আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সায়েন্স ফিকশনঃ কথা কয়

১ যতই রাত বাড়ছে, ততই ভয় বেড়ে যাচ্ছে হান্নানের। নানান রকমের আজেবাজে কথা তার মনে আসছে। তার দীর্ঘ আট বছরের চাকুরী জীবনে এমনটি আর কখনোই হয়নি। প্রতিদিনের মত আজো তিনি তাঁর দায়িত্ব পালনে রত ছিলেন। এসার নামাযের পর বাউন্ডারী বেষ্টিত মাঠের মধ্যে হাঁটতে হাঁটতে দোয়া দুরুদ পড়ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নৈশ প্রহরী হান্নান।

মাঝে মাঝে এদিক ওদিক টর্চও মারছিলেন। হঠাৎ করে শুনতে পেলেন কিছু শব্দ। মনে হয় যেন দুই জনের কথোপকথন হচ্ছে। হান্নান সে শব্দ অনুসরণ করলো। তার বুঝতে কষ্ট হলো না যে শব্দটি আসছে ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের বির্ল্ডিং থেকে।

নিচ তলার কোন একটি রুম থেকে শব্দটি সৃষ্টি হচ্ছে। মাঠের উত্তর পাশের বিল্ডিংটি ফার্মেসী ডিপার্টমেন্টের। হান্নান টর্চ মারলো সে দিকে। তারপর এগিয়ে গেলো। কিন্তু যেই মাত্র মাঠ থেকে বিল্ডিং এর মেঝেতে পা পড়লো, তার সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে গেলো সে শব্দ।

অবাক হয়ে হান্নান সব কয়টি দরজা পরীক্ষা করলো। কিন্তু সব গুলোতেই তালা ঝুলানো আছে। হান্নান আরো নিশ্চিত হবার জন্য সব কয়টি দরজা এক এক করে খুলে দেখলো। কিন্তু কিছুই পেলো না। সে এটাকে তার মনের সন্দেহ মনে করে মুচকি হাসলো।

মাঠে ফিরে এসে একটি চেয়ারের উপর বসলো। ঠিক এমন সময় আবার শুরু হলো সে শব্দ। অবাক হয়ে হান্নান আবারও সে দিকে গেলো। কিন্তু এবারও মাঠ থেকে মেঝেতে পা দেয়ার সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে গেলো রাত্রির নিস্তব্ধতাকে ভেদ করে আসা সে শব্দ। ভয়ে হান্নানের সারা শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো।

তড়িঘড়ি করে পিছু হটলো। কিছু দূর যেতেই আবার সে শব্দ শুরু হলো। শব্দটি ছিলো দুই জনের কথোপকথনের মত। মনে হচ্ছে দুই জন কথা বলছে। কিন্তু কোন কথা বুঝা যাচ্ছে না।

ভয়ে হান্নানের হাঁটুতে কম্পন সৃষ্টি হলো। তড়িঘড়ি করে মাঠের অপর প্রান্তে থাকা তার সহকর্মী নাজিমের কাছে দৌড়ে গেলো। খুলে বললো সব। নাজিম তো প্রথমে হেঁসেই কথাটি উড়িয়ে দিলো। বললো-“হান্নান ভাই, এটা আপনার মনের সন্দেহ”।

কিন্তু হান্নানের পীড়াপীড়িতে সে ঘটনাস্থলে আসতে বাধ্য হলো। হান্নানের কথার সত্যতা দেখে সেও অবাক হয়ে গেলো। দুই জনেই এখন ভয়ে জড়োসড়ো। সৃষ্টিকর্তার নাম স্মরন করতে করতে কোন মতে তারা রাতটি পার করলো। ২ সকাল আটটার পর তাদের ছুটি।

তখন তারা ঘুমাতে যায়। কিন্তু আজ তারা ক্যাম্পাসেই রয়ে গেলো। আজকের জন্য তাদের ঘুম চলে গেলো অনেক দূরের এক দেশে। তারা অপেক্ষা করতে লাগলো ক্যম্পাসে প্রানচাঞ্চল্য আসা পর্যন্ত। সকাল এগারোটার দিকে ফার্মেসীর বিভাগীয় প্রধান ডঃ হারুন স্যার ক্যাম্পাসে আসলে তারা তাঁর রুমে গেলো।

