আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাদকের ছোবল!!

পাথরের উপর চোখের জল ফেলো না তোমার চোখের জলটাই নষ্ট হবে পাথর ভিজবে না !

মাদকের ছোবল!! নিভৃত পল্লীতে বেড়ে ওঠা সূর্য রায়। হালের গরুগুলো রেখেই কাকভেজা স্নান করে স্কুলে দৌড়। হালের মাটি এখনো তার কানে লেগে আছে, তাই দেখে তার বন্ধুরা প্রায়ই হাসত। মেধাবী ছাত্র বলে তার বেশ সুনাম ছিল অত্র স্কুলে। এস.এস.সি উর্ত্তীণ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমরা সবাই উপস্থিত ছিলাম।

স্যার যখন মাইকে ঘোষণা দিলেন- এই স্কুল থেকে এতো ভালো রেজাল্ট আর হয়নি । দেওয়া হয়নি কোন ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা। এই স্কুলের ইতিহাসে এটাই প্রথম রেকর্ড করা রেজাল্ট ও প্রথম দেওয়া সংবর্ধনা। আমি এক কোণে বসে অনুষ্ঠান দেখছি । সারাটা হল জুড়ে পিনপতন নিরবতা ।

স্যার আবেগ জড়িত কন্ঠে বলে যাচ্ছেন আমার শিক্ষকতা জীবনে এটাই সবচেয়ে বড় সফলতা। স্যারের কথা শুনে আমিও মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম একদিন সূর্য রায়ের মতো........। গ্রামের হত দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। বাবা নেই। বড় ভাইয়ের সাথে হালচাষ করে সে।

মা ঢেঁকিতে অপরের ধান ভাঙ্গেন। ছোট বোন লেখাপড়া শিকায় তুলে মাকে সাহায্য করে। কোন রকমে সংসার চলে যায় তাদের। এতো অভাবের মধে সূর্য তার লেখাপড়া চালিয়ে যায়। এস.এস.সি তে লেটার লেটার মার্ক পেয়ে সে ভর্তি হয় শহরের কলেজে।

দূর সম্পর্কের এক মামার কল্যাণে কলেজের পাশেই এক বাড়িতে তার লজিং হয়। পাশাপাশি দু'একটা টিউশনি করে চালিয়ে নেয় তার লেখাপড়ার খরচ। সেবারও এইচ.এস.সি তে ভালো রেজাল্ট করেছিল সে। গ্রামের মেম্বার তার ফলাফলে খুশি হয়ে নিমন্ত্রণ করে খায়িয়ে ছিলেন তার মা, ভাই ও বোনকে। উচ্চ শিক্ষার জন্য সূর্য পাড়ি জমায় রাজধানী ঢাকায়।

নামকরা এক কোচিং-এ ভর্তি প্রিপারেশন নেয় সে। চান্সও পেয়ে যায় চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পছন্দের সাবজেক্ট আইন নিয়ে শুরু হয় তার লেখাপড়া। হলের বড় ভাইয়ের মারফতে একটি টিউশনির সন্ধান পায় সে। ছাত্রী ক্লাস নাইনে পড়ে শহরের নামকরা স্কুলে।

দেখতে দেখতে দু'বছর কেটে যায়। তাদের সম্পর্কও গভীর হয়। মেয়ের মা বুঝতে পারেন বিষয়টি। কিছুদিন পর মেয়েটির বিয়ে হয়ে যায় প্রবাস ফেরত এক যুবকের সাথে। সূর্য চোখে অন্ধকার দেখতে পায়।

হল ছেড়ে দেয়, ছেড়ে দেয় ক্লাস ও পরীক্ষা। এক হাতে মেয়েটির ছবি ও অন্য হাতে মদের বোতল নিয়ে সারা বেলা কাটিয়ে দেয়। পরিবারের সাথে তার আর কোন যোগাযোগ নেই। রাস্তায় রাস্তায় ঘুড়ে বেড়ায় সে। পরিচিত কারো সঙ্গে দেখা হলে টাকা ধার চায়।

সে দিন হঠাৎ করেই আমার সাথে তার দেখা। দেখলাম মাথা ভর্তি তার কোকড়ানো চুল। পড়নে ছিঁড়া ময়লা শার্ট -প্যান্ট। পায়ে জুতা নেই। হাতে কয়েকটা সিগারেট ।

আমার দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে আর তার সাড়া দেহটা কাঁপছে। চোখ দিয়ে টলটল করে পানি পড়ছে। তার কান্না দেখে আমিও ঠিক থাকতে পালনাম না। তাকে নিয়ে কাপড় কিনতে গেলাম। আমি ও সূর্যদা পাশাপাশি হাঁটছি।

হঠাৎ একটি গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অনেক লোক জড়ো হয়। গাড়ি থেকে সদ্য মা হওয়া এক মহিলা বেড়িয়ে আসেন। সূর্যদার মুখটা দেখেই মহিলার সমস্ত মুখ-মণ্ডল ফ্যাকাশে হয়ে য্য়।

আমরা তড়ি-গড়ি করে তাকে হাসপাতানে নিয়ে যাই। ঠিক গোধূলী লগ্নে সেই মহিলার আর্বিভাব। হাতে ব্যাগ ভর্তি ফল। কোলের শিশুটি হাঁসছে। জানতে পারলাম এই মেয়েটির সাথেই সূর্যদার সম্পর্ক ছিল।

মেয়েটি যদি তাকে ভুলে নির্বিঘ্নে স্বামী-সংসার নিয়ে সুখে থাকতে পারে তবে সূর্যদা কেন...................। বদরুল ইসলাম প্রিন্স সিলেট-০১/০৮/২০১০খ্রিঃ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।