ইউরোপের সাপ্তাহিক লটারি প্রতিযোগিতা ইউরো-মিলিয়নের গেল সপ্তাহের জ্যাকপট ছিল £161. ইউরোপের প্রতিটি দেশের নাগরিক এই সাপ্তাহিক লটারি খেলে থাকেন। গত সপ্তাহের জ্যাকপট জিতে নেন ব্রিটেনের একজন নাগরিক। কিন্তু সপ্তাহ পার হয়ে জাবার পরেও সেই সৌভাগ্যবান ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অর্থাৎ কেউ সেই মহা মূল্যবান টিকেটটি নিয়ে এগিয়ে আসছিলেন না। ইউর-মিলিওনের স্বত্বাধিকারী প্রতিষ্ঠান ক্যামেলটের একজন মুখপাত্র যুক্তরাজ্যের চ্যানেল ফোর টেলিভিশনকে বলেছেন, “আমরা এখনও জানি না টিকেটটি কোনো ব্যক্তি একা কিনেছেন, নাকি সিন্ডিকেট করে কয়েকজন মিলে কিনেছেন, তবে আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি টিকেটটি ব্রিটেন থেকে কেনা হয়েছে”।
তবে ইতিমধ্যেই ক্যামেলট টিকেটসংক্রান্ত অনেকগুলো ভুয়া ফোন পেয়েছেন।
ক্যামেলট থেকে আর জানানো হয়েছে, যদি এই টিকেট কোনো একজন ব্যক্তি জিতে নেন তাহলে তিনি ব্রিটেনের সানডে টাইমসের এই বছরের ৪৩০ ধনী ব্যক্তি হিসাবে নাম লেখাবেন।
তবে ক্যামেলটকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয়নি। ফলাফল ঘোষণার চার দিন পর ব্রিটিশ নাগরিক ক্রিস ওয়্যার এবং তার স্বামী কলিন ক্যামেলটের অফিসে এসে আসল টিকেটটি জমা দিয়ে বিজয়ী বলে নিজেদের দাবি করেন। ক্যামেলট কর্মকর্তারা টিকেট পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে জ্যাকপট এর পুরো £161 পরিশোধ করেন।
ব্রিটিশ এই নাগরিক লটারির ৫টি নাম্বারসহ অতিরিক্ত ২টি লাকি নাম্বার মেলাতে সক্ষম হয়ে ইউ কে এবং ইউরোপের এযাবৎ কালের সবচেয়ে বড় জ্যাকপট জিতে নিয়েছেন। সৌভাগ্য বহনকারী সেই নাম্বারগুলো হচ্ছে ১৭, ১৯, ৩৮, ৪২ এবং ৪৫। এছাড়া অতিরিক্ত লাকি নাম্বার ছিল ৯ এবং ১০।
এই বিশাল জ্যাকপটের পুরো টাকার অঙ্ক হচ্ছে £161,653,000. পুরো ইউরোপের ১৮৫ মিলিয়ন মানুষ গত সপ্তাহে এই সাপ্তাহিক লটারি খেলেছেন।
লটারির ড্র ঘোষণার দিন ক্রিস মধ্যরাতের দিকে টেলিভিশনে বিবিসির রেড বাটন ডিজিটাল টেক্সট সার্ভিসে নিজেদের কেনা লটারির নম্বরটি দেখতে পান।
সে রাতে লটারি জেতার উত্তেজনা ও আনন্দে স্বামী-স্ত্রী দুজনই নির্ঘুম রাত কাটান। কলিন বলেন, প্রথম যখন আমরা বুঝলাম যে আমরা জিতেছি, এটা স্বপ্নের মতো মনে হয়েছিল। সবকিছু যেন বেশ ধীরগতিতে চলতে শুরু করলো, স্থানীয় সংবাদ সম্মেলনে ক্রিসকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়, এ অর্থ দিয়ে কী করার পরিকল্পনা করছেন তারা? জবাবে ক্রিস বলেন, কোনো বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস দেখাই না আমরা। স্বামী কলিনও সেই সুরে সুর মিলিয়ে বললেন, পরবর্তী সময়টা বেশ কঠিন হবে। তিনি বলেন, সম্পদ যত বেশি, দায়িত্বও তত বেশি।
কলিন (৬৪) পেশায় টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান ও ক্রিস (৫৫) একজন পূর্ণ প্রশিক্ষিত মনস্তত্ত্ববিষয়ক নার্স। ফলে দুজনের মধ্যেই একটি বিষয়ের বেজায় মিল। আর তা হচ্ছে, দুজনকেই নানা স্থানে ভ্রমণ করতে হয়। ক্রিস বলেন, আমরা দুজনেই বরাবর চেয়েছি চীনের বিখ্যাত প্রাচীর গ্রেট ওয়াল ভ্রমণ করতে। কলিন অস্ট্রেলিয়ার এইয়্যারস রকের পাদদেশে দাঁড়াতে পারলেও বেশ খুশি হবে।
ক্রিস আরও বলেন, আর্ট গ্যালারি ভ্রমণ করাও আমাদের শখের মধ্যে পড়ে। এ অর্থ আমাদের প্যারিস ও রাশিয়ার বিখ্যাত আর্ট গ্যালারিগুলোতে ভ্রমণেরও সুযোগ করে দেবে। আমরা ভেবেছিলাম, এসব আমাদের কোনদিনই দেখার সৌভাগ্য হবে না। তাছাড়াও, দু সন্তান কার্লি ও জেমির জন্যও তারা বাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিজয়ী খেলোয়াড় ক্রিস ওয়্যার লটারি জিতে সেলেব্রেটি জগতের অনেক নামকরা মানুষকে অনায়াসে টপকে গেছেন, যেমন মিউজিক্যাল থিয়েটারের গুরু স্যার টম রিচ (£১৪৩ মিলিয়ন), রক অ্যান্ড রোল লেজেন্ড স্যার টম জোন্স (£১৪০ মিলিয়ন), এরিখ ক্ল্যাপ্টন (£১২৫ মিলিয়ন) এমন আর অনেকে।
ইউ কে ন্যাশনাল লটারির প্রতিনিধি চ্যানেল ফোরকে বলেন, “আমরা অত্যন্ত খুশি যে এই বিশাল জ্যাকপট একজন ব্রিটিশ নাগরিক জিতে নিয়েছেন। আমরা বরফ দিয়ে শীতল করা শ্যাম্পেইন দিয়ে ক্রিসকে আপ্যায়ন করেছি। সেই সাথে আমরা তাকে ন্যাশনাল লটারি মিলিওনিয়ার ক্লাব এর সদস্য হবার জন্যও আমন্ত্রন জানাচ্ছি” ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।