আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রুপার আত্মকথন ( অনু গল্প)

সত্য কাঁদে নিভৃতে, সাথে তার থাকে শুধু মহাকাল। সত্যের দ্বীপশিখা চিরদিন জ্বলে । সত্য কখনো মিথ্যাকে করে নাকো ক্ষমা।
আজ খুব নিঃসঙ্গ লাগছে রুপার। আকাশটা কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।

চাঁদ ছিল কিন্তু মেঘের আড়ালে ঢাকা পরেছে। মনে হচ্ছে নিজের দুঃখের সাথে বুঝি আকাশও দুঃখে ভারাক্রান্ত । আজকাল কিসব অদ্ভুত অনুভতি হয় রুপার। নিজের মন ভালো থাকেনা বলে মনে হয় চারপাশের সব কিছুরই বুঝি মন খারাপ। বিদীর্ন সব ভাবনাগুলো মনের ভেতর ঘুরে বেরায়।

আজতো তোমার আসার কথা ছিল, আসলেনা। এমন পরিবর্তন কেন হলে বলতে পার? আমার দিন কাটে রাত কাটে তোমায় ভেবে। অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে আমি হয়রান। তারপরও নতুন উদ্যমতা নিয়ে পথ চেয়ে থাকি তুমি আসবে বলে। আমিতো তোমার বিয়ে করা বউ।

আমিইতো অপেক্ষা করব তোমার জন্য। আসবে আসবে বলে তুমি আর আসনা। কিন্তু কেন? কি দোষ আমার? আমার বুকের ভেতরটা যদি একবার দেখতে তাহলে দেখতে পেতে ওখানে হৃদয়টা পুড়ে খাক হয়ে গেছে তোমার জন্য। সেযে কি যন্ত্রণা, না না তুমি বুঝবেনা। আমি চাইও না সেই যন্ত্রণা তোমার হোক।

কারন আমি জানি তুমি তা সইতে পারবেনা। আর তোমার কষ্ট আমি সইতে পারবনা। কারন আমি তোমায় ভালোবাসি নিজের থেকেও বেশি। আমার এক বিন্দু কষ্টে যদি সুখি হও তবে আমি সেই কষ্ট হাসি মুখে মেনে নিব। আজকাল তুমি আমাকে কিছুই বলনা।

কেন আমাকে তোমার কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছ কিছুই বুঝতে পারছিনা। আজ মা জিজ্ঞেস করছিল তোমার আমার মাঝে কিছু হয়েছে কিনা? কি জবাব দিব বলতে পার? আমি জবাব দিতেও পারিনি। অনেক সময় চাইলেও সব আড়াল করা যায়না জয়ন্ত। চাকরীর সুবাদে তুমি চট্টগ্রাম থাক। আমাকে তোমার কাছে নিবে না কারন তুমি আবার ঢাকায় ফিরে আসবে।

আগে প্রায়ই চিঠি লিখতে কিন্তু এখন তুমি ক্লান্ত হয়ে গেছ চিঠি লিখতে লিখতে। তবে তারপরও আমি অপেক্ষা করি তোমার চিঠির। তোমার একটা চিঠি পেলে আমি প্রান ফিরে পাই। তুমিহীনা যে আমি নিঃস্ব। নির্ঘুম কাটে প্রতিটা রাত আমার ।

অন্ধকার বারান্দায় বসে দূরের আকাশ পানে চেয়ে থাকি। মিটি মিটি তারা জ্বলা দেখি। ইচ্ছে করে ঐ আকাশের তারা হয়ে আমিও জ্বল জ্বল করি। তোমার উপেক্ষার চেয়ে ঐ আকাশের তারা হয়ে জ্বলা ঢের ভালো। দিন দিন মনে হয় সব অধিকার আমি হারিয়ে ফেলেছি।

আমার ভেতরটা ক্ষয় হয়ে যাচ্ছে । আমি উপলব্ধি করছি তা। কত স্বপ্ন চোখে নিয়ে বসে আছি আমি। স্বপ্নেরা আজ আমায় উপহাস করে। ওরা বলে “মিছে কেন স্বপ্ন দেখিস? বোকা মেয়ে কোথাকার!” এই বলে ওরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

আমার ইচ্ছে করে মাঝে মাঝে গলা টিপে হত্যা করি স্বপ্নকে। স্বপ্ন কেন দেখি আমি? কেন দেখি কেন? মনে পড়ে সেদিনগুলোর কথা ... একদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল, তুমি আর আমি ভিজেছিলাম। আমার অধরে অমৃত সুধা ঢেলে দিয়েছিলে। কি মধুর ছিল সেই সময়গুলো। বর্ষার কদম ফুল খোঁপায় গুঁজে দিতে।

আর প্রতি বিকেলে আমার জন্য আইসক্রিম আনতে ভুলতেনা। মাঝে মাঝে আমরা বিকেলে ঘুরতে যেতাম। তোমার হাতে হাত রেখে রিক্সায় ঘুরতাম। রঙিন ছিল দিনগুলো। আজ সব ফিকে হয়ে গেছে।

সবুর করতে করতে সবুর শব্দটার প্রতি এখন আক্রোশ বেড়ে উঠে, বিষিয়ে যায় মন। এমন কেন তুমি? নিজের বউকে উপেক্ষা করো, ভাবতে অবাক লাগে এমন পুরুষও পৃথিবীতে হয়? শেষ একটা চিঠিতে তারিখ দিয়েছিলে যে সেই তারিখে আসবে। কিন্তু তুমি ঐ তারিখেও আসলেনা। সারাটি দিন অপেক্ষার করে করে আমার সমস্ত মন আত্মস্বরে কেঁদে উঠল। অভিমানী এই মন আমার বিদ্রোহ করতে শুরু করেছে।

