বল আমায় সেই সময়ের নেই কেন অস্তিত্ব, বোঝাও আমায় সেই কল্পনার নেই কোন সমাধান.....আমারি স্বপ্ন আজো জেগে রয় আধারো শুন্য চোখে ... বাহরাইনের ‘ট্রি অব লাইফ’ নামে ব্যাপক পরিচিত এই গাছটির বয়স চারশ’ বছর পেরিয়ে গেছে। পানিশূন্য মরুভূমিতে এতগুলো বছর যে পার করেছে, তার কোন চিহ্নই নেই পাতায় পাতায় ভরা এই গাছটিতে। ঊষর মরুর বুকে অবিরাম জীবনের জয়গান গেয়ে চলেছে নিঃসঙ্গ এই গাছটি...
দি গন্ত বিস্তৃত মরুভূমি। কোথাও এতটুকু মাটি বা পানির চিহ্ন নেই। শুকনো, খটখটে এই মরুভূমির বুকে ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে ৩২ ফুট উঁচু বিশাল একটি গাছ।
না, এ কোন রূপকথার চিত্র নয়, মধ্যপ্রাচ্যের দেশ বাহরাইনের জেবেল দুখান শহরের দু’কিলোমিটার দূরে গেলেই এ দৃশ্য চোখে পড়বে আপনার। ‘ট্রি অব লাইফ’ নামে খ্যাত এই গাছটির বয়স চারশ’ বছর পেরিয়ে গেছে। পানিশূন্য মরুভূমিতে এতগুলো বছর কী করে গাছটি বেঁচে আছে তা এক রহস্যই বটে। বৃষ্টিহীন পরিবেশে এতে নিয়মিত পাতা গজাচ্ছে। এত বয়সেও জরার কোন চিহ্নই নেই পাতায় পাতায় ভরপুর এই গাছটিতে।
ঊষর মরুর বুকে জীবনের জয়গান গেয়ে যাচ্ছে যেন গাছটি। অলৌকিক এই দৃশ্য যুগ যুগ ধরে মানুষকে বিস্মিত করে আসছে। পুরোপুরি কুসংস্কারমুক্ত, প্রবল বিজ্ঞানমনস্ক মানুষও এই গাছটি দেখে অবাক হবেন, তার যুক্তিবাদী মন কিছুটা হলেও হোঁচট খাবে।
স্থানীয় লোকজনের দৃঢ়বিশ্বাস, এই গাছটিই ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত স্বর্গীয় উদ্যানের (গার্ডেন অব ইডেন) সেই ‘ট্রি অব লাইফ’। এর আছে অদ্ভুত কিছু ক্ষমতা।
স্থানীয়দের কেউ কেউ এই গাছটি ঘিরে মন্ত্রতন্ত্রের চর্চা করে থাকে। এই বিস্ময়কর গাছটি দেখতে তাই প্রতিদিনই দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকেরা বাহরাইন যাচ্ছে। পর্যটকদের জন্য সেখানে নানা রকম সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। গাছের নিচে বসার জন্য বেঞ্চ বানিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নিকটবর্তী জেবেল দুখান শহরে হোটেল ব্যবসাও জমে উঠেছে।
গাছটির বংশ পরিচয় ঘাঁটলে দেখা যায় এটি সুদূর আমেরিকার মেসকুইট জাতের গাছ। আর মেসকুইট গাছের বৈশিষ্ট্যই হলো এর দীর্ঘ মূল। ভূপৃষ্ঠের ১৬০ ফুট গভীর পর্যন্ত সঞ্চারিত হতে সক্ষম এই গাছের মূল। ফলে মাটি থেকে প্রয়োজনীয় রস সংগ্রহ করে নিতে এর কোন সমস্যা হয় না। সম্ভবত এখানেই নিহিত রয়েছে ঊষর মরুর বুকে এই গাছের দীর্ঘকাল বেঁচে থাকার রহস্যের উত্তর।
উত্তর আমেরিকার মরুভূমিগুলোতে তিন ধরনের মেসকুইট গাছ দেখা যায়। অত্যন্ত প্রতিকূল আবহাওয়ায় বেঁচে থাকতে সক্ষম এই গাছ। এর দীর্ঘ মূল মাটির গভীর থেকে রস নেয়ার পাশাপাশি কিছু ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে সাহায্য করে যেগুলো তাকে প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেনের যোগান দেয়। আর এই নাইট্রোজেনই হচ্ছে উদ্ভিদের প্রধান খাদ্য। খুব শুষ্ক মৌসুমেও মেসকুইটের পাতা বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প শুষে নিতে পারে।
এর সুগন্ধি ফুল মৌমাছিসহ পোকা মাকড়কে আকর্ষণ করে, ফলে পরাগায়ণ দ্রুত হয়। এর শক্ত বিচি দীর্ঘকাল সংরক্ষণ করা যায়।
পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কবে এই মেসকুইট গাছের উদ্ভব ঘটেছিল তা বলা কঠিন, তবে বিজ্ঞানীরা সেই বরফ যুগে বিচরণকারী এক প্রকার তৃণভোজী প্রাণীর ফসিল হয়ে যাওয়া মলেও মেসকুয়েট গাছের বীজ খুঁজে পেয়েছেন। এতই যার বেঁচে থাকার ক্ষমতা, সেই গাছ আরও কয়েকশ’ বছর বাহরাইনের মরুর শোভাবর্ধন করলেও করতে পারে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
ইত্তেফাক ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।