সাইফ শাহজাহান
শুচি সৈয়দ
‘স্বাস্থ্য সংক্রামক নয়, সংক্রামক হচ্ছে ব্যাধি। ’ আর এই ব্যাধির সংক্রামক বিস্তার ঘটছে সমাজের সর্বস্তরে। জাতীয় সংসদের শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সুরম্য অট্টালিকা থেকে রাজনীতিকদের অশ্লীল বাক্য ছড়িয়ে পড়ছে মাঠে-ময়দানে। পাল্লা দিয়ে চলছে পাল্টাপাল্টি কথার মালা গাথা। মুন্সীয়ানায় কেউই কারো চেয়ে কম নন।
সেগুলো কথার মালা হচ্ছে নাকি কাঁটার মালাÑ প্রতিপক্ষের গলায় ঝুলানো হচ্ছে নাকি ঝুলে যাচ্ছে নিজেরই গলায় সে বিষয়ে কারো ভ্রƒক্ষেপ নেই, চিন্তাও নেই। সংসদের তাও একটা সুবিধা আছে ‘এক্সপাঞ্জ’ করার কিন্তু সংবাদপত্র কিংবা ইলেক্ট্রনিক প্রচার মাধ্যমগুলোর জন্য সে সুবিধা অনুপস্থিত। মনে আছে আগে অনেক স্পাই থ্রিলার পড়ার সময় মাঝেমধ্যে ব্র্যাকেট বন্দি দুটি শব্দ পেতাম ‘ছাপার অযোগ্য’Ñ এই শব্দবন্ধ থেকে বুঝে নিতে হতো এখানে বকাবকি চলছে। কোনও কোনও বর্ষীয়ান লেখকের বইয়ে এ অবস্থার বর্ণনায় ব্যবহার করা হতো এরকম বাক্যÑ ‘সে কথা আর কহতব্য নহে’Ñ এমনই ‘কহতব্য নহে’ পরিবেশে বর্তমানে আমাদের গোটা জাতি পতিত। এই খাদ থেকে বাইরে বেরুবার পরিবর্তে নিত্যনতুন পতিতের সংখ্যা বাড়ছে।
অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে এই ‘মুদ্রণের অযোগ্য’ ভাষা কিংবা ‘কহতব্য নহে’ কথা শিক্ষার জন্য কারিকুলাম প্রবর্তন করতে হবে।
আমার খুব প্রিয় বন্ধু পলাশ একবার বলেছিল, আইন শৃঙ্খরা রক্ষাবাহিনী অর্থাৎ পুলিশদের ট্রেনিং-এর সময় গালাগালিও শেখানো হয়। ‘গালাগালি’ শেখানো হয়! গালি রীতিমত শিক্ষার সাবজেক্ট!! আমার অপরিণত মন কিছুতেই সেকথা সত্য বলে মানতে চায়নি। তখন ভেবেছি পলাশ আমাদের সবাইকে বোকা বানাবার জন্য একথা বলে স্ট্যান্টবাজি করতে চায় কিন্তু পরে খোঁজ নিয়ে জেনেছি যে সত্যিই ট্রেনিং কোর্সে পুলিশদের ‘গালি’ও শিখতে হয়Ñ সেটা প্রশিক্ষণের একটা সাবজেক্টÑ পেশাগত দক্ষতা অর্জনে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে উৎরে যাবার স্বার্থে তাদেরকে শেখানো হয় কি করে তার সঠিক ব্যবহার করতে হয়। অপরাধীদের মানসিক শক্তিকে কব্জা করার একটা হাতিয়ার হচ্ছে গালি।
কিন্তু আমরা বর্তমানে যে গলাবাজী আর গালাগালির রাজ্যে বসবাস করছি তা এক শব্দে সত্যি সত্যি ‘রাবিশ’ হয়ে উঠেছে। তার ভেতরে পুলিশের গালির ন্যূনতম শিক্ষণীয় কোন উপাদান বা প্রয়োজনীয়তা নেই বরং বিরাট রূপে বিদ্যমান অসংস্কৃত বুদ্ধিহীনতা বটে!
