আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়েন্স ফ্যান্টাসি_ ডঃ সাখাওয়াত

ভোর ৪ টায় বাস এসে থামল ময়মনসিংহ টার্মিনালে। কিছুক্ষণের মাঝেই ফজরের আজান পরল। আমি অচেনা জায়গায় একদমই অস্বস্তিবোধ করি না বরং প্রচণ্ড কৌতুহল জাগে আর ভাবুক মন নিয়ে ঘুরে বেড়াই অচেনা জায়গায়, খুজে বেড়াই অন্য কিছু ভাবুক মানুষ কিংবা জ্ঞানী গুণী মানুষ। ঘুরতে ঘুরতে মসজিদের সন্ধান পেলাম। নামায শেষ করে মসজিদের বারান্দায় বসে রইলাম।

একে একে সবাই চলে গেল। আমি কোথায় যাব তা জানি তবে নামাজের পর মসজিদে কিছুক্ষণ বসে থাকতে আমার ভীষণ ভাল লাগে। তাই বসে আছি আবার সারারাত বাসে করে আসায় কিছুটা ক্লান্তি লাগছে। ইমাম সাহেব আমার দিকে কিছুক্ষণ আড়চোখে চেয়ে রইলেন। কিছু না বলে চলেও গেলেন।

মুয়াজ্জিন সাহেবেও পিছু পিছু আসলেন। কিন্তু তিনি চলে গেলেন না। আমাকে অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকতে দেখে তিনি এসে জিজ্ঞেস করলেন, “আপনি কি এখানে নতুন এসেছেন?” আমি বললাম, “ শুধু নতুন নয় এইমাত্রই এসেছি। আমি ডঃ সাখাওয়াতের বাসায় যাব। মুয়াজ্জিন সাহেবে হেসে বললেন, “ ও আচ্ছা স্যারের বাসায় যাবেন, চলুন আমি আপনাকে নিয়ে যাচ্ছি।

আমি ভদ্রতার কাতিরে বললাম, না থাক আপনাকে কষ্ট করতে হবে না। আমিই যেতে পারব । মুয়াজ্জিন সাহেবে বললেন, “ আসলে আমিও ঐ দিকেই যাব। তাছাড়া ডঃ সাখাওয়াত আমারও স্যার ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় স্যার আমাকে অনেক পছন্দ করতেন।

চলুন আমার সাথে। আমি আর কিছু না বলে তার সাথেই চললাম স্যারের বাসার দিকে। যেতে যেতে মুয়াজ্জিন সাহেবের সাথে সখ্যতা হয়ে গেল। মুয়াজ্জিন সাহাবের নাম শহিদুলাহ। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন।

বিজ্ঞানের প্রতি প্রবল আগ্রহ থাকার কারনে ডঃ সাখাওয়াত তাকে খুব পছন্দ করতেন। তবে পরীক্ষায় তেমন ভাল করতে পারে নি বলে ভাল কোন চাকুরীও মিলে নি। তাই কণ্ঠ সুন্দর হওয়ায় মুয়াজ্জিনের কাজ করছে। আর সেই সাথে কয়েকটা কোচিং সেন্টারে পড়ায়। মুখ ভর্তি লম্বা দাড়ি,সুন্দর চেহারা আর হাসি-খুশি মুখ মুয়াজ্জিন শহিদুল্লার।

আমার পছন্দের মানুষের সংখ্যা খুব। তাদের মাঝে খুব অল্পতেই মুয়াজ্জিন শহিদুল্লাহ একজন হয়ে গেল। তিনি আমাকে নিয়ে পুরনো একটা দুতলা বাড়ির সামনে এসে থামলেন। আঙুল দেখিয়ে বললেন এটাই স্যারের বাসা। তিনি থাকেন দু তলায়।

তবে ণিচ তলায় কেউ কিন্তু থাকে না। স্যারের স্ত্রী ছেলে মেয়ে থাকে নওমহলে খুব সুন্দর একটা বাসায়। বাহির থেকে দেখে বাড়ি মনে হলেও ভিতরে ঢোকার পর সে ধারনা পাল্টে যায়। স্যার যে গবেষণা রেখে বসে নেই তা এখানে আসলেই বুঝা যায়। অথচ তিনি আমদের ক্যাম্পাসে এমন একটা ভাব করে চলেন যে কারোও পক্ষে বুঝার সাধ্য নেই তিনি যে বিশ্বসেরা বিজ্ঞানীদের দৌড়ে অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছিলেন।

বাড়ির একেক অংশ একেক রকম। উত্তর দিকটা দেখতে জাদুঘরের মতো, দক্ষিন দিকটা যেন একটা মিনি চিড়িয়াখানা। পূর্ব দিকটার কোন ঢং নেই। ইচ্ছে মত সাজিয়ে রেখেছেন। সম্ভবত এইটাই তার থাকার জায়গা।

আবার পশ্চিম দিকটায় আধা লাইব্রেরী আধা ল্যাবেরটরি। সবচেয়ে মজার হল ঘরের মাঝখানটা- যেন যাত্রাবাড়ির চৌরাস্তার মোড়। এসব দেখার পর আমার আর বুঝতে কষ্ট হল না কেন স্যারের ছেলে মেয়েরা একই শহরে অন্য বাসায় থাকে। একটু আগে ভেবেছিলাম হয়ত পারিবারিক কলহের জন্য তার স্ত্রী সন্তানেরা আলাদা থাকে। কিন্তু এখন বুঝতে পারছি ।

