চট্টগ্রাম ব্যুরো ( সমকাল )______
চাঞ্চল্যকর ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনা শুনে শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীর কাছে শিল্প মন্ত্রণালয়ের করণীয় জানতে চাইলে বলেন, হাইয়েস্ট অথরিটি বিষয়টি অবগত আছেন। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরও বিষয়টি অবগত আছেন। মন্ত্রীর কাছে প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনে এ বিষয়ে আর বিতর্ক করেননি তৎকালীন শিল্প সচিব ড. শোয়েব আহমেদ। গতকাল বুধবার ১০
ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান মামলায় সাক্ষ্যদানকালে সাবেক শিল্প সচিব মহানগর দায়রা জজ এসএম মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্যদানকালে
এসব কথা বলেন। এর আগে অস্ত্র আটক মামলায় সাক্ষ্যদানকালেও তিনি একই সাক্ষ্য দিয়েছিলেন।
বিকেল সাড়ে ৫টায় শোয়েব আহমেদের সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হলে মুলতবি ঘোষণা করে আদালত আজ বৃহস্পতিবার ফের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রাখেন। আজ বিসিআইসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ইমামুজ্জামানের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হতে পারে।
এদিকে ড. শোয়েব আহমেদকে উড়ো চিঠি দিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে আদালতকে জানানো হলে আদালত তার নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। অন্যদিকে লুৎফুজ্জামান বাবরকে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আনা-নেওয়ার জন্য তার আইনজীবীরা আবেদন করলে জেল কোড অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন বিচারক। তবে অসুস্থ থাকায় মামলার আসামি সিইউএফএলের সাবেক কর্মকর্তা এনামুল হক আদালতে উপস্থিত ছিলেন না।
তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন আছেন। তার অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্যগ্রহণ না করার জন্য আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আবেদন করলেও আদালত তা নাকচ করে দেন।
আদালত সূত্র জানায়, চোরাচালান মামলায় সাক্ষ্যদানকালে শোয়েব আহমেদ আদালতকে আরও জানান, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিইউএফএল জেটিঘাটে অস্ত্র খালাসের পর শিল্পমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, দেশের মিডিয়ায় শিল্প মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রীকে নিয়ে কথাবার্তা লেখা হচ্ছে। বিষয়টি শুনে মন্ত্রী বলেন, কিছু করার নেই। বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তদন্ত করছে।
ভারপ্রাপ্ত সচিব পরিচয়ে অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন সিইউএফএল রেস্ট হাউসে অবস্থান নিয়ে মন্ত্রণালয়কে কিছু না জানিয়ে কক্সবাজার যাওয়া-আসাসহ নানা বিষয় রহস্যজনক বলে মনে হয়েছে শোয়েব আহমেদের। এরপর তাকে বদলি করে কাদেরী সাহেবকে সচিব করা হয়। আবার তাকে বদলি করে নুরুল আমিনকে পূর্ণ সচিব করা হয়। এতে শোয়েব আহমেদের ধারণা হয় যে, শিল্পমন্ত্রী এবং নুরুল আমিন দু'জনই বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তৎপর।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনাকারী মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহম্মদ সমকালকে জানান, দশ ট্রাক অস্ত্র আটক মামলায় সাক্ষ্যদানকালে শিল্প সচিব ড. শোয়েব আহমেদ বলেছেন, অস্ত্র খালাসের বিষয়ে নিজামীকে জানানো হলেও নিজামী কোনো ব্যবস্থা নিতে বলেননি।
নিজামী শোয়েবকে বলেন, 'দেশের হাইয়েস্ট অথরিটি বিষয়টি জানে। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও জানেন অস্ত্র খালাসের বিষয়ে। ' এতে প্রমাণিত হয়, অস্ত্র খালাসের সঙ্গে নিজামীসহ তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের প্রভাবশালীরা জড়িত।
আসামীপক্ষের আইনজীবী মঞ্জুরুল হক আনসারী পিপির বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেন, 'ড. শোয়েব আহমেদই সব জানতেন। নিজামীকে ফাঁসাতে তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে।
তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব নুরুল আমিন অস্ত্র খালাসের দিন রাতে সিইউএফএল রেস্ট হাউসে রাত্রি যাপন করেছিলেন। তাকে পাঠিয়েছিলেন ড. শোয়েব। নিজামী কোনো নির্দেশনা দেননি শিল্প সচিবকে। '
মামলার সাক্ষী ড. শোয়েব আহমেদের সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয় সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটে। দুপুরে বিরতির পর দুপুর তিনটায় পুনরায় শুরু হয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত চলে আদালত।
এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, এনএসআই কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিমসহ ১০ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। পরে বিকেল সাড়ে পাঁচটায় তাদেরকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।