ভালবাসি মা-মাটি-দেশ। স্বপ্ন দেখি একটি সুন্দর সকাল। এক নতুন সূর্যোদয়ের।
ছবি: প্রথম আলো।
একটি ছেলে; যে তাঁর বাবার কোল ছাড়া ঘুমাতে পারেনা।
যে প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকে তাঁর বাবার ঘরে ফিরে আসার। যে ছেলেটি সকালে ঘুম থেকে উঠে অসংখ্য আবদার নিয়ে বসে বাবার কাছে। যে ছেলেটি বাবা ফোন করে না বললে, দুপুরে খেতে বসে না।
বাবা তার কাছে একজন সুপার হিরো, যে কিনা দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনে সর্বদা ব্যস্ত। বাবা তাঁর কাছে জীবন্ত রবীনহুড।
টেলিভিশনের পর্দায় তার অনুসন্ধিৎসু দুটি চোখ সর্বদাই খুজে বেড়ায় বাবার বীরদর্পে হেটে চলা। দুষ্ট লোকগুলোকে তাড়া করা।
আজো সে বাবার বিরত্ব দেখতেই বসেছিল টিলেভিশন সেটের সামনে।
কিন্তু একি ! সে দেখছে তার প্রান প্রিয় বাবাকে কতগুলো লোক মিলে মারছে, বাবা কি করেছে? কি অপরাধে তার বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে?
এপ্রশ্নের উত্তর তার শোকাতুর মা দিতে পারেনি। আমাদের মহান নেত্রীদ্বয়, যারা নিজেদের মা'(!) বলে দাবী করেন।
তারা কি দিতে পারবেন?
এই রাষ্ট্র অবোধ এ শিশুটিকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে?
এই শিশুটি তাঁর সারাটি জীবন এই দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়ে বেচে থাকবে। সেইসাথে এক রাশ ঘৃণা তার বাবার হত্যাকারীদের অথবা নষ্ট রাজনীতি আর ভ্রষ্ট নেতাদের প্রতি।
সে ঘৃণা কি তাদের স্পর্ষ করতে পারবে? কি অজুহাত আছে নেতৃবৃন্দের কাছে?
মেহেদীর দাগ মোছার আগেই যে নববধূ বিধবা হল। নেতৃবৃন্দ তাঁর বৈধব্যের ক্ষত শোকাবেন কি দিয়ে?
যে বৃদ্ধা মা তাঁর সন্তানের কাঁধে চড়ে শেষ যাত্রার স্বপ্ন দেখতেন। ছেলে তাঁর কবরের পাশে কোরান তেলাওয়াত করে আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য মাগফেরাত কামনা করবেন বলে তাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন।
আজ একবার সে মায়ের অশ্রুহীন শূন্য দৃষ্টি মনে করুণ। নিজেকে কি ছোট বলে মনে হয় না?
রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে, আন্দোলন হবে, হরতাল হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এসবই আইনসিদ্ধ। হরতালে গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, গোলা গুলি, মৃত্যু এ সব আবার আমাদের দেশে সাধারণ বিষয়। সেইসাথে পুলিশ ধরপাকড় করবে।
আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবে। রাজনৈতিক উত্তাপে এটাই স্বাভাবিক। এ দেশে এই চিত্র নতুন নয়। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে; যখন রাজনৈতিক উত্তাপটা একটু বেশিই থাকে।
এসব ঘটনা অনেকবারই দুর্ঘটনার জন্ম দিয়েছে। যা সবাইকেই ব্যথিত করেছে। এমনকি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও কম বেশি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তবে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারিক রায় প্রদানের পর দেশে যে অবস্থা তৈরি করা হয়েছে তাকে ঠিক দুর্ঘটনা বলার উপায় নেই। বলা যায় তখন সুপরিকল্পিত হত্যা যজ্ঞ চালান হয়েছে।
যেখানে লক্ষণীয় বিষয় হল পুলিশকেই টার্গেট করে আক্রমণ চালান হয়েছে। যে পুলিশ দেশের সব ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা প্রদানে দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাকেই টার্গেট করে আক্রমণ চালান কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা হয়ত একটি ষরযন্ত্রের অংশ ছিল। আল্লাহর অশেষ রহমত এ জাতি নতুন কোন বিপর্যয়ের সম্মুখিন হয়নি।
পুলিশকে আক্রমণ করলে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। এক, পুলিশ ক্ষিপ্ত হবে এবং প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করবে। তৈরি হবে অনেক মর্মস্পর্শী কাহিনী। যারা পুরো দায়ভার এসে পরবে পুলিশ এবং সরকারের উপর। যা থেকে কেউ সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে।
দুই- এভাবে একের পর এক পুলিশের মৃত্যুতে এই বাহিনীর সদস্যরা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরবে। এবং তারা আর প্রতিরোধে এগিয়ে আসবে না। ফলে খুব সহজেই দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়া যাবে।
