আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খেলাধূলা আরও ছিল

আগের পোস্টে কয়েকটা খেলার কথা বলেছিলাম। পরে মনে হল আরও তো অনেক খেলা খেলতাম, ওগুলো বাদ দিলে কিভাবে হয়? একজন কুমির-পানির কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন। এই খেলা খেলতাম বিছানা, সোফা, টেবিল, চেয়ার ব্যবহার করে। এগুলো হল ডাঙা, আর মেঝে হল পানি। এই পানিতে থাকবে একজন কুমির, আর বাকীরা থাকবে ডাঙায়।

ডাঙায় বসে থাকলেই তো হবে না। কুমিরকে লোভ দেখানোর জন্য পানিতে নামতে হবে, আর সুর করে বলতে হবে, কুমির তোর জলে নেমেছি! কুমির দৌড়ে আসবে খাওয়ার জন্য, মানে ছুঁয়ে দেয়ার জন্য। কিন্তু ছোঁয়ার আগেই যদি ডাঙায় উঠে যাওয়া যায়, তাহলে আর লাভ নেই। আর ছুঁয়ে দিলে সেই হয়ে যাবে কুমির। মাংস-চোর একটা খেলা ছিল, পাশের বাড়ির সমবয়সী মেয়েদের কাছ থেকে শিখেছিলাম।

ওদের সাথেই খেলতাম এই খেলা। এক টুকরো ইঁটের চারাকে মাংস বানিয়ে মাটিতে রেখে এক দল পাহারায় থাকত। আরেক দলের সদস্যরা সেটা চুরি করার ধান্দায় থাকত। ছোঁ মেরে চুরি করে নিজেদের এলাকায় নিয়ে যেতে পারলে তাদের হয়ে যাবে মাংস। আর যদি ধরা পড়ে, তাহলে সদস্য হারাতে হবে ঐ দলের।

আরও কী কী সব নিয়ম ছিল এই খেলার, ঠিকমত মনে নেই। মাঝে মাঝে বাসায় ব্যাডমিন্টন খেলতাম। খেলতাম বলা তো ভুল, হুদাই র‌্যাকেট নিয়ে লাফালাফি করতাম আর কি। শাটলটা খুব অল্প সময়েই ছিলা মুরগী হয়ে যেত। আর আম্মার কত কিছু যে ভাঙতাম, ফুলদানী, কাঁচের বয়াম।

একবার তো ছোট ভাই আম্মার শখের ঝাড়বাতিই ভেঙে ফেলেছিল। অবশ্য ঝাড়বাতিটা অনেক পুরনো হয়ে গিয়েছিল। বাধ্য হয়ে আম্মাকে সেটা পাল্টাতে হয়েছে। আমরা সবাই বলছিলাম, ভালো হয়েছে ভেঙেছে, নইলে ঐ পুরনো রঙ নষ্ট হয়ে যাওয়া ঝাড়বাতি আর কোনদিনই পাল্টানো হত না। তবে নিরাপদ খেলা ছিল কাগজ-কলম নিয়ে খেলা।

এর মধ্যে ছিল কাটাকুটি (টিক ট্যাক টো), গোল্লা-গোল্লা (ডটস) আর ওয়ার্ড মেকিং। কাটাকুটিতে বেশির ভাগ সময় হারতাম। এখন অবশ্য কেউ আমাকে হারাতে পারে না। হয় ড্র হয়, অথবা আমি জিতি। গোল্লা-গোল্লারও কৌশল শিখে ফেলেছি।

আগে সব সময়ই লাড্ডু হতাম। ওয়ার্ড মেকিং খেলাটা মজার ছিল। অনেক গুলো ঘর কাটা হত। এরপর একজন খেলা শুরু করত ইংরেজী একটা অক্ষর দিয়ে। পালাক্রমে সবাই তার ডানে-বায়ে, উপরে-নীচে একটা করে অক্ষর দিয়ে ওয়ার্ড বানাতাম।

যে যত বেশি অক্ষরের ওয়ার্ড বানাতে পারে, তার তত বেশি স্কোর। এই খেলায়ও মাঝে মাঝে তর্ক লেগে যেত। কেউ কেউ বানিয়ে বানিয়ে ওয়ার্ড আবিষ্কার করত। আবার কেউ অ্যাব্রিভিয়েশন ব্যবহার করলে সেটা নিয়েও তর্ক চলত। ছোট মামার কাছ থেকে শিখেছিলাম কড়ি খেলা।

চারটা কড়ি নিয়ে কয়েকজন মিলে খেলতে হয়। চারটা কড়ি একসাথে মেঝেতে ছড়িয়ে ফেলতে হয়। এরপর একটা কড়ি টোকা দিয়ে আরেকটা কড়ির গায়ে লাগাতে হয়। চেষ্টা করতাম যেন ছড়িয়ে ফেলার সময় কাছাকাছি পড়ে, তাহলে কাজটা সহজ হয়। তবে একেবারে গায়ে গায়ে লাগানো যাবে না।

তাহলে অন্য প্রতিযোগী ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দিবে। আর বলা বাহুল্য এত জোড়ে ফুঁ দিবে যে কড়ি কোন দূরে চলে যাবে তার কোন ভরসা নেই। তখন সেটা টোকা মেরে আরেক কড়ির সাথে ছোঁয়া দিতে খবরই আছে। কেউ কড়ি ছোঁয়ানো একটা মিস করলেই পরের জন সুযোগ পাবে। যা হোক, একেকটা ছোঁয়ার জন্য এক করে স্কোর।

তবে কড়ি সোজা না উল্টা হয়ে পড়ছে সেটারও একটা ব্যাপার আছে। যদি সবগুলো কড়ি উল্টা হয়ে পড়ে, তাহলে সবাই ছোঁ মেরে নিবে যে যতগুলো পারে। হাতে নিয়ে আবার কড়িতে চুমু খেয়ে ফেলতে হবে। নইলে অন্যরা হাত থেকেও খামচি মেরে কেড়ে নিতে পারে। এত কাড়াকাড়ির কারণ হল সবগুলো উল্টো হয়ে পড়া কড়ির একেকটার জন্য স্কোর চার করে।

আরও কিছু খেলা ছিল শুধুই লোডশেডিং-এর সময় খেলার জন্য। লুকোচুরি, গানের কলি বা অন্ত্যক্ষরী, বি কুইক - এগুলো নিয়ে আগেই বলে ফেলেছি, এখানে আর বললাম না। আরেকটা খেলা যেটা টিভিতে বাউবি (বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়) অনুষ্ঠানের একটা অংশে আবদুন নুর তুষার পরিচালনা করত, বাউবি-১২ নামে। এখানে কেউ একজন কোন বিখ্যাত ব্যক্তি বা কোন জায়গা বা অন্য কোন কিছুর কথা ভাবত, তাকে একেকটি দল মোট ১২টি প্রশ্ন করে বের করতে চেষ্টা করত সে মনে মনে কী ভেবেছে। এই খেলাটা আমরাও বাসায় খেলতাম।

আমরাও একে বাউবি-১২ নামেই বলতাম। এই খেলাটাও ছিল আমাদের লোডশেডিং-এর সময়ের খেলা। বিদ্যুৎ চলে এলেই এসব খেলা এমনিই বন্ধ হয়ে যেত। আপাতত এইটুকুই মনে পড়ছে। পরে আবার মনে পড়লে আবারও লিখব।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।