কয়েকদিন আগের কথা। ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে বাসায় আসব। রাস্তার পাশে জটলা দেখে বাঙালি স্বভাব মত এগিয়ে গেলাম। একটা লোক অজ্ঞান হয়ে পরে আছে। সবাই বলাবলি করছে অজ্ঞান পার্টি ধরেছিল।
পাশের ক্লিনিক এ নিয়ে গিয়েছিল। পকেটে টাকা পয়সা নেই দেখে ক্লিনিক এর লোকজনেরা আবার বাইরে ড্রেনের পাশে ফেলে দিয়ে গেছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার। সবাই বলছে হাসপাতালে নেওয়া দরকার, কিন্তু দরকারি কাজটা কাউকে করতে দেখা যাচ্ছে না।
আমার শরীরটা তেমন ভাল না।
তাই ভারী শরীরের লোকটাকে নিয়ে যাবার দায়িত্ব নিতে চাইছিলাম না। চেয়ে চেয়ে দেখছিলাম। বেশ কিছুক্ষন হল, তামাশা দেখার লোকের অভাব নেই, হাসপাতালে নিতে হবে এইকথা বলার লোক অনেক, কিন্তু নেওয়ার লোক নেই একজনও।
কাছে এগিয়ে গেলাম। হাতের শিরা গুলো দেখলাম।
না ইনজেকশনের সুঁইএর তেমন চিহ্ন নেই, চোখের নিচে কালি নাই। অতএব নেশা করে পরে আছে সেই সম্ভাবনা কম। চোখ ফোলা, হয়তো মলমের কেরামতি। একটা উজ্জ্বল নীল রঙের লুঙ্গি, আর শার্ট। দুটোই ভাল।
ড্রেনের উপর অনেক্ষন পড়ে থাকার জন্য ড্রেনের ময়লা আর পানি লেগে বেশ অপরিচ্ছন্ন। আমিই বললাম কেউ চলেন লোকটাকে ঢাকা মেডিক্যালে নিয়ে যাই। এইবার লোকজনের ভিড় কমতে লাগলো। আবার বললাম ভাই আমার পরিচিত ডাক্তার আছে সেখানে, ফাইনাল ইয়ারের ফ্রেন্ড আছে, সমস্যা হবে না। শুধু হাসপাতাল পর্যন্ত নামিয়ে দিয়ে আসবেন।
নাহ সেইরকমও কেউ নেই।
যা আছে কপালে, আমি একাই নিয়ে যাব। একটা রিক্সা লাগবে। এইবার আরেক খেলা। রোগী দেখে কোন রিকশাওয়ালা যেতে রাজি হয়না।
আমি ওই যায়গা থেকে একটু দূরে গিয়ে একটা রিক্সা ঠিক করলাম। তারপর রিক্সা নিয়ে অজ্ঞান লোকের কাছে আসি। এক বয়স্ক ভদ্রলোক ১০০ টাকা দিলেন জোর করে। ছোটোখাটো শরীরের এই আমার জন্য অজ্ঞান একটা ভারী শরীর একা সামলানো বেশ টাফ।
বাকি ঘটনা সংক্ষেপে বলি।
টিকিট, ভরতি সংক্রান্ত জটিলতা, সাথে পুলিশের রিপোর্ট, লোকের স্টোমাক ওয়াশ করা শেষে ওয়ার্ডে নেওয়া হয়। ডাক্তারের সাথে কথা বলে আমি চলে আসি। তখন স্যালাইন চলছে।
আধো আধো কথা থেকে শুধু এইটুকু বুঝতে পেরেছি লোকের বারি ময়মনসিংহ।
যাই হোক।
এমন অবস্থা আমাদের যে কারো যে কোন সময়ে হতে পারে। পাশে যদি একটু দাঁড়াই হয়ত কোন লাভ হবে না। উল্টো নিজের সময় আর টাকা খরচ। তবে খুব বেশি ক্ষতি কি হবে?? না হয় হলই ক্ষতি, চলুন না একটু ক্ষতি করি নিজের।
পরিশেষঃ পরদিন ক্লাস শেষে গিয়ে শুনি আমি আসার কিছুক্ষন আগে লোকটা বাড়ি চলে গেছে।
তার স্ত্রী সন্তানেরা এসেছিল। বাড়ি ময়মনসিংহের গফরগাঁও।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।