কারণ যাই হোক, যারা এ কাজটি করেছেন, তারা জানে আগামী একশ বছরেও তারা এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছে কোন বাহিনীর প্রতি বা সাধারণ জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বর্তমানকে নিয়ে ভাবা।
এবং তারা তাই ভেবেছে। প্রশ্ন হল আজ যারা প্রধান বিরোধী দলে আছেন তারা কিভাবে পুলিশকে প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবছেন ? কাল যখন তারা সরকার পরিচালনা করবেন তখন তো এই পুলিশ সদস্যদের দিয়েই আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন। এই পুলিশ সদস্যরাই তো তাদের নিরাপত্তা বিধান করছেন। ইদানীং আমাদের প্রধান বিরোধী দলের কর্মসূচীতেও পুলিশকে লক্ষ করে আক্রমণ চালান হচ্ছে। যা সত্যিই উদ্বেগজনক।
আমার দুটি প্রশ্ন- প্রথম প্রশ্ন হল; পুলিশকে অনেকেই বলেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।
আমার প্রশ্ন পুলিশ কি কর্মচারী না সেবক? যদিও এর অর্থ গত পার্থক্য তেমন একটা নেই। তবে শব্দদুটি নিঃসন্দেহে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হল; তারা কি জনগণের সেবক না রাষ্ট্রের? এর উত্তরেও অর্থ গত পার্থক্য তেমন একটা না থাকলেও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বলা হয় পুলিশ জনগণের বন্ধু, এর প্রায়োগিক প্রতিবন্ধকতা তৈরিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে; দৃষ্টিভঙ্গির এই ভিন্নতা।
রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের মতই পুলিশ তাঁর দায়িত্ব পালন করে। এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কিছুটা শৈথিল্য কিছুটা বাড়াবাড়ি যদি থেকেও থাকে সে জন্যে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। যদি না নেয়া হয় তাহলেও তাঁর দায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যের নয়। আবার এটাও তো ঠিক এই পুলিশ বাহিনীরই অনেক সদস্য তাদের সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য সরকারী-বেসরকারিভাবে পুরস্কৃত হন। রাষ্ট্রের এমন অনেক অঙ্গ রয়েছে যার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা সারা জীবনেও গ্রহণ করেনি এমন অনেক লোক আমাদের সমাজে খুঁজে পাওয়া যাবে।
কিন্তু জীবনে পুলিশের সহযোগিতা গ্রহণ করেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা কি তাদের কাছে একটিবার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছি?
আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্য অপ্রতুলতা, তাদের আবাসন সংকট, কম বেতন, অপ্রতুল লজিস্টিক সাপোর্ট সহ নানাবিধ সমস্যা মেনেই তাদের কাজ করতে হয়। আর যে কাজটি তারা করেন তা হচ্ছে সাধারণ মানুষের এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান। কাজেই সাধারণ মানুষের সহযোগিতা তাদের প্রাপ্য। দুঃখজনক সত্য হল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা আমরা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সদস্যরা যন্ত্র নন। মানবিক দোষ ত্রুটি তাদেরও থাকবে। এর থেকে যতটা সম্ভব তাদেরকে মুক্ত করার দায়িত্ব যাদের উপর বর্তায় তারা কি তা যথাযথ ভাবে তা পালন করছেন? যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির যোগান, তাদের নুন্যতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করন যাদের দায়িত্ব তারা এব্যাপারে কতটা আন্তরিক তাও আলোচনার দাবী রাখে।
আমাদের নেতৃবৃন্দ যদি পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা মাথায় রাখেন তাহলে তার ফলে উদ্ভূত সমস্যার দায়ও কি তাদের উপরেই বর্তায় না? পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা তখনই পালন করতে পারবে যখন তাদের উপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার বন্ধ হবে। তাদের দ্বারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের চেষ্টা করা বন্ধ হবে।
বরং এসব করে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। সে দায় পুলিশের নয়।
প্রতিটি পুলিশ সদস্য কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো বাবা। তার জন্যেও পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করে থাকে। সেও একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের অপরাধে তাকে কেন মরতে হবে? কেন স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরন করতে হবে? কেন তাঁর সন্তান পিতৃহারা হবে? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সে কেন প্রতিপক্ষ হবে?
