রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন সরকার ও বিরোধী দলের টানাহেঁচড়ায় দেশের রাজনীতি সংকটাপন্ন হয়ে উঠেছে।
প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাসহ অন্যান্য বিরোধী দলের একটি বড় অংশকে জেলে পাঠিয়ে সরকার কেবল বিরোধীদলীয় রাজনীতিকে নয় সার্বিকভাবে দেশের রাজনীতিকে সঙ্কটাপন্ন করে তুলেছে বলেই মত তাদের।
গ্রেফতারের এ ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ বলে মন্তব্য করেছেন রাজনীতিক বিশ্লেষক ও সিনিয়র আইনজীবীরা। ‘এ ঘটনার মধ্য দিয়ে সংঘাতের পথে এগিয়ে যাচ্ছে রাজনীতি’ বলেও মন্তব্য করেছেন তারা। বলেছেন, নব্বইয়ের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও একদিনে এতো শীর্ষ নেতাকে একসঙ্গে জেলে পাঠানো হয়নি।
এদিকে, নেতাদের কারাবন্দী করতে সরকার বিচার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেছে বলে মত বিএনপি’র। আর আওয়ামী লীগ বলছে, এই গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়েই প্রমাণিত হয়েছে বিচার ব্যবস্থা স্বাধীন ও নিরপেক্ষ।
এ নিয়ে বাংলানিউজের কথা হয় রাজনীতিক, রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে।
বিশিষ্ট আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ঘটনায় দেশের রাজনীতিক পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে। ’
ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক বলেন, ‘যাদের জেলে পাঠানো হয়েছে তাদের অধিকাংশ সিনিয়র রাজনীতিক।
তাদের রাজনীতিতে দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ার আছে। অন্যভাবেও তাদের আইনের আওতায় বিচার করা যেতো। ’
বিএনপিসহ অন্যান্য শরিক দলের নেতাদের যে ঘটনায় জেলে নেওয়া হয়েছে এটা নিন্দনীয় বলে উল্লেখ করে বাংলানিউজকে প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বা অন্যদলও যদি বিরোধী দলে থাকে এবং এ ঘটনায় যদি শীর্ষ নেতাদের এভাবে গ্রেফতার কিংবা জেলে পাঠানো হয় তাহলেও আমি এর সমর্থন করবো না। ’
বিরোধী দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের এভাবে গ্রেফতার ‘নজিরবিহীন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতে যে রাজনৈতিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তোরণের জন্য সরকারি ও বিরোধী দলকে আন্তরিক হতে হবে। ’
বাংলানিউজের কথা হয় তত্ত্ববধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও রাজনীতিক বিশ্লেষক আকবর আলী খানের সঙ্গে।
তিনি বলেন, “বিরোধী দলের শীর্ষ নেতাদের গণগ্রেফতারের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিক পরিস্থিতি আরও সঙ্কটের দিকে যাচ্ছে। ”
তিনি বলেন, “দেশের মানুষ শান্তি চায়। রাজনৈতিক দলগুলোকে সমঝোতামূলক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সংলাপের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে হবে। অন্যথায় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ভুলের মাশুল দিতে হবে।
”
হরতালে যেসব নেতারা রাজপথে থাকতেন সেসব নেতারা এখন কারাগারে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৩৩ নেতাকে বুধবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যারয়ের সামনে একটি গাড়ি পোড়ানোর মামলায়।
এই প্রথমবারের মতো কারাগারে গেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও শরিকদল বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি। বুধবার আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিরোধী দলীয় জোটের ৩৩ জন নেতাকে প্রিজন ভ্যানে তুলে জেলহাজতে নেওয়া হয়।
একসঙ্গে এতজন নেতাকে কারাগারে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য যারা প্রত্যক্ষ করেছেন তাদের অনেকেই বলেছেন দেশের ইতিহাসে একসঙ্গে এতজন বড় নেতার গ্রেফতার দেখেননি।
কারাগারে পাঠানো ১৮ দলের নেতারা হলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, জোটের শরিক দল এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ এমপি, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, এনপিপি সভাপতি শেখ শওকত হোসেন নীলু, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিমউদ্দিন আলম, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এমপি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরব, স্বেচ্ছাসেবক দল সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, সহসভাপতি হাবিবুর রশীদ হাবিব, কামাল আনোয়ার, যুবদল মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাহাঙ্গীর, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক ইয়াছিন আলী, ছাত্রদল ঢাবির আহবায়ক আবদুল মতিন, যুগ্ম-আহ্বায়ক ওবায়দুল হক নাসির, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল বাশার, আনোয়ার হোসেন, তেজগাঁও থানা বিএনপি নেতা এল রহমান, নবী সোলায়মান ও ইউনুস মৃধা। এ মামলার অন্য আসামি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ ও কামরুজ্জামান রতন আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন।
যে বাসটি পোড়ানোর মামলায় জোট নেতারা আসামি হয়েছেন সে বাসের কনডাক্টর সোহেল মিয়া, হেলপার জসিম ও মানিক রতন নামের তিন আসামিও জেলে আছেন আগে থেকেই।
অন্যদিকে এই মামলার আসামি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মকবুল আহমাদ, মহানগর সেক্রেটারি নুরুল ইসলাম বুলবুল, ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ও সেক্রেটারি আবদুল জব্বার আদালতে আত্মসমর্পণ করেননি।
এছাড়া ছাত্রদল নেতা ওবায়দুল হক নাসির নামের অন্য মামলায় মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হওয়ায় জামিনের জন্য আদালতে হাজির হতে পারেননি।
এদিকে বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেফতার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, “১৮ দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের আওয়ামী লীগ জেলে পাঠায়নি। আদালত তাদের জেলে পাঠিয়েছে। তারা আইনের মাধ্যমে গ্রেফতার হয়েছেন। বিএনপি নেতাদের জেলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে, বিচার ব্যবস্থা পুরোপুরি স্বাধীন ও শক্তিশালী।
’
অন্যদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, যে মামলায় ব বুধবার নেতা-কর্মীদের কারাগারে নেওয়া হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক। এ ঘটনায় প্রমাণ হলো, বিচার বিভাগ স্বাধীন নয়। ’
রাজনীতিক বিশ্লেষকরা দেশের স্বার্থে বিরোধিতার খাতিরে বিরোধীতা না করে প্রধান দু’দল একে অপরের প্রতি সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
তারা বলেছেন, রাজনীতিতে যে সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের জন্য আলোচনার বিকল্প নেই। ref--বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম. ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।