খুলে বললো সব। কিন্তু তিনি কিছুতেই তাদের কথা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি বললেন,“এটা তোমাদের মনের সন্দেহ”। এর পরও যখন তারা পীড়াপীড়ি করে ওনাকে বুঝাতে চাইলো, তখন এক পর্যায়ে তিনি ক্ষেপে উঠলেন। ভয়ে তারা তার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান স্যারের সাথে বিষয়টি শেয়ার করলো।

তবে এবার তারা সফল হলো। স্যারকে তারা বিশ্বাস করাতে সমর্থ হলো। মাহমুদ স্যারের অনুরোধে হারুন স্যারও কয়েক জন শিক্ষককে নিয়ে আজ রাতে বিষয়টি আসলে কি তা দেখতে রাজি হলেন। দেখতে দেখতে রাত প্রায় নয়টা বেজে গেলো। হারুন স্যার, মাহমুদ স্যার ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন,রেজা স্যার,তালেব স্যার, সুজন স্যার, জেবুন নাহার মেম,মাহমুদা নাহিদ মেম ও ফাতেমা মেম।

তবে আজ আর কোন শব্দ শুনা যাচ্ছে না। সবারই মেজাজ খারাপ থেকে খারাপের দিকে যাচ্ছে। জেবুন নাহার মেম তো এক পর্যায়ে বলেই পেললেন-“স্যার আপনি এসব অবাস্তব কথা বিশ্বাস করে নিজেও কষ্ট করলেন, আমাদেরও কষ্ট দিলেন”। শুনে হারুন স্যার বললেন, “আরে আমি তো বিশ্বাস করি নাই। মাহমুদই কথাটাকে বিশ্বাস করে এতদূর আনছে”।

তারা যখন এমন আলোচনায় লিপ্ত, তখন শুরু হলো সে শব্দ। সবাই চুপ হয়ে গেলো। কান খাড়া করে দিল শব্দের দিকে। সবাই অনুভব করলো,“মনে হয় দুই জনে কথা বলছে, কিন্তু কি বলছে তা কেউ বুঝতে পারছে না। আবেক, উৎসাহ,উতকন্ঠা,ভয়-সবার মাঝে এক যোগে কাজ করছে।

নাহীদ মেম তো ভয়ে জেবুন নাহার মেমকে জড়িয়ে ধরে আছেন। সাহস করে রেজা স্যার সামনে আগালেন। কিন্তু মেঝেতে পা দেয়ার সাথে সাথেই বন্ধ হয়ে গেলো সে শব্দ। সবাই তো অবাক!রেজা স্যার মাঠে ফিরে আসতেই আবার শুরু হলো সে শব্দ। মাহমুদ স্যার বললেন, “মেঝতে পা না দিয়ে মাঠে থেকেই আমরা আগে পরীক্ষা করে নেই কোন রুম থেকে শব্দটি আসছে”।

কথাটি সবারই পছন্দ হলো। সর্ব-সম্মতি ক্রমে সবাই নিশ্চিত হলো যে শব্দটি আসছে-নিচতলার ফিজিওলজি ল্যাবের ভিতর থেকে। তালা খুলে সবাই সে রুমে ঢুকলো। কিন্তু মানুষের শব্দ করার মত কোন কিছুই তারা পেলেন না। তালেব স্যার বললেন,“ভিতরে আবার কোন চোর-টোর লুকিয়ে আছে নাকি”!ফাতেমা মেম মৃদু হেসে বললেন, “তাহলে এটা খুব বুদ্ধিমান চোর, যে মাঠ থেকে মেঝেতে পা দেয়ার সাথে সাথে চুপ হয়ে যায়”।

হারুন স্যার বললেন, “টেবিল-চেয়ার ও আলমারির ফাঁকে ফোঁকে দেখেন তো কিছু আছে কিনা”?সবাই দেখলো তন্ন তন্ন করে। কিন্তু রেজাল্ট শূন্য। সবাই বেরিয়ে এলো। হারুন স্যার আগামীকাল সকাল দশটায় জরুরী মিটিং এর কথা বলে সবাইকে আজকের মত বিদায় দিলেন। ৩ পরদিন সকাল দশটা।

সবাই সময়মত উপস্থিত। হারুন স্যার কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তি বর্গকেও দাওয়াত দিলেন। সবাই সময় মত এলেন। হারুন স্যারের দাওয়াতে সে ভার্সিটির শিক্ষকদের বাহিরেও মিটিং এ এসেছেন হাসান স্যার,মনিরা ম্যাডাম,ফারুক স্যার,হাসনাত স্যার,কবীর স্যার সহ আরো অনেকে। হারুন স্যারের নির্দেশে মাহমুদ স্যার সবার কাছে ঘটনাটি ব্যাখ্যা করলেন।

