আয়োজন ছিল ক্রিকেট সংক্রান্ত , কিন্তু ভারত থেকে কোন ক্রিকেট খেলোয়াড় আসেনি। এসেছে সুরসুরি উদ্রেকের কিছু উপকরন। আর আমরা মেতে উঠলাম তাতেই। আর তা দেখে সুরসুরির উত্তেজনায় উত্তেজিত আমাদের নেত্রীবৃন্ধ। বুঝলাম খুব মজা পেয়েছেন তারা।
আজকের বাংলানিউজ২৪'কম -এ প্রকাশিত 'জাকিয়া আহমেদ' -এর একটি লেখার কিছু অংশ তুলে দিলাম। দেখেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের একক দাবিদার ও স্বঘোষিত সর্বোচ্চ দেশপ্রেমিক নেত্রীর সাহযোগী ক্ষিপ্ত উত্তেজিত নেতার বিশ্লেষন। ----
গত ২/৩ বছর ধরে মুম্বাইয়ের শিল্পীদের দেশে এনে অনুষ্ঠান করানোর হিড়িক পড়েছে। আমাদের জাতীয় জীবনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ মাসে পরিকল্পনা করে এ প্রোগ্রামগুলো একটু বেশিই হচ্ছে। ওরা সীমান্তে সাধারন মানুষকে গুলি করে মারে আর আমরা ওদের অতিথি করে এনে মঞ্চে নাচাই।
স্মৃতিতে ভেসে ওটে কাঁটা তারে ঝুলছে ফেলানি। নগ্ন যুবকের ওপর বিএসএফ’র নির্যাতন, হাত-পা বাধা বাংলাদেশির লাশ বাশে ঝুলিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মাত্র একদিন আগে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর প্রধানের ঔদ্ধত্য ‘সীমান্তে গুলি চলবেই’। আর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাংলানিউজের অনলাইনে ঝুলে থাকা দুটি খবর- চুয়াডাঙ্গায় ৫টি কিশোরকে আটকে রেখেছে বিএসএফ ও সাতক্ষীরা সীমান্তে দুই বাংলাদেশি গুলিবিদ্ধ।
বিপিএল বাংলাদেশের খেলা।
এখানে ভারতীয় শিল্পীরা কেন আসবে। আমাদের যদি বিশ্বমানের শিল্পী না থাকে তাহলে আমাদের এ রকম অনুষ্ঠানেরই দরকার নেই। এটা আমাদের অপমান। আমাদের ভাষার ও সংস্কৃতির প্রতি অপমান। বাংলাদেশের একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলতে চাই মালাইকা, বিপাসা বসু যে ধরণের পারফমেন্স করেছে সেটা আমাদের দরকার নেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইন্ডিয়ান শিল্পীদের ছড়াছড়ির জন্য সবাই রেসপনসিবল। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) , তথ্য মন্ত্রণালয় ও সরকার এর জন্য দায়ী। আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিরোধী। কিন্তু কাল যা হয়েছে তা পণ্য ব্যবহারের চেয়েও খারাপ। দেশের টাকা দিয়ে আমরা তাদের ভাড়া এনেছি।
আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কথাসাহিত্যিক মঈনুল আহসান সাবের বলেন, আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির কি এতই অভাব। আমাদের নিজস্ব কোনো অনুষ্ঠান জমকালো করতে নিজস্ব সংস্কৃতি যথেষ্ট। আমরা নিজেরা কি কিছুই করতে পারি না। আমাদের অন্যের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।
আমরা কি মানসিকভাবে এতই দীন হয়ে গেছি। ভারতীয়দের নাচ গান আমাদের নিজস্ব অনুষ্ঠানে কেন দেখাতে হবে। আমাদের কী কিছুই নেই। আমরা নিজেদেরকে এত ছোট ভাবি কেন। আমরা কিছুই করতে পারবোনা প্রশ্ন রাখেন তিনি।
বিপিএল আয়োজকরা হয়তো চেয়েছিলেন অনুষ্ঠানের রং বাড়াতে। কিন্তু তারা এ রং ভিক্ষা করে বাড়িয়েছে অন্যের দয়ায়। দর্শকরা কি এতই ছোট যে আমাদের আকৃষ্ট করতে হলে ইন্ডিয়ান নায়িকাদের নাচ দেখাতে হবে। আমাদের অনেক কিছু আছে। তবে আমরা সেভাবে মূল্যায়ন করিনা।
এসব বিষয় জানতে চাইলে বিসিবির সভাপতি আ হম মোস্তফা কামাল প্রথমে ক্ষিপ্ত হয়ে যান। কিন্তু পরে তিনি বলেন, ‘এ মাসে যদি আয়োজন না করতাম তাহলে আর করতে পারতাম না। ’
ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতীয় শিল্পীদের নিয়ে কেন পারফমেন্স করা হলো এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা গ্লোবাল কনসেপ্ট। ’
গ্লোবাল কনসেপ্টের মধ্যে শুধু কি ভারতীয়রাই পড়ে? এ প্রশ্ন করলে তিনি আবারো উত্তেজিত হয়ে যান। এবং উত্তেজিত কণ্ঠেই তিনি বলেন, ‘ইংলিশ শিল্পীদের আমরা পরিহার করেছি।
’
তবে বিসিবি প্রেসিডেন্ট বাংলানিউজকে ধন্যবাদ দিয়ে বলেন, আমাদের বিষয়টা বুঝতে হবে। এ আয়োজনের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বে ছিলো ভারতীয় কোম্পানি ‘গেম অন স্পোটর্স’। তারা যেহেতু ভারতীয় তাই তাদের কিছু চাওয়া পাওয়া আছে। সঙ্গত কারণে ওদের কিছু চাওয়া আমাদের অ্যালাউ করতে হয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানটি ইএসপিএন টেলিকাস্ট করেছে।
সারা বিশ্বের মানুষ এ অনুষ্ঠান দেখেছে। বিশ্ববাসীর উপযোগী করতে এ নাচ গানের আয়োজন করা হয়েছিলো। ’
বিশ্ববাসী কি হিন্দি বুঝতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে তিনি আবারে উত্তেজিত হয়ে বলেন, ‘আপনি খেয়াল করে দেখবেন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট, অর্থমন্ত্রী, ক্রীড়ামন্ত্রী ও আমি বাংলায় বক্তব্য দিয়েছি। বিষয়টিকে এতো সিলি ভাবে না দেখে এভাবে দেখলে ভালো লাগবে। ’ এই বলে ফোন কেটে দেন তিনি।
মাঠের পারফর্মেন্সর পাশাপাশি টিভিতে চলছিল ধারাভাষ্যকার ড্যানি ম্যারিসনের সাথে কথপোকথন। তাকে প্রশ্ন করা হলো - হোয়াট ডু ইউ থিংক অ্যাবাউট বলিউড এবং হু ইজ ইউর ফেভারিট অ্যাক্ট্রেস ইন বলিউড। খুব স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে এটা কি কোন ইন্ডিয়ান প্রোগ্রাম নাকি বাংলাদেশের? এখানে কেন ইন্ডিয়ান নায়িকা নিয়ে প্রশ্ন করা হবে?
গতকাল বিপিএল এ মালাইকা ও বিপাশা বসুর নাচগানে সুরসুরি ছিলো সে কথা যে কেউ স্বীকার করবে। করেছেন বিসিবি সভাপতিও।
তিনি বলেছেন, ‘ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কিছু চাওয়া পাওয়া অ্যালাউ করতে হয়েছিলো।
’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ভারতের একটি সামান্যতম কোম্পানিকে কথা শোনাতে পারেনি। তাহলে তিস্তা চুক্তি, টিপাইমুখ বাঁধ এবং সীমান্তে বিএসএফের নির্বিচারে গুলি চালানো বন্ধ করা অনেক দুরের অলীক স্বপ্ন।
যেখানে বিএসএফ এর প্রধান বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, সীমান্তে অপরাধ বন্ধ করতে বিএসএফএর সদস্যরা গুলি চালাতে বাধ্য হচ্ছে। তাহলে কী বাংলাদেশ সীমান্তে গুলি চালানো বন্ধ হবে না এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সীমান্তে অপরাধমূলক কাজ চলতে থাকলে গুলি চালানো বা শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করা সম্ভব নয়।
এই হচ্ছি আমরা, এই হচ্ছে আমাদের বাংলাদেশ, এই হচ্ছে আমাদের লাখো প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা, রক্ত ঝড়িয়ে পাওয়া মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার।
এই হচ্ছে রফিক জব্বার ও সালামের রক্তে রাঙানো ভাষার মাস।
ভারতীয়রা গলা উঁচু করে বলবে আমরা গুলি চালাবো। আর আমরা আমাদের নিজেদের দেশে নিজেদের টাকায় ভারতীয় নায়িকাদের কোমর দুলিয়ে ‘মুন্নি বদনামি’র নাচ দেখবো।
একুশের বইমেলা চলছে। এমন সময় বই মেলায় না গিয়ে যারা মালাইকার গান শুনে নেচেছে তাদের জন্য আমার করুণা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০,২০১২
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।