মাদক সমাজের অসংখ্য পরিবারকে ধ্বংস করছে। ক’দিন আগে চুয়াডাঙ্গা শহরতলীর দৌলাতদিয়াড় দক্ষিণপাড়ার অসহায় এক মা তার সন্তানের বিরুদ্ধে চুরি মামলা দায়ের করে জেলহাজতে আটকে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। এ বিষয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়। বলা হয়, নেশাগ্রস্ত সন্তানকে বাঁচাতেই তার মা এ পদক্ষেপ নেন। দীর্ঘদিন ধরেই মাদকের কালোথাবা সমাজকে গ্রাস করছে।
কখনো ব্যাপকভাবে, কখনো ধীর গতিতে। মাদকবিরোধী অভিযান যখন জোরদার হয়, গণজাগরণ গড়ে ওঠার উপক্রম ঘটে, তখন মাদকের কালোথাবার আগ্রাসী দাপট কিছুটা হলেও হ্রাস পায়। অভিযান ঝিমিয়ে পড়লে মাদক ভয়াবহ আকারে সমাজে ছড়াতে থাকে। সংক্রামক ব্যধির মতো সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে। মাদকের কালোথাবার কুপ্রভাবে হাবুডুবু খাচ্ছে অসংখ্য মেধাবীছাত্র, পেশাজীবীসহ হতাশাগ্রস্ত যুবসমাজ।
পাশেই ভারত সীমান্ত। ভারত সীমান্তের অভ্যন্তরে মাদকের অসংখ্য অবৈধ কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা থেকে ফেনসিডিল তৈরি করে পাচারকারীদের মাধ্যমে পাচার করা হচ্ছে। বোকারাম বেকার থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর পেশাজীবীর মধ্যেই ঢুকে পড়ছে মাদক। সহজলভ্য হওয়ায় সঙ্গদোষে অনেক শিক্ষার্থীও মাদকের কবলে পড়ে হারাচ্ছে তার সুন্দর ভবিষ্যত।
দক্ষ পেশাজীবী পেশা হারিয়ে পথে পথে ঘুরে মরে পড়ে থাকার ঘটনাও আমাদের সমাজে কম ঘটছে না।
এ ভায়াবহতা থেকে মুক্ত হতে না পারলে জাতির ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা ভাবতেই ভর করে হতাশা। মাদক সমস্যা এখন আর শুধু সীমান্ত এলাকায় সীমাবদ্ধ নেই, সারাদেশেই ছড়িয়ে পড়েছে। ফেনসিডিল নামক মাদকসহ ধরাপড়া সেনাবাহিনীর এক মেজরকে সম্প্রতি চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। একের পর এক সন্তানকে তার অভিভাবক জেলহাজতে দিয়ে মাদকের কবল থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
প্রায় প্রতিদিনই মাদকসহ পাচারকারী আটক-গ্রেফতারের খবর পত্রিকার পাতায় ঠাঁই পাচ্ছে। পাচার বন্ধ হচ্ছে না। বলার অবকাশ রাখে না, যে মারণনেশা হেরোইন পাচারের ট্রানজিট রুট এখন বাংলাদেশ। মাঝে মাঝেই কোটি কোটি টাকার হেরোইন উদ্ধারের খবরে এ মন্তব্য করা নিশ্চয় অমূলক নয়। হেরোইনের কবলে যে একবার পড়েছে তার মুক্ত হওয়া কঠিন।
ফেনসিডিলেও অনেকটা তাই। অনেকেই এসব মাদকের কবলে পড়ে মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেও পারছে না। নিরাময়ের তেমন সুব্যবস্থা নেই। এ কারণেই অভিভাবকরা জেলহাজতে ভরে রেখে অর্থাৎ মাদক থেকে দূরে রেখে সুস্থ করার চেষ্টা করছেন। এটা যে স্থায়ী সমাধান নয় তা বলাই বাহুল্য! নেশাগ্রস্ত অনেকেই হাজতে গিয়ে ফল মিলেছে উল্টো।
দাগি অনেকের সাথেই ঘনিষ্ঠ হয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে। এরকম উদাহরণও চুয়াডাঙ্গায় কম নেই। তা হলে উপায়?
মাদক সীমান্ত এলাকার সামাজিক সমস্যা থেকে এখন জাতীয় অস্বীকৃত সমস্যায় রূপান্তর হয়েছে। এ সমস্যাকে কোনোভাবেই খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। যে কোনো মূল্যে এ মাদক থেকে সমাজ তথা জাতিকে রক্ষা করতে হবে।
সমাজের যে পরিবারে এখনও মাদকের কালোথাবা ভর করেনি, সেই পরিবারকে স্বস্তিতে ঘুমোনোর কারণ নেই। পাশের বাড়ির অশান্তির আগুনের ফুলকি যে কোনো মুহূর্তেই উড়ে এসে নিজের ঘরে পড়তে পারে। ফলে ঘুমোলেই তথা উদাসিন হলেই সর্বনাশ। সন্তানের প্রতি অভিভাবকের সজাগ দৃষ্টি যেমন দরকার, তেমনই দরকার সমাজকে রক্ষা করতে সামাজিকভাবে মাদকের বিরদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর মতো গণজাগরণ। সকলের দায়িত্বশীলতা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যদের সক্রিয় করার বিশেষ উদ্যোগ প্রয়োজন। পুলিশ ও র্যাব মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকলেও অভিযানের গতি বাড়াতে হবে, তা নতুন করে বলার অবকাশ রাখে না। সীমান্ত প্রহরায় আরো কড়াকড়ি আরোপ করতে হবে। সীমান্তবাসীদেরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। মাদকের সাথে আপস না করে যুদ্ধ ঘোষণা ও তার বাস্তবায়নের পাশাপাশি পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।