চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ইসলামী ছাত্রশিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্ট। প্রায় দু'যুগ ধরে এখানে আধিপত্য বিস্তার করে আছে শিবির। চবির হল সংসদের কক্ষ ব্যবহার করেই চলে তাদের কার্যক্রম। ১৯৯০ সালের চাকসু নির্বাচনে মাত্র একটি হলে তাদের আধিপত্য ছিল। '৯১-এ বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধীরে ধীরে চবির সব হল দখল করে নেয় তারা।
এরপর সরকার বদল হলেও শিবিরের আধিপত্যে এতটুকু নড়চড় হয়নি। সারাদেশে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে শিবির। গুঞ্জন রয়েছে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাহাড়ি এলাকায় শিবিরের অস্ত্রের ঘাঁটি রয়েছে। দু'যুগ ধরে ৫০ বারের বেশি হল তল্লাশি হলেও
কিছুই পাওয়া যায়নি।
জামায়াতপন্থি শিক্ষকরা বেশিরভাগ সময় হলগুলোর প্রভোস্ট থাকার কারণে শিবির রামরাজত্ব কায়েম করার সুবিধা পায় বেশি।
জামায়াত পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গত চারদলীয় জোট সরকারের আমলের উপাচার্য জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক এজিএম নুরুদ্দিন চৌধুরী সব নিয়মকানুন উপেক্ষা করে ৩০৪ শিক্ষককে নিয়োগ দিয়ে যান। তাদের মধ্যে ১৫০ জনই জামায়াতের। তারাই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় শিবিরের অস্ত্রধারী ক্যাডার হিসেবে পরিচিত অনেকে এখন বিভিন্ন বিভাগের প্রধান। কেউ বিভিন্ন দাতা সংস্থার কাছে মিথ্যা তথ্য দিয়ে এনজিও কার্যক্রমের আড়ালে দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন।
বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গেও অনেকের যোগাযোগ রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। জামায়াতের রাজনীতির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পরিচিত শিক্ষক নেতা কেএম গোলাম মহিউদ্দিন, ড. কাজী আহমেদ নবী, ড. নেছারুল করিম, ড. শামীম উদ্দিন খান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস জামায়াত শাখার আমির ড. হাবিবুর রহমান, দর্শন বিভাগের শিক্ষক মোজাম্মেল হক বর্তমানে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্তদের বাঁচাতে নানা কর্মপরিকল্পনা নিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। গ্রেফতার জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের গুণগান গেয়ে একাধিক নিবন্ধ যাতে বিদেশের বিভিন্ন পত্রিকায় ছাপানো হয়, সে জন্য চলছে লবিং। এক্ষেত্রে ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেকাংশে এসব শিক্ষকের টাকার জোগান দিচ্ছে শিবির, যা চবি থেকে 'কালেকশন' করা হয়।
ছাত্রদের সব আবাসিক হলে শিবিরের পক্ষ থেকে চলে অন্য সংগঠনের তৎপরতার ওপর কড়া নজরদারি। এর ফলে ২০০১ সালের পর সেই হলগুলোতে উঠতে পারেননি অন্য কোনো ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মী। শিবিরের হাতে ধরা পড়া অন্য সংগঠনের কর্মী-সমর্থকদের ওপর চলে নির্যাতন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, চবিতে শিবিরের এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতি হলে দুটি করে গ্রুপ রয়েছে। এর একটির কাজ তদারক করা, অন্যটির কাজ সরাসরি প্রতিরোধ।
জানা গেছে, শিবির আধিপত্য বজায় রাখার স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আট শতক জমিসহ বাড়ি কিনে স্থায়ী অফিস নির্মাণ করেছে। প্রথমে কোচিং সেন্টারের নামে তৈরি হলেও বর্তমানে স্টুডেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এসআরসি) নামের আড়ালে পুরোপুরি সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে ভবনটিতে। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় চবিতে সেই একক দখলদারিত্ব রাখতে বিভিন্ন ছাত্র হলে 'অপারেশন হল সার্চ' চালায় শিবির!http://samakal.com.bd/details.php?news=13&action=main&option=single&news_id=233895&pub_no=956
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সমকালকে বলেন, সারাদেশের মানুষের কাছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের মিনি ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে পরিচিত। এখানে ছাত্রছাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। শিবির ২১ বছর ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছে।
যার কারণে এখানে নেই কোনো সাংস্কৃতিক পরিবেশ। প্রগতিশীল রাজনীতি এখানে নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অনেকটা জিম্মি করে ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজত্ব কায়েম করে চলেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ ছাত্রশিবিরের হাতে। আধিপত্য বিস্তার করতে শিবির এ ক্যাম্পাস তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখে।
অন্যদিকে প্রগতিশীল ছাত্ররা শিবিরের হাত থেকে ক্যাম্পাস পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালালে বারবার সংঘর্ষ বাধে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।