বন্ধ জানালা, খোলা কপাট !
প্রসঙ্গ: আমানত শাহ মাজার
*********************
শাহ্ আমানত বা আমানত শাহ-এর নাম শুনেছেন অনেকে । শুনা যায়,এই শাহ্ চট্টগ্রাম কোর্টে পেশকার-এর চাকরী করতেন। ছিল খুব সাদামাটা জীবন-যাপন । একদিন ঘটল এক আচানক ঘটনা । জমি-জমা সংক্রান্ত এক মামলার রায় হবে ।
বাদী-বিবাদী সকলেই উপস্থিত । আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই মিমাংসা হয়ে যাবে । হঠাত্তই বাদী আবিস্কার করলেন বেখেয়ালে তিনি তার জমির দলিল আনতে ভুলে গেছেন । ভুলে গেছেন আরো সব প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আনতে । তিনি এসেছেন সন্দ্বীপ থেকে ।
কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেখান থেকে জরুরী এসব কাগজ-পত্র আনা কিছুতেই সম্ভব না । চরম হতাশ জমির মালিক একসময় কোর্ট চত্তরে কেঁদে ফেলেন । পেশকার শাহ্ আমানত সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেন। সব শুনে তিনি তাকে ধৈর্য ধরতে বলেন। আল্লাহ একটা কিছু সাহায্য করবেন বলে বাদীকে শান্তনা দেন ।
এখানেই গল্পের আসল রহস্য। দশ মিনিটের মাথায় পেশকার শাহ আমানত মামলার বাদীর সামনে আবারো হাজির হলেন । তাঁর হাতে মামলা সংঙ্ক্রান্ত কাগজ-পত্র এবং জমির দলিল !
অবিশ্বাস্য হলেও এই ঘটনা সত্য বলে প্রচার পেয়ে যায় । শাহ আমানতের 'কেরামতির' কথা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিক । ভ্ক্তকূল বাড়তে থাকে দিন দিন ।
তাকে বেষ্টন করেই থাকে তারা । একসময় তিনি আত্মগোপন করেন । কারণ,তিনি নাকি কখনই এভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে চাননি ।
যাই হোক,তার দেখা আর কেউ পায়না বলে জানা যায় । কিন্তু মাজার ব্যবসায়ীরা বসে থাকেনা ।
চট্টগ্রাম কোর্টের কাছাকাছি জায়গায় তারা শাহ আমানতের মাজার গড়ে নেয় ! সেখানে এখন অভাবিত বাণিজ্য হয় তাদের ।
এক শবে বরাত রাতে (এই শবে বরাত রাত নিয়ে বিতর্ক আছে,কেউ কেউ বলেন 'শবে বরাত' বলে কিছু নেই । 'লায়লাতুল কদর' রাতের পক্ষে বর্ণীত কুরাআনের আয়াতগুলোই শবে বরাতের বেলায় ব্যবহৃত হয় । যা ভুল । )
ইবাদত বন্ধেগী ছেড়ে বন্ধুরা চট্টগ্রাম শহরময় 'টো টো' করে ঘুরতে লাগলাম ।
গেলাম একসময় আমানত শাহ্-এর মাজারে !
মাজারতো নয় ! প্রাসাদসম চাকচিক্য। চকচকে মাজারের সবখানে জ্বলছে মোমবাতি । বিদ্যুতের ঝলমলে আলোতেও শত শত মোমবাতির আলো না হলে বোধহয় মাজারের ইমেজ বাড়েনা । যে বেচারা শাহ আমানত নিজেকে মানুষের ভিড় থেকে আড়াল করতে চেয়েছেন । তাঁর (তথাকথিত) মাজারে হাজার হাজার লোকের ভিড় ।
ব্যবসা কেমন রমরমা,মাজার গেটে সারিবদ্ধ ভিক্ষুক দলকে দেখলেই বোঝা যায় !
এখানে ঘটলো এক মজার ব্যাপার । এক বন্ধু দোয়েল মার্কা দু'টাকার একটা নোট দিল ভিক্ষুককে । অমনি তাবত্ত ভিক্ষুক তাকে ঘিরে ধরল । তাদেরও দিতে হবে । নইলে 'ভিক্ষুক বেষ্টন মুক্ত করা অসম্ভব'-এমনই ভাষ্য তাদের ! শেষে,বন্ধুরা মিলে প্রায় সবাইকেই অল্প-বিস্তর দিয়ে বন্ধুকে রক্ষা করি ! পরে জেনেছি,এসব মাজারে একজনকে দিলে নাকি সবাইকেই দিতে হয় ।
চমত্কার নিয়ম বটে !
অন্যএকদিন আমানত শাহ মাজার রোডে গিয়েছিলাম একটা কাজে । ফুটপাথ ধরে হাঁটছি । মেইন রোডের পাশে মাজারের বড় দান বক্স । পাশে বসা একজন খাদেম । গার্মেন্টস কর্মী এক ১৫-১৬ বছরের মেয়ে বক্সের মুখে একটি দশ টাকার নোট অর্ধেক ডুকিয়ে দিয়ে গেল ।
মেয়েটি দান বক্স পার হয়ে যেতেই, খাদেম সাহেব দশ টাকার নোটটি তার পকেটে পুরলেন । আমি পেছন দিকে ছিলাম বলে খেয়াল করলেন না ।
জানি,মাজারের যাবতীয় টাকা খাদেমরাই খায় ! তবু,সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম । দশ টাকা কামাতে একজন গার্মেন্ট কর্মীর কতো ঘাম ঝরে ভেবে...। এ-দৃশ্য ভুলতে পারিনা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।