('হিল্লা' চলচ্চিত্রের একটি দৃশ্য)
‘তালাক দেওয়া স্ত্রীর মুখ দেখা পাপ। তাই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলছে। আমি বাড়ি না ছাড়ায় মাতব্বরেরা স্বামীকে আমার সামনে আসতে দিচ্ছেন না। বন্দী করে রাখা হয়েছে একটি ঘরে, সেখানে থাকতে হচ্ছে অন্ধকারে। স্বামীর সঙ্গে ফের সংসার করতে হলে হিল্লা বিয়ের শর্ত দিয়েছেন তাঁরা।
’
কথাগুলো বলছিলেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর হারাগাছপাড়া গ্রামের গৃহবধূ করুণা বেগম। গ্রামের মাতব্বরেরা হিল্লা বিয়ের ফতোয়া দেওয়ায় গত ২৮ আগস্ট থেকে করুণা তাঁর স্বামী আবদুল্লাহর সঙ্গে বসবাস করতে পারছেন না।
করুণা ও আবদুল্লাহ দম্পতির তিন বছরের সংসার। তাঁদের দেড় বছরের একটি সন্তান আছে। করুণা জানান, দাম্পত্য কলহের এক পর্যায়ে গত ১৩ আগস্ট আবদুল্লাহ তাঁকে এফিডেভিট করে তালাক দেন।
করুণা বাবার বাড়িতে আশ্রয় নেন। আবদুল্লাহ ডাকযোগে তাঁর কাছে তালাকনামা পাঠান। করুণা তালাকনামা গ্রহণ না করে আখানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রোমান বাদশাহর কাছে পরামর্শ চান। ইউপি চেয়ারম্যান ২৮ আগস্ট করুণাকে তাঁর স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।
করুণা স্বামীর বাড়িতে ফিরে আসায় মুরব্বিরা গ্রামে ছড়িয়ে দেন, তালাক দেওয়ার পরও আবদুল্লাহ-করুণা একসঙ্গে বসবাস করছেন—এটা ব্যভিচার।
এ জন্য তাঁদের দোররা মারা উচিত। এ অবস্থায় আবদুল্লাহ নিজের বাড়ি ছেড়ে চাচার বাড়িতে গিয়ে ওঠেন। এ ব্যাপারে গত শনিবার রাতে ওই গ্রামে এক সালিসে আবদুল্লাহ করুণার সঙ্গে পুনরায় সংসার করতে চাইলে করুণাকে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে বলে বৈঠকের মুরব্বিরা জানিয়ে দেন। করুণা হিল্লা বিয়েতে আপত্তি করলে গ্রামের মাতব্বর আফজাল হোসেন ও আবদুস সামাদ ওই পরিবারের সঙ্গে গ্রামের লোকেরা সব রকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দেন।
তাঁরা সিদ্ধান্ত দেন, গ্রামের রাস্তায় করুণা চলাচল করতে পারবেন না।
দোকানদারেরা তাঁদের কাছে কিছু বিক্রি করতে পারবেন না। সেই থেকে বাড়ির লোকজনও করুণার সঙ্গে কথাবার্তা বলছে না। তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে একটি ঘরে।
করুণা বলেন, স্বামী রেগে গিয়ে তালাকের জন্য এফিডেভিট করেছিলেন। এ জন্য তিনি ভুল স্বীকার করে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
আফজাল হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর আইন সবার উপরে। তাঁদের কলহের বিচারে গ্রামের মুরব্বিরা সালিস বৈঠকে স্বামী-স্ত্রীকে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। কিন্তু সে সিদ্ধান্ত করুণা অমান্য করায় তাঁদের একঘরে করা হয়েছে। শরিয়ত রক্ষা করতে গ্রামবাসী এ রায় দিয়েছে, এ বিষয়ে আমার করার কিছুই নাই। ’
প্রচলিত আইনে হিল্লা বিয়ে নিষিদ্ধ এ কথা জানালে আবদুস সামাদ বলেন, ‘মানুষের তৈরি আইনে আমার আস্থা নেই।
’
হিল্লা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় ঘরে বন্দী বধূ ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।