আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হিল্লা বিয়ে কেন অবৈধ? - আইনের সহজ আলোচনা

ব্লগার অনুপস্থিত আছেন !! (এই ব্লগার বিশেষ কোন দল বা মতের অনুসারী নন..তাই ওনার পোস্টের কোন আগা মাথা নাই!! যখন যা ভাল লাগে তাই তিনি পোস্ট করেন। )
হিল্লা বিয়ে নামক একটি অসভ্য, বর্বর প্রথা অনেক কাল থেকেই আমাদের সমাজে প্রচলিত। কিছু অজ্ঞ কাঠমোল্লার আইনের ভুল ব্যক্ষ্যা থেকেই এই কুপ্রথার উৎপত্তি। বর্তমানে এটা নিয়ে অনেক সচেতনতা তৈরি হয়েছে তারপরেও কিছু ক্ষেত্রে এখনও এই ভুল ধারনা রয়ে গেছে। এই যুগেও যে এটা নিয়ে ভাবতে হচ্ছে সেটাও অবাক করা বিষয়! আমি কোন শরীয়াহ আইন বিশারদ নই।

আইন নিয়ে আলোচনা করার যোগ্যতাও আমার নেই। ইসলামের সব আইন আমার জানা নেই, সেটা আমার পক্ষে সম্ভবও না। বাস্তব জীবনে যতটুকু প্রয়োজন হয় তা জেনে রাখার চেষ্টা করি আর সাধ্যমত নিজের বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে সহজভাবে বোঝার বা ব্যক্ষ্যা করার চেষ্টা করি। বিয়ে এবং বিবাহবিচ্ছেদের আইন গুলো নিয়ে একটা সহজ পর্যালোচনা দেয়ার চেষ্টা করলাম। ১. বিয়ে একটি চুক্তি যা নারী-পুরুষ উভয়ের সম্মতিতে হয়ে থাকে।

নির্দিষ্ট আইন মেনে স্বাক্ষীর উপস্তিতিতে এই চুক্তি সম্পন্ন হয়। বিবাহঅযোগ্য নারী-পুরুষের একটি তালিকা রয়েছে। যেমন- আপন ভাই-বোন বিয়ে নিষিদ্ধ। আইনগত কারনে শ্বশুর-শ্বাশুড়ীকে (আইনগত বাবা-মা) বিয়ে নিষিদ্ধ। ২. তালাক হচ্ছে ঐ চুক্তিকে বাতিল করা।

এর কিছু নির্দিশ্ট নিয়ম ও যৌক্তিক কারণ রয়েছে। তিনটি পৃথক তালাকের মাধ্যমে এটি চূড়ান্ত হয়। বিয়ের মত এখানেও স্বাক্ষীর প্রয়োজন। তালাক মূলত পুরুষের পক্ষ হতেই দেয়া হয়। তবে নারীদেরও তালাক নেয়ার বিধান আছে যা পুরুষের পদ্ধতি থেকে কিছুটা ভিন্ন।

তালাককে ইসলামে নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে। ৩. তালাক চূড়ান্তভাবে কার্যকর হওয়ার পর ঐ নারী-পুরুষের মধ্যে বিয়ে অবৈধ। অর্থাৎ তারা পরস্পরের জন্য বিবাহঅযোগ্য। অর্থাৎ তাদের পরস্পরের মধ্যে বিয়ের নতুন চুক্তি করা এই পর্যায়ে অবৈধ (আইনগত কারনে নিষেধ)। দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় তালাক নেওয়ার পর তাদের পুনরায় বিয়ের ইচ্ছাটাই আসলে অস্বাভাবিক! ৪. তালাক কার্যকরা হওয়ার পর উভয়েই বিয়ের চুক্তি থেকে মুক্ত।

তারা উভয়েই যে কোন ব্যক্তিকে বিয়ে করতে পারে (বিবাহঅযোগ্য ব্যক্তি ব্যতিত, তারা পরস্পর বিবাহঅযোগ্য)। ৫. পুনরায় বিয়ের পর ঐ নারী যদি আবার তালাকপ্রাপ্ত হন, সেক্ষেত্রে তার সর্বশেষ স্বামীর সাথেও অনুরূপ ভাবে বিয়ে অবৈধ হয়ে যাবে (আইনগত কারনে নিষেধ)। পুরুষটিও যদি আবার তালাকপ্রাপ্ত হন, সেক্ষেত্রে তার সর্বশেষ স্ত্রীর সাথে অনুরূপ ভাবে বিয়ে অবৈধ হয়ে যাবে। ৬. এখন পুনরায় তালাকপ্রাপ্ত নারী চাইলে যে কোন বিবাহযোগ্য ব্যক্তিকে বিয়ে করতে পারে শুধুমাত্র তার সর্বশেষ স্বামী ছাড়া। সর্বশেষ স্বামী তার জন্য বিবাহঅযোগ্য এবং ঐ ব্যক্তির জন্যও (সর্বশেষ স্বামী) ঐ নারী বিবাহঅযোগ্য।

৭. ঐ নারীর প্রথম বিয়ের পুরুষটি এখন তার জন্য বিবাহযোগ্য/বিবেচনাযোগ্য (আইনগত কারনে)। যদিও প্রথম বিয়ের পুরুষটি ইতিমধ্যে একটি বিয়ে করেছেন বা করেন নি কিংবা বিয়ে করে থাকলেও তালাকপ্রাপ্ত হয়েছেন/হননি। (এগুলো ঘটনাক্রমে হবে, উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে নয়। ) ৮. বিষয়টি শুধু নারীর দিক থেকে বলা হয়েছে কেননা পুরুষের একাধিক বিয়ের বিধান আছে। পুরুষটির দ্বিতীয় বিয়ের স্ত্রী বর্তমান থাকা অবস্থায়ও সে আরেকজন নারীর সাথে বিয়ে করতে পারে (বর্তমান স্ত্রীর সম্মতিতে)।