এক এক জন এক এক রকমের মন্তব্য করলেন। মনিরা মেম সহ অনেকেই এটিকে ভূতুড়ে কান্ড বলে অবিহিত করলেন। সবাই সর্ব সম্মতিক্রমে আজ রাতে আবার বিষয়টি দেখবেন স্থির করে মিটিং শেষ করলেন। আজো রাতের বেলায় সবাই একই জিনিস শুনতে পেলো। হাসান স্যার বললেন,“বিষয়টি তো খুব জটিল।

তবে আমাদের কে এর রহস্য বের করতেই হবে!কে এমন শব্দ সৃষ্টি করছে তা আমাদের জানতেই হবে”। মনিরা মেম বললেন,“ল্যাবের ভিতরে পরীক্ষা চালাবার জন্যে কিছু ইঁদুর ও গিনিপিগ আছে। এগুলোকে সরিয়ে দেখেন তো আগের মত শব্দ হয় কিনা?”হাসান স্যার ওনাকে সমর্থন করে বললেন,“ঠিক বলেছো,কারন ল্যাবের ভিতরে এরাই একমাত্র প্রানী, যারা কথা বলতে পারে”। নাহিদ মেম বললেন, “আমরা যা শুনলাম, তা ছিল মানুষের কথার মত। এমন শব্দ এরা সৃষ্টি করতে পারবে না”।

মনিরা মেম বললেন, “তবে সরিয়ে দেখতে তো দোষ নেই। কারন আমরা তো কেউই নিশ্চিত না যে শব্দ কে সৃষ্টি করছে। এক এক করে বিভিন্ন বস্তু আমরা সরিয়ে দেখবো। যেটা সরানোর পর শব্দ হবে না, বুঝা যাবে সেটা থেকেই শব্দটি আসছে। এরপর আরো নিশ্চিত হবার জন্য আমরা সেটিকে অন্য রুমে নিয়ে দেখবো শব্দ হয় কিনা।

তারপর অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিব”। মেমের কথা সবারই পছন্দ হলো। ইঁদুর ও গিনিপিগ গুলোকে সরিয়ে দরজা বন্ধ করে সবাই মাঠে এসে অপেক্ষা করতে লাগলো। রাত তখন প্রায় ১১টা। সবাই চুপ।

কেউ বলছে না কোনো কথা। হঠাৎ করে রুমের ভিতর থেকে আবারো ভেসে আসলো দুই জনের কথোপকথনের শব্দ। সবাই নিশ্চিত হলো,এ শব্দ ইঁদুর বা গিনিপিগ সৃষ্টি করে নি। রুমের ভিতর আবার সবাই ঢুকলো। হাসনাত স্যার বললেন,“এবার কি সরানো যায়”?রুমের চারদিক তাকিয়ে এবং কিছু ভেবে চিন্তে হাসান স্যার বললেন, “এখানে যে দুটি কংকাল দেখা যাচ্ছে, ইঁদুর-গিনিপিগের পর এগুলোর মধ্য থেকে শব্দ আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

কারন এদের একসময় জীবন ছিল”। তাই ল্যাবের মধ্যে থাকা দুটি কঙ্কালকে সরিয়ে মাঠে নিয়ে আসা হলো। উৎসুক মনে সবাই অপেক্ষমাণ। সবার চোখে ঘুম থাকলেও উৎসাহের কাছে তা আজ পরাজয় বরন করলো। সময় কেটে যাচ্ছে।

আস্তে আস্তে রাত প্রায় দুইটা বেজে গেলো। কিন্তু আর কোন শব্দ ফিজিওলজি ল্যাব থেকে বের হলো না। হারুন স্যার বললেন, “তাহলে কি এগুলোই শব্দ সৃষ্টি করেছে”? মনিরা মেম পরামর্শ দিলেন, “এ দুটো কঙ্কালকে একটি খালি রুমে নিয়ে রাখেন। দেখেন কোন শব্দ হয় কিনা!যদি কোন শব্দ পাওয়া যায় তাহলে নিশ্চিত হওয়া যাবে এগুলোই শব্দ সৃষ্টি করছিল”। ওনার কথা মত একটি রুমকে সম্পূর্ন খালি করা হলো।