গোটা দেশ, গোটা সমাজ যেন এক ‘সামাজিক হ্যালুসিনিয়েশনে’ ভুগছে। দেশের মানুষেরা যেন ‘গণহিস্টিরিয়ায়’ আক্রান্ত। চারিদিকে কেবল অর্থ লোভ আর সেই লোভে পড়ে প্রতারণার হাহাকার। মাল্টি লেভেল হাহাকার।
ইতিপূর্বে মত ও পথের একটি লেখায় একে ম্যাডনেস বা পাগলামি বলে উল্লেখ করেছিলাম কিন্তু দেখা যাচ্ছে তা পাগলামির মাত্রা অতিক্রম করে ‘গণহিস্টিরিয়া’য় পরিণত হয়েছে। সবাই ছুটছে মাল্টি লেভেল অর্থের পেছনেÑ আখেরে জুটছে মাল্টি লেভেল প্রতারণা। অর্থের অর্থ কী? অকল্পনীয় উপায়ে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কি অর্জন করতে চান সে কথা ভাববার ফুরসত নেই কারোই। ফলে দুর্বৃত্ততা, প্রতারণা পরিণত হচ্ছে পেশায়, চাকরিতে!!
৮০ লক্ষ চারা এনে হাজার কোটি ভার্চুয়াল গাছ বিক্রির যে সুপার ম্যাজিক প্রতারণা সে প্রতারণা ঈশপের গল্পের সেই ধূর্ত শেয়াল আর বোকা কুমিরের গল্পকে লজ্জায় ফেলছে এই একুশ শতকে। বোকা কুমির তার সাত বাচ্চাকে পড়াতে দিয়েছিল ধূর্ত শেয়ালের কাছে।
আর শেয়াল প্রতিদিন একটা করে বাচ্চা সাবাড় করে বোকা কুমিরকে গণিতের মারপ্যাঁচে সাত বাচ্চা দেখিয়ে দেখিয়ে যেদিন শেষ বাচ্চাটাকে সাবাড় করল সেদিন পালিয়ে গেলÑ সহজ এই সত্যিটা সবাই ভুলে মূলো ঝুলানো গাধা হয়ে দৌড়াচ্ছে অবিরাম কিন্তু তাদের ঠকানো ধরা পড়া দুর্বৃত্তদের ভাষ্যে জানা যাচ্ছে যে, তারা ঠিকই ধূর্ত শেয়ালের বুদ্ধি আর ফর্মুলার প্র্যাকটিস করছে অনুপুঙ্খ ভাবে। ইউনিপেটু ইউ-র প্রতারকদের স্বীকারোক্তিতে সেকথা পরিষ্কার। পুলিশের কাছে তারা জানিয়েছে সে কথাÑ
‘‘মানুষকে লোভ দেখানোই ছিল ইউনিপেটুইউর মূল কৌশল!
তথাকথিত বহুধাপ বিপণন (এমএলএম) প্রতিষ্ঠান ইউনিপেটুইউর কৌশল ছিল মানুষকে লোভে ফেলানো। এ কৌশলেই ১০ মাসে বিনিয়োগ করা টাকা দ্বিগুণের কথা বলে ব্যবসা শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। আর আস্থা অর্জনে ব্যবহার করা হয় সরকারি অনুমোদনপত্র, মন্ত্রী, নেতা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তাদের।
প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসীর হোসেন রিমান্ডে এ তথ্য দিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। মুনতাসীর জানান, লোভের কৌশল অবলম্বন করায় অল্প দিনেই স্রোতের মতো টাকা আসতে থাকে। একপর্যায়ে স্রোত হয়ে পড়ে নিয়ন্ত্রণহীন। পিয়ন থেকে কর্মকর্তা যে যেভাবে পেরেছে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
......
