আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাইরেটেড

ছোটবেলায় কী হতে চাইনি সেটাই বরং এক গবেষণার বিষয়। তেপান্তরের মাঠ-টাঠ ঘুরে দেখার অভিলাষে একটা ঘোরা কেনার জন্যও বাসায় একটা আনুষ্ঠানিক দাবি পর্যন্ত তুলেছিলাম। তবে সেই তুলনায় নাবিক হবার বাসনা অব্যাক্তই রয়ে যায়। আধুনিক চতুর্থ প্রজন্ম-পঞ্চম প্রজন্মের জাহাজের নাবিক নয়, মধ্য যুগীয় হাল-মাস্তুল ওয়ালা জাহাজের। আমার খুব একটা আফসোস ছিল কেন আরও আগে জন্মাইনি।

কারণ ক্রিস্টোফার কলম্বাস, ক্যাপ্টেন কুক বা ভাস্কো দা গামারাইতো সব শেষ করে গেছেন। আমার কতবার মনে হয়েছে রবিনসন ক্রসোর সাথে ফ্রাইডে না জুড়েতো আমিও জুড়ে যেতে পারতাম! রবার্ট মাইকেল ব্যালেন্টাইন, রবার্ট লুই স্টিভেনসন র‌্যানডাল ক্লেইজাররা এই আফসোস আরও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের কোরাল আইল্যান্ড, ট্রেজার আইল্যান্ড বা ব্লু লেগুনের মত সমুদ্র আর দ্বীপযাপন দিয়ে। এমনকি আমিতো কলম্বাস-কুকদের মতো বিখ্যাত কেউ না হয়ে অন্তত কুখ্যাত কেউওতো হতে পারতাম। কত শত সত্যিকারের সফল পাইরেটস ছিল না, যাদের নাম আজও ইতিহাসে খুজে পাওয়া যায়? হালের পাইরেট্স অব দ্যা ক্যারিবিয়ান সিরিজের অভারনীয় বানিজ্যিক সাফল্যই বলে ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোরা আমার মতো বিশ্বব্যাপি লাখো মানুষের মনে আজও রয়ে গেছে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের জলদস্যুতার উপর নির্মিত এই কাল্পনিক ক্যাপ্টেন জ্যাক অভিনেতা জনি ডেপের জনপ্রিয়তাকেও করেছেন আকাশচুম্বি।

ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো চিত্রনাট্যকার টেড এলিয়ট এবং টেরি রসিও মস্তিষ্ক প্রসুত হলেও, বাস্তবের পাইরেটস্রা-- ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকবিয়ার্ড, ক্যালিকো জ্যাক, হেনরী এভারি, বার্ট রবার্টসরা সাহস, শক্তি, বুদ্ধিমত্তা আর নৃশংসতায় কোন অংশেই কম ছিলেন না ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারোর চেয়ে, বরং অনেক ক্ষেত্রেই ছিলেন আরো অনেক বেশী প্রখর। মাথার খুলি আর আড়াআড়ি হাড়ের ক্রসের সমন্বয়ে তৈরী পাইরেটস্ দের প্রতিক ’জলি রজার্স’, চোখের উপর আড়াআড়ি কালো কাপড়ের ’আই প্যাচ’, মাথার তেকোনা হ্যাট ট্রাইকর্ন, কামান, গোলা, ছোড়া, তরবারি, রামের বোতলের সমন্বয়ে সেকালের পাইরেটসরা ছিলেন আরো অনেক বেশী জীবন্ত। ১৬৫০ থেকে ১৭২০ সাল পর্যন্ত সময়কে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে পাইরেসির স্বর্ণযুগ হিসেবে। এসময় অনেক দস্যুনেতাই নিজস্ব মেধা আর দক্ষতা দিয়ে নিজেদের অমর করে গেছেন ইতিহাসে। এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হেনরী মর্গ্যান, হেনরী এভারি, উইলিয়াম ’ক্যাপ্টেন’ কিড, ’ব্ল্যাক স্যাম’ বেলামি, স্টেড বনেট, এডওয়ার্ড টীচ বা ব্ল্যাক বিয়ার্ড, ক্যালিকো জ্যাক, বার্ট রবার্ট রা।

