পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা এসইসির একটি আদেশ চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে করা আবেদনের শুনানিতে পরিচালকদের পক্ষ নেওয়ায় বুধবার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের রোষের মুখে পড়েন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক এবং ড. এম জহির। বিনিয়োগকারীদের অবরোধ থেকে এ দুইজনকে বের করে আনেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির উদ্যোক্তা, পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে গত ২২ নভেম্বর আদেশটি জারি করে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। এ আদেশ চ্যালেঞ্জ করে চারটি আবেদন করেন চার কোম্পানির ১৪ জন উদ্যোক্তা, পরিচালক ও একজন পরিচালক হতে ইচ্ছুক ব্যক্তি। খবর বিডিনিউজের।
দিনের শুনানি শেষে কয়েকশ বিনিয়োগকারী দুই আইনজীবীকে হাইকোর্টের একটি এজলাসে প্রায় ২০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন। এসময় তারা ব্যারিস্টার রফিক ও ড. জহিরকে ‘অশালীন’ ভাষায় গালাগালি করেন। বুধবার দুপুর ২টার পর বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি হাসান আরিফের বেঞ্চে এ আবেদনের শুনানি শুরু হয়। এর আগে বেলা ১২টার পরই বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে হাইকোর্টের ফটকের সামনে পরিচালকদের আবেদনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু করে বিনিয়োগকারীরা। শুনানি শুরুর ঠিক আগে বিনিয়োগকারীরা একটি কক্ষে গিয়ে উপস্থিত হয়।
এরপর সেখানে আসেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও এসইসির কর্মকর্তারা। একে একে আসতে শুরু করেন আইনজীবীরাও। আবেদনকারী পপুলার লাইফ ইন্সুরেন্সের পরিচালক আবুল বাশারের আইনজীবী এম. জহির এবং ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স ও ফিনিক্স ইন্সুরেন্সের পরিচালকদের আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক ও তার সহকর্মীরা আদালতে আসেন। এসময় কক্ষটিতে আইনজীবী ও বিনিয়োগকারীদের ভিড় জমে যায়। বসার জায়গা নিয়ে বিনিয়োগকারী ও আইনজীবীদের মধ্যে মৃদু কথা কাটাকাটিও হয়।
সম্প্রতি এই আবেদনের শুনানিতে বিনিয়োগকারীদেরও একটি পক্ষ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে আদালত। বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস সবাইকে চুপ থাকতে অনুরোধ ৯ম পৃষ্ঠার ৪র্থ কলাম করে বলেন, “আপনারা সবাই চুপ থাকেন। কোনো কথা বলবেন না। আদালতের রায় যা হবে তা সবাইকেই মেনে নিতে হবে। ” এসময় ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশীদ বলেন, “জনস্বার্থে এসইসি এ আদেশ দিয়েছে।
তাই এর বিরুদ্ধে কোনো রায় আমরা মেনে নিবো না। ” বেলা ২টা ১২ মিনিটে দুই বিচারপতি আসন গ্রহণ করেই কক্ষ থেকে আইনজীবী ও আবেদনকারী ছাড়া সবাইকে বের হয়ে যেতে বলেন। এরপর বিনিয়োগকারীদের কক্ষ ত্যাগ করতে শুরু করেন। এসময় আদালত কক্ষে হৈচৈ শুরু হয়। ব্যারিস্টার রফিকও এসময় আসন থেকে উঠে বিনিয়োগকারীদের ধমকের সঙ্গে বের হয়ে যেতে বলেন।
১২ মিনিট পর শুরু হয় শুনানি। শুনানি চলার সময় বাইরে থেকে হৈচৈ এর শব্দ শোনা যাচ্ছিল। আবেদনকারীদের পক্ষে প্রথমে এনসিসি ব্যাংকের পরিচালক হতে চাওয়া শেখ আব্দুল মোমেন এর পক্ষে শুনানিতে বক্তব্য তুলে ধরেন তার আইনজীবী ও সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল। এরপর যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন এম জহির। বেলা ৪টার দিকে বিচারকরা শুনানি মুলতবি করে আবার বৃহস্পতিবার সকালে শুনানি শুরুর আদেশ দিয়ে এজলাস ত্যাগ করার পরই বারান্দায় অপেক্ষারত বিনিয়োগকারীরা শ্লোগান দিতে শুরু করে করেন।
তারা বলতে থাকেন, “রফিক-জহির রাজাকার/এই মূহূর্তে বাংলা ছাড়, রফিকের দুই গালে/ জুতা মারো তালে তালে। ” এসময় এজলাস বন্ধ করে দেওয়া হলে বিনিয়োগকারীরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে শ্লোগান চালিয়ে যেতেই থাকেন। তারা রফিক-জহিরকে জনগণের স্বার্থবিরোধী হিসেবে অভিহিত করে তাদেরকে আদালত থেকে বহিষ্কার করার দাবি জানান। এসময় অ্যাটর্নি জেলারেল এসে বিনিয়োগকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। ঘটনাস্থলে ছুটে আসে পুলিশও।
বিনিয়োগকারীরা তখন শ্লোগান দিতে দিতে আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে। এর ২০ মিনিট পর এজলাস থেকে বেরিয়ে যান ব্যারিস্টার রফিক ও ড. জহির। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল সাংবাদিকদের বলেন, “বিনিয়োগকারীদের ভেতরে যে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে আজ। তবে আদালতে এভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করা উচিৎ না। এটা অনভিপ্রেত।
” তিনি বলেন, “বিনিয়োগকারীরা প্রচণ্ড রকম উত্তেজিত। তারা দু’তিন জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে নানা রকম শ্লোগান দিয়েছে এবং এরকম কথাও বলেছে যে, কতিপয় আইনজীবীর ন্যূনতম শেয়ার আছে। কিন্তু তারা ৭টি কোম্পানির পরিচালক। বিনিয়োগকারীরা খুবই ক্ষিপ্ত। ” বিনিয়োগকারীদের আচরণকে আদালত অবমাননা বলে মনে করেন কী না-জানতে চাওয়া হলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “এ ঘটনা আদালতের ভেতরে ঘটেনি।
এটা বাইরে ঘটেছে। তাই এটা আদালত অবমাননা বলে মনে করি না। ”
Click This Link ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।