আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমি শিবিরের কর্মকান্ডের প্রতক্ষ্যদর্শী জামায়েত-শিবিরের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান, নিশ্চিন্হ হোক ওরা!!

যা বিশ্বাস করি না, তা লিখতে-বলতে চাই না, পারবোও না। কিন্তু যা বিশ্বাস করি, তা মুখ চেপে ধরলেও বলবো, কলম কেড়ে নিলেও লিখবো, মারলেও বলবো, কাটলেও বলবো, রক্তাক্ত করলেও বলবো। আমার রক্ত বরং ঝরিয়েই দাও, ওদের প্রতিটি বিন্দুর চিৎকার আরও প্রবল শূনতে পাবে। কৈশোরের সময়টুকু কেটেছে রংপুরে। বিস্তারিততে যাবনা, তখন আমি অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র।

কোনো কারণে রংপুর সাতগারা বায়তুল মুকারম কামিল মাদ্রাসার আসে পাশে আমার যাতায়াত অনেক বেড়ে গেল। আর সেই সূত্রে মাদ্রাসার ছাত্রদের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো যেটি আমার পরিবার মিশ্র ভাবে নিয়েছিল! ধর্মভীরু হিসেবে তারা মেনে নিল, এবং ভাবলো ছেলেটির যদি "হেদায়াত" হয়! কিন্তু দেশপ্রেম তাদের কে দিয়ে প্রতিদিন "ওসব" থেকে সতর্ক থাকতে বলাতো। যাহোক আমি ভালোভাবে ইনভলভড হয়ে গেলাম ওদের সাথে! আড্ডা, বিকেলে খেলা ধুলা থেকে শুরু করে ঘোরাঘুরিও ওদের সাথেই শুরু করলাম। এই অবস্থা কিছুদিন চলার পর হাতে পেতে থাকলাম বিভিন্ন বই। শিবিরের প্রচারণা মূলক বই থেকে শুরু করে এমনকি "কিশোর কন্ঠ" নামক কিশোর সাহিত্য বইটিতেও "জিহাদের" উপাদান ছিল(যা আমি পরে ধরতে পারি)! ওখানে কার্টুনস ও জোকস এর পাশে রয়েছে কি করে মুসলিম বিশ্ব কায়েম করা যায়, কি করে, কে কোথায় জিহাদ করেছে, সংগ্রাম করেছে তার কাহিনী।

সে যাই হোক, সব থেকে ভয়ের ব্যপার ছিল যেটা, উত্তরবঙ্গে সবথেকে প্রসিদ্ধ মাদ্রাসা যেটি, সেটির শ্রেণী কক্ষে এই বই গুলো বিতরণ করা হয়! কখনো কোনো সাধারণ সদস্য, কখনোবা একজন বড় পদবির বড় ভাই। তা উচ্ছনে যাওয়া মুসলিম জাতি নিয়ে আমার মনেও চিন্তার উদ্রেক হলো! আমি ভাবলাম, কেন নয়?ওরাতো অনেক ভালো কাজ করছে!! আমাকে একটা চার্ট ধরিয়ে দিল, সেখানে প্রত্যহ কুরআন পাঠ থেকে শুরু করে নামাজ ও পড়াশোনার রেকর্ড রাখার ছক করে দেয়া রয়েছে। আমি মনে মনে চিত্কার করে উঠি, বাহবা! আহা!! আর কি লাগে? জান্নাতের পথ তো পেয়েই গেলাম। নিতান্তই কিশোর আমি দারুনভাবে মোহিত হয়ে গেলাম, কি সুন্দর ওদের কথা!! তখন কি করার থাকে, যখন রক্ত গরম কিশোর সময়ে একদল মানুষ আপনাকে বলে, "তোমার যেখানে যে সমস্যা হবে, শুধু ফোন করবে, হাজির হয়ে যাবে তোমার সাথীরা, প্রয়োজনে সহীদ হয়ে তোমাকে রক্ষা করবে। " আমি মজে গেলাম, আজ ওই মসজিদে সভা, কাল সেই মসজিদে দোয়া আমার যাতয়াত অসম্ভব বেড়ে গেল! আমার পিঠ চাপড়ে দিয়ে ওরা বলল, দারুন করছ ভায়া!! হবে তোমায় দিয়ে!! মসজিদে বসা হলো, আলোচনার এক পর্যায়ে "মুমিন" বান্দান্দের জিজ্ঞাসা করা হলো, জিহাদের ডাকে সকলে সারা দিবে কিনা! যেকোনো "অন্যায়" এর দাঁত ভাঙ্গা জবাব দেবার জন্যে সবাই প্রস্তুত কিনা!! হাত তুলুন।

