আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হলুদ যন্ত্রনা, আওয়াজ যন্ত্রনা .... বৃহস্পতিবার আর ঘুমাতে পারি না

সত্য বলার সাহস, কিন্তু তা হজম করার সাহস ক্য় জনের আছে তা জানি না .। “মুন্নি বদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে” – রাত ২.৩০ টার সময়ের জন্যে নিশ্চয়ই উপযুক্ত গান নয়। তবে যদি বৃহস্পতিবার হয় তবে বাধ্যতামুলক ভাবে আপনাকে এই উচ্চমার্গিয় গানখানা হজম করতেই হবে। কারণ বিয়ে মানুষ একবারই করে, আর তার গায়ে হলুদ জীবনে একবারই হয়। আফসুস, তাদের বিয়ে জীবনে একবারই হয়, কিন্তু এলাকায় প্রতি বৃহস্পতিবার ই গায়ে হলুদ হয়, নয়তো বিয়ে।

তাই আপনি একশো চার ডিগ্রি জ্বর নিয়ে ঘুমাতে যাবেন, নাকি হার্ট এর বেরাম নিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন সেটা একান্ত আপনার ব্যপার, কারো জীবনে একবারই বিয়ে করার আনন্দটাকে মাটি করার মতন ছোটো হার্ট নিশ্চয়ই আপনার না .... তাই না? আমি যে এলাকায় থাকি খুবই ঘিঞ্জি এলাকা, একজনের বাড়ীর কোলে আরকজনের বাড়ী। যেনো একজন আরেকজনকে কোলেপিঠে করে মানুষ মানে বাড়ী করছে। লোডশেডিং এর রাতে চিপাচাপা দিয়ে বাতাস না ঢুকতে পারে, কিন্তু তাতে দশখানা স্পিকারের উদ্দাম শিৎকার আসায় কোনো বাধা পরে না। গত পরশুর কথাই বলি, এলাকার এক মেয়ের গায়ে হলুদ। তাদের নিজেদের টিনের চালার বাড়ী বলে, সেটার ছাদে হলুদ সন্ধ্যা ( যদিও শুরু হয় রাত বারোটার পরে, তারপরেও কেনো হলুদ সন্ধ্যা জানি না ) করা সম্ভব না, তাই খুজে পেতে পাওয়া গেলো আমরা যে বাসাটায় থাকি তার পাশের বাসার ছাদ।

বাড়ীওয়ালা ও দিলদড়িয়া মানুষ। এলাকার মেয়ের বিয়ে হবে, অথচ হলুদ করার জায়গা নাই, এইটা কি হয়। শত হইলেও এলাকার ইজ্জত !!! তিনি রাজী হইলেন। অনুষ্ঠান শুরু হবার কথা রাত আটটা থেকে, কিন্তু যথারীতি নিজেদেরকে পুরান ঢাকা থেকে উঠে আসা লোক প্রমাণের জন্যে ( আমরা পুরান ঢাকার বাসিন্দা না, পুরান ঢাকার আশেপাশের লোক আর কি) তা শুরু হলো রাত ১১ টার পর থেকে। আর আমার বাজলো বারোটা।

এমনিতে সারাদিন দৌড়ঝাপ করে রাতে বোরিং একটা ক্লাশ করে মাথায় যেনো থরের হাতুড়ীর আঘাত লাগছিলো, তার উপর আবার মুন্নি, শিলা, টিঙ্কুজিয়া ..... মাঝে মাঝে যা ও আবার বাংলা গান শোনা যায় তা হিন্দি তেরিমেরি এর নকল ছাইরা যাইওনা ময়নার বাপ টাইপ বমি উদ্রেককারি গান। রাত বারোটা পর্যন্ত মনে হইলো যেনো স্পিকারে আওয়াজ কমই ছিলো, কিন্তু রাত বারোটার পর মনে হলো আওয়াজ যেনো ক্রমেই বাড়তে লাগলো। আফসুস , আমার কানের সমস্যা নাকি রাতের বেলা বাকি সব আওয়াজ বন্ধ হয়ে গেলো বলে স্পিকারের আওয়াজটা বেশি মনে হয় জানি না। চললো ভোররাত ৪.৩০ পর্যন্ত। আমার মাঝে মাঝে ফজরের নামাজ মিস হয়।

ঐদিন আমি জামাতে নামাজ পড়লাম। এইজন্যে অনুষ্ঠান আয়োজনকারীরা সওয়াবের ভাগীদার হলে অবশ্য আমার আপত্ত্বি জানাবার কারণ নাই। কেনান তাদের কারণেই আমার জামাতে ফজরের নামাজ পড়া। আফসুস তাতেও আমি রাতে না ঘুমাতে পারার দুঃখ ভুলতে পারি না। কারণ আমার মাথায় যে থর আর হারকিউলিস যুদ্ধ শুরু করেছে।

