হাই টান টান উত্তেজনা ক্লাসে। উবু হয়ে বসে রোল-কলের খাতা খুলে সেদিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন মন্দীরা আচার্য। তারপর একসময় বললেন, ‘আশীষ। ’
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সবাই তাদের পাঠ্যপুস্তক বন্ধ করল। আমি উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলাম ব্ল্যাকবোর্ডের দিকে।
তারপর কেন জানি বললাম, ---
‘মন্দীরা ম্যাডাম, খুব সুন্দর লাগছে আজ আপনাকে। ’
মন্দীরা ম্যাডাম চশমা খুলে তাকালেন আমার দিকে।
‘এবার শুরু করো, আশীষ। ’
নাকের শিকনি টেনে আমি শুরু করলাম, ‘আপনার চুলের বাহারটিও দারুণ। এক্কেবারে নিখুঁত।
’
উঠে দাঁড়িয়ে জানালার পাশে এসে দাঁড়ালেন মন্দীরা ম্যাডাম ।
‘আশীষ তুমি কি পড়া করে আসোনি আজ?’
আমি-‘একদম ঠিক ধরেছেন!’ প্রবল উৎসাহ নিয়ে বলতে শুরু করলাম আমি। ‘আপনার কাছে কেউ কিছু লুকবে, সে ক্ষমতা আছে নাকি কারোর! এত দিনের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা বৃথা যেতে তো পারে না!’
মুচকি হেসে মন্দীরা ম্যাডাম বললেন, ‘আশীষ! শোনো, ম্যাপে দেখাও দেখি আমাদের শহরটা কোথায়?’
হাতে ধরা ছড়ি দিয়ে অনির্দিষ্ট এক জায়গা নির্দেশ করলাম আমি।
‘নিজের ডেস্কে গিয়ে বসো। ’ বললেন মন্দীরা ম্যাডাম ।
…’
বিরতির সময় আমি ইন্টারভিউ দিচ্ছিলাম সহপাঠীদের…
‘সবচেয়ে বড় কথা হল, এই মহিলার চোখে ধুলো দিতে হবে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে…’
ঠিক সেই সময়ে মন্দীরা ম্যাডাম হেঁটে যাচ্ছিলেন পাশ দিয়ে। সেদিকে তাকিয়ে আমি বললাম অবজ্ঞার সুরে, ‘ব্যাপার না! এই বোকা মহিলাটা একেবারেই কালা। দুই ধাপ দূরের কথাও শুনতে পায় না। ’
থমকে দাঁড়িয়ে মন্দীরা ম্যাডাম এমনভাবে তাকালেন আমার দিকে যে আমি জেনে গেলাম, এই বোকা মহিলা দুই ধাপের চেয়ে বেশি দূরের কথাও শুনতে পান।
ঠিক পরদিনই মন্দীরা ম্যাডাম আবার আমাকে ডাকলেন ব্ল্যাকবোর্ডে।
ভয়ে সাদা হয়ে গেলাম আমি। ভাঙা ভাঙা গলায় বললাম, ‘আপনি তো গতকালই আমাকে ডেকেছিলেন!’
‘আমার আবার ইচ্ছে করছে। ’ কপাল কুঁচকে বললেন মন্দীরা ম্যাডাম ।
‘আপনার হাসি তো রীতিমতো চোখ ধাঁধানো!’ কাঁপা কাঁপা গলায় কথাটা বলেই আমি নীরব হলাম।
‘আর কি?’ শুষ্ক কণ্ঠে প্রশ্ন করলেন মন্দীরা ম্যাডাম ।
‘আপনার গলার স্বর খুব মিষ্টি। ’ কোনোমতে বলতে পারলাম আমি।
‘হুম্,’ মন্দীরা ম্যাডাম বললেন। ‘আজও পড়া করে আসোনি। ’
‘আপনি তো দেখছি সবই বোঝেন! সবই জানেন!’ আমি বলতে শুরু করলাম অলস স্বরে।
‘কেন যে আপনি স্কুলে চাকরি করছেন! আমার মতো গবেটদের পেছনে ক্ষয় করছেন নিজের শরীর-স্বাস্থ্য। সমুদ্রতীরে বিশ্রাম নিতে যাওয়া উচিত আপনার। উচিত কবিতা লেখা, উপযুক্ত জীবনসঙ্গী খুঁজে পাওয়া…। ’
মন্দীরা ম্যাডাম মাথা নিচু করে চিন্তামগ্ন ভাবে পেনসিল দিয়ে এলোমেলো আঁকছিলেন কাগজের ওপরে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচু গলায় তিনি বললেন, ‘নিজের ডেস্কে গিয়ে বসো, আশীষ।
শিক্ষাব্যবস্থায় প্রচলিত নম্বরদানপদ্ধতি অনুযায়ী: ৫ – অসাধারণ, ৪ – ভালো, ৩ – মোটামুটি, ২ – খারাপ…
আমায় মন্দীরা ম্যাডাম কত দিলেন বলে মনেহয় ! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।