পুলিশের বিশেষ শাখার একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ১০ মাসে গ্রাহকদের দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার ইউনিপেটুইউর প্রস্তাব সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
মালয়েশিয়ার স্বর্ণ উত্তোলনকারী একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলে যাত্রা শুরু করেছিল তারা। তার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
গ্রাহকদের সংগঠন ইউনিপে মেম্বার্স ক্লাব লিমিটেডের সভাপতি সরোয়ার মোর্শেদ বলেন, সরকারি অনুমোদন, মন্ত্রীদের অতিথি হওয়া, প্রভাবশালী নেতার ভবন উদ্বোধনসহ বিভিন্ন কিছু দেখে তাঁরা ইউনিপেটুইউর ওপর আস্থা স্থাপন করেছিলেন। মালয়েশিয়ার ওই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কাগজপত্রও তাদের দেখানো হয়েছিল।
কর্মী থেকে মালিক: জিজ্ঞাসাবাদে মুনতাসীর জানান, তিনি মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
১৯৯৬ সালের দিকে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে ঢাকায় আসেন। সিটি কলেজ থেকে ডিগ্রি ও জগন্নাথ কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। এ সময় একটি এমএলএম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হন। ওই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সময় নিজেই প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন। এ জন্য ভারতের এমএলএম নীতিমালাসহ বিভিন্ন কলাকৌশল রপ্ত করতে থাকেন।
একপর্যায়ে পূর্বপরিচিত শাহীন, জামশেদকে নিয়ে শুরু করেন ইউনিপের যাত্রা।
মোহাম্মদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) গোলাম মোস্তফা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
কোটি টাকার কাবিন: জিজ্ঞাসাবাদ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ওসি মাহমুদুল বলেন, গত জানুয়ারি মাসে এক কোটি টাকার কাবিনে বিয়ে করেন মুনতাসীর। ফেব্রুয়ারিতে এক লাখ টাকা দিয়ে স্ত্রীকে শাড়ি কিনে দেন। এ ছাড়া বিভিন্ন জায়গায় জমি কেনেন।
এর বেশির ভাগই স্ত্রী বা পরিবারের অন্য সদস্যদের নামে।
তবে ইউনিপেটুইউর গ্রাহকদের ভাষ্যমতে, জানুয়ারি মাসে মুনতাসীর দ্বিতীয় বিয়ে করেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর ব্যাংকে তিনি প্রায় ১০০ কোটি টাকা রেখেছেন।
মুনতাসীর ছাড়াও ইউনিপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ তাহের রামপুরা বনশ্রীতে দুটি ফ্ল্যাট ও বিলাসবহুল তিনটি গাড়ি কিনেছেন। প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছেন আরেক কর্মকর্তা মিঠু চৌধুরী।
বিনিয়োগ করা টাকা দিয়ে তিনি একটি পত্রিকা, গুলশানে থাই রিক্রিয়েশন সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, জায়গাজমি ও বাড়ি-গাড়ির মালিক হয়েছেন। বলছিলেন ওসি মাহমুদুল।
টাকা দিয়ে আন্দোলন দমন!: মুনতাসীর জিজ্ঞাসাবাদে জানান, টাকা ফেরতে গ্রাহকেরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন করলেও তা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল না। কারণ যখনই কোনো আন্দোলন সোচ্চার হতো, তখন নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজনকে ডেকে টাকা ধরিয়ে দিতেন তাঁরা। আর এতেই আন্দোলন চুপসে যেত।
ফলে আন্দোলন হলেও তা নিয়ে তাঁদের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এতে কারও টনকও নড়েনি। ’’