একটি মানুষ মারার আগে আমরা কি তার অপরাধটিও বিচার করব না? এটা তো সমাজবিরোধীদের কাজ। রাজনীতিবিদগণ আর যাই হন নিশ্চয়ই সমাজবিরোধী নন। তাহলে তারা কেন তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিষেধ করছেন না?
বিনা অপরাধে আমার ভাইকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এটা আমি কিভাবে মেনে নেব? আজ আমরা কতটা অসহায়! আমাদের চোখের সামনে আমার ভাইকে মেরে ফেলা হচ্ছে। তার অপরাধ সে অন্যের ক্ষতিসাধনে বাধা দিয়েছে।
অথবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছে। আমরা দেখছি, কারা মারছে। অথচ বিচারটুকু চাইতে পারছি না। কার বিচার চাইব, যে মেরেছে তাঁর? নাকি যে মারার আদেশে দিয়েছে তার? বলা হয় রাজনৈতিক অস্থিরতায় তার মৃত্যু হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তো সে সৃষ্টি করেনি।
তাহলে কার অপরাধে তাকে–তার পরিবারকে শাস্তি পেতে হল?
এই নিবন্ধে আমি পুলিশকে মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখতে চেয়েছি। আমি একজন পুলিশ সদস্যকে দেখেছি আমার ভাইয়ের চোখে। তার সন্তান আমার সন্তানের মতই। তার পরিজন আমার আত্মার আত্মীয়। যদি আমষকেসকলেই পুলিশকে এই চোখে দেখতে পারতাম।
আমরা তাদের উপর আক্রমণ চালাতে পারতাম না। পুলিশের উপর আক্রমণ কি রাষ্ট্রের উপর আক্রমণ নয়?
পুলিশের উপর যার যতই অভিযোগ থাকুক না কেন তা কোনভাবেই পুলিশের উপরে আক্রমনকে বৈধতা দেয় না।
যদি কেউ বলেন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় সেটা কতটা সত্য। কতটা সত্যের অপলাপ তাও আলোচনার দাবি রাখে। দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল তাঁর থেকে উত্তরণের অন্য উপায় ছিল কিনা জানিনা।
তবে পুলিশের উপর আক্রমণ যে তার ফলশ্রুতিতেই হয়েছে। আক্রমণের সময় ও ধরন কোনটাই তা নির্দেশ করে না।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যা আমাদের আহত করেছিল। মেঘ আমাদের চোখে জল ঝরিয়েছিল। আজো ঝরায়।
কারণ ঐ দম্পতি নিরপরাধ ছিল। তারা কারো পৈচাশিকতার স্বীকার হয়েছিল। ক’দিন আগে একই ধরনের পৈচাশিকতার স্বীকার পুলিশ সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যু কেন আমাদের বিবেককে নাড়া দেয় না? কেন তাদের মেঘ’দের জন্য আমরা অশ্রুসিক্ত হই না? তারা পুলিশ বলে? তবে কি পুলিশ হওয়া অন্যায়? তাদের সন্তানদের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর আমাদেরই দিতে হবে।
ছবি: প্রথম আলো।
একটি ছেলে; যে তাঁর বাবার কোল ছাড়া ঘুমাতে পারেনা।
যে প্রতিদিন অপেক্ষায় থাকে তাঁর বাবার ঘরে ফিরে আসার। যে ছেলেটি সকালে ঘুম থেকে উঠে অসংখ্য আবদার নিয়ে বসে বাবার কাছে। যে ছেলেটি বাবা ফোন করে না বললে, দুপুরে খেতে বসে না।
বাবা তার কাছে একজন সুপার হিরো, যে কিনা দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনে সর্বদা ব্যস্ত। বাবা তাঁর কাছে জীবন্ত রবীনহুড।
টেলিভিশনের পর্দায় তার অনুসন্ধিৎসু দুটি চোখ সর্বদাই খুজে বেড়ায় বাবার বীরদর্পে হেটে চলা। দুষ্ট লোকগুলোকে তাড়া করা।
আজো সে বাবার বিরত্ব দেখতেই বসেছিল টিলেভিশন সেটের সামনে।
কিন্তু একি ! সে দেখছে তার প্রান প্রিয় বাবাকে কতগুলো লোক মিলে মারছে, বাবা কি করেছে? কি অপরাধে তার বাবাকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে?
