আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুলিশের তদন্ত রিপোর্ট: কলগার্ল নিয়ে ফুর্তি করা ওসি মোমিনের নেশা

টুকলিফাই মারাই আমাদের কাজ, চুরা ছেঁচা দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। ওয়েছ খছরু, সিলেট থেকে: কলগার্ল নিয়ে ফুর্তি করা ওসি মোকসেদুল মোমিনের নেশা। যেখানেই যেতেন সেখানেই কলগার্ল নিয়ে মত্ত থাকতেন। এ কারণে তিনি যে থানায়ই দায়িত্ব পালন করেছেন সেখানেই নারীলোভী ওসি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সর্বশেষ কলগার্ল সাথী ওরফে মিনারাকে নিয়ে গোয়াইনঘাটের বাসায় অসংলগ্ন অবস্থায় ধরা পড়া ওসি মোমিনের নানা কাহিনী এখন পুলিশ বিভাগেই রটছে।

তার এসব কর্মকাণ্ডে খোদ পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারাই বিব্রত। আর পুলিশের তদন্তেই ফেঁসে গেছেন সিলেটের বহুল আলোচিত এই ওসি। তাদের রিপোর্টেই ওসি মোকসেদুল মোমিনকে নারী কেলেঙ্কারিতে দোষী কর্মকর্তা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। গতকাল তদন্ত কমিটির সদস্যরা সিলেটের পুলিশ সুপারের কাছে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন। সিলেট জেলা পুলিশের সিনিয়র এক কর্মকর্তা মানবজমিনকে জানিয়েছেন, পত্রিকায় ওসি মোকসেদুল মোমিন সম্পর্কে যা যা লেখা হয়েছে তার অনেক কিছুরই সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ কারণে তাকে দোষী চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়েছে। সিলেটের গোয়াইনঘাটে পুলিশ কোয়ার্টারের ভেতরে নিজ বাসায় কলগার্ল সাথী ওরফে মিনারাকে নিয়ে ফুর্তি করার সময় তার স্ত্রী আক্তারুন্নেছা লিজা ঢাকা থেকে এসে তাদের অসংলগ্ন অবস্থায় আটক করেন। এ ঘটনার পর সোমবার রাতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইব্রাহিমকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর সদস্য ছিলেন- সিলেট সদর উত্তর সার্কেলের এএসপি বীণা রানী ও পুলিশ পরিদর্শক আবদুল গণি। তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা মঙ্গলবার সিলেটের গোয়াইনঘাট থানায় যান।

সেখানে তারা পুলিশসহ নানা জনের বক্তব্য রেকর্ড করেন। তদন্ত কমিটির সদস্যরা তদন্তকালে প্রায় ২০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটির সদস্য সিলেটের এএসপি বীণা রানী। গতকাল তিনি জানান, যে রিপোর্টটি জমা দেয়া হয়েছে সেটি হচ্ছে প্রাথমিক রিপোর্ট। এই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, এই ঘটনার পর ওসি মোকসেদুল মোমিনকে ক্লোজ করে সিলেটের পুলিশ লাইনে নিয়ে আসা হয়েছে।

সিলেটের গোয়াইনঘাট থানার ওসি তদন্ত মো. কামরুল ইসলাম গতকাল মানবজমিনকে জানান, তদন্ত কমিটির সদস্যরা মঙ্গলবার গোয়াইনঘাট থানায় এসে ওই দিন দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তাদের বক্তব্য রেকর্ড করেন। এ সময় ওখানে থাকা পুলিশ কর্মকর্তারা তদন্ত কমিটির কাছে সত্য বিষয়টি তুলে ধরেছেন। যেভাবে যে অবস্থায় ওসি মোমিনকে তার বাসায় পাওয়া গেছে সেটি পুলিশ সদস্যরা উপস্থাপন করেন। একই সঙ্গে ওই সময় পুলিশের কেউ কেউ ওসি মোমিনের বিরুদ্ধে লিখিত বক্তব্য দেন বলে জানান তিনি। এ সময় ওসি মোমিনের অনেক ঘটনা উঠে আসে বলে জানান তিনি।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গতকাল পুলিশ সুপারের কাছে দেয়া তদন্ত রিপোর্টে পুরো ঘটনার বিবরণ দেয়া হয়েছে। ওসি মোমিন নারীলোভী এক পুলিশ কর্মকর্তা। তার স্ত্রী কামরুন্নেছা লিজা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করেন। আর পেশাস্থলে একাই থাকেন ওসি মোমিন। এ কারণে তিনি দেশের যে যে এলাকায় চাকরি করেছেন সেখানেই তার একজন কলগার্ল রয়েছে।

তেমনি ভাবে চট্টগামে সাথী ওরফে মিনারা বেগমের সঙ্গে ওসি মোমিনের সখ্য হয়। সাথী পেশায় কলগার্ল। তবে ওসি মোমিনের কাছ থেকে যখনই ডাক পেতো তখনই ওসি’র কর্মস্থলে ছুটে আসে। এভাবেই ওসি ফোন দেন সাথীকে। তাকে গোয়াইনঘাটে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান।