হাহাহাহা। সত্যি উপেক্ষার চেয়ে মৃত্যু শ্রেয়। উপেক্ষা করো আমায়? তোমাকে মুক্তি দিয়ে দিব সারা জীবনের জন্য। আজ রুপা খুব সেজেছে। কারন আজ জয়ন্তর আসার কথা।

লাল টুকটুকে একটা শাড়ি পরেছে। চুলে খোঁপা করে ফুল দিয়েছে। দারুন লাগছে দেখতে আজ রুপাকে। জয়ন্ত দেখলে ওর চোখ দুটি রুপার উপর আটকে যাবে নিশ্চিত। চোখ সরানোর কোন উপায়ই থাকবেনা।

আজ সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে নিখুঁতভাবে সেজেছে রুপা। ভালোবাসার মানুষটি যে তাকে আজ দেখবে। বিকেল গড়িয়ে গেলে জয়ন্ত আসল । সন্ধ্যা নামবে এখনি। বাড়িতে মেয়ের জামাই এসেছে একরকম হুলস্থুল বেধে গেছে।

কি খেতে দিবে, কি কি লাগবে? খুব খেয়াল রাখা হচ্ছে। জয়ন্ত দেখল সবাই এসে তার খোঁজ খবর নিচ্ছে কিন্তু রুপাকেতো দেখলনা। জিজ্ঞেস করল বাড়ির ছোট মেয়েটিকে -রুপা কোথায়? - দিদিতো ঘরেই ছিল। কি জানি কোথায় এখন? এই বলেই দৌড়ে চলে গেল। হাতমুখ ধুয়ে জল খাবার খেতে বসল জয়ন্ত।

তবুও রুপার দেখা নেই। জয়ন্তর চোখ খুজতেছিল রুপাকে। পাশেই ছিল রুপার আর এক বোন। ওকে জিজ্ঞেস করল - দিপা তোমার বোন কোথায়? দেখছিনা যে কোথাও? - ও তাইতো? দিদিভাই কোথায় গেল? আচ্ছা আমি দেখে আসছি। দিপা এঘর ওঘর সব ঘর খুজল, কিন্তু কোথায় খুঁজে পেলনা ।

দিপা চীৎকার করতে লাগল। -মা রুপাদি কে কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। - কি বলছিস? আস্তে বল জামাই ঘরে । দেখ কোন ঘরে আছে? -মা আমি সব খুজেছি কোথাও নেই। -কি বলছিস কি? দেখত পুকুর ঘাটে গেছে কিনা? এই মেয়েরতো আবার বাতিক আছে সন্ধ্যা বেলায় পুকুরঘাটে গিয়ে বসে থাকা।

আর পারিনা আমি। -আচ্ছা আমি দেখছি। এর মধ্যেই জয়ন্তর কানে গিয়েছে যে রুপাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জল খাবার রেখে বের হয়ে আসল জয়ন্ত। কেমন যেন চিন্তা হতে লাগল।

শরীর ঘামতে শুরু করল। হটাৎ জয়ন্ত পুকুরঘাট থেকে দিপার চীৎকার শুনতে পেল। জয়ন্ত ছুটে গেল পুকুরঘাটে। - দিপা চীৎকার করে বলছিল রুপাদির আচল দেখা যাচ্ছে জলের মধ্য। চীৎকার করে কাঁদতে লাগল।

বাড়ীর সবাই ছুটে আসল সেখানে। - জয়ন্ত দৌড়ে জলে নামল । সাঁতরে গিয়ে রুপাকে তুলে আনল। রুপার নিথর দেহখানি পুকুরপাড়ে রেখে বাঁচাবার ব্যর্থ চেষ্টা করল জয়ন্ত। আসলে অনেক আগেই রুপার দেহ থেকে আত্মা চলে গিয়েছে অনেক দূরে।

জয়ন্ত রুপার মাথাকে নিজের কোলে রেখে অনেক ডাকল। - কথা বল রুপা, রুপা, কথাব বল। - দিপা হাছানহেনা গাছের পাশেই দেখতে পেল একটা সাদা কাগজের উপর একজোড়া শাঁখা রাখা। দৌড়ে গিয়ে ওগুলো নিল। সাদা কাগজ জয়ন্তকে দিল।

রুপা লিখেছে- প্রিয় জয়ন্ত, তুমি যখন এই চিঠিটা পাবে তখন আমি এই পার্থিব জগৎ ছেড়ে অনেক অনেক দূরে চলে গেছি। আকাশের তারা হয়ে গেছি আমি। প্রতিরাত আমার নির্ঘুম কাটতো তারা দেখে দেখে। আর তাই খুব শখ হল আকাশের তারা হয়ে থাকতে। কারো জন্য আর অপেক্ষা করতে হবেনা।

কারো উপেক্ষা আর সহ্য করতে হবেনা। উপেক্ষার সহ্য করা অনেক কঠিন জয়ন্ত। দিন দিন উপেক্ষার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। দুঃখ করোনা। তোমার প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।

তোমাকে মুক্ত করে দিলাম। ভালো থেকো, খুব ভালো। চিঠিটা পড়ে জয়ন্তের দুচোখ বেয়ে অশ্রু ঝরে পড়ল...
 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।