আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুপার বিয়ে-০১

ক’দিন থেকে রুপা অসুস্থ বোধ করছে, মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছে, সবসময় একটা বমি বমি ভাব লেগেই আছে, সে লক্ষ্য করেছে তার শরীরে কিছু অস্বাভাবিক পরিবর্তনও শুরু হয়েছে। কাকে বলবে রুপা তার এই অসুস্থতার কথা? তার মনে হচ্ছে এটা যেন অন্যরকম অসুস্থতা, অন্যরকম কষ্ট, যার সঙে সে কোনদিনই পরিচিত না। তবে কি সেদিনের পর থেকে, সেদিন তমালের সঙে- না, না আর ভাবতে পারছে না রুপা। তবে কি সে তার শরীরে তমালের অস্তিত্ব লালন করছে? সে কি মা হতে চলেছে? তমালের সন্তানের মা!! কিন্তু তমালের সঙে তো তার বিয়ে হয়নি, তমাল যদি তাকে অস্বীকার করে? খালা আম্মা, খালু আব্বা যদি অসতী বলে তাকেই দোষারোপ করে? না আর ভাবতে পারঠে না রুপা, তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ছে, পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছে। আজ সকাল থেকেই রুপা ভাবছে এই কথাটা সে প্রথমে তমালকেই বলবে, কারণ তমারে সঙে মেলামেশা করার কারণেই তার মধ্যে এই অস্বাভাবিক পরিবর্তন শুরু হয়েছে।

তমাল কলেজ থেকে এসে কাপড় ছাড়ল। রুপা তমালের কাছে কথাগুলো কীভাবে উপস্থাপন করবে সাজিয়ে নিল তারপর তমালের ‍রুমে ঢুকল, কী রে কেমন আছিস? রুপার বুকটা কাঁপছে, তার মুখ শুকিয়ে গেছে, সে বলল, আমি ভালো নেই তমাল। কেন? আমার শরীরটা খুব খারাপ করছে। মাকে বলিসনি? ডাক্তার দেখাতো। কিন্তু আমি ভাবছি কথাটা আগে তোমাকে বলব।

কেন? রুপা তমালের কাছে গেল। গা ঘেঁষে বসে একটা হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে বলল, তমাল চলো আমরা বিয়ে করে ফেলি। বিয়ে! হুঁম বিয়ে। হঠাৎ করে তোর মাথায় আমাকে বিয়ে করার চিন্তা এলো কেন? তোর বিয়ের জন্য তো গ্রামের বাড়িতে ছেলে দেখা হয়েছে, তোর বাবা আসছে তোকে নিয়ে যেতে সেখানে তোর বিয়ে হবে। রুপা যেন আকাশ থেকে পড়ল।

দু’চোখ অন্ধকার হয়ে এলো। মুহূর্তেই তার কণ্ঠস্বর শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল, কিন্তু তুমি যে বলেছিলে আমাকে বিয়ে করবে? ও তুই সেকথা ধরে আছিস? এখন তুমি এভাবে বলছ!! আমি তোমার কথায় বিশ্বাস করে তোমাকে সবকিছু উজাড় করে দিলাম আর এখন তুমি, তুমি আমাকে অস্বীকার করছ, তাহলে আমি যাবো কোথায়? আমার অসুস্থতার কারণও যে তুমি- বলতে বলতে রুপা আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ল। মানে! মানে। আরো খুলে বলতে হবে? হ্যাঁ আমি তোর কথা কিছু বুঝতে পাচ্ছি না। বুঝতে পাচ্ছিস না? তবে শোন আমার পেটের ভিতর তোমার সন্তান বড় হচ্ছে, তোমার সন্তান, তুমি যদি অস্বীকার করো তবে আমি খালা আম্মাকে, খালু আব্বাকে সব কথা বলব।

কী বলবে? বলব তমাল আমাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, আমার সবকিছু নিয়ে এখন আমাকে অস্বীকার করছে। তমাল রেগে গেল, তুমি আমাকে জিম্মি করছ? জিম্মি করছি না আমি যা বলছি, সত্য বলছি। বল, তুই তোর খালা আম্মাকে বলবি আর খালা আম্মা তোর কথা বিশ্বাস করল। রুপা কান্নায় ভেঙে পড়ল। আরো কয়েকদিন কেটে গেল।

একদিন সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ করে রুপার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠল তারপর বমি। তার বমির শব্দ শুনে ইয়াসমিন তার রুম থেকে বেরিয়ে এলো। তাকে হাত ধরে রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বলল, এ্যাসিডিটিটা বেড়ে গেছে? তোর তো সাধারণত এমন হয় না। বলে সে তার রুম থেকে একটা ঔষধ এনে দিয়ে বলল, এটা খেয়ে একটু শুয়ে থাক, ঠিক হয়ে যাবে। রুপা তবুও কিছু বলল না।