ওসি’র ফোন পেয়ে সাথী সিলেটের গোয়াইনঘাটে যায়। ওসি’র বাসায় থেকেই তার সঙ্গে আমোদ-ফুর্তিতে মেতে ওঠে। এই ফাঁকে ওসি’র স্ত্রী ঢাকা থেকে এসে তাকে আটক করেন। ওই সময় পালাতে গিয়ে ওসি কোমর থেকে পিস্তল বের করে গুলি করতে উদ্যত হয়েছিলেন। কিন্তু তখন গুলি করেননি।

পরে তিনি জনতার রোষানল থেকে রক্ষা পেতে সিলেটে পালিয়ে আসেন। ওখানে এসে তিনি হোটেল দরগাগেইটে সাথী ওরফে মিনারাকে নিয়ে অবস্থান করেন। খবর পেয়ে সেখানে এসেও স্ত্রী লিজা তাদের ধরে ফেলেন। পরে ওসি পালিয়ে গেলেও ডিবি পুলিশ সাথীকে আটক করে নিয়ে যায়। এদিকে, সাথীর ঘটনায় ফেঁসে যাওয়ার আগে ওসি মোমিন গোয়াইনঘাটে আরেকটি ঘটনার জন্ম দিয়েছিলেন।

এ ঘটনার প্রায় এক মাস আগে গোয়াইনঘাট থানার এসআই নাজমুল ইসলাম সিলেটের জাফলংয়ের হোটেল প্যারিসে এক যুবকসহ এক যুবতীকে আটক করেন। এ সময় সাত্তার নামে আরও একজনকে আটক করলেও তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। ভোররাতে আটকের পর পুলিশ ওই যুবতীসহ যুবককে গোয়াইনঘাট থানায় নিয়ে যায়। যুবককে হাজতখানায় আটকে রেখে ওই যুবতীকে ওসি’র বাসায় দিয়ে আসেন। ওই যুবতী ওসি’র সঙ্গে তার বাসায় সঙ্গ দেয়।

এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর গোয়াইনঘাটে ক্ষোভ দেখা দেয়। গোয়াইনঘাটে আসার আগে ওসি মোকসেদুল মোমিন কর্মরত ছিলেন বানিয়াচং থানায়। তিনি প্রায় ৫ মাস সেখানে চাকরিতে ছিলেন। ওই সময়ে ওসি বাসভবনে কলগার্লদের আনাগোনা ছিল। প্রতি রাতেই ওসি তার স্টাফ কোয়ার্টারে কলগার্ল নিয়ে কাটাতেন।

পরে এ বিষয়টি স্থানীয়ভাবে জানাজানি হলে সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যানের নির্দেশে তাকে সেখান থেকে বদলি করা হয়। গোয়াইনঘাটে নবাগত ওসি’র যোগদান: নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় সিলেটের গোয়াইনঘাটের ওসি মোকসেদুল মোমিন বরখাস্ত হওয়ার পর গোয়াইনঘাটে নতুন ওসি হিসাবে যোগ দিয়েছেন মো. শফিকুর রহমান খান। এর আগে তিনি সিলেটের কানাইঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ ছিলেন। ইতিপূর্বে তিনি নওগাঁ, ঢাকা স্পেশিয়াল ব্রাঞ্চ, পটুয়াখালী, মানিকগঞ্জ, সিআইডি নারায়ণগঞ্জ এবং ওসি কানাইঘাট হিসাবে কর্মরত ছিলেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টায় যোগদান করে বুধবার সকালে ওসি তদন্ত কামরুল ইসলাম মোল্লার কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেন।

বেলা তিনটায় তিনি গোয়াইনঘাটে কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় ও চা চক্রে মিলিত হন। সাংবাদিকদের সঙ্গে কুশল বিনিময়কালে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করার জন্য তিনি সাংবাদিকদের কাছে অনুরোধ করেন। তিনি মাদক, চোরাচালানি, গরু চুরি, ডাকাতি ছিনতাই রোধে পুলিশকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তারও অনুরোধ জানান। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও মানবজমিন-এর গোয়াইনঘাট প্রতিনিধি মিনহাজ উদ্দিন, বর্তমান সভাপতি, দৈনিক নয়া দিগন্ত ও সিলেটের ডাক প্রতিনিধি মঞ্জুর আহমদ, বর্তমান সাধারণ সম্পাদক উত্তরপূর্ব প্রতিনিধি এম এ মতিন, দৈনিক শ্যামল সিলেট সীমান্ত প্রতিনিধি হারুনুর রশিদ, রূপময় জাফলং সম্পাদক ফয়সল আহমদ সাগর, দৈনিক কাজির বাজার প্রতিনিধি এসএম রাজু, দৈনিক সিলেট সুরমা প্রতিনিধি হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। ........................।

