আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশের বেকারত্বের সমাধান কি?

আপনার আগমন শুভ হোক। আমাদের ছোট্ট একটি দেশ নাম বাংলাদেশ। এদেশে প্রায় দেড় কোটি সক্ষম লোক বেকার। এই বেকারদের মাঝে এসএসসি বা এইচএসসি পাশ বেকারের সংখ্যাই বেশী। আবার সাধারণ স্নাতক (বিএ, বিকম. বিএসএস) বেকারের সংখ্যাও কম নয়।

চাকুরীর বাজারে এই সব শিক্ষিতদের কোন দামই নেই। যেখানে সাধারণ একটা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকের চাকুরীর জন্য এখন মাষ্টর্স ডিগ্রিধারীরা লাইন ধরে আবেদন করছে। সেখানে এসএসসি, এইচএসসি, বিএ, বিকম, বিএসএস যারা তারা কি করবে? আবার প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকের চাকুরীর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মৌখিক পরীক্ষার জন্য ১/২ লাখ টাকার একটা অংক রেডি রাখতে হয়। তা কি সবার পক্ষে সম্ভব? ডাক্তার, ইজ্ঞিনিয়ার, ফার্মাস্টি, আর্কিটেক্ট, ডেনটিস্ট, মেরিন ইঞ্জিনিয়ার, এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়। সোনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী তে যোগ দেওয়া তো সোনার হরিণের চাইতেও বেশী।

বিসিএস অফিসার এটা এখন আর অনেকে কল্পনাও করে না। বর্তমান চাকুরীর বাজারে বিবিএ, এমবিএ-র চাহিদা বেশী। এসব ডিগ্রি অর্জন করা অনেক ব্যয় বহুল। সবার পক্ষে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া সম্ভব নয়। আবার বে-সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে অনেক খরচের ব্যাপার যা অনেকের পক্ষে সম্ভব হয় না।

এসএসসি, এইচএসসি, বিএ, বিকম, বিএসএস অর্জন করা অনেক সহজ। অথচ এদের কোন দামই নেই। তা হলে এসব ডিগ্রি অর্জনকারীরা কি করবে? এদের ৯৫% বেকার থাকবে। আর ৫% কোন না কোন সুপারিশে চাকুরীতে ঢুকে যাবে। কিংবা ১/২ লাখ দিয়ে প্রাইমারি স্কুলে ঢুকে যাবে।

এবার আসি মূল কথায়, এসএসসি, এইচএসসি, বিএ, বিকম, বিএসএস এসব ডিগ্রি অর্জনকারীদের এক বিরাট অংশের সাথে মাষ্টর্স ডিগ্রিধারীদের এক অংশ বর্তমানে তাদের বেকারত্ব নিরসন কল্পে দেশে বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের উদ্যোগে কোচিং সেন্টার, কিন্ডারগার্টেন স্কুল, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি, এনজিও, বীমা প্রতিনিধি, বিভিন্ন কোম্পানীর মার্কেটিং এ (সিগারেট, পানীয় বিপনন ইত্যাদি) কাজ করে পেট চালাচ্ছে। আবার কেউ কেউ মাল্টি লেবেল (এমএলএম) মার্কেটিং কোম্পনীতে কাজ করছে। আমার মনে হয় দেশের বেকারত্বের ৯০% ভাগই এসব কাজ করছে। যারা ভাল চাকুরী করছে বিশেষ করে সরকারী চাকুরী ,ব্যাংক জব, টেলিকম, আইটি, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং তারা উক্ত ৯০% কে পছন্দ করছে না অর্থাৎ তাদের কোন সম্মানই করছে না। পত্র পত্রিকার যত খবর ওই ৯০% এর কর্মক্ষেত্র নিয়ে।

যেমন- কিন্ডারগার্টেন নিয়ে অনেক লেখা লেখি হয়। দেশে ৪৪ হাজার কিন্ডারগার্টেনে ৫ লাখের বেশী ছেলে মেয়ের সাময়িক কর্মসংস্থান হয়। সামপ্রতিক পত্র পত্রিকার হিসাব মতে এমএলএম কোম্পনীতে কাজ করছে ৫০ লাখের বেশী ছেলে মেয়ে, বীমা এবং কো-অপারেটিভ গুলোতে আছে ২ লাখের মত, ভোগ্য পন্যের মার্কেটিং-এ আছে ৫০ হাজারের মত, কোচিং-এ আছে ২৫ হাজারের মত, এনজিও-তে আছে ২৫ হাজারের মত। এবার ভিন্ন আলোচনা, ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে ওঠা কিন্ডারগার্টেন গুলো বন্ধ করে দিলে ৫ লাখ বেকার কোথায় চাকুরী খুঁজবে? কিংবা এমএলএম ব্যবসা বন্ধ করে দিলে ৫০ লাখ বেকার কোথায় যাবে? ক’বছর আগে যুবক (যুব কর্ম সংস্থান সোসাইটি) নামে একটি এনজিও সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। শুনেছি ওই সময়ে সরকারের এক প্রভাবশালীর রোশানলে পড়েছিল ওই প্রতিষ্ঠানটি।

একটি টিভি চ্যানেলের শেয়ার নিয়ে তার সাথে দ্বন্দ্ব চলতে থাকলে এক পর্যায়ে যা হবার তা হয়েছে। সরকার ওই প্রতিষ্ঠানটির শত শত কোটি টাকার সম্পত্তি একটি কমিশন গঠন করে অধিগ্রহন করে ফলে লাখ লাখ গ্রাহক তাদের আমানত ফেরত পায়নি। কমিশনের লোকেরা ভাগ বাটোয়ারা করে সেই সম্পদ নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে নিয়েছে। আর বিল ভাউচার করে বসে বসে খাচ্ছে। এদিকে ওই প্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত ছিল তারা চাকরীতো হারালোই সেই সাতে গ্রাহক টাকার জরিমানা দিতে হল।

কেউ কেউ পালিয়ে আত্মরক্ষা করলো। কেউ আত্মহত্যার পথ বেচে নিল আবার কেউ মানসিকভাবে ক্ষতি গ্রস্থ হয়ে পাগল হয়ে রাস্তায় ঘুরতে দেখা গেল। প্রশিকা সহ অনেক এনজিও একই কারনে বন্ধ হয়ে গেল আর আমরা উপহার হিসেবে পেলাম এক ঝাঁক তরুন বেকার। গ্রাহকরা হারালো তাদের জমানো টাকা। এসব প্রতিষ্ঠান গুলোর ক্ষেত্রে সরকারের যা করনীয় তা না করে সরকারের মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং অন্যায় সিদ্ধান্ত নেয়।

আমার মনে হয় এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সময়ে সময়ে নীতিমালা পরিবর্তন করে কিংবা নীতিমালা প্রনয়ন করে তাদের ওই নীতিমালায় আনা উচিত এবং সেই নীতিমালা যথাযথভাবে পালিত হয় কিনা তা প্রতি তিন মাস পর পর তদন্ত করা উচিত তাতে গ্রহকরা হয়রানির শিকার হবে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানগুলোও সঠিকভাবে পরিচালিত হবে। সরকার যদি স্বল্প সুদে শিক্ষিত বেকারদের লোন দেয় তাহলে তারা স্বনিয়োজিত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। সরকার তা না করে তারা যা করছে তাতে খড়গ হস্ত হচ্ছে। এমনটি হওয়া অমানবিক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.