ধরণের নিষ্ঠুর দোষারোপের জবাবে আমরা অনুসরণ করি সেই প্রচলিত নীতির যে কেউ যদি আঘাত করে উত্তরে তাকেও আঘাত কর এবং তাকে বলা যে তুমিও নিকৃষ্ট।

দ্বিতীয়তঃ খৃষ্টানরা আল্লাহ পাক ও তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর প্রতি আক্রমনাত্মক ভাবে দোষারোপ করে থাকে। যেমন, তারা বলে ঈসা আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদ পান করতেন। (নাউযুবিল্লাহ) তিনি অভিশপ্ত ছিলেন, তাই ক্রশ বিদ্ধ হন। (নাউযুবিল্লাহ) মন্ত্রীসহ, কয়েকজন উচ্চ পর্যায়ের যাজক এবং কয়েকজন বিশেষজ্ঞ একটি সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমরা সেখানে ছিলাম বিশ জন।

আমাদের সম্মেলন চলেছিল তিন ঘণ্টা ধরে এবং শেষ অধিবেশন কোন সফল সিদ্ধান্তে না পৌছেই শেষ হয়ে যায়। তথাপি একজন যাজক বলেছিল “দুঃখ করোনা। মসিহ এবং তার অনুসারিরা কর্তৃত্ব অর্জন করেছিল তিনশ বছর যন্ত্রণা ভোগের পর। আশা করা যায়, অজানা জগত থেকে তিনি আমাদের দিকে দৃষ্টি দেবেন এবং অবিশ্বাসীদের (এখানে মুসলমানদের) তাদের কেন্দ্র থেকে বিতাড়িত করতে সৌভাগ্যদান করবেন, যদিও আরও তিনশত বছর পর তারা বিতাড়িত হয়। মজবুত ঈমান আর দীর্ঘ মেয়াদী ধৈর্য্য ধারনের মাধ্যমে আমাদের বাহুকে অবশ্যই অস্ত্রসজ্জিত করতে হবে।

কতৃত্ব দখলের জন্য আমাদের অবশ্যই প্রচার মাধ্যমগুলো দখলে আনতে হবে। সম্ভাব্য সব পন্থা অবলম্বন করতে হবে। মুসলমানদের মধ্যে অবশ্যই আমাদের খ্রীষ্ট ধর্মের প্রচার ঘটাতে হবে। আমাদের মূল উদ্দেশ্যটা (অটোমান সাম্রাজ্যকে ভেঙ্গে ফেলা) অনুধাবন করা মঙ্গলজনক হবে, যদিও তা এক শতাব্দী পরে হয়। কেননা বাপের কাজ তো ছেলেদের জন্য।

” আরেকটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল- যেখানে রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড থেকে কূটনৈতিক ব্যক্তিবর্গ এবং ধর্মীয় লোকজন যোগদান করেছিল। আমি ছিলাম খুব সৌভাগ্যবান কারণ আমার এবং মন্ত্রীর মধ্যে সু-সম্পর্কের কারণে আমিও সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলাম। সম্মেলনে মুসলমানদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করা এবং তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে সরিয়ে আনা এবং স্পেনে যেমন করা হয়েছিল তেমনিভাবে মুসলমানদের খ্রীষ্টধর্মে বিশ্বাস করানো বা খ্রীষ্টান বানানোর ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করা হয়। সম্মেলনে যে সব আলোচনা হয় তার সবই আমার (হেমপার) “ইল্লা মালেকুতুল মসিহ” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেছি। কিন্তু এটা খুব কষ্টসাধ্য যে, একটি গাছকে হঠাৎ উপড়িয়ে ফেলা যার শিকড় জমিনের গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত।

কিন্তু আমাদের অবশ্যই এই কষ্টগুলোকে সহজভাবে নিতে হবে এবং এর থেকে পরিত্রানের উপায় বের করতে হবে। খ্রীষ্টানধর্ম এসেছে প্রচারলাভের জন্য। আমাদের প্রভু মসিহ্ও তারই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পূর্ব ও পশ্চিমের বিরাজমান খারাপ অবস্থা হযরত মুহম্মদ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে সাহায্য করেছিল। এখন সে রকম অবস্থা নেই।

পূর্ব-পশ্চিমকে ঘিরে থাকা বিরক্তিকর জিনিসও (তার মতে ইসলাম) অপসারিত হয়েছে। আমরা আজ আনন্দের সাথে লক্ষ্য করছি যে, পরিস্থিতির সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের মন্ত্রনালয় এবং অন্যান্য খ্রীষ্টান সরকারের মহৎ উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টার ফলে মুসলমানগণ এখন পতনের মুখে, অপর দিকে খ্রীষ্টানরা উন্নতির পথে। এ সময়ে আমরা ফিরে পেয়েছি সে সকল বিষয় যা হারিয়েছিলাম শতবর্ষ ধরে। গ্রেট বৃটেনের মত শক্তিশালী রাষ্ট্র ইসলামকে নির্মূল করার মত এ মহতি প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

(ইনশাআল্লাহ চলবে)  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.