এইতো গেলো হলুদ, বিয়ে আর সামাজিক অনুষ্ঠানের নির্যাতনের কথা। এবার যার কথা বলবো সেটা শুনে আমাকে নাস্তিক বলবেন না। আমি শপথ করে বলছি, আমি একজন মুসলমান, এবং আমি আমার ধর্ম-পরিচয় নিয়ে গর্বিত। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ হয়তো আলসেমি অথবা শাস্তির গভীরতা বুঝতে না পারার কারণে হয়ে ওঠেনা, কিন্তু আমার চেষ্টা থাকে তা আদায় করার। ধর্মের সব আইন , মাসালা ও আমার জানা নাই।

তাই প্রচন্ড ভয় নিয়ে কথাগুলা বলছি। ওয়াজ মাহফিল। আমাদের এলাকায় প্রতি মাসে দুই থেকে তিন বার হবেই। এই ওয়াজগুলার আবার শ্রেণীবিভাগ ও আছে। কিছু আছে মসজিদ থেকে মুসুল্লিরা করেন।

সেটা মসজিদেই হয়। মাঝে মাঝে কোনো বড় আলেম হলে মসজিদের পাশের রাস্তা সাময়িক ভাবে আটকে দিয়ে রাস্তায় করা হয়। সেখানে চেষ্টা করা হয় ধর্মের বিভিন্ন আমল বা মাসাল জানানোর। কিন্তু আমার আপত্ত্বি দ্বিতীয় ভাগ নিয়ে। এটার নাম আমরা দিয়েছি রেশারেশি অয়াজ মাহফিল।

আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলার মতন পীরেদেরও আলাদা আলাদা ভাগ আছে। তো ধরা যাক আজকে পাগলা বাবার এক অনুসারী তার বাসার ছাদের তিন চারটা মাইক লাগিয়ে ওরশ করলেন, তো ন্যাংটা বাবার ওরশে তো আর কেবল চারখানা মাইক লাগানো যাবে না। ন্যাংটা বাবার অনুসারীদের তাহলে কাজ কি ??? পুরা এলাকায় মাইক লাগাতে হবে। কারো বাড়ীর বারান্দায়, না হয় কারো বাড়ীর জানা্লা বরাবর। অন্যবাবার অনুসারীদের বাড়ী বরাবর পারলে ২ টা একসাথে।

সেখানে আল্লাহর নাম যতবার নেয়া হয়, তার চাইতে আয়জনকারী আর বাবার নাম বেশি নেওয়া হয়। আফসুস। আমাদেরকে শুধুশুধুই শুইন্না মুসলমান বলা হয় না। আমাদের ধর্মজ্ঞান আদতেই কম, তাই অনর্থক এই রেশারেশি, এই যন্ত্রনা দেয়া। আমার মনে পরে এক ওয়াজে বয়ানকারী নিজে বলছিলেন, মাইকের এই আওয়াজ যদি কারো সামান্যও ব্যাথাবেদনা দেয় তাহলে নাকি আল্লাহতালা তাদের ক্ষমা করবেন না।

অথচ সেই ওয়াজের আওয়াজ ছিলো অত্যধিক। আফসোসের ঘটনা হচ্ছে, সেখানে সেই ওয়াজে আমিও উপস্থিত ছিলাম।  আমরা বাংলাদেশিরা বহু উপাধিতে ভুষিত। হুজুগে, কাঙ্গাল, হাভাতে ......... কত কিছুই, কিন্তু আমার মনে হয় আমাদের সবচেয়ে বড় উপাধি আমরা সহানুভুতিশীল নই। মানুশের কষ্ট হয় কিনা সে ব্যাপারে লক্ষ না করেই আমরা অনেক কিছু করে বসি।

আমাদের রাজনৈতিক দলগুলাকে দেখেন। কিছু কিছু দল আছে তারা আখের গোছাতে ব্যাস্ত, আর কিছু দল আখের গোছানোর প্রস্তুতি নেয়াতে। কিন্তু তাদের আসল কাজ মানুসের আখেরে ব্যাবস্থা করা সেই দিকে তাদের খেয়াল নাই। গায়ে হলুদ ওয়ালারা আর বাবাওয়ালা ওয়াজকারীদের ই শুধু দোষ দেয়া কেনো ?? শুধু আফসোস, কোনো বৃহস্পতিবার ই আর ঘুমাতে পারি না। যে বৃহস্পতিবার এ কোনো হলুদ নাই, সে রাতেও এখন আর ঘুমাতে পারি না।

মনে হয় এখনই বুঝি মুন্নি, শিলা আসবে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে, স্বপ্নে না, বাস্তবে কর্নকুহরে। আফসুস।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।