আনন্দবতী মেয়ে আমি হাওয়ায় উড়াই চুল,চোখের ভেতর ছলাৎ ছলাৎ মনের ভেতর নীল ঘাসফুল বেশ কিছুদিন থেকে বড়ো অস্থিরতা গ্রাস করেছে । কিছু কিছু ভাবনারা বড্ড বেশী জ্বালায় , এর চেয়ে অনেক কঠিন চিন্তাও নাড়া দিতে পারেনা । তখনি বুঝলাম হাল্কা অনেক জিনিসও কখনো-সখনো বেজায় ভারী হয়ে যায় । ছোট যখন ছিলাম , বড়ো হবার কি যে তাড়া । আর এই যে বড়ো হয়ে গেছি , কই আর তো ইচ্ছে করেনা সামনে যেতে ? মনে হয় পেছনের পথে যেতে , যতো ভুল ছিলো তার সবকিছু আবার শুদ্ধ করে নিতে ।
আমি না আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে কথা বলতে খুব বেশী ভালোবাসতাম । প্রতিবিম্বকে বলতাম , এই হাসি দে তো ? কতো রকমের যে হাসি দিতো সে । কাঁদতে বললে কিছুতেই কাঁদতো না । মেজাজ গরম হয়ে যায়না ? কেমন লাগে , আমারই প্রতিবিম্ব আমার কথা শুনছে না !
ধ্যত্তেরিকা কি যে ছাইপাশ লিখছি ! আসলে আমি গম্ভীর কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইছিলাম । ওরে বাবা আলোচনা ? সে তো ভয়ঙ্কর ! অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করার আগে আলোচনা অনুষ্ঠান হতো ।
মানুষ যে কি আনন্দ পায় বক্তৃতা দিতে । ভেবেও দেখেনা কতোজন বকছে আর কতোজন ঘুমোচ্ছে । না , না আলোচনা নয় । এমনিতেই আমি মহা অগম্ভীর মানুষ । চব্বিশ ঘন্টা যদি কেউ বলে হাসতে দাঁত কেলিয়েই রাখতে পারবো ।
আমার বন্ধুরা আমার হাসি নিয়ে বড়োই শঙ্কিত ছিলো । চিন্তা করা যায় কি ভয়ানক ব্যাপার !
আজ কি হলো , বলছি । দুপুর দেড়টায় আমার কেরী নামের একটি মেয়ের সাথে টিমহর্টন কফি শপে দেখা করার কথা । কিন্তু গতকাল রাতে বেজায় বমি হলো , সে যে কি অসহ্য ! আমার প্রিয় বান্ধবী বললো কানাডায় নাকি একধরণের ফ্লু এসেছে কেবলই বমি হয় । বুঝলাম এই ফ্লু আমার প্রেমে পড়েছে ।
সহজে যাবে না । যা খেয়েছিলাম সব বমি করে খুব ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি । দুপুর বারোটায় ঘুম ভাঙ্গলো । এদিকে পেট খালি , কোনোরকমে একটা ডিম খেয়ে তারপর ঔষধ নিলাম । এরপর স্নানে গেলাম ।
তাড়াতাড়ি প্রস্তুত হয়ে বের হলাম । একবার ভেবেছি বাতিল করে দেই ফোন করে । খুব বেশী খারাপ লাগছিলো । কিন্তু কেরী এতো বেশী ব্যস্ত যে আর এপ্রিল মাসের আগে দেখা পাওয়া যাবে না । কানে আইপড লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে পথে নামলাম ।
এই আইপড ছাড়া আমি খুবই অসহায় ।
ওহ আইপড নিয়ে কিছু কথা বলে নেই । যখন কলেজে পড়তাম তখন ছিলো ওয়াকম্যান । টাকা জমিয়ে কিনেছিলাম । সে যে কি আনন্দের নিজের জমানো টাকা দিয়ে কিছু কেনা ।