এপ্রশ্নের উত্তর তার শোকাতুর মা দিতে পারেনি। আমাদের মহান নেত্রীদ্বয়, যারা নিজেদের মা'(!) বলে দাবী করেন।
তারা কি দিতে পারবেন?
এই রাষ্ট্র অবোধ এ শিশুটিকে কি বলে সান্ত্বনা দিবে?
এই শিশুটি তাঁর সারাটি জীবন এই দুঃসহ স্মৃতি বুকে নিয়ে বেচে থাকবে। সেইসাথে এক রাশ ঘৃণা তার বাবার হত্যাকারীদের অথবা নষ্ট রাজনীতি আর ভ্রষ্ট নেতাদের প্রতি।
সে ঘৃণা কি তাদের স্পর্ষ করতে পারবে? কি অজুহাত আছে নেতৃবৃন্দের কাছে?
মেহেদীর দাগ মোছার আগেই যে নববধূ বিধবা হল। নেতৃবৃন্দ তাঁর বৈধব্যের ক্ষত শোকাবেন কি দিয়ে?
যে বৃদ্ধা মা তাঁর সন্তানের কাঁধে চড়ে শেষ যাত্রার স্বপ্ন দেখতেন। ছেলে তাঁর কবরের পাশে কোরান তেলাওয়াত করে আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য মাগফেরাত কামনা করবেন বলে তাকে কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন।
আজ একবার সে মায়ের অশ্রুহীন শূন্য দৃষ্টি মনে করুণ। নিজেকে কি ছোট বলে মনে হয় না?
রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকবে, আন্দোলন হবে, হরতাল হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এসবই আইনসিদ্ধ। হরতালে গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ, গোলা গুলি, মৃত্যু এ সব আবার আমাদের দেশে সাধারণ বিষয়। সেইসাথে পুলিশ ধরপাকড় করবে।
আন্দোলনকারীদের নিবৃত্ত রাখার চেষ্টা করবে। প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করবে। রাজনৈতিক উত্তাপে এটাই স্বাভাবিক। এ দেশে এই চিত্র নতুন নয়। বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে; যখন রাজনৈতিক উত্তাপটা একটু বেশিই থাকে।
এসব ঘটনা অনেকবারই দুর্ঘটনার জন্ম দিয়েছে। যা সবাইকেই ব্যথিত করেছে। এমনকি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দও কম বেশি দুঃখ প্রকাশ করেছেন।
তবে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারিক রায় প্রদানের পর দেশে যে অবস্থা তৈরি করা হয়েছে তাকে ঠিক দুর্ঘটনা বলার উপায় নেই। বলা যায় তখন সুপরিকল্পিত হত্যা যজ্ঞ চালান হয়েছে।
যেখানে লক্ষণীয় বিষয় হল পুলিশকেই টার্গেট করে আক্রমণ চালান হয়েছে। যে পুলিশ দেশের সব ধরনের পরিস্থিতিতে নিরাপত্তা প্রদানে দায়িত্ব পালন করে থাকে। তাকেই টার্গেট করে আক্রমণ চালান কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা হয়ত একটি ষরযন্ত্রের অংশ ছিল। আল্লাহর অশেষ রহমত এ জাতি নতুন কোন বিপর্যয়ের সম্মুখিন হয়নি।
পুলিশকে আক্রমণ করলে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। এক, পুলিশ ক্ষিপ্ত হবে এবং প্রতিশোধ নিতে গিয়ে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করবে। তৈরি হবে অনেক মর্মস্পর্শী কাহিনী। যারা পুরো দায়ভার এসে পরবে পুলিশ এবং সরকারের উপর। যা থেকে কেউ সুবিধা আদায় করে নিতে পারবে।
দুই- এভাবে একের পর এক পুলিশের মৃত্যুতে এই বাহিনীর সদস্যরা মানসিক ভাবে দুর্বল হয়ে পরবে। এবং তারা আর প্রতিরোধে এগিয়ে আসবে না। ফলে খুব সহজেই দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেয়া যাবে।
কারণ যাই হোক, যারা এ কাজটি করেছেন, তারা জানে আগামী একশ বছরেও তারা এককভাবে ক্ষমতায় যেতে পারবে না। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কাছে কোন বাহিনীর প্রতি বা সাধারণ জনগণের প্রতি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়ার থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বর্তমানকে নিয়ে ভাবা।
এবং তারা তাই ভেবেছে। প্রশ্ন হল আজ যারা প্রধান বিরোধী দলে আছেন তারা কিভাবে পুলিশকে প্রতিপক্ষ হিসেবে ভাবছেন ? কাল যখন তারা সরকার পরিচালনা করবেন তখন তো এই পুলিশ সদস্যদের দিয়েই আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করবেন। এই পুলিশ সদস্যরাই তো তাদের নিরাপত্তা বিধান করছেন। ইদানীং আমাদের প্রধান বিরোধী দলের কর্মসূচীতেও পুলিশকে লক্ষ করে আক্রমণ চালান হচ্ছে। যা সত্যিই উদ্বেগজনক।