আমি একটা দল গড়তে যাচ্ছি। যাদের মনে আজও হাহাকার রয়ে গেছে তারা যদি নিচের ’গুরুদের’ জনা কয়েক সম্পর্কে জেনে একটুও অনুপ্রাণীত হন আমার দলে যোগ দেবার ব্যাপারে কিংবা নিজেরাই একটা দল খুলে আমাকে সেই দলে নেবার ব্যাপারে, তাহলেই কেবল ইন্টারনেট থেকে আমার এই ধার করা সফল হবে। ০১. ব্ল্যাকবিয়ার্ড, ব্রিস্টল, ইংল্যান্ড [জন্ম:১৬৮০, মৃত্যু: ১৭১৮] এ্যাডওয়ার্ড টীচ, কালোশশ্্রু বা ব্ল্যাকবিয়ার্ড নামেই অধিক পরিচিত এই কুখ্যাত ইংরেজ জলদস্যু ১৮ শতকের Golden Age of Piracy বা জলদস্যুতার সোনালি সময়ে ছিলেন ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের এক ত্রাস। তার সবচেয়ে বিখ্যাত জাহজ ’’কুইন এ্যানি’স রিভেঞ্জ’’ ১৭১৮ সালের দিকে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার বিফোর্ট ইন্টেল-এ ঘুরে বেড়াতো। ব্ল্যাকবিয়ার্ডকে লড়াই বা অন্যান্য সময় দেখা যেত লম্বা পালকযুক্ত ট্রাইকর্ন (তিনকোনা হ্যাট) মাথায়, থাকত একাধিক তরবারি, ছোড়া, পিস্তলে সজ্জিত।

জলদস্যুতার ইতিহাস ঘেটে পাওয়া যায় যে ব্ল্যাকবিয়ার্ডেও গাজায় আসক্তি ছিল এবং লড়াইএর সময় তার বিখ্যাত দাড়িতে ঘষে ম্যাচের আগুন ধরাতো। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে পাওয়া যায় লড়াই এর সময় তাকে তার ভীতিকর চেহারা এবং চুল দাড়ির ধুম্রজালে তাকে ’’সাক্ষাৎ শয়তানের মতোই দেখাতো”। এই যে ভাবমূর্তি সে গড়ে তুলেছিল তা তাকে পরিণত করেছিলো সাগরের ভয়ঙ্কর জলদস্যুর প্রতিকে। ব্ল্যাকবিয়ার্ড বানিজ্য তরি লুট করে তার ক্রুদের সেই জাহাজে উঠিয়ে দিত, তারপর দস্যুরা সেই জাহাজের সব মূল্যবান জিনিসপত্র, খাদ্য, পানীয় আর অস্ত্র-সস্ত্র আর গোলাবারুদ। তরে পরিহাস হচ্ছে এই যে, তার এই ভয়ংকর পরিচিতি সত্বেও তার সম্পর্কে কাওকে খুন করার নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পাওয়া যায় না।

সে সাধারণত ভয় দেখিয়েই তার কাজ হাসিল করত। তবুও তাকে ক্ষমা করে দেওয়া পরও একদল লোক ১০০ পাউন্ড পুরষ্কার জেতার আশায় তাকে খুন করে। হত্যা এবং শিরচ্ছেদ করার আগে টিচ্ কে পাচ রাউন্ড গুলি করা হয় এবং কমপক্ষে বিশবার ছোড়ার আঘাত করা হয়। মৃত্যুর পরপরই তার কিংবদন্তি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে সবচেয়ে বহুল আলোচিত কিংবদন্তি হলো, জাহাজ থেকে ফেলে দেওয়ার পর টীচের শিরহীন দেহ জাহাজের চারপাশে ২ থেকে ৭ বার সাঁতার কেটে তারপর ডুবে যায় পানিতে।

০২. ক্যালিকো জ্যাক, লন্ডন [জন্ম: ১৬৮২, মৃত্যু:১৭২০] ক্যালিকো জ্যাক নামেই মুলত পরিচিত জন র‌্যাকহ্যাম বিখ্যাত হয়ে আছেন ইতিহাসের দুই কুখ্যাত মহিলা জলদস্যু-- এ্যানি বনি এবং ম্যারি রীড্ কে তার বাহিনীতে নিয়োগ দিয়ে। তিনি এবং তার ক্রুরা অধিকাংশই জ্যামাইকায় নিহত হন। ’চার্লস্ ভেন’ জাহাজের ক্রুদের বিদ্রোহের পর জ্যাক জাহাজের ক্যাপ্টেন হন। ক্যাপ্টেন হবার দিন ক্রুদের মাঝে সমিহ আনার জন্য তিনি বেশ ক’টি ছোট জাহাজে আক্রমন করেন। একদিন স্থানীয় পানশালায় পানের সময় এ্যানি বনি নামের জনৈক মহিলার সাথে তার পরিচয় ঘটে।