(প্রথম আলো। কাজী আনিছের প্রতিবেদন । ১৫ মে ২০১২)
ব্যাধি বিপণনের আরেকটি নমুনাÑ
‘‘ডেসটিনির পণ্য বিক্রির পদ্ধতি প্রতারণামূলক
বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ ও প্রতারণামূলক হিসেবে স্বীকৃত পদ্ধতিতেই পণ্য বিক্রি করছে বিতর্কিত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেড।
মিথ্যা গুণাবলি বর্ণনা করে নিম্নমানের অপ্রয়োজনীয় পণ্য অত্যন্ত উচ্চ দামে বিক্রি করছে কোম্পানিটি। এখন অর্থ দিলে ভবিষ্যতে পণ্য বা মুনাফা দেওয়া হবে, এমন আশ্বাস দিয়ে বিশ্বের কোনো এমএলএম কোম্পানিই ব্যবসা করে না, কিন্তু ডেসটিনি করছে।
শুধু তা-ই নয়, ব্যাংক আইনকে পাশ কাটিয়ে তারা আমানত সংগ্রহ করছে। এই আমানত ফেরত না দিলে কোম্পানির মালিকদের ধরার কোনো সুযোগ নেই। আর এভাবেই দেশের মানুষের কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানটি বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে।
আর এ কাজে মন্ত্রী, সাংসদ, রাজনীতিবিদ, শীর্ষ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তা এবং ডিসি-এসপিদেরও ব্যবহার করছে ডেসটিনি। তাঁদের সঙ্গে ডেসটিনির মালিকদের ছবি তুলে জেলা ও উপজেলাসহ সব অফিসে বড় বড় করে টাঙিয়ে রাখা হচ্ছে। নতুন গ্রাহক-পরিবেশকদের আস্থা অর্জনের জন্য এ হলো ডেসটিনির কৌশল।
ডেসটিনির কর্মকাণ্ডের ওপর বাংলাদেশ পুলিশের (বিশেষ শাখা-এসবি) সা¤প্রতিক এক বিশেষ প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। ১৭ এপ্রিল প্রতিবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে ডেসটিনির বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দীর্ঘ প্রতিবেদনটিতে ডেসটিনির অবৈধ এমএলএম পদ্ধতি, বিভিন্ন দেশে এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ, সামাজিক দায়বদ্ধতার নামে ডেসটিনির অর্থ ব্যয় ও এভাবে কোম্পানির ওপর গ্রাহকদের আস্থা বাড়ানোর কৌশল, খসড়া নিজের মতো না হওয়ায় আইন প্রণয়নে ডেসটিনির বাধা, এমএলএম কর্ণধারদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতারণার দায়ে প্রতিবেশী ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা এবং যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, সুইডেন, পোল্যান্ডসহ বিশ্বের ৫৩টি দেশে এমএলএম পদ্ধতিতে পণ্য বিপণন এখন নিষিদ্ধ। ডেসটিনিও একই ধরনের প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দ্রব্যের মান, ব্যবসায়ের বিষয়, মার্কেটিং চেইন, বিপণন প্রবণতা, মুনাফার অংশ ইত্যাদি বিবেচনায় বিশ্বের অন্য দেশের নিষিদ্ধ ও প্রতারক কোম্পানি এবং ডেসটিনির কার্যক্রম একই ধরনের।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) জনসাধারণকে এমএলএম কোম্পানির প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার জন্য ওয়েবসাইটে একটি পৃষ্ঠাই বরাদ্দ রেখেছে। এতে বলা রয়েছে, ‘এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসায়ের অর্থ আসবে নতুন পরিবেশকের কাছ থেকে, যার পরিণতি অসংখ্য শূন্য হাত। যতই কোম্পানিগুলো বলুক না কেন শেষের দিকের ব্যক্তিরাও লাভবান হবেন, কিন্তু আমরা অসংখ্য মানুষকে পথে বসানোর ঝুঁকি মেনে নিতে পারি না। ’