যাক আইপড পেলাম ২০০৪ এর ২৮ আগষ্ট জন্মদিন উপলক্ষে আমার স্বামী অমি’র থেকে উপহার । ইস কি যে আনন্দ ! গান আমি পথ হাঁটা , উপরে খোলা আকাশ---আহ আর কি চাই জীবনে ? সবকিছু ভুলে যাই যখন পথে নামি আর কানে বাজে গান । যাক আমার নতূন আইপডে সব রবীন্দ্রসঙ্গীত দিয়ে ভরে নিলাম । সকালে যখন কাজে যেতাম গান শুনতাম আর ট্রেনে উঠে চোখ বন্ধ করে (সে দাঁড়িয়ে হোক কিংবা বসে) মনের জানালা সবটুকু খুলে রবির গানের অনুভূতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ধারণ করতাম । কিন্তু যা হতো বেশীরভাগ সময়ই ষ্টেশন পার করে চলে যেতাম ।
কাজ থেকে ফেরার সময় এমন অন্যমনষ্ক হলে ক্ষতি নেই , কিন্তু কাজে যাবার সময় এমন ভুল , বেতন থেকে বেশ কিছু টাকা চলে যাওয়া । শেষ পর্যন্ত বাধ্য হলাম “চুরা লিয়া হ্যায় তুমনে জো দিলকো” থেকে হাল জমানার “ম্যায় হু না”, “Hello” , “I just called” ইত্যাদি পাঁচমিশালী ধুম-ধাড়াক্কা গান Upload করতে । তাতে সুবিধে হলো এটুকুই গান চলছে আর আমি ঝিমুচ্ছি , তবে ঠিক ষ্টেশনে পৌঁছাতে পারছি । রবির গানে ভাবনার প্রতিটি কণা নিমজ্জিত হয়ে যায় আবেগের সর্বোচ্চ স্থানে , অন্যদিকে এসব গান ভাবনা কে খন্ড-বিখন্ড করে ফেলে । যাক আমি গবেষক নই , আর এখানে এসব আলোচনা করতেও বসিনি ।
অল্প করে এই হলো আমার আইপড কাহিনী ।
তো কানাডায় এলাম স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্যে ২০১১ এর ৩০ জানুয়ারীতে । আর যে শহরটিতে এলাম , সেখানে নীরবতার সাথে মন পেতে বসবাস । ছিমছাম ছোট্ট এই শহরটির রূপ শীতের সময় অসহ্য , কিন্তু গ্রীষ্মে অপূর্ব । তবে একদিন চারিদিকে বরফ ঢাকা পথ ধরে পা চালালাম অজানা পথে , তুষার ভিঁজিয়ে দিচ্ছিলো , এমন সময় একটি ছোট্ট পথ পেলাম ।
খুব মন কেমন করা , মনে মনে যেনো আমার পাশে স্বপ্ন-মানুষ । ইস ওই একটু সময়ের মধ্যেই সেই না দেখা মানুষটিকে নিয়ে কতো কতো স্বপ্ন রচনা করা । আরে আবেগে ডুবে গেলে যা হয় আর কি ! তবে পথটি আমাকে এখন আর টানেনা । কারণ এরপর আরোও অনেক গিয়েছি , ঠিক সেই সময়ের অনুভূতি কেন জানি কিছুতেই অনুভব করতে পারিনি । আচ্ছা তার মানে কি ? উত্তরে বের করলাম , স্বপ্নেরই বদল হয় ।
একই স্বপ্ন নিয়ে চলা যায় , কিন্তু অনেক যন্ত্রণা পোহাতে হয় । আর আমি যে আনন্দবতী , যন্ত্রণা সহ্য করতে গেলেই ভুগতে হবে ।
তোমাকে নিয়ে অনেক ইচ্ছে ছিলো ইচ্ছেদের
তোমায় নিয়ে সরু পথ ধরে পাহাড়ের চূড়োয়
জোনাক জ্বলা মায়াবী রাত্রির চাদর পড়ে
তোমাকে সঙ্গী করবে
কবিতা আর গান ইচ্ছেমতো তোমার ঠোঁটে নিজেদের মেলে ধরবে
মেঘেদের দল মাথার ওপর
টাপুর-টুপুর বৃষ্টির জল
ধুত্তুরি ছাই বলছি যে কি
এখন যে ইচ্ছেগুলো বেঘোরে নাক ডাকছে
তোমাকে আর ভাবতে চায় না ওরা...
এন্টিগোনিশ , কানাডা
২৯ মার্চ , ২০১১ ইং ।
**প্রায়ই একা একা হাঁটি আমি নাম-না-জানা অনেক অনেক পথ ধরে...সেসবই তুলে ধরলাম নিজের ডায়েরী থেকে..যদি ভালো লাগে সকলের , তাহলে পরবর্তীতে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে**
ক্রমশ... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।