কিছু দেখি নাই, কিছু শুনি নাই, কিছু বলি নাই নানান হাদিস ও কুরানের আয়াত থেকে এ সিদ্ধান্তে আসা যায় যে- যদি কোনো বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রীকে ৩ তালাক দিয়ে ফেলেন তবে সেই স্ত্রী তার জন্য হারাম।
উল্লেখ্যঃ মাথা গরম অবস্থায় তালাক দিলে তা মূলত তালাক হবে না।
এখন, তালাকদাতা ও তালাকপ্রাপ্তা যদি আবার পুনর্বিবাহের মাধ্যমে পুনর্মিলন চান তা সম্ভব নয়- যদি না তালাক প্রাপ্তাকে অন্য কেউ বিয়ে করে উনি মারা যান অথবা আগের স্বামীর অর্থাৎ প্রথমোক্ত তালাকদাতার কাছে এই স্ত্রীকে ফিরিয়ে দেয়া ভিন্ন অন্য কারণে তালাক দেয়।
হিল্লা বিবাহ হারাম এবং তা মূলত কোনো বিয়েই নয় বরং হিল্লা স্বামীর সাথে বিয়ে ও সহবাস হারাম এবং তাদের তালাকের পরে প্রথমোক্ত স্বামীর সাথে বিবাহ ও সহবাস হারাম।
সে যাই হোক- এখন প্রশ্ন হল: তালাকের পরে আপন স্ত্রী পর নারী হয়েই যদি যায় তবে তো তাকে আবার বিয়ে করা বৈধ হওয়া উচিৎ- কেননা আপন ভগ্নী, খালা-ফুপু ইত্যাদি ছাড়া কাউকে বিয়ে করা জায়েজ ! সে তো তখন ওই গোত্রেই পরে !
অথবা যদি হাদিস-কোরান দিয়ে দেখানই হয় এ সম্ভব নয় তবে কেন ? কেন পুনর্বিবাহ হবে না ? তালাক বেড়ে যাবে বলে ? তবে তালাক রোধে কেন অন্য কোনও পথ বের করা হলনা, যেমন- দ্বিতীয়বার সুযোগ দেয়া- দ্বিতীয়বারের পরে আর কখনো এরা বিয়ে করতে পারবেনা বা এরকম কিছু ? কেন তারা আর আগের মত এক হতে পারবেনা ? এখানে মেয়েটির কী দোষ ?
আল্লাহ তাআলা বলেন :
(فَإِنْ طَلَّقَهَا فَلا تَحِلُّ لَهُ مِنْ بَعْدُ حَتَّى تَنْكِحَ زَوْجاً غَيْرَهُ) البقرة/230 .
“অতএব যদি সে তাকে (তৃতীয়) তালাক দেয় তাহলে সে পুরুষের জন্য হালাল হবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ভিন্ন একজন স্বামী সে গ্রহণ না করে”।
সূরা বাকারা : (২৩০)
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: " لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْمُحِلَّ وَالْمُحَلَّلَ لَهُ ".قَالَ أَبُو عِيسَى: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ.
ইব্ন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন। ” ইমাম তিরমিজি রাহিমাহুল্লাহ বলেন : এ হাদিসটি হাসান সহিহ।
আয়েশা রা. বলেন :
سئل رسول الله صلى الله عليه وسلم عن رجل طلق امرأته (يعني ثلاثا) فتزوجت زوجا غيره فدخل بها، ثم طلقها قبل أن يواقعها أتحل لزوجها الأول؟ قالت: قال النبي صلى الله عليه وسلم: "لا تحل للأول حتى تذوق عسيلة الآخر ويذوق عسيلتها رواه الشيخان وأصحاب السنن، واللفظ لأبي داود .