এমন চৌরঙ্গীর মোড়ে কি কেউ বাসা বাঁধে এমন পাগল মানুষ ছাড়া!! একটু পরে পানের একটা পিতলের ডিব্বা হাতে স্যার আমাদের মাঝে আভিরভুত/ হলেন। বাসায় কেউ নেই। আমরা কেউ তাকে ডাকিও নি। কিন্তু মনে হচ্ছে হিডেন ক্যামেরায় তিনি সব দেখতে পান কিংবা কোন অ্যালার্ম বেজে উটে যা কেবল তিনিই শুনতে পান। শহিদুল্লাহ হয়ত ভেবেছিল স্যার আমাকে চিনতে পারবেন।

তাই তিনি নিজেকে পরিচয় করাতে বললেন, “ স্যার কি আমাকে চিনতে পারছেন, আমি শহিদুল্লাহ। স্যার বললেন একটু দাড়াও। এই বলে পানের ডিব্বা থেকে একটা পান বের করে হাতে নিয়ে কি যে একটা করে তারপর একটা বিশাল মনিটরে হাত রেখে বললেন, “ who is this shohidullah ?” সাথে সাথেই শহিদুল্লার ছবিসহ তার যাবতীয় প্রকাশিত- অপ্রকাশিত তথ্যাদি ভেসে উঠল। হঠাৎ এই দৃশ্য দেখে আমি একটু অবাক হলাম। শহিদুল্লাহ যেন আকাশ থেকে পরল।

স্যার পরক্ষনেই হেসে উঠলেন। বললেন, “ পর্দায় নিজেকে আর কোনদিন দেখা হয় নি মনে হচ্ছে। শোন শহিদুল্লাহ আমি তোমার কথা ভুলে যাই নি। আমার মস্তিষ্কের ৩য় স্তরে সংরক্ষিত আছে। কিন্তু তোমার সাথে ও কে? ওকে তো চিনতে পারছি না”।

মুয়াজ্জিন সহিদুল্লাহ এবার আরও আবাক হলেন। যার পরিচয়ে তিনি এখানে আসলেন তাকেই স্যার চিনতে পারছে না। তিনি খুব বিব্রতবোধ করছেন। তবুও বললেন, “ স্যার আপনি আমাকে চিনতে পারলেন আর ওকে চিনতে পারছেন না। ওর নাম মাহিন।

আপনার ছাত্র। আপনার কাছেইতো এসেছে” । স্যার আবারো কোন কথা না বলে আগের মত একটা পান বের করলেন তারপর ঐ বিশাল মনিটরে হাত রাখলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার যাবতীয় পরিচয় ভেসে উঠল পর্দায়। স্যার তখন বললেন,” হয়েছে কি শোন, এই একটা মাথায় এত বেশি তথ্য আর তত্ত্ব জমা পরে গিয়েছিল যে নিজের নাম মনে পরলে দেখা গেল যে বাবার নামই মনে পরছে না।

তাই অনেক টাকা খরচ করে নিউরো-জেনেটিক রিকম্বিনেশন করে ব্রেইনকে তিন স্তরে ভাগ করে ফেলেছি। মারা যাওয়ার যতেস্ট/ সম্ভাবনা ছিল কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় বেঁচে রইলাম। মস্তিষ্কের ১ম স্তরে থাকে সাম্প্রতিক তথ্য, ২য় স্তরে থাকে কিছুকাল আগের স্মৃতি আর ৩য় স্তরে সব কিছুই সংরক্ষিত থাকে। এই যে আমার হাতে পানের ডিব্বাটা দেখেছিলে ঐটা আসলে কোন পানের ডিব্বা নয়। আর এর ভিতরে যা আছে তাও পান টান কিছু নয়।

কিছু লাল, নীল আর সবুজ রঙের অরগানিক চিপস। ৩য় স্তরের তথ্য জানতে হলে সবুজ রঙের চিপসে সংকেত দিতে হয়। তারপর মনিটরে হাত রাখলে সেই সংকেত অনুসারে /সেন্ট্রাল সোর্স মডিউল থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানিয়ে দেয় এই এলইডি স্ক্রিনে। আমি নিজে শুধু ১ম স্তরের খবর জানতে পারি। ২য় স্তরের সিস্টেমটা একটু জটিল তবে বেশ মজার।

যা হোক এসব নিয়ে কথা বলে বলে এই বয়সে বড় বাঁচাল হয়ে গেছি। এবার স্যারের চোখ পরল আমার উপর। আমাকে বললেন, “ তুমি আসবে আর আমাকে একবার জানালে না। তুমি আসবে জানলে আমি কি ঘর বাড়ির এমন অবস্থা করে রাখতাম। তবে এটা কোন সমস্যা নয় বরং সম্ভবনা।

ঘরবাড়ি একটু এলোমেলো না থাকলে গবেষণায় ঠিক মনযোগ আসে না। যা হোক আসেই যখন পরেছ তাহলে এসো সবাই মিলে ঘরটা একটু গুছিয়ে নেই। না হয় ...। চলবে.... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.