সে পুনরায় বিয়ে করে না থাকলেও যে কোন বিবাহযোগ্য নারীকে গ্রহন করতে পারে। যেহেতু প্রথম বিয়ের স্ত্রী পুনরায় বিয়ে করেছে এবং তালাকপ্রাপ্ত হয়েছে, তাই সেই নারীও এখন তার জন্য বিবাহযোগ্য (আইনগত কারনে)। এবার আসুন দেখি হিল্লা বিয়ে কিভাবে হয়। ১. প্রথমেই তালাকে নিয়মের কোন একটা বাত্যয় হয়। সাধারনত এক তালাককেই তিনটি পৃথক তালাক হিসেবে ধরা হয় (এ বিষয়ে বিতর্ক আছে)।

স্বাক্ষীও থাকে না। অনেকে রাগের মাথায় তালাক দিয়ে বসেন যা আসলে কার্যকর নয়। আসলে তালাকের কোন যৌক্তিক কারনও থাকে না। তারপরেও আমরা ধরে নিচ্ছি, তালাক সঠিকভাবেই হয়েছে, পূর্নাঙ্গ হয়েছে। ২. যেহেতু আসলে তালাক হয় না বা ভুল করে তালাক দেয়া হয় তাই তারা নিজেদের মধ্যে পুনরায় বিয়ে করতে ইচ্ছুক থাকে।

এখানেও ধরে নিচ্ছি তালাক ভুলবশত দেয়া হয়নি কিন্তু তারপরেও তারা পুনরায় বিয়ে করতে ইচ্ছুক। ৩. এরপরেই তারা দেখতে পান পুনরায় বিয়ে করা তাদের জন্য আইন অনুযায়ী অবৈধ। তারপর থেকেই শুরু হয় আইনের সরলীকরন। আইনকে পাশ কাটাতে আয়োজন হয় এক সাজানো বিয়ের যেখানে নারীটিকে (অনেকে সময় ইচ্ছার বিরুদ্ধে) যে কোন একজন পুরুষের সাথে বিয়ে দেয়া হয় এবং ঐ পুরুষটির কাছ থেকে তালাক নেয়া হয়। উল্লেখ্য এখানে তারা একদিনের জন্য হলেও সংসার করে।

পুরো বিষয়টাই পাতানো, শরীয়তের বিধান মত ঘটনাক্রম নয়। এভাবে আইনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানো হয়। ৪. লক্ষ্য করুন, পরস্পরের মধ্যে বিয়ে অবৈধ থাকা সত্ত্বেও তারা বিয়ের জন্য ইনিশিয়েটিভ নিচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। ৫. বিয়ের আইনকানুনকে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে একটি পাতানো বিয়ের আয়োজন করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। বিয়ের চুক্তির সমান্তরালে এখানে আরেকটি চুক্তি থাকছে যা সাধারন বিয়ের চুক্তির সাথে সাংঘর্ষিক।

৬. পাতানো সংসার হলেও ঐ নারী দ্বিতীয়বার বিয়ে করার পর ঐ পুরুষটিই তার স্বামী। বর্তমান স্বামী থাকা অবস্তায় অন্য পুরুষকে (পূর্বের স্বামী) বিয়ের চিন্তা করছেন, যা অনৈতিক। ৭. বর্তমান স্বামীর সাথে বিবাহবিচ্ছেদ করছেন কোন যৌক্তিক কারন ছাড়াই, এটাও সঠিক না। তাহলে দেখা যাচ্ছে হিল্লা বিয়ে একটি বেআইনী এবং অবৈধ সম্পর্ক। প্রত্যেকটি ধাপে আইন লংঘন করা হচ্ছে।

উদ্দেশ্যমূলক ভাবে আইনকে পাশ কাটানোর জন্য পাতানো “বিয়ের” আয়োজন হিল্লা বিয়েরই নামান্তর। একে আক্ষরিক অর্থে বিয়ে বলাই উচিৎ না। (অনেকে এক্ষেত্রে ইসলামের মূল আইনকেই দোষারোপ করেন। সেটা একেবারেই ভিন্ন প্রসংগ। আইন যে ভাবে আছে এখানে সেভাবেই উপাস্থাপন করা হয়েছে, কোন সমালোচন করা হয় নি।

আমরা এখানে দেখছি যে পুরোপুরি ভাবে আইনের কাঠামোর মধ্যে থাকলে এবং সঠিকভাবে প্রয়োগ হয়ে থাকলে মূল আইনের মাধ্যমে হিল্লা/বা এ জাতীয় বিয়ে অসম্ভব। আল্লাহই সর্বজ্ঞানী। ) কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। সমাজ থেকে কুসংস্কার-অনাচার দূর হোক। বি:দ্র: আমাদের দেশে শরীয়াহ আইনের প্রচলন নেই।

মুসলিম বিয়ের ক্ষেত্রে মুসলিম পারিবারিক আইন ১৯৬১ (যা Islamic State of Pakistan এর আমলে প্রনীত) কেই অনুসরন করা হয়। রেফারেন্সের জন্য ব্লগার নাজনীনের তিন পর্বের পোস্টগুলো পড়ুন। পর্ব – ১ । পর্ব – ২ । পর্ব – ৩ ।

কৃতজ্ঞতা: ব্লগার আবদুল্লাহ-আল-মারুফ যিনি পুরো বিষয়টিকে নতুন করে সামনে এনেছেন। ব্লগার নাজনীন যার পোস্ট আপনাদের জন্য আমি রেফারেন্স হিসেবে দিয়েছি
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.