আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ত্রিদিব দস্তিদার ছিলেন এক জিপসি তরুণ, কবিতা লিখতেন

ত্রিদিব দস্তিদার ছিলেন এক জিপসি তরুণ, কবিতা লিখতেন, দাঁড়িগোঁফ ভর্তি জঙ্গলাকীর্ণ মুখ, তাঁর ঝুঁটি বাঁধা চুল। হাতে অনেকগুলো নানান ধরনের ব্রেসলেট। ঘড়ি কালেকশন ছিল তাঁর কাছে, কিন্তু নিজে কোনো সময় মানতেন বলে জানা কোনো তথ্য নেই। জা.আ. রাশেদ আমার বন্ধু,পটিয়ার পোলা, ঔই আমাকে বলেছিল, যে, পটিয়ায় তাঁদের একধরনের জমিদারি ছিল একদা। তাঁদের সব সম্পত্তি ১৯৬৫ সালের যুদ্ধ অনুযায়ী রচিত আইনকর্তৃক 'শত্রু-সম্পত্তি' (!) হয়ে যায়।

চট্টগ্রামের পটিয়ায় তাঁর জন্ম, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর তাঁর ভাইবোনেরা কেউ কেউ কোলকাতায় গিয়ে বসত করছেন। সে যাই হোক, ত্রিদিব দা হঠাৎ একরাতে মারা গেলেন, পরদিন ভোরে বেলাল চৌধুরীর ফোন পাই...তারপর যা যা, সবই ন্যারেটিভ করে লিখেছি। লেখা অনেকরকম, কতরকম তা কেউ জানে না। মৌরি হচ্ছে বেলাল চৌধুরীর মেয়ে, ত্রিদিব দার মৃত্যুতে খুব কেঁদেছে। কবির ডেডবডি শশ্মানে নিয়ে যাওয়ার আগে, আমি কবিকে জিপসিদের কায়দা অনুযায়ী স্যালুট করেছি।

তারপর ঐদিন ন্যারেশন হয়ে গেল, আগত শুক্রবারে প্রথম আলোতে ছেপেও দিলাম। সেই দাপানো-কাঁপনো অকৃতদার জিপসিকে আমরা শেষ দেখেছি ঢাকার পোস্তাগোলা শশ্মানে, ২০০৫-এর এক সন্ধ্যায়। ত্রিদিব দা'র একটি কবিতার বইয়ের নাম. অঙ্গে আমার বহুবর্ণের দাগ। জিপসি ত্রিদিব দস্তিদারকে আবার একটা জিপসি স্যালুট... .......................................................... নিচের অংশেই ২০০৫ এর সেই লেখাটা_ .................................................................. .................................................................. বেলাল চৌধুরীর ফোন, হ্যালো টোকন... একটা শোক, একটা ইনফরমেশন! আমার বাসায় আমি আর কয়েকটা চড়ুই, রুম ভাগাভাগি করে শুই ভোরের চড়ুই আমাকে ডাকে কিন্তু আমি তো ঘুমাই, মনে একটা শালিক ছিল, তাও এখন নাই। তাই ঘুমোচ্ছিলাম, সকাল ছটায় বেলাল চৌধুরীর ফোন...অনেক দিন পর, তখন, সেই মুহূর্তে ফিরে এল শালিকের মন! বেলাল চৌধুরী বললেন, ‘গতরাতে ত্রিদিব এক্সপায়ার করেছে... ওর তো কেউ নেই, সৎকার করারও কেউ নেই, বন্ধুদের জানিয়ে দাও আর তুমি এক্ষুণি চলে আসো নয়াপল্টনে জোনাকির কাছে’ প্রেসক্লাব যাই, গিয়ে দেখি ত্রিদিব দা নাই তবে বহুদিন আগে, পটিয়া থেকে এই শহরে ঢুকে-পড়া নিঃসঙ্গ এক জিপসি-কবির ডেডবডি পড়ে আছে, যদিও ‘ওর তো কেউ নেই, সৎকার করারও কেউ নেই’ এই মমতা সত্য নয়- কারণ, আরো পঞ্চাশজন আসঙ্গ নিঃসঙ্গতাপ্রার্থী তখন লাশ ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিল।

তারা কারা? কেউ নয়? শেষরাতে বৃষ্টির পর ভীষণ মেঘ হয়ে থমকে ছিল মৌরি*। আমার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল, সব্বাইকে বলি: দাহপূর্ব দেহ থেকে শাদাকাপড় সরাও, কেননা, ছাই হবার আগেই আমি দেখতে চাই- একদিন কবি যা জানিয়েছিলেন- অঙ্গে আমার বহুবর্ণের দাগ ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৫ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.