আমার দুটি প্রশ্ন- প্রথম প্রশ্ন হল; পুলিশকে অনেকেই বলেন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী।
আমার প্রশ্ন পুলিশ কি কর্মচারী না সেবক? যদিও এর অর্থ গত পার্থক্য তেমন একটা নেই। তবে শব্দদুটি নিঃসন্দেহে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করে।
দ্বিতীয় প্রশ্ন হল; তারা কি জনগণের সেবক না রাষ্ট্রের? এর উত্তরেও অর্থ গত পার্থক্য তেমন একটা না থাকলেও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
বলা হয় পুলিশ জনগণের বন্ধু, এর প্রায়োগিক প্রতিবন্ধকতা তৈরিতেও বিশেষ ভূমিকা রাখে; দৃষ্টিভঙ্গির এই ভিন্নতা।
রাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গের মতই পুলিশ তাঁর দায়িত্ব পালন করে। এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কিছুটা শৈথিল্য কিছুটা বাড়াবাড়ি যদি থেকেও থাকে সে জন্যে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হয়। যদি না নেয়া হয় তাহলেও তাঁর দায় মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যের নয়। আবার এটাও তো ঠিক এই পুলিশ বাহিনীরই অনেক সদস্য তাদের সাহসী ভূমিকা পালনের জন্য সরকারী-বেসরকারিভাবে পুরস্কৃত হন। রাষ্ট্রের এমন অনেক অঙ্গ রয়েছে যার প্রত্যক্ষ সহযোগিতা সারা জীবনেও গ্রহণ করেনি এমন অনেক লোক আমাদের সমাজে খুঁজে পাওয়া যাবে।
কিন্তু জীবনে পুলিশের সহযোগিতা গ্রহণ করেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমরা কি তাদের কাছে একটিবার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছি?
আমাদের পুলিশ বাহিনীর সদস্য অপ্রতুলতা, তাদের আবাসন সংকট, কম বেতন, অপ্রতুল লজিস্টিক সাপোর্ট সহ নানাবিধ সমস্যা মেনেই তাদের কাজ করতে হয়। আর যে কাজটি তারা করেন তা হচ্ছে সাধারণ মানুষের এবং রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান। কাজেই সাধারণ মানুষের সহযোগিতা তাদের প্রাপ্য। দুঃখজনক সত্য হল বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা আমরা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি।
পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত সদস্যরা যন্ত্র নন। মানবিক দোষ ত্রুটি তাদেরও থাকবে। এর থেকে যতটা সম্ভব তাদেরকে মুক্ত করার দায়িত্ব যাদের উপর বর্তায় তারা কি তা যথাযথ ভাবে তা পালন করছেন? যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির যোগান, তাদের নুন্যতম সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করন যাদের দায়িত্ব তারা এব্যাপারে কতটা আন্তরিক তাও আলোচনার দাবী রাখে।
আমাদের নেতৃবৃন্দ যদি পুলিশ সদস্যদের নিয়োগ-পদোন্নতির ক্ষেত্রে দলীয় বিবেচনা মাথায় রাখেন তাহলে তার ফলে উদ্ভূত সমস্যার দায়ও কি তাদের উপরেই বর্তায় না? পুলিশ তাদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ ভূমিকা তখনই পালন করতে পারবে যখন তাদের উপর রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার বন্ধ হবে। তাদের দ্বারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের চেষ্টা করা বন্ধ হবে।
বরং এসব করে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। সে দায় পুলিশের নয়।
প্রতিটি পুলিশ সদস্য কারো সন্তান, কারো ভাই, কারো স্বামী, কারো বাবা। তার জন্যেও পরিবারের সদস্যরা অপেক্ষা করে থাকে। সেও একটি পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।
শুধুমাত্র দায়িত্ব পালনের অপরাধে তাকে কেন মরতে হবে? কেন স্থায়ী পঙ্গুত্ব বরন করতে হবে? কেন তাঁর সন্তান পিতৃহারা হবে? সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে সে কেন প্রতিপক্ষ হবে?
