আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হেফাজতের ভোটে আ’লীগ গাজীপুরে জিততে চায়

হেফাজতের আমীর আল্লামা আহমদ শফীকে ম্যানেজ করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে সরকার। চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভরাডুবি হেফাজতের ভোটে হয়েছে ‘বোধোদয়’ হওয়ায় গাজীপুরে ভোটের আগেই সরকার অরাজনৈতিক সংগঠনটির সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে। সরকার হেফাজতের ভোটে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী হতে চাচ্ছে। গাজীপুর নির্বাচনের আগেই সমঝোতার লক্ষে ‘নরম-গরম’ পন্থা অবলম্বন করেছে। আল্লামা শফীর সঙ্গে দেখা করে সারাদেশের আলেমদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার, মসজিদ মাদ্রাসায় কর্মরত আলেমদের ওপর হুমকি-ধমকি, জুলুম নির্যাতন বন্ধ এবং আলেমদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মাওলানা আহমদ শফীর বৈঠকের প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু রমজানের আগে হেফাজত আমীর এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না বলে সরকার পক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন। হেফাজতের একাধিক নেতা জানান, সরকার একদিকে ব্লগারদের ছেড়ে দিচ্ছে, সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘মতিঝিলে মাদ্রাসার ছাত্ররা রক্ত মেখে শুয়ে ছিলো’ শেখ সেলিমের ‘শাপলা চত্বরে একজনও মরেনি, প্রমাণ দিতে পারলে রাজনীতি ছেড়ে দেব’ বক্তব্য দিচ্ছেন। অন্যদিকে সমঝোতার চেষ্টা করছেন। সরকারের এ স্ববিরোধী স্ট্যা-বাজীতে আলেম-ওলামাদের বিক্ষুব্ধ করেছে।

গাজীপুরে ৬ জুলাই অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে আলেমদের ভোটে আজমত উল্লাহ খানকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ। সরকারি চাকরি বিধি লংঘন করে গত বুধবার ইসলামী ফাউ-েশনের উদ্যোগে মসজিদ ভিক্তিক প্রায় দুই হাজার গণশিক্ষা কার্যক্রমের শিক্ষক (ইমাম), ফিল্ড সুপারভাইজার, কর্মকর্তা কর্মচারীদের নির্বাচনী সভা আশকোনাস্থ হাজী ক্যাম্পে আয়োজন করা হয়। ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহর সমর্থনে ইসলামী ফাউ-েশনের উদ্যোগে গাজীপুরের নির্বাচনের প্রচারণায় অংশগ্রহণের লক্ষ্যে এ বৈঠকে ১৯টি টীম তৈরি করা হয়। ইসলামী ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেয়া হয় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দোয়াত-কলম মার্কার প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। এ বৈঠকের সমন্বয়কারী হারুন উর রশিদ নির্দেশ দেন যে কোনো মূল্যে টেলিভিশন মার্কাকে ঠেকাতে হবে।

নির্বাচনী প্রচারণায় অধ্যাপক এম এ মান্নানের বিরুদ্ধে কুৎসা রটাতে হবে। ইসলামী ফাউ-েশনের এ নির্দেশনা পালনে কেউ গাফিলতি করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। নির্বাচনী প্রচারনায় যাবতীয় খরচ দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। আশকোনা হাজী ক্যাম্পে বৈঠকে অংশ নেতা মসজিদ ভিক্তিক শিক্ষকের কেউ কেউ চাকরি হারানোর ভয়ে ইসলামী ফাউ-েশনের ডিজি শামীর মোহাম্মদ আফজালের নির্দেশ মতো ‘হেফাজতের ব্যানারে’ আজমত উল্লাহ খানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। সূত্র জানায়, চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ফলাফল বিপর্যয় সরকারের নীতি নির্ধারকদের অস্থির করে তুলেছে।

হেফাজতে ইসলামের ভোট ব্যাংক ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীদের বিপক্ষে শুধু ভোটই দেয়নি; প্রচারণাও চালিয়েছে। যা ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থীদের ভরাডুবি ঘটিয়েছে। নির্বাচনের সময় যারা হেফাজত নিয়ে ত্চ্ছুতাচ্ছিল্য করেছেন সরকারের হাইকমা- তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। শীর্ষ নেতৃত্ব চাচ্ছেন হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতা করে ইসলাম বিদ্বেষী ইমেজ মুছে দিতে। এ জন্য হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতার উদ্যোগ নেয়া হয়।

মতিঝিলের আলোচিত অপ্রীতিকর ঘটনার আগে ‘হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতার’ দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদকে। তারা ব্যর্থ হওয়ায় সরকার সমর্থিত কয়েকজন আলেমকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়। সরকারের হালুয়া-রুটি খাওয়া আলেমরা ব্যর্থ হওয়ায় সরকার অন্যপন্থায় হেফাজতের আমীর মাওলানা আহমদ শফিকে ম্যানেজ করার কৌশল গ্রহণ করেন। পাশাপাশি ইসলামী ফাউ-েশনের ডিজি শামীর মোহাম্মদ আফজালের ওপর চাপ দেন যে কোনো ভাবেই হেফাজতের সঙ্গে সমঝোতার। শপলা চত্বরের ঘটনায় কোরআন পোড়ানোর দায় ইসলামী ফাউ-েশনের ডিজি সামীম আফজালের ইন্দনে হেফাজতের ওপর চাপিয়ে দেয়ার ঘটনা আল্লামা শফী ভালভাবে নেননি।