গত বছরই প্রতারণার দায়ে বিশ্বের বৃহৎ এমএলএম কোম্পানি দাবিদার এমওয়ের (ইন্ডিয়া) সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ভারত সরকার। তবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ১৯৭৩ সালেই ‘হলি ডে ম্যাজিক’ নামের এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে ৮০ হাজার মানুষের কাছ থেকে ২৫ কোটি ডলার মূল্যের শেয়ার বিক্রির দায়ে মামলা করে এবং প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে কোম্পানিটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০৭ সালে ‘বায়োফার্মান্স’ নামের কোম্পানি থেকে ৭০ লাখ ডলার জরিমানা আদায় করা হয়। একই বছরে আরেক কোম্পানি ‘এমওয়ে’কে জরিমানা করে ৭০ লাখ ডলার। ১৯৮৬ সালেও অধিক কমিশনের লোভ দেখানোর কারণে এমওয়েকে এক লাখ ডলার জরিমানা করা হয়।
চীনে এমএলএম কোম্পানি বন্ধের দাবিতে ১৯৯৮ সালে দাঙ্গা হয়, যা পরে গোটা চীনে ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মতো সুইডেন সরকারও ১৯৭৩ সালে ‘হলিডে ম্যাজিক’ নামের কোম্পানিকে জরিমানা ও নিষিদ্ধ করে। ১৯৯৭ সালে পোল্যান্ড সরকারও কয়েকটি কোম্পানিকে নিষিদ্ধ করে।
বাংলাদেশে এমএলএম শুরু হয় ১৯৯৮ সাল থেকে জিজিএনের মাধ্যমে। প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ডের দায়ে জিজিএনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সরকার। এই জিজিএনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ডেসটিনি ২০০০ লিমিটেডের এমডি রফিকুল আমীন।
প্রতিবেদন মতে, সব এমএলএম কোম্পানিরই বৈশিষ্ট্য প্রায় এক রকম। এরা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ব্যবসায়ের অংশীদার করে, মাসোহারা দেয় এবং সরকার না চাইলেও সেধে গিয়ে বড় বড় ক্রীড়ানুষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের স্পনসর হয়। ’
(প্রথম আলো। নিজস্ব প্রতিবেদক । ২৬ এপ্রিল ২০১২)
কত অবাধে অপ্রতিহত ভাবে চলছে এইদুর্বৃত্তপণা।
মিথ্যার সৌধ কিংবা তাসের ঘর সাজিয়ে-গুছিয়ে, গলায় টাই পরিয়ে ধীরে ধীরে ফাঁসির কা®েঠ চড়িয়ে দেয়া হচ্ছে দেশের যুব সমাজকে এদিকে কারো ভ্রƒক্ষেপ নেইÑ ‘মধ্যরাতের শয়তান’ (সম্প্রতি মধ্যরাতে টকশো-তে বক্তব্য রাখা বুদ্ধিজীবীদের এই অভিধা দিয়েছেন একজন রাজনীতিক) কিংবা দিনের আলোর ফেরেস্তা কারোরই গরজ নেই এই ধূর্ত শেয়ালদের হাত থেকে আগামী প্রজš§কে বাঁচাবার।
বাংলাদেশের অন্যধারার গায়ক সায়নের একটি গানে সায়ন বলেছে, জনতার ভাষ্যে যে, ‘‘আমার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার দিন তো শেষ’’Ñ রাজনীতিকদের উদ্দেশে কিন্তু বাস্তবতা আর পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন এবং দুর্বিসহÑ যেন সবাই সবার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাবার প্রতিযোগিতায় নেমে গেছেÑ এ এক স্বরচিত মাৎস্যন্যায়ের কাল বটে! অন্ধরা দেখছে, কালার শুনছে, বোবারা বলছেÑ শুধু নিজের ওপর আস্থা নেই Ñ বোকারা সম্পদ ছ মাসে ন মাসে দ্বিগুণ করার আশায়Ñ আর এই ফাঁকে ভূতে খেয়ে যায় ভাত, মাথা ও মগজ। আমাদের ভবিষ্যৎকে আমরা চড়িয়ে দিচ্ছি ফাঁসির কাষ্ঠে নির্বিকার। স্বাধীনতার চল্লিশ বছর কাটলো কেউ কথা রাখছে না, কেউ কাজও করছেনা Ñ কেবল কথা বলছে। আমাদের কবি যে লিখেছিলেনÑ ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে / কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে।
’ কাজে আমরা ছোট হচ্ছি ক্রমাগত আর কথায় বিরাট! বাংলা প্রবাদ আছে ‘ভূতের পা পেছনে হাঁটে’Ñ আমরা ঝুলছি শূন্যে!!!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।