এখন মমিন বান্দারা তো হাত না তুলে পারেনা, মসজিদে বসে "ভালো কাজ" বিষয়ে জানতে চাওয়া হচ্ছে, সবাই হাত তুললেন, আমিও। পরদিন ফোন করে হন্তদন্ত একজন "সাথী" জানালেন, মিছিল করতে যাব, কুরআনের অবমাননা হয়েছে কথাও। রক্ত গরম হয়ে গেল!! আমি ছুটে গেলাম, কুরআনের অবমাননা বলে কথা!! "নারায়ে তাকবির, আল্লাহ হু আকবার!!!" "রুশদির দালালেরা, হুশিয়ার সাবধান!!" অন্য ধর্মের সবাইকে ওরা বাংলা ছেড়ে যেতে বলছিল!! এক পর্যায়ে তাদের স্লোগান ছিল, "আমরা হব তালেবান, বাংলা হবে আফগান!" আমি আর স্লোগান দিতে পারছিলাম না, আমার কন্ঠ থেমে যাচ্ছিল! এসব কি বলছে ওরা? আফগান কেন হবে বাংলাদেশ? যেখানে দিনে রাতে মানুষ মরছে নির্বিচারে!! নেই কোনো আইনের শাসন, আমার দেশ কেন ওরকম নরক হবে? সেইদিন প্রথম আমার মনে বড় আকৃতির প্রশ্নবোধকটি শেষ পর্যন্ত ঝুলেই গেল। একজন শিবির কর্মীর সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব আমার, নামছিল আরিফ। আহা, নুরানি চেহারা মুবারক তার, কথা বললে যে কেউ প্রভাবিত হয়ে যাবে! আমাকে একদিন মাদ্রাসার পেছনের দিকে একটু নির্জন জায়গায় নিয়ে গেলেন, বললেন ভাই আপনার তো অনেক দিনে হয়েই যাচ্ছে, একটা জিনিস দেখাই, " জিনিসটি/গুলো ছিল একবস্তা চাপাতি আর রামদা! আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞাস করি, ভাইয়া এগুলো কি? আপনার কাছে কেন? উনি হেসে বললেন, আমার না তো, সংগঠনের! আমার চমকে উঠলাম!! বললাম, এগুলোর কি প্রয়োজন? আমরা তো অন্য রাজনৈতিক দলের মত খারাপ না, আমরা তো ইসলামের রাজনীতি করি, তাইনা ভাই! ওনার জবাব ছিল কনভেন্সিং,"ভাইয়া, সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাদের নবিজিকেও যুদ্ধ করতে হয়েছে, সবই তো জানো!! সংকটময় পরিস্থিতি হলে যদি প্রয়োজন পরে, তাই রেখে দেয়া আছে, আর কিছুনা।