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, ফলে সে অন্য পুরুষকে বিয়ে করে তার সাথে নির্জনবাস করে, অতঃপর সহবাস ব্যতীতই স্বামী তাকে তালাক দেয়, সে কি পূর্বের স্বামীর জন্য হালাল হবে ? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন : “প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে না, যতক্ষণ না সে অপরের সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে এবং সে তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে”।
সহিহ বুখারি, অধ্যায় আশ-শাহাদাত : (২৪৯৬), সহিহ মুসলিম, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১৪৩৩), সুনানে তিরমিজি, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১১১৮), সুনানে নাসায়ি, অধ্যায় আত-তালাক : (৩৪০৭), সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায় আত-তালাক : (২৩০৯), সুনানে ইব্ন মাজাহ, অধ্যায় আন-নিকাহ : (১৯৩২), মুসনাদে আহমদ ইব্ন হাম্বল : (৬/২২৬), মুয়াত্তা ইমাম মালেক, অধ্যায় আন-নিকাহ ১১২৭), সুনানে দারামি, অধ্যায় আত-তালাক : (২২৬৭)।
সুনান আবু দাউদে আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রয়েছে :
أن النبي صلى الله عليه وسلم سُئل عن رجل طلق زوجته ثلاثاً فتزوجت رجلاً اخر طلقها قبل أن يواقعها، فهل يجوز أن تعود لزوجها الأول.. فقالت عائشة رضي الله عنها: فأجاب النبي صلى الله عليه وسلم: لا تحل له حتى يذوق عسيلتها وتذوق عسيلته أي الزوج الثاني..
নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে এক ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, যে তার স্ত্রীকে তিন তালাক দিয়েছে, অতঃপর অপর ব্যক্তি তাকে বিয়ে করে সহবাস ব্যতীতই তালাক দেয়, তার জন্য কি প্রথম স্বামীর নিকট ফিরে যাওয়া বৈধ ? আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা বলেন : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দেন : সে হালাল হবে না, যে পর্যন্ত না সে (দ্বিতীয় স্বামী) তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে এবং সে (স্ত্রী) তার (দ্বিতীয় স্বামীর) সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে।
ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন :
رواه البخاري (2639) ومسلم (1433) عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا : (جَاءَتْ امْرَأَةُ رِفاعَةَ الْقُرَظِيِّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ : كُنْتُ عِنْدَ رِفَاعَةَ فَطَلَّقَنِي فَأَبَتَّ طَلَاقِي فَتَزَوَّجْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ الزَّبِيرِ . فَقَالَ : ( أَتُرِيدِينَ أَنْ تَرْجِعِي إِلَى رِفَاعَةَ ؟ لَا ، حَتَّى تَذُوقِي عُسَيْلَتَهُ ، وَيَذُوقَ عُسَيْلَتَكِ ) .
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে ইমাম বুখারি ও ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন : “বনু কুরাইজা বংশের রিফাআর স্ত্রী নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামের নিকট এসে বলে : আমি রিফাআর নিকট ছিলাম, সে আমাকে তিন তালাক দেয়, অতঃপর আমি আব্দুর রহমান ইব্ন জুবায়েরকে বিয়ে করি। অতঃপর তিনি (নবী) বলেন : তুমি কি রিফাআর কাছে ফিরে যেতে চাও ? না, যেতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি তার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ কর এবং সে তোমার সহবাসের স্বাদ গ্রহণ করে”
বুখারি : (২৬৩৯), মুসলিম : (১৪৩৩)
ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন :
وروى مسلم (1433) عَنْ عَائِشَةَ رضي الله عنها قَالَتْ : طَلَّقَ رَجُلٌ امْرَأَتَهُ ثَلَاثًا فَتَزَوَّجَهَا رَجُلٌ ثُمَّ طَلَّقَهَا قَبْلَ أَنْ يَدْخُلَ بِهَا ، فَأَرَادَ زَوْجُهَا الْأَوَّلُ أَنْ يَتَزَوَّجَهَا ، فَسُئِلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ : ( لَا حَتَّى يَذُوقَ الْآخِرُ مِنْ عُسَيْلَتِهَا مَا ذَاقَ الْأَوَّلُ ) .
আয়েশা রাদিআল্লাহু আনহা থেকে ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন : “এক ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তিন তালাক দেয়, ফলে অপর ব্যক্তি তাকে বিয়ে করে সহবাসের পূর্বেই তালাক দেয়, অতঃপর প্রথম স্বামী তাকে ফিরিয়ে নিতে চায়, নবী সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লামকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন : না, যতক্ষণ না দ্বিতীয় ব্যক্তি তার স্বাদ গ্রহণ করে, যেমন প্রথম ব্যক্তি গ্রহণ করেছে”। মুসলিম : (১৪৩৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।