আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"ছায়া"ছবি : "ভূতের ভবিষ্যৎ "

আর দশটা কলকাতার হাল আধুনিক বাংলা ছবি যা হয় ..... পরকীয়া, কাব্যিক কিছু সংলাপ, শহুরে জীবনের একঘেয়ে কিছু চরিত্র এইসব যে থাকবে না তা ছবির নামটা শুনে বেশ বুঝতে পারছিলাম । ভেবেছিলাম ভূত নিয়ে হাস্যকর ভৌতিক কিছু করার বৃথা চেষ্টা অথবা গায়ে সুড়সুড়ি মার্কা গতানুগতিক কমেডি। ভূতের ছবি কিন্তু ভয়ের লেশ মাত্র নেই, আছে নির্মল বিনোদন , যাতে কোন ভাড়ামি নেই, বুদ্ধিজীবি মার্কা কচকচানি নেই , চরিত্র গুলোর কোন জটিতলতা নেই, এক কথায় সাবলীল...... পরিচালকের নাম অনীক দত্ত, খুব সম্ভবত তার প্রথম ছবি । গুরু জীয়, প্রথম ছবিতেই বাজিমাত। অসাধারণ সংলাপ, অনবদ্য ক্যামেরার কাজ, মিউজিক , দুর্দান্ত অভিনয় (সবার) ।

গল্পটা সংক্ষেপেঃ অ্যাড ফিল্ম নির্মাতা অয়ন (পরমব্রত) তার অ্যাসিসটেন্ট রিঙ্কা ও প্রডাকশন ম্যানেজারকে নিয়ে এসেছে একটা পুরোনো বনেদী বাড়িতে শুটিং-এর লোকেশন দেখতে। ট্রেন এর ধর্মঘটের জন্য ক্যামেরাম্যানের আসতে দেরি হবে এই কারনে অয়ন বাদে সবাই অন্য কাজে চলে যায় । অপেক্ষারত অয়নের সঙ্গে আলাপ করতে হাজির হন এক ভদ্রলোক (সব্যসাচী)। সে ফিল্মের লোক তাই শুনে একরকম যেচেই বলেন একটা অদ্ভুতুড়ে গল্পের প্লট। দর্পনারায়ণ চৌধুরি নামের এক জমিদার (পরাণ) ডাকাতের পাল্লায় বেঘোরে প্রাণ হারিয়ে আবার তাঁর সাধের এই প্রাসাদেই ফিরে আসে।

সাথে জোটে বিপ্লবীদের বোমার ঘায়ে নিহত রামসে সাহেবের ভূতও। ৪০-এর দশকের অভিনেত্রী কদলীবালা (স্বস্তিকা) যাঁকে বিয়ের প্রলোভনে এই পরিবারের একজন কুলাঙ্গার এই বাড়িতে এনে রাখে । তিন বছর বিয়ের কলা ঝুলিয়ে শেষমেশ বিয়ে করে বাপের পছন্দের পাত্রীকে। অপমানে আত্মহত্যা করে কদলী, তাঁরও স্থান হয় চৌধুরি প্যালেসে। ৭০-এর দশকের এক বিপ্লবীর ভূত" বিপ্লব দা" যিনি এই বাড়িরই ছেলে এসে বসবাস শুরু করেন, কিন্তু পূর্ব পুরুষ দর্পনারায়ণ চৌধুরির সাথে মতের মিল না হওয়ায় দেশে দেশে বিপ্লব করে বেড়ান।

এদিকে শহরে একের পর এক পুরোনো বাড়ি ভেঙে তৈরি হয়ে চলেছে শপিং কমপ্লেক্স। ভূত বেচারাদের এমনঅবস্থা যে মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই। সবাই এসে হুমড়ি খায় চৌধুরি প্যালেসে। সবাইকে তো আর জায়গা দেওয়া যায় না, সমাধান কি???? বসানো হয় একটা ইন্টারভিউ বোর্ড। সেখানে ৪০-এর দশকের এক বাঙ্গাল অম্লশূল বিক্রেতা, নবাব সিরাজদ্দৌলার খানসাম, বিহারি রিক্সাচালক, কার্গিলের শহীদ মিলিটারি অফিসার ,ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার দম্পতির উচ্চাশার চাপে হতাশ ব্যান্ডের গায়ক, শিল্পপতির কন্যা নির্বাচিত হয় ।

সবাই মিলেমিশে ,ছোটখাট ঝগড়াঝাটি,ভালবাসে, গান গেয়ে, খেয়ে দেয়ে, পিকনিকে গিয়ে বেশ নিরুপদ্রব বসবাস করতে থাকে। কিন্তু বাধ সাধে প্রমোটার গণেশ ভুতোড়িয়া (মীর)। সে এই বাড়ি ভেঙ্গে শপিং মল গড়তে চায়। এইবার শুরু হয় সাসপেন্স । হাজির হয় ভূতপূর্ব "ফুটো কার্তিক" বর্তমান হাতকাটা কার্তিকের ভূত (শ্বাশ্বত)।

সংলাপের অন্তমিল মনে করিয়ে দেয় হীরক রাজার দেশে দেখার সেই অনুভুতিকে। গানের কথা অনবদ্য। কদলীবালার নাকিসুরে সাদাকালো আমলের নায়িকার মতো করে গানগুলোর চিত্রায়ন অনেকদিন ভুলতে পারার নয়। মনামির আইটেম গান হিন্দি কোন চম্মক চাল্লো থেকে কম যায় না। বার বার মনে পড়ে যায় বিহারি রিকশা চালকের কোন কারন ছাড়াই বলা "হামি গরীব মানুষ বাবু", হাত কাটা কার্তিকের অভিনয়, মীরের এক্সপ্রেশন, সব্যসাচীর সাবলীল অভিনয় ।

সব দিক থেকে পরমব্রতকে একটু কাচা ই মনে হয়েছে। সব থেকে কঠিন কাজ ছিল বিভিন্ন সময়কে এক ফ্রেমে ধরা, এইটাতেই পরিচালক দশে দশ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.