" আমার সংশয় তবু কাটেনা। বি.এন.পি'র সেই আমলে ক্ষমতাও বোধ করছিলাম, আহা! এত মানুষ আমার সেফটি দেখবে! বিশাল ব্যাপার!! সে সময় আব্বুর সাথে শিবিরের আর জামায়াতের পক্ষ নিয়ে আমার "জনৈক" মামা সহ তর্ক করতাম। আমার মুক্তিযোদ্ধা বাবা, যখন এক এক করে ওদের কুকীর্তির ইতিহাস তুলে ধরতে শুরু করলো, বড় মিথ্যেবাদী আর অবিশ্বাস্য লাগতে লাগলো নিজের বাবাকেই! পরিবার ততদিনে জেনে গেছে কোন সর্বনাশের পথে আমি সেই বয়সেই পা বাড়িয়েছিলাম! বাসা থেকে অনেক বুঝাইসে আমাকে! আমি আরিফ ভাই, সাহবাজ ভাইকে গিয়ে বলি, "ভাই, পিতা মাতার আদেশ অমান্য করে তো কিছু করা পাপ। আমি এখন কি করি?" ওনারা প্রশান্তির হাসি হেসে বলে, আরে ছেলে, ভালো কাজে তো বাধা আসবেই, আর শরীয়তের বিধান রয়েছে, ইসলামিক কাজে যদি পিতা মাতা বাধা দেয়, শুধুই সেই কারণে তাদের কথা অমান্য করা যাবে!" আমি এই বিধান শুনেছিলাম আগেই, আশ্বস্থ হলাম!! তবে সংশয়ের মেঘ যেন দিনে দিনে শুধু বেড়েই চলছিল, তখন চাঁদা দিতাম ও সংগ্রহ করতে পাঠানো হত আমাকে! যাই পারি, আন্তরিক ভাবে গ্রহণ করা হত। আমি ইসলামের খাতিরে, বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করে "বায়তুল মাল" এ জমা দেই, আরে ভাই, সংগঠনের খরচা পাতি ও তো দেখতে হবে নাকি?? এত কিছু দেখতে গিয়ে পড়াশোনার দিকে দেখা দেখা টা একটু বেশিই কমে গেল মনে হয়, রেজাল্টস খারাপ হতে লাগলো! সে যা হোক।

আমাকে একদিন সকালে বাসায় এসে বের করে নিয়ে যাওয়া হলো, "মিছিলে যেতে হবে মিয়া! আমাদের উপরে অনেক অত্যাচার হচ্ছে!! কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মারামারি হয়েছে, আমাদের একজন ভাই অনেক খারাপভাবে আঘাত পাইছেন। সকলে মিলা চল দাঁতভাঙ্গা জবাব দিয়ে আসি!!" বিবেক নড়ে উঠলো, সেই ভাইয়ের মায়ের বুকটা যেমন খালি হয়ে যেতে পারে, আমার মায়ের বুকটাও খালি হতে পারে!!! আমি অনড়, যাবনা! পাঞ্জাবি-টুপি পরে দাড়িয়ে থাকা আমার জীবনের সবথেকে বড় নীতিগত ধাক্কা ছিল ওটা। সেই ভাইয়ের হাতে ভয়ানক ধারালো অস্ত্র ছিল, আমার জন্যেও রাখা আছে, বলা হলো। আমি পারলাম না অতটা আপোষ করতে, আমি বিবেক বিবর্জিত হয়ে সেইদিন যেতে পারিনি। মুমিন বান্দা রেগে গেল! "মিয়া, তুমিনা মসজিদে বসে কথা দিসিলা? হাত তুলে বলসিলা যে কোনো জিহাদে পিছ পা হবানা!? এখন কি করতেছ এইসব? মসজিদে বসে মিত্থ্যে কথা বললে তো মিয়া দোজখেও জায়গা হবেনা।

