সাদা-সিধে একজন মানুষ আমার এক দাদী ছিলেন, অসম্ভব সুন্দরী। তাঁকে আমরা যখন দেখি তখন তিনি সত্তুর পেরিয়েছেন। বার্ধক্য ছাপ ফেলেছিল তাঁর সমস্ত শরীর জুড়ে। তারপরও তিনি যে কতটা সুন্দরী ছিলেন এককালে বোঝা যেতো তাঁর গায়ের রঙে, চোখে, প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া রূপালী রঙের চুলে, চাপা কলার মত লালচে আঙুলে। একদিন তিনি বসে বসে পুরনো দিনের কথা বলছিলেন।
খুব দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলছিলেন, "আহারে, কেমনে চুলডি পাইক্কা গেল! কেমনে দাঁতডি পইড়া গেল! কেমনে বুড়া হইয়া গেলাম!"
খুব হেসেছিলাম ওইদিন উনার দু:খ দেখে। সময় গেলে বয়সতো বাড়বেই, মানুষতো বুড়া হবেই। খুব স্বাভাবিক...খুব খুব স্বাভাবিক...। কিন্তু কেমন লাগে এই স্বাভাবিক ব্যাপারটা মেনে নিতে? কেমন লাগে বড় হয়ে যেতে? বড় হতে হতে বুড়ো হয়ে যেতে!
বহুদিন ধরে দেখে আসছি আমার মাথার মাঝামাঝি, একটু ডানদিকের একটা চুল পাকা। ওটা বরাবর ফিক্সই ছিল যে আমার মাথায় ওই একটা চুলই পাকা।
কিন্তু ওইদিন হঠাৎই দেখলাম ওই একটা কেবল না, পাকা চুলের সংখ্যা আরো কিছু বেড়েছে। এদিক ওদিক মিলে হিসাব করলে অন্তত দশটা চুলতো হবেই। খুব মনযোগ দিয়ে নিজেকে দেখলাম তখন আয়নায়। কেমন লাগবে যদি আমার মাথাটা কাল চুলের বদলে রূপালী আর সাদা চুলে ভরে যায়, কেমন লাগবে যদি দাঁতগুলো পড়ে মাড়ি ফাঁকা হয়ে যায়, কথাগুলো সব বের হয়ে যায় সে দাঁতের ফাঁক দিয়ে, যদি ঝুলে পড়ে গালের টানটান চামড়া, যদি ভঙুর হয়ে যায় দেহটা...কেমন লাগবে বুড়ো হয়ে যেতে!
এই আমার জায়গায় থুত্থুরে বুড়িটাকে কোনভাবেই বসাতে পারছিলাম না। এটা যেন কল্পনারও অতীত একটা বিষয়।
সময় গেলে বয়স বাড়বেই, বড় হতে হতে মানুষ বুড়ো হবেই। এটাই স্বাভাবিক। এই এতটুকুন আমিটা, ছোট ছোট হাত-পা, ধীরে ধীরে বড় হয়েছি, বসতে শিখেছি, তারপর দাঁড়াতে, হাঁটতে...শিশুকাল পার হয়ে কৈশোর এসছে, সেখান থেকে একজন তরুণী, তারপরে পরিপূর্ণ একজন নারী। আমি কখনো ছোট বাচ্চাদের কোলে নিতে পারি না। ভয় হয়, যদি পড়ে যায়, ব্যথা পায়! অথচ এই আমারই ভিতরে এখন একটু একটু করে বেড়ে উঠছে একটা প্রাণ।
আমাকেও পারতে হবে ওই ছোট্ট মানুষটাকে সামলে সুমলে রাখতে।
তারপর একদিন তার বড় হয়ে উঠার সাথে সাথে আমি বুড়ো হতে থাকবো। চুল পাকতে থাকবে, ঝুলে পড়বে গালের চামড়া...। ভাবতেই আতংক লাগছে। খুব বেশিদিন বেঁচে থাকাটা খুব কি জরুরী? এই আমিটা এইভাবেই মরে যাওয়াই সবচেয়ে ভাল।
দাদীর মত একদিন আমিও আফসোস করতে চাই না। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।