তিনি তাকে দলে নেয়ার কথা ভাবেন, এবং একপর্যায়ে তাকে তাদের সাথে দস্যুতার আহ্বান জানান। এ্যানি প্রস্তাবে রাজি হন, এবং অন্যান্য ক্রুদের দৃষ্টি এড়ানোর জন্য ছেলেদের পোশাকে দলে যোগ দেন। একদিন, তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে একটি ছোট জাহাজ আক্রমন করেন। অধিকাংশ নাবিক কে মেরে ফেলা হয় এবং একজন নাবিক অবশিষ্ট থাকে। তারা নাবিককে তাদের দলে যোগ দেওয়া অথবা মৃত্যু একটিকে বেছে নিতে বললে লোকটি দস্যুদলে যোগ দেয়ার প্রস্তাবে সম্মত হয়।

লোকটির সাথে বনির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে, দুজনের সার্বক্ষণিক এই সম্পর্ক জ্যাককে ঈর্ষান্বিত করে তোলে। জ্যাক তাকে মেরে ফেলার উদ্যোগ নেয়ার পর জানা যায় সেও ছিলেন এক ছদ্মবেশী নারী। সেই নতুন নাবিকই ছিল ম্যারি রীড্। ড্যানিয়েল ডিফোর ’রবিনসন ক্রুসো’র অনুপ্রেরণা আলেক্সেন্ডার সেলক্লার্ককের উদ্ধারকারী, বাহামার প্রথম ইংরেজ গভর্নর উড রজার্স যখন জানতে পারেন র‌্যাকহ্যামের নাসাও বন্দরে নোঙর করা একটি জাহাজ চুরির খবর, তিনি ৪৫ জন সৈন্যসহ দুটি বড় জাহাজ পাঠান দস্যুদের খুঁজে বেড় করার জন্য। ক্যাপ্টেন জনাথন বার্নেট চুরি যাওয়া জাহাজটি উদ্ধার করেন।

র‌্যাকহ্যাম পালানোর জন্য সাথে সাথেই জাহাজের পাল তুলে দেন। যখন সৈন্যরা র‌্যাকহ্যামের জাহাজটি ধরে ফেলে তখন তখন সেটি জ্যামাইকার ড্রাই হারবারে নোঙর করা জাহাজে অধিকাংশ দস্যুরাই মাতাল অবস্থায় ছিলেন, তারা দ্রুত ডেকের নিচে আশ্রয় নেয় শুধু বনি এবং রীড্ লড়াই করে যায়। ১৭২০ এর অক্টোবরের এই অসহায় লড়াইয়ে দস্যুরা পরাজিত হয় এবং সবাই গ্রেফতার হয়। র‌্যাকহ্যাম এবং তার ১১ সহযোগীকে ১৮ই নভেম্বরে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয় এবং পোর্ট রয়্যালের প্রধান প্রবেশদ্বারে প্রদর্শনের জন্য ঝুলিয়ে রাখা হয়। আর সন্তানসম্ভবা এ্যানি ও রীডকে ফাঁসির বদলে কারাদন্ড দেওয়া হয়।

১৭২১ এর এপ্রিলে রীড সন্তান জন্মদান সংক্রান্ত জড়ায় মারা যান আর ইতিহাসে এ্যানিরও কোনও খোজ পাওয়া যায়নি র‌্যাকহ্যামের বিচারে এ্যানিকে তার পক্ষে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়েছিল। কোর্টে এ্যানি তার সেই বিখ্যাত উক্তি করেন ”যদি সে মানুষের মতো সেদিন লড়ত, তবে আজ তাকে কুকুরের মতো ফাঁসিতে ঝুলতে হতো না”। ০৩. হেনরী এভারি, পলিমাউথ, ইংল্যান্ড [জন্ম: ১৬৫৩, মৃত্যু:১৬৯৬] হেনরী এভারি বা এ্যাভারির খ্যাতির পেছনে সবচেয়ে বড় কারন এই যে, তিনি অল্প কিছু সৌভাগ্যবান কুখ্যাত জলদস্যু ক্যাপ্টেনের অন্যতম যিনি তার লূটের মালামাল সহ গ্রেপ্তার বা লড়াইয়ে নিহত না হয়েই ডাকাতি থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহন করতে পেরেছেন। তিনি জন এভারি, লং বেন, বেঞ্জামিন ব্রীজম্যান নামেও পরিচিত ছিলেন। ছোট বেলা থেকেই এভারি একজন নাবিক ছিলেন এমনকি তিনি একাধিক রয়্যাল নেভি শিপেও কাজ করেছেন।

