জুমার নামাজ পড়তে এসেছিলো, আমাকে দেখে ছেলেটি বললো "বাঙ্গালী" ? বললাম হ্যাঁ । এরপর শুরু হলো আলাপ । বয়স এখনো ১৮ বছরের নীচে, মানে আন্ডারএইজ । কোন এক গ্রুপকে ৮ লাখ টাকা দিয়ে ইউরোপে ডুকেছে সে । প্রথমে তাকে নিয়ে আসে ডুবাই, ওইখানে রাখে একমাস, এরপর নিয়ে আসে তুরষ্ক, ওইখানে থাকে একমাস।
ওইখান থেকে গ্রীস । এরপর দায়িত্ব শেষ ওই গ্রুপের । এইখানে ওইখানে করতে করতে এখন দুইবছর হয়ে গেছে তার। এখনো মেলেনি কাজ করার অনুমতি । কোন এক এজাইলাম সেন্টারে আছে এখন।
কতৃপক্ষ কখন কি ধরণের সিদ্ধান্ত নেয় তাকে নিয়ে তাও জানে না সে। ইন্টার পাশ করেছিলো দেশে। তারপর অনেকের কাছে জানতে পারে কোনভাবে ইউরোপ ডুকতে পারলেই কেল্লাপতেহ । যেমন আমিও শুনেছিলাম কোনভাবে আমেরিকা ডুকতে পারলেই হলো । কিন্তু ওই দেশে গেলেই জানা যায় আসল কাহিনী কী ।
সে বললে একেক টা ধাক্কা খেয়ে খেয়ে জানা যায় অনেক কিছু। তার পরিবার নানান ভাবে যোগাড় করেছিলো ওই টাকা, কিন্তু গত দুই বছরে সে একটাকাও পাঠাতে পারেনি দেশে।
অনেকেই অনেক টাকা পয়সা খরচ করে ওইভাবে বিদেশ পাড়ি দেয়, কিন্তু কোনভাবে ইউরোপ আমেরিকা ডুকতে পারলেই সব শেষ না। কোন ধরণের ভিসায় আসলেন, সেইটাই আসল কথা। টুরিস্ট ভিসায় এসে ইউরোপ, আমেরিকায় সারা জীবন থাকা যায়না, কোন কাজ করা যায়না ।
আবার কোনভাবে অবৈধ হয়ে গেলে তো অবস্থা খুবই খারাপ। কারণ অবৈধ হলে আইনত আপনি কোন কাজ করতে পারেন না । কেউ রিস্ক নিয়ে, আপনাকে গোপনে কোন কাজ দিলেও দিতে পারে তবে সেই ক্ষেত্রে বেতন হবে ওর ইচ্ছার উপর। আবার সে যদি কাজ শেষে আপনাকে কোন টাকাকড়িও না দেয়, আপনি এর প্রতিবাদ করতে পারবেন না। কোথায় গিয়ে প্রতবিাদ করবেন ? আপনি তো পুলিশ কে গিয়ে বলতে পারছেন যে আপনি কাজ করেছেন ।
ইউরোপ আমেরিকায় রাস্তায় পুলিশ আপনার পরিচয় জানতে চায় না যতক্ষন না আপনি কোন ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়েন । কিন্তু এখানকার জীবন-যাপন এমন যে সবকিছুতেই আপনার আইডি লাগে। রেলের টিকিট কিনবেন তো আপনার ব্যংক আইডি লাগবে, কিন্তু আপনি আপনি অবৈধ হলে ব্যংক একাউন্ট খোলতে পারবেন না। এইভাবে আপনি অবৈধ হলে কোনকিছুতেই আপনি নিজেকে শো করতে পারছেন না। আবার আপনি যদি উচ্চ ডিগ্রিধারী হন, তাহলে আপনি অবশ্যই চাইবেন একটা ভালো কাজ করবেন সেই ক্ষেত্রে অবৈধ হলে তো আপনার এই ডিগ্রি শো করে কোন কাজ খোঁজতে পারবেন না কারণ আইনত আপনাকে কেউ কাজ দিতে পারেনা ।
একেক দেশে একেক আইন, এইগুলো কেউ না জেনে না বুঝে অনেক টাকা পয়সা খরচ করে বিদেশে চলে আসে। ইউরোপে অনেকে আপনাকে চাকুরীর ভিসা দিলে জানতে হবে ওইটা কেমন চাকুরী । কারণ ইউরোপ বা আমেরিকায় বিদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে আইন আছে। যারা আপনাকে চাকুরী দিকে ওই প্রতিষ্ঠানকে প্রমাণ করতে হবে যে ওরা যে পদে লোক নিবে ওই পদের জন্য ওদের দেশে কোন লোক পাওয়া যায়নি তাই বিদেশ থেকে লোক আনতে হচ্ছে। ওইটা প্রমাণ করা কি অত সহজ ব্যাপার।
কিছু কিছু পদে অবশ্য বিদেশ থেকে লোক নিয়োগ করা সহজ। যেমন ডাক্তার, নার্স, কিছু কম্পিউটার রিলেটেড ইত্যাদি পেশায় ওইসব দেশে যদি বিদেশী লোকবল দরকার পড়ে ।
আমার মতে সেীদি আরব, ডুবাই, কাতারে অবৈধভাবে থাকলে, ওইসব দেশে অনেক বাঙ্গালী লোকজন থাকায় তারা হয়ত আপনাকে সহযোগীতা করতে পারে, থাকার স্থান বা খাবার দিয়ে। কিন্তু ইউরোপের জীবন-যাপন যা খরচের তার উপর কড়া আইনী ব্যবস্থা, সবকিছু একটা সিস্টেমের মধ্যে চলে ।
তো ওই ছেলেটির সাথে অনেক কথা হলো।
আমার পকেটে অত টাকা ছিলোনা । একটা ১০ ইউরোর নোট দিতে চাইলাম, বললাম "১০ ইউরো অনেক টাকা না তারপরও আপনি অনায়াসে একবার ডিনার করতে পারবেন"। সে নিলনা। এমনভাবে একটা হাসি দিলো মনে হলো সে অনেক খুশী হয়েছে আমার ব্যবহারে। ছেলেটার জন্য আমার মনটা কেমন করে উঠলো ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।