তারপর তার মধ্যে কঙ্কাল দুটিকে প্রবেশ করিয়ে তালা মেরে দেয়া হলো। এরপর সবাই মাঠে ফিরে এলো। কিছুক্ষন পর সে রুমের ভিতর থেকে আবার আগের মত কথোপকথন শুরু হলো। তখন রাত প্রায় সাড়ে তিনটা। শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে সবাই নিশ্চিত হলো।

রাতের আঁধার ভেদ করে ভোরের আলোর দেখা মিলতেই রুমের মধ্য থেকে আসা শব্দ বন্ধ হয়ে গেলো। মাঠের মধ্যেই তখন মিটিং বসলো। হাসান স্যারের পরামর্শে মাহমুদ স্যারের নেতৃত্বে গঠন করা হলো পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত টিম। কঙ্কাল দুটির মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল তা বের করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য এ টিমকে দায়িত্ব দেয়া হলো। ডিপার্টমেন্টের বেশিরভাগ শিক্ষকই রাতে ঘুমাতে পারেন নি বলে হারুন স্যার পরদিন ডিপার্টমেন্ট বন্ধ ঘোষনা করলেন।

তবে তদন্ত টিমের সকল সদস্যকে দুপুর ২টার সময় ক্যাম্পাসে আসতে বললেন টিম লিডার মাহমুদ স্যার। এরপর সবাই যে যার মত করে বিদায় নিলেন। ৪ দুপুর দুইটায় তদন্ত টিমের সবাই ক্যাম্পাসে এলে মাহমুদ স্যার সবাইকে নিয়ে বসলেন। সময় ক্ষেপণ না করে সে দিন থেকেই কাজ শুরু করার আগ্রহ প্রকাশ করলেন মাহমুদ স্যার। অনেক আলাপ আলোচনার পর তারা তাদের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করলেন।

তারা সিদ্ধান্ত নিলেন, প্রথমে জানবেন কঙ্কাল দুটিকে কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। ভার্সিটির কাগজ পত্র ঘেঁটে তারা জানতে পারলেন, একটিকে কেনা হয়েছে গত সপ্তাহে আর অপরটিকে চার বছর আগে। তারা সিদ্ধান্ত নিলেন গত সপ্তাহে যেটিকে কেনা হয়েছে আগে সেটির পরিচয় জানতে চেষ্টা করবেন। কারন তা অপরটি থেকে সহজ হবে এবং একটির পরিচয় জানলে হয়তোবা অপরটির পরিচয় জানাও সহজতর হবে। ডিপার্টমেন্টের ক্যাশ মেমো দেখে তারা জানতে পারলেন গত সপ্তাহের কঙ্কালটি কেনা হয়েছে একটি মেডিকেল কলেজ হতে আর আগেরটি নীলক্ষেতের একটি দোকান হতে।

পরদিন সকালে তারা গেলেন সে মেডিকেলে। কর্তৃপক্ষের সাথে দেখা করে বিস্তারিত সব বললেন। তারাও খুব অবাক হলো। এবং আন্তরিকতার সাথে কঙ্কালটির পরিচয় বের করতে লেগে গেলো। কিছুক্ষন পর তাদের একজন এসে জানালো, “আমরা কঙ্কালটির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি।

এটা ছিল একটা পাগলের কংকাল। সে চলন্ত গাড়ির নিচে চাপা পড়েছে। লোকজন তাকে ধরে এখানে নিয়ে এসেছে। কিন্তু ততক্ষনে আর সে বেঁচে নেই। পাঁচ দিন পর্যন্ত তার লাশ আমরা মর্গে রেখেছি।

কিন্তু কেউ তার লাশ নিতে আসে নি। অবশেষে বেওয়ারিশ লাশ মনে করে আমরা তা থেকে কঙ্কাল তৈরী করে বিক্রী করেছি। ” এর পর মাহমুদ স্যারের নেতৃত্বে তদন্ত টিম গেলো নীলক্ষেতের সে দোকানে। দোকানের কর্মচারীর কাছ থেকে মালিকের ফোন নাম্বার নিয়ে তার কাছে ফোন করলেন মাহমুদ স্যার। মালিককে সংক্ষেপে ঘটনা বললেন এবং তার সাথে দেখা করতে চাইলেন।

