আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রমযান।

মানবিক, যৌক্তিক আর অযৌক্তিক। সোজা কথা আরেকটা মানুষ। দশ জনের ভীরে ডুবে থাকার প্রানান্ত চেষ্টায় থাকা মানুষ। একদিনের বাসী রমযানের চাঁদের দেখা পাওয়া লাগেনা। সেহেরির প্রস্তুতি নেয়া লাগে।

হাসেম আলী বাসার কাজের ছেলেকে পাঠান বাজারের সবচেয়ে বড় মাছটা কিনতে। হাসেম আলীর স্ত্রীর আবার খাসী পছন্দ, তাই ফর্দে তিন কেজি খাসীর মাংস- ও ওঠে। ছেলে ডাক দেয় গরু গোশ খাবে। কালো ভুনা। ফর্দে আরও ওঠে দু’ কেজির ফরমায়েশ।

মেয়েটার এই সব খাই খাই ভালো লাগেনা। গরু-খাসি-মাছ এর একটা হলেই হোল। নতুন করে দুম্বা অথবা হরিন ফর্দে দেবার দরকার পড়েনা আর। ও ব্যাস্ত ওর নতুন কাপড়ের ডিজাইন নিয়ে। শহরের সবচে সেরা টেলার ওর জামা তৈরি করবে।

দু পেরিয়ে তিন রোজা আসলেই যে সব শেষ! ইহকাল-পরকাল সব যাবে। হাসেম আলি বেশী ইমানদার লোক। সমাজসেবী, তার অন্তর আর পেট এক সমান। নদীর বিশালতা আর প্রাচীন কুয়োর গভীরতা সম। এমন লোকের সেহেরী হতে হয় রাজসিক।

রোযাদিনে ক্লান্ত হওয়া বারন তার। তাই ইচ্ছের বিরুদ্ধে উট হয়ে ওঠেন হাসেম আলী। সেহেরীতে আগামী পনের ঘণ্টার যোগান নিয়ে রাখতে হবে। বিশাল পরিশ্রম। অতি দুরুহ কাজ।

দুই গামলা ভাতে, এক প্লেট কালোভুনা, এক প্লেট খাসীভুনা আর তিন পিস কোরাল মাছ নিয়ে আল্লাহ্‌-র নাম নিয়ে শুরু হয় হাসেম আলীদের সিয়াম সাধনা। বাজারে গিয়ে বেছে বেছে মাছ-মাংস আনা ছেলেটার নাম আবু। আবু তখন রান্নাঘরে, হাসেম আলীর উচ্ছিষ্ট ভোগের আশায়। রাজা- বাদশাহেরা খাওয়া শেষ না করলে প্রজাদের ভাগ নেয়া নিষেধ। এতে পাপ হয়।

এই পাপ গায়ে নিয়ে রোযার সওয়াব আশা কঠিন ব্যাপার। আবু তাই নিঃশঙ্ক হয়ে অপেক্ষা করে সেহেরীর। ওরা ভুলে গেলেও ক্ষতি নেই। পানি খেয়ে দুদিন কাটিয়ে দেয়া আবুর জন্যে এ কোন সমস্যা না। গত বছর হাসেম আলীর ছেলের ফেলে দেয়া শার্টে ঈদ কেটেছে।

এবারো কাটবে। এখানেও নিশ্চিন্ত আবু। বরং; নামায টা পড়ে ঘুম দেয়াতেই মনোযোগী হয়ে ওঠে ছেলেটা। বাবুসাহেব বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ। তার এই রোযার সময়ে চুলকানি ওঠে।

মেজাজ খারাপ থাকে। এই সময়ে কোন আন্দোলন করা যায়না। সব কেমন শান্ত- সুন্দর। বাবু সাহেবের এই শান্তি পছন্দ হয়না। তিনি প্রতিরাতে সেহেরীতে ওঠেন।

মুখ বেজার করে সেহেরী খান। আর এক মাস পরে যাতে জগত উদ্ধার করতে পারেন সেই দোয়া করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন। তার ঘুম ভাঙ্গে একেবারে ইফতারির সময়। তিনি আবার মুখ বেজার করে ইফতারি করেন। আবার এক মাস পরে সৌরজগত উদ্ধারের দোয়া করতে করতে সেহেরীর জন্যে ঘুমিয়ে পড়েন।

খুবই ধর্মভীরু লোক। তিনি জেগে থাকলেই অশান্তি হতে পারে ভেবে, দেশের তথা জগতের শান্তির জন্যে ওই ঘুমিয়ে আর খেয়েই মাসটা পার করেন। নিঃসন্দেহে অত্যন্ত ভালো লোক। ইদ্রিস চাকরিজীবী। এই মাস তার খুব বেশী ভালো কাটে।

ছাপোষা জীবনে সেই স্কুল বেলার স্বাদ পাওয়া যায়। সারা বছর না দেখা বিকেল দেখে ঘরে ফেরা যায়। একসাথে পুরো পরিবার মিলে ইফতার করা যায়। মাঝে মাঝে পকেটের দিকে না তাকিয়ে এক-আধা কেজি হালিম কিনে মা-বাবা- বোন- ভাইয়ের সাথে তারিয়ে তারিয়ে খাওয়া যায়। নামাজে গেলে অমাবস্যার চাঁদ বন্ধুদের দেখা মেলে।

নিউরনে পুরনো স্মৃতির অনুরণন সে বড় অদ্ভুত অনুভূতি। বোনাসের টাকা পেয়ে ভবিষ্যৎ চিন্তা না করার স্বাধীনতা দেয় এই মাসটা। পেয়েই ফুড়ুৎ। বাবা-মা- বোন- ভাই; এক আধটু ছোট ছোট ফিরিস্তি। হালকা- বকা-ঝকা।

বাজেটে ঘাটতি, ঘাটতির বাজেট। অবশেষে আনন্দ মুখে বাড়ী ফেরা। এইতো, হাসি আনন্দের, চেপে থাকা দুঃখের অথবা ওই পাড়ে থাকা স্বজনকে বেশী বেশী মনে পড়া একটা মাস। ধনী-গরীব; মধ্যবিত্ত সকল শ্রেণীর মানবিক হবার একটা মাস। অসাধারণ একটা মাস।

ভন্ডামি করে হলেও ভালো হয়ে থাকা, ভালোবাসার একটা মাস। সত্যিকারের ধর্মপ্রাণ হোক আর ধর্ম নিয়ে খেলাকরাদের হোক। সবার জন্যেই ভালো একটা মাস। সবাইকে মাহে রমযানের শুভেচ্ছা। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।