খন্ড খন্ড ভাবে জানা যায় যে, তিনি ইংরেজ রণতরিতে করে ১৬৭১এ আলজিয়ার্সে হামলা করেন, ক্যারিবিয়ান সাগরে ডাকাতি করে বেড়ান, এমনকি কাঠবোঝাই জাহাজের কাপ্তানিও করেন। ১৬৯০ সালের দিকে তিনি আটলান্টিকের দাস ব্যবসায়ে প্রবেশ করেন, যেখানে তিনি পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলের দাস ক্রেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন, পরে তিনি দাস ব্যবসায়িদেরকেই আটক করে ফেলেন এবং জাহাজের অন্ধকার কুঠুরিতে আগের বন্দীদের সাথে আটকে রাখেন। এভারি তার জলদস্যু ক্যাপ্টেন হিসেবে মাত্র একটি যাত্রা করেন। কিন্তু এই একটি যাত্রাই তিনি এত সফল ভাবে সফলভাবে সম্পন্ন করেন যে, ফ্রেসারের মতে তা ছিলো ”ইতিহাসে এককভাবে সবচেয়ে ধনবান অপরাধ”। ১৬৯৪ সালের আগস্টে এভারি তার জাহাজ ফ্যান্সি’কে নিয়ে মান্দাব প্রণালীতে পৌছেন।

সেখানে তিনি থমাস টিউ’র জাহাজ এ্যামিটি’ সহ আরও চার ডাকাতের সাথে একত্রে মিলে নতুন দল গঠন করেন। এ্যাভারি এবং তার দল ফতেহ্ মোহাম্মদকে আক্রমন করেন। ফতেহ্ মোহাম্মদ ইতোপূর্বে এ্যমিটির একটি আক্রমণ প্রতিহত করেন এবং ক্যাপ্টেন টিউকে নিহত করেন। সম্ভবত ’ফ্যান্সি’র বিপুল অস্ত্র-সস্ত্রে ভীত হয়ে অথবা ক্যাপ্টেন টিউ’র সাথে পূর্বের লড়াইয়ে দুর্বল হয়ে পরার কারনে ফতেহ্ মোহাম্মদের নাবিকের সামান্যই প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়, এবং এভারির ডাকাতেরা ৫০,০০০ পাউন্ড মূল্যমানের ধনরতেœ তাদের জাহাজ পূর্ণ করে ফেলে। মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের অত্যন্ত ভারি অস্ত্রেস¯্র—ে সজ্জিত বানিজ্যতরী গঞ্জ-ই-সাওয়াই আরও ২৫টি সাহাজের সমন্বয়ে বর্তমানের সৌদিআরব থেকে ভারতের সুরাটে আসছিলো।

ফতেহ্ মোহাম্মদকে আক্রমনের পর এভারি গঞ্চ-ই-সাওয়াই এর পিছু ধাওয়া করেন। সুরাট থেকে আট দিনের পথ বাকি থাকতে এভারি গঞ্চ-ই-সাওয়াইকে ধরে ফেলেন। যদিও গঞ্চ-ই-সাওয়াই সুসজ্জিত ছিল, কিন্তু ভীরু ইব্রাহীম খানের অযোগ্য নেতৃত্বের কারনে গঞ্চ-ই-সাওয়াই-এর নাবিকেরা ঘন্টা দুয়েক প্রাণপণ লড়াই করেও হেওে পরাজয় স্বীকার করে নেয়। এভারি এ্যামিটি’র বন্দীদের মুক্ত করেন এবং পরবর্তী কয়েকদিন হত্যা, ধর্ষণ আর লুন্ঠনের উৎসবে মেতে ওঠেন। এই লুটের সম্পদেও তৎকালীন মূল্য ছিলো ৩,২৫,০০০ থেকে ৬,০০,০০০ পাউন্ড পর্যন্ত, যার মধ্যে ছিলো ৫,০০,০০০ স্বর্ণ এবং রৌপ্য টুকরো।