দোকানের মালিক তাদেরকে তার বাসায় দাওয়াত করলো। এবং কর্মচারীদের একজনকে নির্দেশ দিলো তাদেরকে তার বাসায় নিয়ে আসার জন্য। বাসায় গিয়ে তারা তার কাছে বিস্তারিত সব ঘটনা খুলে বললেন এবং কঙ্কালটির পরিচয় জানার ব্যাপারে সহযোগিতা চাইলেন। দোকানের মালিক সহযোগিতা করতে রাজি হলেন। কিন্তু কাজটা অনেক জটিল বলে তিনি কিছুদিন সময় চাইলেন।

৫ পাঁচদিন পর দোকানের মালিক ফোন করলেন মাহমুদ স্যারের নিকট। তিনি বের করতে পেরেছেন কঙ্কালটির পরিচয়। এটা ছিল একটা মেয়ের কংকাল। একটা চক্র আছে যারা কবর থেকে লাশ তুলে কঙ্কাল হিসেবে বিক্রি করে। তাদের কাছ থেকে তারা এটা ক্রয় করেছেন।

আর যার কাছ থেকে তারা এটি ক্রয় করেন তাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন-তারা এ লাশটিকে এনেছে আজিমপুর কবরস্থান হতে। মেয়েটির নাম ছিল তানিয়া। বাসা ছিল ধানমন্ডিতে। কোন এক কারনে সে আত্মহত্যা করে। তাকে কবর দেয়া হয় আজিমপুর গোরস্থানে।

সে চক্র কবর দেয়ার দুই সপ্তাহ পর তার লাশ চুরি করে। এবং কঙ্কাল বানিয়ে তার কাছে বিক্রি করে। মেয়ের বাসার ঠিকানাও তিনি মাহমুদ স্যারকে দেন। ফোন পাবার কিছুক্ষনের মধ্যেই তদন্ত টিমের সবাই মেয়ের বাসায় হাজির হলো। তাদের পরিচয় দিলে মেয়ের বাবা তাদেরকে বাসায় বসতে দিলেন।

তারা তার কাছে বিস্তারিত সব ঘটনা বললেন । এরপর জানতে চাইলেন তার মৃত মেয়ে সম্পর্কে। অশ্রুভরা চোখে মেয়ের বাবা জানালেন তার মেয়ে ভালোবাসতো একটি ছেলেকে। কিন্তু তারা এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি। কারন ছেলেটি তাদের পছন্দের ছিল না।

মেয়ের অমতেই তারা মেয়ের বিয়ে ঠিক করে। মেয়েটিও ছিল খুব জেদী ও একরোখা। তাই সেও তাদের এ সিদ্ধান্ত মানতে পারলো না। অবশেষে বিষ পান করে তার নীরব প্রতিবাদ ব্যক্ত করলো। অবাক হয়ে সবাই মেয়ের বাবার কথা শুনলো।

সবাই মনে মনে চিন্তা করলো, তাহলে কি অপর কঙ্কালটি সে ছেলেটির যাকে মেয়েটি ভালোবাসতো!!!! সবাই কিছুক্ষন নীরব রইলো। অবশেষে নীরবতা ভেঙে তদন্ত টীমের অপর সদস্য রেজা স্যার বললেন-সে যে ছেলেটিকে ভালোবাসতো তার বাড়ির ঠিকানাটা কি আপনাদের কাছে আছে?”মেয়ের বাবা তার বাড়ির ঠিকানা দিলেন। ছেলেটির বাড়ি ছিল সাতক্ষীরায়। মাহমুদ স্যার বললেন, “আপনার মেয়ের মধ্যে কি এমন কোন কিছু ছিল যার মাধ্যমে কংকাল দেখে আমরা নিশ্চিত হতে পারব এটা আপনার মেয়ে”? “হ্যাঁ। আমার মেয়ের ডান হাতের বৃদ্ধাংগুলি ছিল না।

ছোট বেলায় এক দূর্ঘটনায় এটা কেটে গেছে”। তদন্ত টিমের সদস্য তালেব স্যার জানালেন, “তাহলে আমরা নিশ্চিত হলাম এটা আপনার মেয়ে। কারন একটি কঙ্কালের ডান হাতে চারটি আংগুল ছিল”। মেয়ের বাবার চোখ থেকে এবার গাল বেয়ে পানি পড়তে লাগলো। এবং কঙ্কালটি একনজর দেখার জন্য তিনি গভীর আগ্রহ প্রকাশ করলেন।

