লোকে বলে স্বপ্ন জোছনা বিহার, জোছনা কনা রাত্রি উজাড় ! আমি বলি এ বেলা চৈত্র বিহার, স্বপ্নে ছুরি চোখে আঁধার ! রৌদ্রর সময় যেন কিছুতেই কাটতে চাইছেনা । বারবার সে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে । কখন যে ১১ টা বাজবে! ১১ টায় মেঘলা আসবে। আজ রৌদ্র মেঘলাকে তার না বলা কথা গুলো বলবে। রৌদ্র খুব ভাল করেই জানে মেঘলা কথা গুলো শোনার পর কি বলবে।
কিন্তু তবুও সে বলবে। এভাবে আর কতদিন.......................... আপনমনেই ভাবছে রৌদ্র ।
১১ টা ০২ বাজে, মেঘলা এখনও আসছেনা কেন? ঐ তো মেঘলা রিকশায়। মেঘলাকে আজ এতো সুন্দর লাগছে কেন ! রৌদ্র এগিয়ে যায় মেঘলার দিকে ।
৪০ মিনিট পর, তারা দুজন চুপচাপ বসে আছে তাদের খুব পছন্দের একটা জায়গায় ।
প্রায় ২ বছর আগে এখানেই দুজনের বন্ধুত্তের শুরু হয়েছিল।
কিরে কোন কথা বলছিস না কেন? জানতে চায় মেঘলা।
কি জন্যে হটাত করে এভাবে ডেকে আনলি?
: বলছি একটু পর।
: তুই কি খুব সিরিয়াস কিছু বলবি?
: হ্যা
: তাহলে বল
: তুই আমার সবচাইতে ভাল বন্ধু, তাই একটা বিষয়ে তোর কাছে সাজেশন চাইব।
: কি বলবি বলতো !
: মনে কর আমি একজন কে অনেক দিন থেকে ভালবাসি ।
কিন্তু কথাটা তাকে বলতে পারছি না। মানে আমার ভয় করছে। সে আমার খুব ভাল বন্ধু, তাই আমি ভয় পাচ্ছি তাকে কথাটা বলার পর যদি আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়, অথবা যদি সে আমাকে ভুল বোঝে। আমি চাইনা ওর সাথে আমার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাক।
এখন বল আমার কি করা উচিত ?
কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর মেঘলা বলল- যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হবার ভয় থাকে তাহলে তোর কিছু না বলাই ভাল।
আমি হলে তাকে বলতাম না। এখন চল আমি বাসায় যাব।
রৌদ্র হটাত করে উঠে দাড়িয়ে বলল- কিন্তু আমি ঠিক করেছি তাকে কথাটা বলব এবং আজকেই বলব। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। সারাক্ষণ নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতে আমি ক্লান্ত !
: তুই যা খুশি কর , আমি গেলাম ।
: মেঘলা প্লীজ ৫ মিনিট বসে থাক ।
: আচ্ছা বসলাম কিন্তু ৫ মিনিট এর বেশি না ।
: মেঘলা, আমি তোকে ভালোবাসি ।
: আমি এখন যাবো ।
: মেঘলা আমি সত্যি তোকে ভালোবাসি।
এটা যে আমার আজকের উপলব্ধি তা নয়। আমি ঠিক নিজেই জানিনা কবে আমি বুঝতে পেরেছি যে আমি তোকে ভালোবাসি। কিন্তু গত ৮-৯ টা মাস আমি প্রতিটা দিন নিজের সাথে যুদ্ধ করেছি। তোর সামনে আসতে ভয় লাগত যদি তুই সব বুঝে ফেলিস অথবা যদি তুই আমাকে ভুল বুঝিস । আমি তোর কাছে কোন উত্তর চাইছি না।
অথবা বলছি না আমাকে ভালবাসতে হবে। আমি শুধু একটু হাল্কা হতে চেয়েছি। আমি শুধু এটুকুই চাইবো আমাকে তুই ভুল বুঝিসনা। আমি সবসময় তোর বন্ধু হয়ে থাকতে চাই।
সব কথা শেষ হবার পর মেঘলা বলল আমি এখন যাবো।
২ দিন পর ---------------
আজ মেঘলার সাথে রৌদ্রর দেখা হয়েছিল। মেঘলা যাবার সময় রৌদ্রকে বেশ কয়েক পাতার একটা চিঠি দিয়ে গেছে। রৌদ্র চিঠিটা হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে, ওর কেন জানি চিঠিটা পড়তে ইচ্ছে করছেনা।
১ ঘণ্টা পর----------------
রৌদ্রর খুব কান্না পাচ্ছে। ও জানতো চিঠিতে কি লিখতে পারে মেঘলা ।
কিন্তু তার পরও মনে হচ্ছিল যদি মেঘলা হ্যা বলে !!!
২ মাস পর------------------
রৌদ্র কেমন যেন হয়ে গেছে। কারো সাথে ঠিক মত কথা বলেনা, ক্লাসে যায়না, আড্ডায় গেলেও চুপচাপ বসে থাকে। সবসময় চেষ্টা করে যাতে মেঘলার সাথে দেখা না হয়ে যায়।
আজ হটাত মেঘলা ফোন দিয়ে বলল দেখা করতে। কিন্তু রৌদ্রর কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছেনা ।
১ ঘণ্টা পর--------------------
রৌদ্র আর মেঘলা পাশাপাশি বসে আছে, ওদের পুরাতন সেই জায়গায় । কেউ কোন কথা বলছে না। মেঘলা রৌদ্রকে অনেকগুলো চিঠি বের করে দিয়ে বলল, চিঠি গুলো পরে পড়িস। আমাকে কিখিসনাই ? রৌদ্র কোন কথা না বলে অনেকগুলো চিঠি বের করে দিল। আমার কিছুক্ষণ দুজন চুপচাপ।
মেঘলা কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর বলল আমার কাছে তোকে লেখা আরও একটা চিঠি আছে এবং সেটা তুই এক্ষুনি পড়বি । বলেই সে একটা চিঠি বের করে দিল। চিঠিটাতে অনেক গুলো পিন মারা আছে। রৌদ্র চিঠিটা হাতে নিয়ে পিন গুলো খুলতে থাকে। চিঠিটা পড়ার পর রৌদ্রর মনে হল সে স্বপ্ন দেখছে তাই আবার পড়ল চিঠিটা।
তারপর সে মেঘলার দিকে তাকলো। মেঘলা মাথা নিচু করে বসে আছে। রৌদ্র কি বলবে বুঝতে পারছে না । সে তার হাতটা মেঘলার দিকে বাড়িয়ে দিল। মেঘলার খুব লজ্জা পাচ্ছে, সে রৌদ্রর হাতের উপর তার হাত রাখলো।
রৌদ্রর মনে হল পুরো পৃথিবীটা এখন তার হাতের মুঠোয় !!!!! ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।