জিহাদে গিয়ে শহীদ হলে, বিনা হিসেবে বেহেস্ত, আর তুমি দোজখ বেছে নিচ্ছ? মরলে শহীদ, বাঁচলে গাজী, বড় ভাই বলে নাই? আমাদের আমির সাহেব নিজে দোয়া করেন সকল শহীদ ভাইদের জন্যে, বেহেস্ত কে ঠেকাবে তোমার চল! যাইতে হবে, বড় ভাইয়ের আদেশ, সবাইকে ডাকছে! ? " দোজখের ভয়ে মন কাপছিল বৈকি! আমি যেতে পারিনি, তবে আমি নিজেকে আটকাতেও পারিনি, দূর থেকে দেখেছি, পাঞ্জাবি খিঁচে, টুপি মাথায় দিয়ে, অস্ত্র হাতে মুমিন বান্দাদের উন্মত্ত প্রলয়! আমি অবাক হয়ে দেখেছি কি করে মসজিদে প্রশান্তি ছড়িয়ে যাওয়া মুখঅবয়ব ভয়ানক রক্তের নেশায় উন্মত্ত হয়ে পড়ে! দেখেছি রক্তের নেশায় পাগল তাদের চেহারা, দেখেছি আর বুঝেছি, এ পথ আর যাই হোক, আল্লাহ তায়ালার পথ নয়। কুরআন মজিদ, যা সবসময় মনে শান্তি ছড়িয়ে দেয়, সমাজে এমন অশান্তি ছড়াতে পারেনা। এ ছিল শুধু মাত্র "বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির" এর একটা অংশ, সামন্য অংশ বলা ভালো। ওদের ছত্র ছায়া থেকে আমি বেরিয়ে এলাম তারপর, আমাকে অনেক ভয় দেখানো হয়েছিল, তারপর যাইনি। কারণ যে পতাকা আমার কাছে এত আবেগের ছিল, যে দেশ আমার কাছে এত মমতার ছিল, সে দেশকে আমি বুকে লালন করতে পেরেছিলাম।

আর পেরেছিলাম ওদের বর্জন করতে, কারণ আমি জানতে পারি সব কিছুই। ধীরে ধীরে আমার সামনে উন্মোচিত হয়ে একাত্তুরের হায়নাদের মুখোশ। আমি দেখতে শুরু করি পর্দার আড়ালের মুখগুলো, আর তাদের অতীত কুকীর্তি জানতে শুরু করি। শিবিরের মাস্টার মাইন্ড, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ!! আপনারা সবাই জানেন, আমিও সেগুলোই জানি, তাই টা নিয়ে আর কিছু বলবনা। কিন্তু এসব হয়ত কিছুই না, কারণ অনেকেই বলবেন, লীগ-দল তো আরো কত Extreme গুন্ডামি মারামারি করে, তাতে কি? কিন্তু আমি তো গিয়েছিলাম, ইসলামের রাজনীতি করতে, আমাকে কেন অস্ত্র হাতে পথে নামতে বলা হলো তাহলে? সেদিন আমি যাইনি মিছিলে, কিন্তু মুজাহিদুল ইসলাম অতটা সৌভাগ্যবান ছিলনা, ও গিয়েছিল।

ঠিক ওই রকম কোনো ইমোশনাল অথবা ধর্মের নাম ব্লাকমেল এর শিকার হয়েই ও গিয়েছিল!! তার পরিনতি? বড় দুক্ষজনক!! মাদ্রাসার এই পনের বছর বয়সের ছাত্রটি, শিবিরের অন্যায় রাজনীতির শিকার হলো!! আজকে জাতি হিসেবে আমি লজ্জিত, কেন জানেন? জামায়াত ও শিবিরের নামের পাশে "বাংলাদেশ" শব্দটি রয়েছে, এবং বহাল তবিয়তে। আমি যা বললাম, আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এটি। আমি তারপর থেকে আর কোনো দলেই যোগ দেই নি, কাউকে ভোট দেইনি আজ পর্যন্ত। আওয়ামীকে আমি নিতিগিতি ভাবে শ্রেয়তর মনে করি এখন, কারণ তাদের শরীরে অন্তত পক্ষে "রাজাকার" লেবেল নেই। আমি মন থেকে আশা করব, বিরোধী দল, জামায়ত বর্জন করবে, সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করবে এই নির্বাচনের আগেই।

তখন আমি ভোট দেয়ার কথা ভাবব, প্রার্থী যাকে শ্রেয়তর মনে হবে, তাকেই। শেষ কথায়, দেশ একটা, বাংলাদেশ, কোনরূপ বিবেধ চাইনা এখানে। আর জাতিকে দুই ভাগে ভাগ করার নীল নকশা হলো জামায়েত! আজ আমার কাছে রাজনীতি মানে দেশ প্রেম ও দেশের মঙ্গলের জন্যে যা সম্ভব, করা। তাই, এদের সমূলে উত্পাটন চাই, জাতির ইতিহাস ও বর্তমানের কলংক কিছুটা হলেও তাতে মোচন হবে ..... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.