৬ ভার্সিটির গাড়িতে করে তদন্ত টীমের সবাই গেলেন ছেলের বাড়িতে। মেয়ের বাবা বলে দিয়েছিলেন, ছেলেটির নাম ছিল হাসান। বাড়ির ঠিকানাও তিনি লিখে দিয়েছেন। তাই বাড়ি খুজে বের করতে তাদের কোন কষ্ট করতে হয়নি। বাড়ির বাহিরে থাকতেই তারা একজন লোককে জিজ্ঞেস করলে সে তাদেরকে তার ঘর দেখিয়ে দিল।

সেখানে গিয়ে তারা আলাপ করলো তার বাবার সাথে। তারা জিজ্ঞেস করলো, “আপনার ছেলে হাসান কোথায়”?তার বাবা জানালো, হাসান ঢাকায় পড়াশুনা করতো। সে একটি মেয়েকে ভালোবাসতো। মেয়েও তাকে খুব ভালোবাসতো। কিন্তু মেয়ের বাবা-মা এতে রাজি না হওয়ায় মেয়ে আত্মহত্যা করে।

এ খবর শুনার পর তার মাস্তিষ্কে বিকৃতি ঘটে। এরপর তার অনেক চিকিৎসা করা হয়। এবং সে মোটামুটি ভালোও হয়। যোগ দেয় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। কিন্তু গত মাসে কোনভাবে ঐ মেয়ের একটি ছবি দেখার পর আবার তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।

ব্যাপক পাগলামি শুরু করে। কিছু দিন পর তাকে আর খুজে পাওয়া যায় না। সব আত্মীয়ের বাসায় খোজ নিয়েও তার আর দেখা মিললো না। সবাই মনযোগ দিয়ে তার এ কথাগুলো শুনলো। একটি কঙ্কাল যে হাসানের তা তারা অনেকটাই নিশ্চিত হলো।

মাহমুদ স্যার বললেন,“আপনার ছেলের মধ্যে কি এমন কোন কিছু ছিল যার মাধ্যমে কংকাল দেখে আমরা নিশ্চিত হতে পারব এটা আপনার ছেলে”?হাসানের বাবা জানালেন, তার ছেলের বাম পা ডান পায়ের ছেয়ে একটু ছোট ছিল। একথা শুনার সাথে সাথে সবাই নড়েচড়ে বসলো। কারন একটি কঙ্কালের বাম পায়ের টিবিয়া ফিবুলা ডান পায়ের চেয়ে দুই ইঞ্চি ছোট ছিল। তাই কঙ্কাল দুটির একটি তানিয়ার ও একটি হাসানের তা প্রমান হলো। ৭ পরের দিন হারুন স্যারের রুমে আবার মিটিং ডাকা হলো।

মাহমুদ স্যার তাদের তদন্তের রিপোর্ট বর্ননা করলেন। সবাই অবাক হয়ে গেল। কেউ কেউ মুচকি হাসলো। আবার কারো বা চোখ অশ্রুসজল হলো। মাহমুদ স্যারের কথা শেষ হলে সেখানে এক অন্য রকম পরিবেশ সৃষ্টি হলো।

হঠাত করে হারুন স্যারের নজর গেলো সুজন স্যারের দিকে। সুজন স্যার খুব রোমান্টিক মাইন্ডের। অবিবাহিত হওয়ায় ছাত্ররা তাকে নিয়ে অনেক মজা করে। তিনিও ক্লাসের বাহিরে ছাত্রদেরকে ছোট ভাইয়ের মতই স্নেহ করেন এবং তাদের সাথে বন্ধুসুলভ ও মাঝে মাঝে রোমান্টিক ধরনের আচরণও করেন। হারুন স্যার লক্ষ্য করলেন, তিনি আজ কোন কথা বলছেন না।

হাত দিয়ে টেবিলের সাথে মাথার সংযোগ করে কি যেন ভাবছেন। তাই হারুন স্যার জিজ্ঞেস করলেন, “কি সুজন সাব। আপনি যে কিছু বলছেন না”। সুজন স্যার জবাব দিলেন-“আমি আর কী বলবো-এমনোকি প্রেম হয়----ও হাড়ে হাড়ে কথা কয়”। সুজন স্যারের কথা শুনে সবাই হাহা করে হেসে উঠলো।

যারা অশ্রুসজল ছিল তারাও না হেসে পারলো না। (লেখাটি সম্পূর্ন কাল্পনিক। যদি কারো সাথে এর কোন অংশ মিলে যায় তাহলে তার জন্য লেখক দায়ী নন। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.