একটি মানুষ মারার আগে আমরা কি তার অপরাধটিও বিচার করব না? এটা তো সমাজবিরোধীদের কাজ। রাজনীতিবিদগণ আর যাই হন নিশ্চয়ই সমাজবিরোধী নন। তাহলে তারা কেন তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিষেধ করছেন না?
বিনা অপরাধে আমার ভাইকে মেরে ফেলা হচ্ছে। এটা আমি কিভাবে মেনে নেব? আজ আমরা কতটা অসহায়! আমাদের চোখের সামনে আমার ভাইকে মেরে ফেলা হচ্ছে। তার অপরাধ সে অন্যের ক্ষতিসাধনে বাধা দিয়েছে।
অথবা রাষ্ট্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছে। আমরা দেখছি, কারা মারছে। অথচ বিচারটুকু চাইতে পারছি না। কার বিচার চাইব, যে মেরেছে তাঁর? নাকি যে মারার আদেশে দিয়েছে তার? বলা হয় রাজনৈতিক অস্থিরতায় তার মৃত্যু হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা তো সে সৃষ্টি করেনি।
তাহলে কার অপরাধে তাকে–তার পরিবারকে শাস্তি পেতে হল?
এই নিবন্ধে আমি পুলিশকে মানবিক দৃষ্টি ভঙ্গিতে দেখতে চেয়েছি। আমি একজন পুলিশ সদস্যকে দেখেছি আমার ভাইয়ের চোখে। তার সন্তান আমার সন্তানের মতই। তার পরিজন আমার আত্মার আত্মীয়। যদি আমষকেসকলেই পুলিশকে এই চোখে দেখতে পারতাম।
আমরা তাদের উপর আক্রমণ চালাতে পারতাম না। পুলিশের উপর আক্রমণ কি রাষ্ট্রের উপর আক্রমণ নয়?
পুলিশের উপর যার যতই অভিযোগ থাকুক না কেন তা কোনভাবেই পুলিশের উপরে আক্রমনকে বৈধতা দেয় না।
যদি কেউ বলেন পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায় সেটা কতটা সত্য। কতটা সত্যের অপলাপ তাও আলোচনার দাবি রাখে। দেশে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছিল তাঁর থেকে উত্তরণের অন্য উপায় ছিল কিনা জানিনা।
তবে পুলিশের উপর আক্রমণ যে তার ফলশ্রুতিতেই হয়েছে। আক্রমণের সময় ও ধরন কোনটাই তা নির্দেশ করে না।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যা আমাদের আহত করেছিল। মেঘ আমাদের চোখে জল ঝরিয়েছিল। আজো ঝরায়।
কারণ ঐ দম্পতি নিরপরাধ ছিল। তারা কারো পৈচাশিকতার স্বীকার হয়েছিল। ক’দিন আগে একই ধরনের পৈচাশিকতার স্বীকার পুলিশ সদস্যদের মর্মান্তিক মৃত্যু কেন আমাদের বিবেককে নাড়া দেয় না? কেন তাদের মেঘ’দের জন্য আমরা অশ্রুসিক্ত হই না? তারা পুলিশ বলে? তবে কি পুলিশ হওয়া অন্যায়? তাদের সন্তানদের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর আমাদেরই দিতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।