কিন্তুু জ্যামাইকার গভর্ণরের কাছ থেকে সাধারণ ক্ষমা আদায় করতে ব্যর্থ হওয়ার পর এ্যাভারির ক্রুরা ছন্নছাড়া হয়ে পড়ে এবং কেউ উত্তর আমেরিকার দিকে পালিয়ে যায় আর এভারি সহ অধিকাংশই ’আইজ্যাক’ জাহাজে চড়ে ব্রিটেনে ফিরে আসে এবং আয়ারল্যান্ডের উপকুলে নামে। যদিও তার ২৪ জন সদস্য আটক হয়, অধিকাংশই নামা মাত্রই, কিন্তুু এ্যাভারিকে আর কখনও দেখা যায়নি। যাতে তার ছায়া কেও আর খুজে না পায় সে জন্য তিনি কোথায় যেতে চান এ সম্পর্কে লোকজনের কাছে বিভিন্ন এলোমেলো কথা বলে তিনি ইতিহাস থেকে হারিয়ে যান। ০৪. বার্থলোমেউ রবার্ট, পেমব্রোকশায়ার, ওয়েলস্ [জন্ম: ১৬৮২; মৃত্যৃ: ১৭২২] জন্মগত ভাবে জন রবার্টস্ বা বার্ট রবার্টস নামে পরিচিত বার্থলোমেউ রবার্টস্, ছিলেন ওয়েলসের একজন পাইরেট যিনি আমেরিকা এবং পশ্চিম আফ্রিকার উপকুলে ১৭১৯ থেকে ১৭২২ পর্যন্ত বিভিন্ন জাহাজে আক্রমন করে বেড়ান। বার্ট ছিলেন Golden Age of Piracy-তে সবচেয়ে সফল, এযুগের অন্য অনেক চেনাজানা জলদস্যু যেমন-- ব্ল্যাকবিয়ার্ড বা ক্যাপ্টেন কিডের চেয়ে অনেক বেশী জাহাজ দখল করেছেন।

বলা হয়ে থাকে, রবার্ট ৪৭০টি মতো জাহাজ দখল করে ছিলেন। পাইরেট ক্যাপ্টেন হিসেবে রবার্টের প্রথম অভিযান ছিলো তার পুরনো ক্যাপ্টেন হাওয়েল ডেভিসের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে প্রিন্সিপি’তে তার ক্রুদের নেতৃত্ব দেওয়া। রবার্টস্ এবং তার ক্রুরা রাতের আধারে দ্বিপে অবতরন করেন এবং পুরুষ জনসংখ্যার অধিকাংশকে হত্যা করে, এবং বহনযোগ্য সকল মুল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যায়। এর পরপরই, তিনি একটি ডাচ্ গিনিম্যান দখল করেন, তার দিন দুই পর ’এক্সপেরিমেন্ট’ নামে আরেকটি ইংরেজ জাহাজ দখল করেন। রবার্ট ছিলেন একজন পুরোদস্তুর পাইরেট ক্যাপ্টেন, ভালোবাসতেন ভালো ভালে কাপড় চোপড় আর স্বর্ণ গহনা, কিন্তু তার কিছু আচার আচরণ ছিলো আর দশটা দস্যুর চেয়ে একদম আলাদা, যেমন, তিনি ’রাম’-এর পরিবর্তে চা খেতে ভালোবাসতেন।

ব্ল্যাক বার্ট অন্য অনেক জলদস্যুর মতো, যেমন-- এডওয়ার্ড লুইএর মতো বন্দীদের প্রতি অতো নিষ্ঠুর ছিলেন না আবার হাওয়েল ডেভিস বা এডওয়ার্ড ইংল্যান্ডের মতো তাদের সাথে অতোটা ভালো ব্যবহারও করতেন না। রবার্ট ডেকে দাড়িয়ে থাকার সময় গ্রেপশট কামানের গোলার আঘাতে নিহত হন, গোলা তার গলায় আঘাত করে। ব্রিটিশ নেভাল অফিসার স্যার ওগলের হাতে ধরা পরার পূর্বে রবার্ট চেয়েছিলেন তার দেহ যেন সাগরে নিক্ষেপ করা হয়। তার ক্রুরা কথা রেখেছিলেন। তার দেহের সাথে ওজন বেধে তার দেহ সমুদ্রে নিক্ষেপ করা হয়।