আরেক পত্রিকাঃ গোয়াইঘাটের ওসির কথিত স্ত্রীকে নগরীর হোটেল থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে ডিবি পুলিশ গোয়াইনঘাট,২৯ মে'২০১২: গোয়াইনঘাট থানার ওসি মোকসেদুল মুমিন মহিলাসহ জনতার হাতে আটক হওয়ার ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে দ্বিতীয় স্ত্রী পরিচয়দানকারী ঐ মহিলাকে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ১০ টার দিকে তার স্ত্রী‘র দেয় তথ্যের ভিত্তিতে ডিবি পুলিশ দরগাগেইট এলাকার হোটেল পায়রা থেকে ঐ মহিলাকে আটক করে নিয়ে যায়। এসময় তার স্ত্রীও সঙ্গে ছিলেন। ডিবি পুলিশের নবাগত ওসি আহাদ আটক করে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে নিয়ে যান। ডিবি পুলিশের গাড়ীতে করে এসময় ঢাকা থেকে আসা স্ত্রীকেও নেয়া হয়।

সিলেট জেলা পুলিশ সুপার শাখাওয়াত হেসেন এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, ডিবি পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছে। অপরদিকে ওসি মোকসেদুল মোমীন বর্তমানে পুলিশ লাইয়েন্সে রয়েছেন। পুলিশ সুপার আরো জানান, হোটেল থেকে নিয়ে আসা ঐ মহিলাকে তাদের ওসি সাথে তার সম্পর্ক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং বিয়ের কাগজপত্র দেখা হবে। এদিকে ওসি (তদন্ত) কামরুল ইসলাম মোলস্নাকে সাময়িক ভাবে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, সোমবার ভোর ৫টায় অত্যন্ত গোপনে ওসি মোকসেদুল মোমেন থানা ত্যাগ করেন।

রোববার দিবাগত রাত ১টার দিকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয় এবং কার্যত সোমবার ভোর ৫টার দিকে অভিযুক্ত ওসি মোমেন নতুন ওসি‘র নিকট দ্বায়িত হস্তান্তর করেন। ভোর বেলা মানুষজন ঘুম থেকে জেগে উঠার পুর্বেই ক্লোজড কৃত ওসি মোমেন একটি সাদা মাইক্রবাস যোগে গোয়াইনঘাট থানা ত্যাগ করে সিলেট পুলিশ লাইনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। অপর দিকে ঢাকা থেকে আসা ওসি‘র স্ত্রী ভোর রাত ৩টার দিকে এডিশনাল এসপি ইব্রাহিম ও সহকারী পুলিশ সুপার উত্তর সার্কেল বীনা রানী দাশ‘র সাথে গোয়াইনঘাট থানা সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। তিনি সিলেট শহরে সাময়িক ভাবে অবস'ান নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে ঘটনার সময় অবাঞ্চিত এ মহিলা এবং ওসিকে নিরাপদে সরিয়ে দেওয়ায় পুরো ঘটনার জন্য এলাকার সচেতন মহল এসআই মোহন লাল তালূকদারকে দায়ী করছেন এবং অপসারনের দাবি জানাচ্ছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক লোকজন জানান ওসি‘র সাথে এসআই মোহন লাল‘র ভাল সর্ম্পক ছিল এবং তিনি নাটক মঞ্চায়িত করতে বাধাঁ প্রদান করেন তাই এসআই মোহনকে গোয়াইনঘাট থানা থেকে সরিয়ে নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান। উল্ল্যে যে বহুল আলোচিত গোয়াইনঘাট থানার ওসি মোকসেদুল মোমেন গত শনিবার রাতে এক পতিতা মহিলা কে নিয়ে থানা কোয়টারের নিজ বাসায় রাত যাপন করেন এবং সারাদিন বাসায় রাখেন। ঘটনার খবর পেয়ে ওসি‘র স্ত্রী ঢাকা থেকে গোয়াইনঘাট থানায় ছুটে আসেন । এসময় ওসি টের পেয়ে কৌশলে পতিতাকে নিয়ে একটি সিএনজি অটরিক্সাযোগে যোগে গোয়াইনঘাট-বাঘেরসড়ক রোড দিয়ে সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেন। এলাকার লোকজন খবর পেয়ে বাঘের সড়ক এলাকায় ইদ্রিছ আলীর দোকানের সামনে ব্যরিকেড দিয়ে ওসি ও পতিতাকে আটক করেন এবং প্রায় ৩০মিনিট অবরোদ্ধ রাখেন।

রাত ১০টার দিকে এসআই মোহন লাল তালুকদার একদল পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান এবং এলাকার লোকজনদের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ধাওয়া করেন। পুলিশের আরও খবরঃ আপডেট সহ পুনপ্রচারঃ কালীগঞ্জ থানার ঢুকে সন্ত্রাসীরা হাতকড়া পরা মামুনকে হত্যা করে, ওসিকে দশ লাখ টাকা দিয়ে চলে গেল। দৈনিক পুলিশ  ।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.