ইয়াসমিনের কথামতো ঔষধ খেয়ে বিছানায় শুয়ে থাকল কিন্তু বমি বন্ধ হলো না। রুপাও কিছু বলল না, সে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তার খালার দিকে তাকিয়ে রইল। পরদিন সকালবেলা ইয়াসমিন রুপাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। ডাক্তারের কাছে রুপা তমালের সঙে তার মেলামেশার কথা গোপন করল। ডাক্তার রুপার চোখ, জিহব্বার নিচে পরীক্ষা করে জিজ্ঞেস করল, প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয়? রুপা বলল, না।

মুখে সবসময় অরুচি লেগেই থাকে? রুপা মাথা নেড়ে সায় জানালো। ডাক্তার ইয়াসমিনকে জিজ্ঞেস করল, পেশেণ্ট আপনার কে হয়? ইয়াসমিন বলল, আমার আত্মীয়, মানে আমার বাসায় থাকে। বিবাহিতা? ইয়াসমিন তো আকাশ থেকে পড়ল, না!! ডাক্তার কয়েকমুহূর্ত ইয়াসমিন আর রুপার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল, একবার বিলিরুবিনটা দেখা দরকার আর-বলেই ডাক্তার যেন থমকে গেল। তারপর একটু সহজ হয়ে বলল, আচ্ছা ব্লাড আর ইউরিনের টেস্ট দিয়েছি রিপোর্ট নিয়ে আবার দেখা করবেন। ডাক্তার যখন জিজ্ঞেস করল রুপা বিবাহিতা কী না তখনই ইয়াসমিনের সন্দেহ হয়েছিল তারপর আর- বলে ডাক্তার যখন থমকে গিয়েছিল তখন সন্দেহটা আরো দৃঢ় হয়েছিল।

তাই ইয়াসমিন টেস্ট-এর রিপোর্ট হাতে পেয়ে বোঝার চেষ্টা করল। সে চমকে উঠল বুকটা প্রচণ্ড ধাক্কা খেল, ডাক্তার রুপার প্রেগনেন্সি টেস্ট করতে দিয়েছিল। রেজাল্ট পজেটিভ!! ইয়াসমিন কয়েকমুহূর্ত রুপার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে বাসায় এলো, রাস্তায় একটা কথাও বলল না। তখন বাসায় কেউ ছিল না।

মুহিত উত্তরায় তার এক বন্ধুর সঙে দেখা করতে গেছে আর তমাল গেছে তার কলেজে। ইয়াসমিন বাসায় ঢুকেই রুপাকে শাসনের সুরে জিজ্ঞেস করল, সত্যি করে বলবি, কোন চালাকি করবি না। রুপা ইয়াসমিনের কথা শুনে ভয় পেয়ে গেল। সে একটা ঢোক গিলে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল। বাসায় কেউ নেই।

তারপরও আগে ইয়াসমিন কথাটা জোরে বললেও এবার চাপা স্বরে বলল, কার সঙে ঘটনাটা ঘটিয়েছিস? রুপা কোন কথা বলল না। সে ইয়াসমিনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। তার চোখ থেকে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়ল। কী বলবে সে, তমাল ইয়াসমিনের একমাত্র সন্তান। ইয়াসমিন তাকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে এবং বিশ্বাস করে তার কথা বললে ইয়াসমিন কি বিশ্বাস করবে? কিন্তু তবু রুপাকে সত্য কথা বলতেই হবে।

ইয়াসমিন আবার ধমকের সুরে বলল, কী কথা বলছিস না কেন? বল? রুপা তবু কোন কথা বলল না। সে শুধু বার বার করে ঢোক গিলছে আর কাঁপছে। ইয়াসমিন এবার রুপার চুলের মুঠি ধরল, কথা বলছিস না কেন? বল? রুপার বুকের ভেতর থেকে একটা অপমান এবং তমালের প্রতি ঘৃণা মেশানো কথা বেরিয়ে এলো, তমাল। রুপার ধারণাই সত্যি হলো। ইয়াসমিন তার কথা বিশ্বাস করল না।

চুল আরো শক্ত করে ধরে বলল, মিথ্যা কথা, তমাল এমন কাজ করতেই পারে না। আমার ছেলেকে আমি চিনি না? বল সত্যি করে বল? বললাম তো। ইয়াসমিন গর্জন করে উঠল, না তুই মিথ্যা বলছিস, একথা আর কখনো বলবি না, কাউকে বলবি না। যদি বলিস তো তোকে আমি, বলে ইয়াসমিন চোখ বড় বড় করে রুপার দিকে তাকিয়ে আরেক হাতে তার গলা চেপে ধরে বলল, তোকে আমি প্রাণে মেরে ফেলব। রুপা কী করবে ভেবে পেল না।

তার সমস্ত শরীর থরথর করে কাঁপছে, সে যেন দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না, তার কণ্ঠস্বর বন্ধ হয়ে আসছে। ইয়াসমিন রুপাকে ছেড়ে দিয়ে বলল, কাউকে কিছু বলবি না। আমি যা যা বলব ঠিক তা তা করবি, এর এক বিন্দু ব্যতিক্রম করবি না বলে রুপাকে শাসিয়ে ইয়াসমিন তার রুমে চলে গেল। চলবে… ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।