এটা আর কখনও খুজে পাওয় যায়নি। তার মৃত্যুকে জলদস্যুতার সোনালী যুগের সমাপ্তি হিসেবে অনেকে উল্লেখ করে থাকেন। ০৫. হেনরী মর্গ্যান, গ্ল্যামরগন, ওয়েল্স [জন্ম: ১৬৩৫, মৃত্যু: ১৬৮৮] মর্গ্যান ছিলেন ওয়েলসের একজন প্রাইভেটিয়ার। প্রাইভেটিয়ার তৎকালীন সমাজে ছিলেন কোন রাষ্ট্র বা দেশ কর্তৃক নিয়োগকৃত কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন যুদ্ধজাহাজ যারা সরকারি বৈধ সনদ বলে উক্ত রাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধি কোন জাহাজকে আক্রমণের অধিকার দেওয়া হতো। মর্গ্যান পরবর্তীতে প্রাইভেটিয়ার থেকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের জলদস্যুদের সর্দারে পরিণত হন।

তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের সবচেয়ে কুখ্যাত এবং সবচেয়ে সফল প্রাইভেটিয়ারদের অন্যতম। ১৬৬৭ সালে জ্যামাইকা আক্রমই প্রতিহত করতে বিস্তারিত তথ্য জানতে মর্গ্যান কিউবার কিছু স্প্যানিশ বন্দী আটকের জন্য কমিশন প্রাপ্ত হন। এবং এর পর পরই শুরু হয় মরগ্যানের সাফল্যের জয়যাত্রা। প্রাইভেটিয়ার ছাড়পত্রধারী মরগ্যান লুটেছেন কোনরকম বাধাবিপত্তি ছাড়াই। বরং প্রয়োজনে পাশে পেয়েছেন দেশকে।

পাঁচশত সৈন্যসহ দশটি জাহাজ নিয়ে মর্গ্যান দ্বিপে অবতরণ করেন এবং পোর্ট-অ-প্রিন্স দখল করে ফেলেন এবং গুড়িয়ে দেন; অতপর পানামার সুরক্ষিত এবং সমরাস্ত্রসজ্জিত পোর্তোবেলো শহরও দখল করে নেন। বলা হয়ে থাকে মর্গ্যানের সৈন্যরা তৃতীয় এবং সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গটি দখলের সময় বন্দী যীসুইটদের (রোমান ক্যাথলিক সোসাইটি অব জেসাস, স্প্যানীয়ার্ড সেন্ট ইগনাশাস লয়োলা কর্তৃক ১৫৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এক ধর্মীয় গোষ্ঠী) মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছিল। এতে প্রচুর লোক হতাহত হয়েছিল। তিনি সান্তা কাতালিনা দ্বিপটি ১৫ই ডিসেম্বও ১৬৭০ সালে পুনরুদ্ধার করেন এবং ২৭ ডিসেম্বর প্রায় তিনশত সৈন্যকে হত্যার পর চ্যাগ্রেস প্রাসাদ জয় করেন। মরগ্যান জলদস্যুতার এক স্বর্ণযুগে জন্মগ্রহণ করেন।

তিনি ইংল্যান্ড এবং এর শত্র“দের মধ্যকার দন্দকে সুন্দরভাবে কাজে লগিয়ে ব্যাক্তি মরগ্যান, তার বাহিনী এবং সামগ্রিক ইংল্যান্ডকে ধনসম্পদে সমৃদ্ধ করেছেন। তার মৃত্যুর পর অনেকেই তার দেখানো পথে হেটেছে। কিন্তু তার মতো সাফল্য আর কারও ভাগ্যে জোটেনি। সরকারি আজ্ঞাবাহ মরগ্যান হলেন গুটিকয়েক সৌভাগ্যবান দস্যুর অন্যতম যারা ভুরি ভুরি সাফল্য নিয়েই জলদস্যুতা ছেড়ে অবসরে যেতে পেরেছেন তেমন কোন আইনগত বাধাবিপত্তি ছাড়াই। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.