ইসলামী ফাউ-েশনের ডিজির বিতর্কিত কর্মকা-ের জন্য তাকে পছন্দ করেন না। যার জন্য সামীম মোহাম্মদ আফজাল চট্টগ্রামে অবস্থান করলেও আল্লামা শাফী তাকে সাক্ষাৎ দিতে অস্বীকার করেন। চট্টগ্রামে থেকে ইসলামী ফাউ-েশনের ডিবি সরকারি চাকরির আইন ভঙ্গ করে হেফাজতকে ম্যানেরজের সরকারি এজে-া বাস্তবায়নের চেষ্টা করছেন। তবে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত অতিরিক্ত ডিআইজি (রাজনৈতিক) মাহবুবুর রহমান ২৭ মে হাটহাজারীতে গিয়ে মাওলানা আল্লামা শফীর সঙ্গে দেখা করেছেন। হেফাজতের নেতারা জানান, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আল্লামা শফীকে বৈঠক করার প্রস্তাব দেন।

জানিয়ে দেন এতে রাজী হলে শাপলা চত্বরের ঘটনার পর সারাদেশের আলেম ওলামাদের ওপর দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হবে। গ্রেফতারকৃত আলেম-ওলামাদের ছেড়ে দেয়া হবে। মসজিদ মাদ্রাসায় কর্মরত আলেম-ওলামা যারা ভয়ভীতির মধ্যে রয়েছেন তাদের নির্ভয়ে কাজ করার পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। সরকারের এ সমঝোতার প্রস্তাব গ্রহণ করেনি হেফাজতের আমীর মাওলানা আহমদ শফী। তিনি এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, রমজানের পর সারাদেশের আলেম ওলামাদের ডেকেছি। তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে যাওয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হবে। আমাদের দাবি দেয়াই রয়েছে। এ সব দাবি নিয়ে নতুন করে আলোচনার কিছু নেই। হেফাজতের কয়েকজন নেতার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বললে তারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

তারা সংসদে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য আর শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বক্তব্যে দারুণ ক্ষুব্ধ। একজন নেতা বললেন, প্রধানমন্ত্রী শাপলা চত্বরের ঘটনা নিয়ে যে ভাষায় কথা বলেছেন তা লজ্জাজনক। কতজন মরেছে কি একজনও মরেনি সেটা তদন্তের মাধ্যমে দেশবাসীকে জানানোর দায়িত্ব সরকারের। সর্বমহল থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি উঠলেও সরকার মতিঝিলের গভীর রাতে আলেম হত্যার ঘটনার তদন্ত করেনি। বরং হেফাজতের নেতাকর্মী এবং সারাদেশের আলেম ওলামাদের সম্পর্কে গোয়েবলসীয় কায়দায় মিডিয়ায় অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

সারাদেশের আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দায়ের, তাদের ওপর জুলুম নির্যাতন করছে। সরকারের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর স্থানীয় নেতা মস্তানরা তৌহিদী জনতাকে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে। একদিকে জুলুম নির্যাতন করবে অন্যদিকে সমঝোতার চেষ্টা এটা হয় না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নেতা বলেন, শেখ সেলিম চ্যালেঞ্জ দিয়ে সংসদে বলেছেন ‘৫ মে শাপলা চত্বরে কেউ নিহত হয়েছে প্রমাণ করতে পারলে আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার।

শাপলা চত্বরে নিহতের তালিকা আমাদের হাতে রয়েছে। সময়মতো তা প্রকাশ করা হবে। শেখ সেলিম পাগলের প্রলাপ বখছেন। শাপলা চত্বরে আলেমের মৃত্যুও প্রমাণের মাধ্যমে তাকে রাজনীতি থেকে বিদায় নিতে হবে না। দেশের যে বারোটা বাজানোয় ৪সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদায়ের ঘন্টা বেজে উঠেছে।

আগামীতে জনগণ এমনিতেই বিদায় করবে। এদিকে গত মঙ্গলবার গাজীপুর ও টঙ্গী এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হেফাজতসহ আলেম ওলামাদের ভোট টানতে জোর চেষ্টা চালাচ্ছেন মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রধান দুই প্রার্থী অধ্যাপক এম এ মান্নান ও আজমত উল্লাহ খান। রাজধানীর প্রবেশ মুখ টঙ্গী ও গাজীপুরে গড়ে উঠেছে কয়েকশত মাদ্রাসা। এসব মাদ্রাসার শিক্ষকদের ভোট নিজের বাক্সে ফেলতে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী এম এ মান্নান সঙ্গে নিয়ে ঘুরছেন হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের। আবার ইসলামী ফাউ-েশনের সহায়তায় মসজিদ ভিত্তিক গণশিক্ষা কার্যক্রমে কর্মরত আলেমরা চাকরি বাঁচানোর জন্য ১৪ দল সমর্থিত প্রার্থী আজমত উল্লাহর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।

সূত্র ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.