.........
লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি মুরভূমি থেকে শত্র“র মোকাবিলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছেলে ও মিত্রদের প্ররোচনায় পালাতে গিয়েই নিহত হন তিনি।
চার দশক লিবিয়ার ক্ষমতায় থাকা এই নেতার জীবনের শেষ কয়েক ঘণ্টার এসব চিত্র উঠে এসেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল গঠিত আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশনের প্রতিবেদনে। ২০০ পৃষ্ঠার এ প্রতিবেদনের খসড়া শুক্রবার জেনেভায় উপস্থাপন করা হয়। আগামী তিন সপ্তাহে আলোচনার পর এটি চূড়ান্ত করা হবে।
গত বছর মার্চ মাসে গাদ্দাফি বিরোধী আন্দোলন শুরুর পর কানাডার জুরি ফিলিপ ক্রিশকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিশন গঠন করে জাতিসংঘ। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের প্রত্যক্ষদর্শীদের জিজ্ঞাবাদে যে তথ্য পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতেই এ খসড়া তৈরি করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লিবিয়ার গৃহযুদ্ধে হত্যা ও নির্যাতনের মতো যুদ্ধাপরাধ করেছে দুপক্ষই।
খসড়ায় দেখা যায়, বিদ্রোহীরা সির্তে প্রবেশ করার পর গাদ্দাফির ছেলে মুতাসিম গাদ্দাফি গত বছরের ১৯ অক্টোবর উপকূলীয় শহরটি থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেন। পরদিন অস্ত্রসজ্জিত ২০টি গাড়ির বহর এবং ২০০ নিরাপত্তা রক্ষী নিয়ে তারা যাত্রা শুরু করেন।
এ সময় কয়েকজন নারী ও শিশুও ছিল তাদের সঙ্গে।
উপকূলীয় একটি রাস্তা ধরে এগোনোর সময় বিদ্রোহীদের চোরাগোপ্তা হামলায় বহর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন গাদ্দাফি। তাকে বহনকারী সবুজ রঙের গাড়িটির ঠিক সামনের একটি গাড়ি ন্যাটোর ক্ষেপণাস্ত্রের হামলায় উড়ে যায়। বিস্ফোরণের ধাক্কায় খুলে যায় গাদ্দাফিকে বহনকারী গাড়ির এয়ার ব্যাগগুলো। বিদ্রোহীরাও এ সময় গাড়িগুলো লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে।
হামলার মুখে টিকতে না পেরে গাদ্দাফি, ছেলে মুতাসিম ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আবুবকর ইউনিস কাছাকাছি একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। বিদ্রোহীরা ওই বাড়ি লক্ষ্য করেও গোলা বর্ষণ করে।
এক পর্যায়ে অক্ষত একটি গাড়ির খোঁজে বের হন মুতাসিম। তার সঙ্গে ছিলন ২০ জন নিরাপত্তা রক্ষী। বাবা গাদ্দাফিকেও ওই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসতে প্ররোচিত করেন মুতাসিম।
“এ দলটি বুকে হেঁটে এগিয়ে একটি ড্রেনের পাইপের মধ্য অবস্থান নেয়”, বলা হয় প্রতিবেদনে।
বিদ্রোহীরা তাদের দিকে এগিয়ে এলে গাদ্দাফির এক নিরাপত্তারক্ষী তাদের লক্ষ্য করে একটি গ্রেনেড ছুঁড়ে মারেন। কিন্তু সেটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ড্রেনের ওপরের দিকে একটি দেওয়ালে ধাক্কা খেয়ে গাদ্দাফির ঠিক সামনে এসে পড়ে। গ্রেনেডটি সরানোর চেষ্টা করতে গিয়ে বিস্ফোরণে নিহত হন সেই নিরাপত্তা রক্ষী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইউনিস।
কমিশন বলেছে, গ্রেনেড বিস্ফোরণে গাদ্দাফির জ্যাকেট ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়।
মাথায় আঘাত পাওয়া গাদ্দাফি বসে পড়েন এবং তার দলের একজন আত্মসমপর্ণের উদ্দেশ্যে একটি সাদা পাগড়ি উঁচু করে ধরেন।
তবে এরপর ঠিক কীভাবে গাদ্দাফির মৃত্যু হয়েছে- সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্য পায়নি তদন্ত কমিশন। একদল দাবি করেছে, একটি অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে গাদ্দাফির মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে একজন বিদ্রোহী। তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের অসংলগ্ন তথ্য পাওয়া গেছে।
এ কারণে গাদ্দাফি নিহত হওয়ার ক্ষেত্রেও যুদ্ধাপরাধ হয়েছিল কি-না সে বিষয়ে তদন্ত কমিশন কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি।
সুত্র ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।