আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাদকের করাল গ্রাসে সুনামগঞ্জ শহর তথা পুরো জেলা

আমার আববা শুধু দেখতেই শাদাশিদে মানুষ না সরকারি চাকুরি থেকে অবসরের পর নামাজ, খবর দেখা আর পত্রিকা পড়াতেই তার জীবন সীমাবদ্ধ এক কথায় কারো সাতে পাঁচে নেই, এমন একজন লোকের সাথে কারও কথা কাটাকাটি ভাবাই যায় না! প্রতিদিনকার মত আব্বা মাগরিবের নামাজ শেষে পাড়ার মুদি দোকানে ঢুকলেন কিছু একটা কেনার জন্য, ঠিক ঐ সময় পাড়ার এক ছেলে মাতাল অবস্থায় আব্বাকে ধাক্কা দেয়, বয়সের ভারে নুজ্য আমার বাবা এর টাল সামলাতে পারেননি, ঠিক ঠাক হয়ে তাকে এর কারন জিজ্ঞাস করলে সে আমার বাবাকে খুব কটু কথা বলে। আব্বা আর কথা না বাড়িয়ে ঘরে ফিরে এলেন, দুবার ফোন করলেন থানায় কিন্তু পুলিশের দেখা না পেয়ে জিডি করতে নিজেই গেলেন থানায়! পুলিশের কথা আর নাই বাড়ালাম, উনাদের সম্পর্কে সবারই জানা। এরপর আমার আম্মা, আব্বাকে সরাসরি বলে দিলেন যে সন্ধ্যার পর আর বের হওয়ার দরকার নাই বাসাতেই যেন নামাজ আদায় করে নেন। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ার দরুন এমনিতেই মাদকের ব্যাবসা বাড়ছে তার উপর প্রশাসনের নজরদারির গাফিলতির কারনে সুনামগঞ্জ শহর তথা পুরো জেলা এখন মাদকে নিমজ্জিত। নির্জন ও নিরাপদ হওয়ার দরুন সন্ধ্যা হলেই শহরের অন্যান্য স্পটের পাশাপাশি মাদক সেবীদের প্রধান আড্ডাস্থল হয়ে উঠে হাসন নগর এলাকা।

হাসপাতাল কম্পাউন্দ, সরকারি কলেজের ভিতর আর আশেপাশের বস্তি এলাকা হয়ে উঠে হেরোইন, মদ, গাজা আর জুয়ার অভয়ারণ্য। সম্ভ্রান্ত ঘরের ছেলে থেকে রিকশাওয়ালা সবাই তখন মাদকের নেশায় বুদ হয়ে থাকে, কেউ প্রতিবাদ করলে আমার আব্বার মত হতে হয় নিগৃহীত। শহরের বিভিন্ন স্পটেই তৈরি হয় সস্তা দেশি মদ তারপর ভারত থেকে আনা মদত আছেই, গাজার উৎসও স্থানীয়, হেরোইন ও ফেন্সিডিল আসে সিলেট হয়ে। বিভিন্ন হাত ঘুরে হেরোইন ও ফেন্সিডিল শহরে ঢুকে বলে দামটা থাকে চড়া তাই নিম্নবিত্ত মাদকসেবীদের প্রধান টার্গেট থাকে সস্তা দেশি মদ। মাদক নিরাময়ের নামে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানে একজনকে হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে এই হাসন নগর এলাকাতেই।

মাদক সেবীদের কারনে শহরে চুরি, বখাটেপনা ও অন্যান্য অপরাধও বাড়ছে তারপরও অজানা কারণে প্রশাসন নিরব! শহরের লোকসংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে মাদকের ব্যাবসা এবং তার ব্যাবহার ভয়াবহ আকারে বেড়ে চলেছে। সরকারি বা বেসরকারি কোনও পক্ষ থেকে কোনও ধরনের পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছেনা, লোকলজ্জার ভয়ে ব্যাক্তিগত বা পাড়া ভিত্তিক কোনও প্রচেষ্টাও চোখে পরছেনা। এই সুযোগে মাদকসেবীরা দিনকেদিন আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে, অদুর ভবিষ্যতে এর লাগাম টেনে ধরা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠবে। মাদক বিরোধী আন্দোলনে প্রয়াত পৌর মেয়র মমিনুল মউজদিন তার জিব্দশায় যথেষ্ট সফল ছিলেন কিন্তু তার অকাল প্রয়ানের পর সেই সফলতা এখন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে! এই অরাজকর অবস্থা থেকে বের হতে হলে পুলিশ প্রশাসনকে উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে, মুরুব্বিদের নিয়ে পাড়া ভিত্তিক মাদক বিরোধী কমিটির মাধ্যমে জড়িতদের হুশিয়ার করা যেতে পারে, অতিমাত্রায় আসক্তদের সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করতে হবে। অবৈধ মাদক ব্যাবসায়ীদের অতি সত্তর আইনের অওতায় আনা জরুরি বলে মনে করছি সেই সাথে সাংবাদিক মহল ও সিভিল সোসাইটি আরও একটু উদ্যোগী হলে সমাজ থেকে এই সমস্যা সুমূলে উৎপাটন সম্ভব।

ধন্যবাদ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।